জাতীয়করণ: প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ধাওয়া পুলিশের
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ধাওয়া দিয়েছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তা দখল করে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তা অবরোধ করায় এই রাস্তা দিয়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১৭ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে শিক্ষকদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দুইদিকের রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। ফলে প্রেস ক্লাবের সামনের দুইদিকের রাস্তা দিয়েই যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে প্রেস ক্লাবের গেট সংলগ্ন রাস্তা আটকিয়ে আন্দোলন করছিলেন শিক্ষকরা। এতে রাস্তার একদিক দিয়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে অন্যদিক দিয়ে যানচলাচল করছিল। কিন্তু আজ দুইদিকের রাস্তা বন্ধ করে দেন শিক্ষকরা। এতে রাস্তার উভয় দিক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
তারা জানান, যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েন। আবার রাস্তা আটকে শিক্ষকরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে দুপুর ১টার দিকে রাস্তা থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে দিতে ধাওয়া দেয় পুলিশ। শিক্ষকদের ধাওয়া দিয়ে পল্টন মোড় পর্যন্ত নিয়ে যায় পুলিশ।
এদিকে, গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলন করে শনিবার থেকে সব বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি। পাশাপাশি দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চলমান লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. বজলুর রহমান মিয়া বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে ১৫ জুলাই থেকে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, একই কারিকুলামের অধীনে একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।
বজলুর রহমান মিয়া আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন। ঠিক তেমনিভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। এ অবস্থায় দেশ ও জনগণের বৃহৎ স্বার্থে দ্রুত জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন, শিক্ষায় বিনিয়োগে ইউনেসকো-আইএলওর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন ও সবার জন্য শিক্ষাগ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি।
এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে একই দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটি। কয়েকশ শিক্ষক এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলেন, আমাদের একটিই দাবি, মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথেই অবস্থান করবো।
শিক্ষকরা বলেন, বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। এছাড়া বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।