নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ: ঝুঁকিপূর্ণ ভবন-শিক্ষক সংকটে ব্যাহত পাঠদান
নোয়াখালীঃ ১৯৭০ সালে স্থাপিত নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ জেলার মেয়েদের শিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। নোয়াখালী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ছাত্রীরাও লেখাপড়া করছেন এ প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু ১৯৮০ সালের পহেলা মার্চ জাতীয়করণ করা হলেও এত বছরে চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মহাবিদ্যালয়টিতে। একটি বিজ্ঞান ভবন, একটি একাডেমিক ও একটি প্রশাসনিক ভবন রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
তবে বর্তমানে অনেকটা জরাজীর্ণ তিনটি ভবন। আর এর জরাজীর্ণ ভবনগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। ইতোমধ্যে শ্রেণি পাঠদান ও অফিস কার্যক্রম চলাকালে একাধিকবার ভবনের ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়ে আহত হয়েছেন শিক্ষার্থী সহ কয়েকজন। শুধু ভবন নয় মহাবিদ্যালয়টিতে রয়েছে শিক্ষক সংকটও। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ’সহ ৪৫টি পদ রয়েছে এখানে, যার মধ্যে ১৬টি পদই দীর্ঘ বছর ধরে পড়ে আছে শূন্য।
সরজমিনে মহাবিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজে চালু করা হয় বিএ, বিবিএস ও বিএসএস স্নাতক কোর্স ছাড়াও বাংলা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইংরেজি, অর্থনীতি, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স কার্যক্রম। বিভিন্ন পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় প্রতিষ্ঠানটির কক্ষগুলো। এতকিছুর পরও অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি এ মহাবিদ্যালয়টির। বর্তমানে পাঠদান সহ সকল কার্যক্রম চলমান রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ চারতলার বিজ্ঞান ভবন ও তিনতলার অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে। ছাত্রী অনুযায়ী ৩০টি কক্ষের বিপরীতে পাঠদান হচ্ছে মাত্র ১০টিতে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিকের ব্যবহারিক পরীক্ষা চলাকালে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবের ছাদ থেকে পলেস্তরার বড় একটি অংশ ধসে পড়ে। তবে এসময় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ওইকক্ষে উপস্থিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন বিজ্ঞান ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় প্রতিটি কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করছে শত শত শিক্ষার্থী। এমন নড়বড়ে ভবনে পাঠদান নিতে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করে। ভবন ধসের মতো দুর্ঘটনা এড়াতে পুরাতন ভবন ভেঙে নতুন ভবন তৈরি করার দাবি শিক্ষার্থী’সহ সংশ্লিষ্টদের।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফ মোহাম্মদ মহসিন বলেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ’সহ কলেজের প্রতিটি কক্ষে পলেস্তারা ভেঙে পড়ার বিষয়টি নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার জানানো হলেও প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাই এক রকম বাধ্য হয়ে আমরা ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
শুধু ভবন নয় সঠিক সংস্কারের অভাবে মহাবিদ্যালয়টির খেলার মাঠটিও বর্তমানে ঘাসে ঢেকে গেছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ও শরীর চর্চার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে মাঠটি উপযোগী এবং আরও বড় মাঠের দাবি শিক্ষার্থীদের।
এদিকে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে মহাবিদ্যালয়টিতে। প্রভাষক পদ শূন্য রয়েছে ১২টি, সহকারী অধ্যাপক দুটি, বাংলায় এক, ইংরেজিতে তিন, অর্থনীতিতে দুই, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে দুই, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে দুই, হিসাববিজ্ঞানে এক, ব্যবস্থাপনায় এক, ভূগোলে সহকারী অধ্যাপক এক ও উদ্ভিদবিজ্ঞানে একজন। এছাড়া শূন্য রয়েছে শরীর চর্চা বিভাগের একটি ও সহকারী গ্রস্থাগারিক একজন। গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে এ পদগুলো শূন্য পড়ে থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
সমস্যা রয়েছে ছাত্রীদের আবাসিক আবাসনেও। দুটি হোস্টেল ভবনের মধ্যে ২০০৫ সালে একটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর ১০০ শয্যার একটিতে গাদাগাদি করে থাকছেন দেড়শ ছাত্রী। এতে ব্যাহত হচ্ছে তাদের স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম।
সহকারী হোস্টেল সুপার শামসুন নাহার বলেন, প্রতি বছর কলেজ হোস্টেলে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর আবাসন চাহিদা থাকলেও সেটি মিটানো সম্ভব হচ্ছে না। নতুন হোস্টেল ভবন হলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. তাজুল ইসলাম ভবন ও শিক্ষক সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রকৌশলীর একটি দল পরিদর্শন করে গিয়েছেন। তবে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। আর শিক্ষক সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত দেওয়া হয়েছে।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপংকর খীসা বলেন, ইতোমধ্যে কলেজটির ছয়তলা বিশিষ্ট একটি বিজ্ঞান ভবনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। টেন্ডারের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটির কাজ শুরু করা হবে। তবে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন তৈরির বিষয়ে এখনও কোনো প্রকল্প পাওয়া যায়নি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৮/০৩/২০২৪