‘গার্হস্থ্য অর্থনীতি’ কেন পড়বেন? ক্যারিয়ার কোথায়?
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অঙ্গীভূত গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ক ছয়টি কলেজ রয়েছে। ছয়টি কলেজ হলো- গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্স, বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, ন্যাশনাল কলেজ অব হোম ইকনমিক্স, ময়মনসিংহ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, আকিজ কলেজ অব হোম ইকনমিক্স ও বরিশাল হোম ইকনমিক্স কলেজ। এই ছয়টি কলেজের অধীনে মোট বিষয় রয়েছে পাঁচটি। চলুন জেনে নেওয়া যাক পাঁচটি বিভাগের অধীনে কী কী পড়ানো হয়? এই পড়ালেখার ক্যারিয়ার কোথায়?
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান
বর্তমান বিশ্বে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে যে বিষয়গুলোর প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে তার মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান অন্যতম। এই বিষয়টিতে ফলিত পুষ্টি, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, গণপুষ্টি, পথ্যবিদ্যা, উচ্চতর পুষ্টিবিজ্ঞান, ক্লিনিক্যাল ও থেরাপিউটিক নিউট্রিশন, জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি এবং গবেষণাসহ গুরুত্বপূর্ণ ও যুগোপযোগী কোর্সসমূহের তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক জ্ঞান দেওয়া হয়ে থাকে। এই বিভাগে অধ্যয়ন করে শিক্ষার্থীরা পুষ্টিবিদ, পথ্যবিদ্যা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক গবেষক, শিক্ষক, খাদ্য ব্যবস্থাপক হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করতে পারে।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনারশিপ
সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিষয়টিকে পারিবারিক জীবনের প্রশাসনিক ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করা যায়। এ বিষয়ে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার, জ্বালানীর সংকট দূরীকরণে বিকল্প সম্পদের ব্যবহার, এন্ট্রাপ্রেনারশিপ, ভোগ অর্থনীতি, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, সাংগঠনিক আচরণ এবং সর্বক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার শিক্ষা দেওয়া হয়। এছাড়া দেশে সম্পন্ন ব্যবস্থাপনা, গৃহায়ন সমস্যার সমাধানে গবেষণালব্ধ শিক্ষা, হাউজ প্লান, ইন্টেরিয়র ও এক্সটেরিয়র ডিজাইন সম্পর্কে জ্ঞান দান এ শিক্ষার অন্যতম দর্শন। বিষয়টির জ্ঞান বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, ব্যবসায় প্রশাসন, পরিবেশ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান, ইন্টেরিয়র ডিজাইন ইতালি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ক্ষেত্র তৈরি করে এবং যে কোনো প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে কাজের সুযোগ তৈরি হয়। এ বিভাগে ছাত্রীরা আবাসিক গৃহে অবস্থান করে। ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সব বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষা গ্রহণ করে। বর্তমানে প্রথম বর্ষ থেকে এমএস পর্যন্ত প্রতিটি বর্ষে উদ্যোক্তা সংক্রান্ত ব্যবহারিক জ্ঞান দান করা হয়। যার ফলে ছাত্রীরা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে পারে।
শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক
শিশুর জন্মপূর্ব বিকাশ হতে শুরু করে জন্ম পরবর্তী সময় পর্যন্ত মানব জীবনের প্রত্যেকটি ধাপের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠদান করা হয়। এই বিভাগের শিক্ষাক্রম থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বয়সী শিশুর বৈশিষ্ট্য, নৈতিক ও সামাজিক বিকাশে সমবয়সী দলের প্রভাব, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু সনাক্তকরণ ও পরিচালনা বয়ঃসন্ধিক্ষণ বয়সের পরিবর্তন, শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি শিশুর বিকাশে পরিবেশের প্রভাব ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করে থাকে। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিশুদের কল্যাণে নিয়োজিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা (যেমন- ইউনিসেফ, সেভ দ্যা চিলড্রেন, ইউএনডিপি, আইএলও), শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু বিকাশ কেন্দ্র, মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেনা, ডে কেয়ার সেন্টার, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর শিক্ষা ও পরিচালনা কেন্দ্র, ইসিডি বিষয়ক বিভিন্ন এনজিও ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করে।
শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি শিল্পকলা ও সৃজনশীলতার অস্তিত্ব থাকে তবেই পরিপূর্ণভাবে সফলতা অর্জন সম্ভব। এই বিভাগের মূল উদ্দেশ্যই হল জীবনকে অর্থবহ ও কার্যকরী করে তোলা। এটি এমন একটি বিভাগ যেখানে বর্তমান যুগের অত্যন্ত চাহিদা সম্পন্ন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- গ্রাফিক্স ডিজাইন, ফ্যাশন ডিজাইন, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, আইসিটি প্রভৃতি। শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিভাগের সব শিক্ষা কার্যক্রম (তত্ত্বীয়, ব্যবহারিক, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, গবেষণা, ফিল্ড ওয়ার্ক, উপস্থাপনা, প্রদর্শনী, শিক্ষা সফর ইত্যাদি) তাদের ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রের সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করে সর্ব পর্যায়ে শিক্ষকতা, গবেষণা, কুটির শিল্প সংস্থা, বিজ্ঞাপন সংস্থা, যাদুঘর, ডিজাইন সেন্টার, মৃৎশিল্প প্রতিষ্ঠান, তাঁতশিল্প প্রতিষ্ঠান, টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি, টেক্সটাইল প্রিন্টিং সেন্টার, ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং, ফ্যাশন ডিজাইনিং এ ক্যারিয়ার করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি এ বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীরা নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে থাকে।
বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বরন শিল্প
বহির্বিশ্বে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং বাংলাদেশে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের বিপুল প্রসার ঘটায় এই বিভাগের গুরুত্ব অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই যুগোপযোগী শিক্ষার শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে টেক্সটাইল ফাইবার, ইয়ার্ন অ্যান্ড ফেব্রিক ম্যানুফেকচারিং টেকনোলজি, অ্যাপারেলস প্রোডাকশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ফ্যাশন ডিজাইনিং, মার্চেন্ডাইজিং, ফ্যাশন মার্কেটিং, ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, টেক্সটাইলস অ্যান্ড কম্পিউটার সিস্টেমসহ বিভিন্ন বিষয়সমূহ। এসব বিষয়ের জ্ঞান শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বন্ধ ও পোশাক শিল্প, টেক্সটাইল অ্যান্ড ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন ক্ষেত্রে (ফ্যাশন ডিজাইনিং, মারচেন্ডাইজিং, ডাইং ও প্রিন্টিং, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন) কাজে সুযোগ সৃষ্টি করে। মূলত এ কর্মমূখী শিক্ষা কর্মক্ষেত্র বাছাইয়ে অত্যন্ত সহায়ক।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়