ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের একদফা দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন। শত শত শিক্ষক ঢাকায় এসে অনেকটা মানবেতরভাবে তারা রাতদিন অবস্থান করছেন। দাবি আদায়ের জন্য রাজপথকে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো আশ্বাস পাননি। তাদের আশা ছিল, সরকার তাদের কষ্টের কথা শুনবে, বুঝবে। অথচ, সরকারের তরফ থেকে অনেকটা সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থায় কয়েক হাজার কোটি টাকার এ রকম দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়। আন্দোলনরত শিক্ষকরাও এমন কথা শুনতে নারাজ। তাদেরও সাফ কথা, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সঙ্গে সরকার পদে পদে অন্যায় ও বৈষম্য করে আসছে। এবার তারাও দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবেন না। সুষ্ঠু সমাধান না হলে তারা আমরণ অনশন করবেন।
যে ইস্যুতে, যে পর্যায়েরই হোক শিক্ষকদের পাঠদান বন্ধ রেখে রাস্তায় নামা মোটেই কাক্সিক্ষত নয়। আমরা মুখে বলছি, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু, এই কারিগরদের রোদ-বৃষ্টিতে রাজপথে, প্রেসক্লাবের সামনে দাবিনামা নিয়ে সরকারের দয়ার জন্য এমন কাঙ্গালীপনা কি মানায়? মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনের মাঠে শিক্ষকদের পরিণতি দেখে এ প্রশ্নটি শুধু প্রাসঙ্গিক নয়, কষ্টেরও। দেশে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০ হাজার ৯৬০টি। বিপরীতে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬৮৪টি। সরকারি-বেসরকারি মিলে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২ লাখ। শিক্ষক প্রায় ৩ লাখ। মাধ্যমিক শিক্ষকদের যে বেতন-ভাতা, তা দিয়ে পরিবার চালানো বেশ কষ্টসাধ্য। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। একই কারিকুলামের অধীনে থেকেও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বিশাল বৈষম্য।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণের অন্তরায়। যতদিন পর্যন্ত একটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ হতে ২৫ এ সীমাবদ্ধ রাখতে ব্যর্থ হবো ততদিন আমরা শিক্ষার শতভাগ সুফল পাবো না। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ না করে দুই বা ততোধিক শাখায় পাঠদানের ফলেও শিক্ষার মান ক্রমশ নি¤œগামী হচ্ছে। দেশে প্রচলিত কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইংরেজি ভার্সনের উপর সরকারের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ নেই। এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল কারিকুলামের বাইরে গিয়ে স্বেচ্ছাধীনভাবে অতিরিক্ত বিষয়ের পাঠদান করে শিক্ষার্থীদের মেধা-মনন নষ্ট করছে। উপরন্ত বাজারের গাইড বইগুলো শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রতিভার প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দেখভালের দায়িত্ব কখনো রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উপর কখনো স্থানীয় সমাজপতিদের উপর দেয়ার কারণে সঠিক তত্ত্বাবধান ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা বাঞ্ছনীয়।
শিক্ষকদের জীবনমানে বৈষম্যের অবসান না ঘটিয়ে শিক্ষার উন্নয়ন কী করে সম্ভব? আমরা ভুলে যাই, মায়ের পুষ্টি সাধন নিশ্চিত না করলে, শিশু অপুষ্টির শিকার হবে। হচ্ছেও তাই। এই বৈষম্যের কারণে শিক্ষকতায় মেধাবীরা আসছে না। এছাড়াও সরকারের ডিজিাটাল দেশ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে হবে