নতুন শিক্ষাক্রম, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শিক্ষকের পরিবর্তনশীল ভূমিকা
ঢাকাঃ সম্প্রতি ‘‘আগামীর শিক্ষাঃ নতুন শিক্ষাক্রম, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শিক্ষকের পরিবর্তনশীল ভূমিকা’’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আগামী ইনকরপোরেশন।
শনিবার (১৬ মার্চ) প্রতিষ্ঠানটির ২০ বছর পূর্তি উদযাপনের অংশ হিসেবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন এবং উদ্ভাবনের বৈশ্বিক ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং দেশের নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষকের ভূমিকা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা ছিল সভার মূল অংশ।
আলোচনা সভায় অংশ নেন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক গবেষক, পলিসি বিশ্লেষক, শিক্ষাক্ষেত্রে এবং ভবিষ্যৎ শিক্ষার দিক নির্ধারণে অবদান রাখছেন এমন ব্যক্তিবর্গ। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে কার্যকর কৌশল কেমন হবে তা নিয়ে আলোচকগণ মতামত দেন।
মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নতিতে শিক্ষার ভূমিকা নিয়েও তারা আলোচনা করেন।
আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন মোহাম্মাদ ওয়াহিদ হোসেন, আগামী ইনকরপোরেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর, এবং প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা। আলোচনার শুরুতেই বিগত ২০ বছরে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতে আগামী ইনকরপোরেশনের ভূমিকা তুলে ধরা হয়।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ-এর ডিরেক্টর ড. আহমেদ আহসান শিক্ষাকে উন্নয়নের একটি মূল চালিকাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য অর্জনে শিক্ষকের ভূমিকার গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি শিক্ষকদের উন্নয়নের কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নে মূল ভূমিকা রাখতে হবে শিক্ষকদের। প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।”
“ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কোনদিকে যাবে তার সাথে বড় সংযোগ আছে শিক্ষার” বলে মত দেন অর্থনীতিবিদ এবং উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. আখতার মাহমুদ। তিনি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মূল চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের দিকে যেতে এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিকে একমাত্র সফলতা হিসেবে বিবেচনা না করে উৎপাদনশীলতা এবং উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধির ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় আরেক বক্তা দিলরুবা চৌধুরী শিক্ষা প্রযুক্তি এবং পার্সোনালাইজড শিক্ষার প্রসারে আগামীর ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি খান একাডেমি বাংলাদেশসহ শিক্ষা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা আগামী এডটেক প্রোগ্রামের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা গতানুগতিক শিক্ষার বাইরে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম যেমন খান একাডেমি বাংলা, কলিব্রি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করছে। এসব সহায়তার পাশাপাশি তিনি শিক্ষকের মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা সেন্টার অফ এক্সিলেন্স তৈরি করার পরিকল্পনা করছি। এটি হবে একটি আদর্শ শ্রেণিকক্ষ যা দেখে অন্যরাও এ ধরনের শিক্ষা প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হবেন। একইসাথে শিক্ষা বিষয়ক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষকদের সহায়তা করতে আমরা সবসময় কাজ করছি।”
নতুন শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নাফিসা খানম। এছাড়াও তিনি এনসিটিবির সাথে প্রশিক্ষণ, শিক্ষাক্রম প্রণয়নসহ বিভিন্ন কাজে যুক্ত। একই সঙ্গে তিনি আগামী টিচার্স ট্রেনিং প্রোগ্রামের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষকদের অভয় দেন এবং কীভাবে শ্রেণিকক্ষে এর কার্যকর বাস্তবায়ন সম্ভব তা নিয়ে কথা বলেন।
এছাড়াও সভায় অংশ নিয়েছেন আগামীর দাতারা, কনসাল্টেন্ট, আগামী এডটেকের সদস্যসহ ১৫টি স্কুলের ৩০ জন শিক্ষক। এই আলোচনা সভার আগে তারা আগামী এডটেকের প্রোগ্রাম ‘‘লার্নিং ইন ট্যাব’’-এর অংশ হিসেবে তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করার মাধ্যমে আলোচনা সভা শেষ হয়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২২/০৩/২০২৪