জাবির নতুন প্রক্টর হওয়ার দৌড়ে যারা এগিয়ে
ঢাকাঃ সাম্প্রতিক বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্লাটফর্ম নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ। গত কয়েকদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে দিনব্যাপী অবরোধসহ লাগাতার আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত সপ্তাহের বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম ১৮ মার্চের মধ্যে প্রক্টরের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন অথবা উপাচার্য তার ক্ষমতাবলে অব্যাহতি দিবেন বলে আশ্বাস দেন। এছাড়া দায়িত্ব পালনকালে আ স ম ফিরোজ উল হাসান নানা সময় বিতর্কে জড়ানোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও ছাত্র শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারণী এই পদে নতুন কাউকে দায়িত্ব প্রদানের কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান ইতোমধ্যেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। নতুন প্রক্টর নিয়োগের বিষয়টি সামনে আসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহলে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কে হচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রক্টর? এমন প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মুখে মুখে। ইতোমধ্যে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাব্য তালিকায় উঠে এসেছে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ এই পদের দৌড়ে এগিয়ে আছেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইখতিয়ার উদ্দিন ভুঁইয়া। বর্তমানে তিনি সহকারী প্রক্টর ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের ওয়ার্ডেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি সিওয়াইবি, টিআইবি ইয়েস গ্রুপ ও ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত ভর্তি পরীক্ষায় সহকারী প্রক্টর হিসেবে শৃঙ্খলার দায়িত্বে থেকে চমক দেখিয়েছিলেন তিনি।
প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়নে কী ধরনের পদক্ষেপ নিবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যে শিক্ষার্থীবান্ধব কাজগুলো করি সেগুলো অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটির প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই কাজ করি। আমি কাউকে খুশি করার জন্য কাজ করিনা। একজন শিক্ষক ও দেশের নাগরিক হিসেবে আমার কমিউনিটির প্রতি সম্পূর্ণ দায়বদ্ধতা আছে। এই সেন্স থেকেই আমি কাজগুলো করি। তাই আমি যেহেতু দায়িত্বে আছি সেগুলো বাস্তবায়ন করা আমার পবিত্র দায়িত্ব। আমি যেখানেই থাকি বা যে ফর্মেই থাকি আমার কাজ অব্যাহত থাকবে।
সূত্র মতে, সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তপন কুমার সাহা। তিনি ইতঃপূর্বেও এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটকালীন এই সময়ে এ শিক্ষককে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন অনেকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের সঙ্গে দূরত্ব থাকায় প্রক্টর হওয়ার দৌড়ে তিনি কিছুটা পিছিয়ে পড়তে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে।
আলোচনায় আছেন লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান। তিনি ইতোমধ্যে সফলতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও পরিবহণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া তিনি সম্প্রতি সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, গুরুত্বপূর্ণ এই পদে নিয়োগ পেতে অনেকে দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। এ তালিকায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিস্টিকস অ্যান্ড ডাটা সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর কবির। গুরুত্বপূর্ণ এই পদে নিয়োগ পেতে চালাচ্ছেন জোর প্রচেষ্টা। সম্প্রতি নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় সকল অনুষ্ঠানে। এই অধ্যাপক ইতঃপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বর্তমানে শহীদ তাজউদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষের পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া প্রক্টর হওয়ার জন্য পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক তাজউদ্দীন সিকদার, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সিকদার জুলকারনাইন, নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিবুর রৌফ শৈবাল প্রমুখও জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে উপাচার্যের কার্যালয়ের বেশ কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধান রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ এই পদটিতে যোগ্য ব্যক্তিদেরই প্রত্যাশা করছেন অংশীজনরা। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা বিধানের মূল দায়িত্ব প্রক্টরের। যেকোনো আন্দোলন, সংগ্রামের মোকাবিলায় জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে প্রক্টরকে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ কাউকে এ পদে নিযুক্ত করা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্লাটফর্ম নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ। এই মঞ্চের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, ‘আমরা এমন একজনকে প্রক্টর হিসেবে চাই যিনি ক্লিন ইমেজের। ফিরোজ স্যারের মতো প্রক্টর হওয়ার আগে জেল খাটা ও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের অভিযুক্ত কাউকে নয়। আমরা এমন একজনকে চাই যিনি সৎ ও সাহসী। যিনি যেকোনো চাপে ভয় পায় না এরকম মানুষ আমরা চাই।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রথমত যিনি ছাত্রবান্ধব, ছাত্রদের বিষয়গুলো ভালোভাবে দেখবেন এমন ব্যক্তি প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত ক্যাম্পাস মাদকে ভরে গেছে। প্রক্টর ভাইটাল পদ। তিনি নানাভাবে মাদকমুক্ত করতে পারেন। সেরকম একটি ব্যক্তি প্রয়োজন, যিনি ক্যাম্পাসটাকে ভালো রাখবেন। আমি নিজেও প্রক্টর ছিলাম। ক্যাম্পাসে যা কিছুই ঘটে তা প্রক্টরের নজরে আসে। প্রক্টর চাইলে ক্যাম্পাসটাকে সুষ্ঠু রাখতে পারে। যারা ইয়াং, অনেস্ট, ডায়নামিক ও ক্যাম্পাসটাকে ভালোবাসে এমন ব্যক্তিকে চাইলেই এই পদে নিয়োগ দেওয়া যায়। এমন ব্যক্তি আছেও। এক্ষেত্রে স্টুডেন্টদেরকেও তাকে সহযোগিতা করার মনোভাব থাকতে হবে।’
একই বিষয়ে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নুহু আলম বলেন, ‘আমি চাই পুরোপুরি শিক্ষার্থী বান্ধব একজন শিক্ষক প্রক্টর হবেন। আমরা চাই না আমাদের নিয়ে কোনো নেতিবাচক সংবাদ হোক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে চাই। যিনি শিক্ষার্থীকে দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে গিয়ে শিক্ষার্থী হিসেবেই বিবেচনা করবে এমন একজন প্রক্টর হলে ভালো হয়। যেকোনো সমস্যা-সংকটে শিক্ষক-শিক্ষার্থী একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা, সহানুভূতি থাকবে এমন প্রক্টর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার চাওয়া।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৮/০৩/২০২৪