জাতীয়করণ: স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দলে দলে ঢাকায় আসছেন শিক্ষকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে রাজধানী ঢাকায় কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকরা। জাতীয়করণের দাবিত তারা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে তৃতীয় দিনের মতো লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
রবিবার বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) আয়োজনে কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষকরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এরপর বিকেল ৪টার পর অবস্থান কর্মসূচির লক্ষ্যে তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের দিকে রওনা দেন।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষকরা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, দাবি আদায়ে প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রথম দিনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ প্রশাসন থেকে বাধা দেওয়া হয়েছে। এরপর মাইক ও ব্যানার নিয়ে গেছে, হয়রানির পাশাপাশি আমাদের সঙ্গে দূর্ব্যবহার করেছে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে এখন সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পর, অনেক জেলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ও মাধ্যমিক থানা অফিসের সামনে বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেওয়া এবং হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে। যত বাধাই আসুক, আমাদের ন্যায্য দাবি থেকে এক পা-ও পেছাব না।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া বলেন, 'বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষকরা ঢাকায় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। আজ যারা আসতে পারেননি, আগামীকাল তারাও এসে কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
কর্মসূচির পাশাপাশি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। এর আগে বিভিন্ন স্থানে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার কোনও আশ্বাস পাইনি।'
তিনি আরও বলেন, 'মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করার এক দাবিতে আমরা রাস্তায় নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষক রাস্তা ছেড়ে ঘরে ফিরে যাবেন না।
শিক্ষকদের দাবি, দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। পরিতাপের বিষয় আমরা এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া, ২৫ শতাংশ উৎসবভাতা এবং ৫শ টাকা চিকিৎসাভাতা পাই। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।
এছাড়া, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের এক ধাপ নিচে দেওয়া হয়। সহকারী প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল না দেওয়ার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার আগেই অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। কয়েক বছর ধরে কোনো ধরনের সুবিধা না দিয়েই অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নোয়াখালী, বরিশাল, পাবনা, কুমিল্লা, কক্সবাজার, সিলেট, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, খুলনাসহ দেশের প্রায় সব জেলার স্কুলে শিক্ষকরা তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করছেন। রবিবার রাতে অন্তত দশটা জেলা থেকে শিক্ষকরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।
এর আগে শনিবার (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) এই চলমান কর্মসূচীর আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন জাতীয়করণ প্রত্যাশী দশটি শিক্ষক সংগঠন। একাত্মতা প্রকাশ করা শিক্ষক সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন (বাশার, জসিম), বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি ফোরাম (সাইদুল ইসলাম), এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরাম (বাশিফ), বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস), বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (প্রিন্স), জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট, বেসরকারি ভোকেশনাল শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ ও বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম (অপর অংশ)।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়