দুর্মূল্যের বাজার: দরিদ্র মানুষের কষ্টকর জীবন
।। কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম।।
বেশকিছু দিন আগে পত্রিকার একটি ছবির ক্যাপশনে দেখলাম এক দরিদ্র ভ্যানচালক টানা তিনমাস মাছ, মাংস খেতে পারেননি অর্থাভাবে। ডিম দিয়েই ভাত খান তাও সপ্তাহে দু'একদিন। এটা সম্ভবত শহরের কোন একটি স্থান হবে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে নিয়মিত এ ধরণের কষ্টের দিন গুজরান করছেন দরিদ্র মানুষ। অর্থাভাবে বিশেষ করে দুর্মূল্যের এই বাজারে তাদের বেঁচে থাকাটাই এখন দু:স্বপ্নের মতো। মুরগি, ডিম কেনার সামর্থ্য না থাকায় অনেক নিম্ন আয়ের এমনকি মধ্যবিত্ত লোকজন দোকানে গিয়েও সেসব না নিয়ে চলে আসেন- এমন খবরও পত্রিকায় বেরিয়েছে।
বাজারে প্রতিটা দ্রব্যের দামই বাড়তির দিকে। প্রায় সব দ্রব্যের দাম দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। বাজারে মুদি মালামালসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। চাল, ডাল, তেল, ডিমসহ সবক্ষেত্রে দাম বাড়ার প্রবণতা লক্ষনীয়। ডিমের দাম তো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সবজি ও মাছ-মাংসের দামও সহনীয় নয়।।
ব্রয়লার মুরগী ছাড়িয়েছে কেজিতে রেকর্ড ২২০ টাকা। দাম শুনে কপালে চিন্তার ভাঁজ। কীভাবে দিনযাপন করবে মানুষ? গ্যাস, বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। এভাবে দাম বাড়ার প্রবণতা বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। দরিদ্র মানুষের জন্য তো বেঁচে থাকাটাই চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা দিনে আনে দিনে খায় বা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে তাদের অবস্থা একেবারে সঙ্গিন হয়ে উঠেছে। কেননা প্রতিদিন তো আর কাজ পায়না তারা। একেবেলা খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকেনা।
এসব মানুষের কষ্টকর জীবন দেখে মনটা কেঁদে উঠে। বউ-বাচ্চার ঠিকমত খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করতে না পেরে অনেকে অন্যায়ের পথ বেছে নেয় কিংবা জীবন বিসর্জনের মতো ভুল পথে পা বাড়ায়। অনেক দরিদ্র মানুষ ভিক্ষাবৃত্তির পেশা বেছে নিতেও বাধ্য হয়। এ ধরণের পরিস্থিতি মোটেই কাম্য নয়। মানুষের অভাব দূর করতে রাষ্ট্র ও বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতে হবে।
কাজের আশায় দরিদ্র মানুষ গ্রাম ছেড়ে এখন শহরমূখি। দূরে পরিবার, সন্তান, আত্মীয়, পরিজন রেখে কাজের খোঁজে ছুটছেন তারা। কখনো বা এখানে কখনো বা ওখানে। একটি কাজ পেলে হয়তো জীবনটা অন্তত: বাঁচানো যাবে এ আশায়। অনেকে তিল তিল করে জমানো সঞ্চয় ভেংগে খেতে বাধ্য হচ্ছে।
কোন উপায় যে আর নেই! কেউ কেউ ঋণ করছেন। আবার সেই ঋণের টাকা শোধ করতে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন। পুষ্টিকর আর সুস্বাদু খাবার এখন দরিদ্র মানুষের নাগালের বাইরে। বলতে গেলে এরকম খাবার তারা কখন খেয়েছেন বা কখনো খেয়েছেন কিনা মনে করতে পারেনা। এভাবেই চলছে দরিদ্র মানুষের জীবনযাপন এবং মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জীবনযাত্রা। লক্ষণীয় বিষয় হলো গরিব আরো গরিব হচ্ছে, ধনী আরো ধনী। যে কারণে ব্যবধানটা বাড়ছেই। দুর্মূল্যের বাজারে তাই দরিদ্র মানুষ বেঁচে আছে, যেন সেটাই যথেষ্ট!
দুর্নীতি আর বিদেশে পাচারের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে নিয়মিত। অথচ দেশের দরিদ্র মানুষগুলো খাবার পাচ্ছেনা, কাপড় পাচ্ছেনা, সন্তানদের স্বাভাবিক চাহিদাটুকুও মেটাতে পারছেনা। উচ্চবিত্ত ও উচ্চপদস্থ চাকুরিজীবী ছাড়া বাকি সব মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে বলা যায় দ্রব্যমূল্যের এই চরম উর্ধ্বগতির কারণে।
দরিদ্র মানুষের কল্যাণে সরকারের নানা কর্মসূচি রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড। এরপরও মানুষের দারিদ্রাবস্থার অবসান হচ্ছেনা। মূলত: দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন তারা। ব্যয় বেড়েছে ঠিকই সে অনুযায়ী মানুষের আয় বাড়েনি।
কর্মসংস্থানের তেমন সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছেনা। পাশাপাশি সরকারের দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচিতে প্রভাবশালীদের প্রভাব থাকার কারণে খুবই কম সংখ্যক দরিদ্র মানুষ উপকৃত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী মহলের কেউ কেউ দরিদ্র এসব মানুষের ত্রান ও টাকাপয়সা মেরে খাচ্ছে।
এসব কাজ তদারকি করতে না পারলে কর্মসূচির উদ্দেশ্য ভেস্তে যাবে। মানুষের দারিদ্রাবস্থা দূর না হলে কোন পরিকল্পনাই সুফল দেবেনা।
বিত্তশালী মানুষ যারা রয়েছেন তাদেরকে দরিদ্র মানুষের কষ্ট লাঘবে পদক্ষেপ নিতে হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ধনী ও সামর্থ্যবান মানুষকে দারিদ্র দূরীকরণে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রকৃত দরিদ্র মানুষই যেন সরকার ও বিত্তশালী মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা পায় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারলে এবং দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারলে স্বস্তি আসবে। পাশাপাশি দুর্নীতি ও পাচারের মাধ্যমে লুট হওয়া অর্থ নিয়ে এসে দারিদ্র বিমোচনে কাজে লাগাতে পারলে, দেশ থেকে দারিদ্রতা চিরতরে দূর হবে বলে মনে করি। আসুন, যে যার অবস্থান থেকে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াই।
★ লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়