দুর্বল নেটওয়ার্কের কারনে অনলাইন শিক্ষায় বিড়ম্বনা
অনলাইন ডেস্ক ঃ
খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে মোবাইল ফোনের দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে অনলাইন ক্লাস থেকে দূরে সরে আছে শিক্ষার্থীরা। সরকার টেলিভিশনে রেকর্ড করা ক্লাস সম্প্রচার করছে, সেখানেও উপস্থিতি ভালো নয়। সব মিলিয়ে পড়াশোনা ও পরীক্ষা ছাড়াই চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীরা গভীর অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহামারি ভাইরাস করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। তবে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের অভিযোগ, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্মার্ট ফোন নেই, যাদের আছে দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে তারাও ক্লাস করতে পারে না। প্রত্যন্ত গ্রামের অসচ্ছল পরিবারের সদস্য শিক্ষার্থীরা সংগত কারণেই অনলাইন পদ্ধতি থেকে দূরে থাকছে। এদিকে, শক্তিশালী মোবাইল নেটওয়ার্ক চেয়ে ‘দাকোপে গতিশীল মোবাইল টাওয়ার চাই’ নামে একটি প্ল্যাটফরম গঠন করেছেন উপকূলের শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা নিজেদের সমস্যা উল্লেখ করে গতিসম্পন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক চেয়ে নানান ধরনের মন্তব্য পোস্ট করছেন। ঐ গ্রুপের সদস্য শিক্ষার্থী সৌরভ বিশ্বাসের বাড়ি দাকোপ উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামে। তিনি চীনের একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তিনি চীন থেকে গ্রামে চলে আসেন। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক সমস্যার কথা তুলে ধরে সৌরভ বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন ক্লাস চলছে অনলাইনে, তবে দেশে এসে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছি। ক্লাস করার সময় ল্যাপটপে ঠিকমতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। বিকল্প কোনো ধরনের সুবিধা না থাকায় মোবাইল ডেটা ব্যবহারই একমাত্র পন্থা। তিনি বলেন, ক্লাস শুরু হলে ল্যাপটপ ও মোবাইল ডিভাইস নিয়ে রাস্তার পাশে বা উঁচু কোনো জায়গা খুঁজে বসে পড়াশোনা করতে হয়। সুতারখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাজেরা খাতুন জানান, মোবাইল ফোন হাতে ধরে বসে থাকতে হয়। সঠিকভাবে কোথাও মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। ফলে ক্লাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে অনেক সময় বাদ পড়ে যাচ্ছি। দুর্ভোগে পড়তে হয় সব সময়।
চুনকুড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার রায় বলেন, নিজের বাড়ি হরিণটানা গ্রাম থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ দূরে বাজুয়াতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠদান করাতে হয়। অনেক সময় অনলাইনে শিক্ষাভিত্তিক আলোচনা থাকে। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে বেশির ভাগ সময় বিষয়ভিত্তিক আলোচনা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মহামারি করোনাকালে শিক্ষার্থীরা যাতে না ঝরে পড়ে, সেক্ষেত্রে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা খুবই কার্যকরী। তবে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণে গতিশীল মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা জরুরি। ‘দাকোপে গতিশীল মোবাইল টাওয়ার চাই’ গ্রুপটির ফোকাল পারসন অসীম ঘরামী বলেন, আমরা মূলত শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করি। তারই অংশ হিসেবে করোনাকালীনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইনমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা আলোচনা করে অনলাইনভিত্তিক একটি প্ল্যাটফরম গঠন করেছি। সেখানে আমাদের দাবি প্রযুক্তির ব্যবহার করে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার আগে প্রযুক্তিব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে উপকূলের শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির মাধ্যমে সব কাজে অংশ নিতে পারবেন। এদিকে, দাকোপের মতো খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটার চিত্রও একই।
খুলনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিভা রানী পাঠক বলেন, অনলাইনের শিক্ষা সুবিধা সবাই পাচ্ছে না। প্রত্যন্ত এলাকায় অনলাইন শিক্ষা পেতে গেলে একটি স্মার্ট মোবাইল ফোন লাগে। দারিদ্র্যতার কারণে অনেকেই স্মার্ট ফোন কিনতে পারছে না, আবার যাদের স্মার্ট ফোন আছে তারাও দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারছে না। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এখন শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইন দিয়ে শিক্ষার মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
সূত্র ঃঃ দৈনিক ইত্তেফাক
শিক্ষাবার্তা/ বিআ