কুরবানির তাৎপর্য ও শিক্ষা
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানি নির্ধারণ করেছি। যেন তারা আল্লাহর দেয়া চতুষ্পদ পশুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের ইলাহ তো এক আল্লাহ। অতএব তোমরা তারই অনুগত থাক এবং (হে নবী) আপনি সুসংবাদ দিন বিনয়ীগনকে। (সূরা হজ : ৩৪)
নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা মুত্তাকীদের কোরবানিই কবুল করেন। (সূরা মায়িদা : ২৭ )
কুরবানি আরবি শব্দ এর শাব্দিক অর্থ হল- সৎকাজ করা, সন্নিকটে যাওয়া, ঘনিষ্ঠ হওয়া, উৎসর্গ করা, নৈকট্য অর্জন করা, কাছাকাছি যাওয়া ইত্যাদি । পারিভাষিক অর্থে ‘কুরবানি’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা যায়। কারো মতে
যে বস্তু ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় তাকে কুরবানি বলে।
প্রচলিত অর্থে, ঈদুল আযহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইসলামি তরীকায় যে পশু যবেহ করা হয়, তাকে ‘কুরবানি’ বলা হয়।
কুরবানি অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ আমল। হাদীস শরীফে আছে, হযরত যায়দ ইবনু আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, কুরবানি কি? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর সুন্নাত। সাহাবায়ে কিরাম আবার আরয করলেন, এতে আমাদের কি কল্যাণ/ নেকী নিহিত রয়েছে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী রয়েছে। তোমরা মোটা তাজা পশু যবেহ করো। কেননা এগুলো পুলসিরাতে তোমাদের বাহন হবে (ইবনু মাজাহ)।
হযরত আয়িশা (রা.) বর্ণিত অপর এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ঈদের দিনে আদম সন্তানের সর্বোৎকৃষ্ট আমল হলো কুরবানি করা। কুরবানিদাতা কিয়ামতের দিন কুরবানিকৃত পশুর শিং, লোম ও হাড়গুলোসহ উপস্থিত হবে। নিংসন্দেহে কুরবানির উদ্দেশ্যে যবেহকৃত পশুর রক্ত যমীনে পড়ার আগেই তা আল্লাহ’র দরবারে কবূল হয়ে থাকে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)
কুরবানি আল্লাহর দরবারে মাকবূল হবার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ শর্ত অবশ্য রয়েছে। আর তা হলো- কুরবানিদাতার নিয়ত অবশ্যই খালিস হতে হবে। কুরবানির মূল উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর ভয় ও তাঁর সন্তুষ্টি। কুরআন মজীদের ভাষ্যানুযায়ী তাকওয়ার ভিত্তিতে কৃত কুরবানিই কেবল কবূল হয়ে থাকে।যেমনটি কুরআনে এসেছে,
নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা মুত্তাকীদের কোরবানিই কবুল করেন। (সূরা মায়িদা : ২৭ )
কুরবানির ইতিহাস
——————–
কুরবানির ইতিহাস কমবেশি অনেকেরই জানা। কোন্ প্রেক্ষিতে কিভাবে কুরবানি শুরু হলো তাঁর সুদীর্ঘ বর্ণনা মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও হাদীসে নববীতে রয়েছে। হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর পুত্র ইসমাইল (আ.) যখন একটু বড় হন তখন ইবরাহীম (আ.) স্বপ্নে দেখেন তিনি প্রিয়তম পুত্রকে কুরবানি করছেন। নবীগণের স্বপ্ন ওহী। তাই তিনি স্বপ্নের আলোকে পুত্রকে কুরবানির প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে তিনি এ বিষয়ে পুত্রকেও জিজ্ঞাসা করেন। পুত্রতো ভবিষ্যতের নবী। সুতরাং তিনি কি আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে যেতে পারেন? তিনি সানন্দে জানিয়ে দিলেন যে, পিতাকে যে আদেশ দেয়া হয়েছে তিনি যেন তা প্রতিপালন করেন। সাথে সাথে এ নিশ্চয়তাও দিলেন যে, আল্লাহ চাইলে পিতা তাঁকে এক্ষেত্রে ভীত কিংবা বিচলিত পাবেন না বরং ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। আল্লাহর নির্দেশমতো ইবরাহীম (আ.) যখন প্রিয়তম পুত্রকে কুরবানি করার জন্য মাটিতে কাত করে শোয়ালেন তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে তা কবূলের সুসংবাদ পেলেন। তখন আল্লাহর নির্দেশে পুত্রের স্থলে একটি দুম্বা কুরবানি করলেন। ইবরাহীম (আ.)-এর প্রতি কুরবানির এ নির্দেশকে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ‘স্পষ্ট পরীক্ষা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং সে পরীক্ষায় বিজয়ী হবার ফলে পুত্র কুরবানির মতো বড় বিষয় থেকে তাঁকে মুক্তি দিয়েছেন। আর এ মহান ত্যাগের স্মৃতিকে পরবর্তীদের মধ্যে আল্লাহ স্থায়ী করে দিয়েছেন কুরবানির বিধান প্রবর্তনের মাধ্যমে। ফলে আজো মুসলিম জাতি ঈদুল আযহায় পশু কুরবানীর মাধ্যমে সে কুরবানির স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানোর পাশাপাশি নিজেরাও ত্যাগের নজরানা পেশ করতে সচেষ্ট হয়।
কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী
———————–
নিন্মোক্ত শর্তসাপেক্ষে কুরবানী ওয়াজিব হয়। যেমন-
১.মালিকে নিসাব বা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। যাকাত, ফিতরা ও কুরবানির নিসাব একই অর্থাৎ সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা সোনা কিংবা সমমূল্যের টাকা বা ব্যবসায়িক মাল থাকা। কোনো স্বাধীন, জ্ঞানবান, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান যদি উপরোক্ত পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।
২. মুসলমান হওয়া। সূতরাং কাফিরের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
৩. মুকীম হওয়া, মুসাফির না হওয়া।কারণ মুসাফিরের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। তবে কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য পূর্ণ সময় মুকীম (মুকিম অর্থ হলো- নিজ বাসস্থানে বা নিজ এলাকায় অবস্থানকারী)হওয়া শর্ত নয়। যদি কোনো ব্যক্তি প্রথম ওয়াক্তে মুসাফির থাকে আর শেষ ওয়াক্তে মুকীম হয়ে যায়, তাহলে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব হবে। এমনভাবে যদি শুরুতে মুকীম থাকে পরে সফর করে, শেষে আবার মুকীম হয়ে যায়, তাহলে তার উপরও কুরবানি করা ওয়াজিব। এ হুকুম তখন প্রযোজ্য হবে যখন সে কুরবানির পশু ক্রয় করার পূর্বে সফর করবে। মালিকে নিসাব ব্যক্তি যদি দশই যিলহজ্জের পূর্বে কুরবানির নিয়তে কোনো পশু ক্রয় করে এবং ঐ তারিখের পূর্বেই সফরে বের হয় তবে কুরবানি করা না করা তার ইচ্ছাধীন। ইচ্ছা করলে সে ঐ পশু বিক্রয় করে ফেলতে পারবে। আর যদি দশই যিলহজ্জের পরে পশু ক্রয় করে সফরে বের হয় তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে মালিকে নিসাব নয় এমন ব্যক্তি যদি ঐরূপ করে তবে তার ঐ পশু দিয়ে উভয় অবস্থায় কুরবানি করা ওয়াজিব। ( ফাতুয়ায়ে আলমগীরী, ৫ম খণ্ড)
যে পশু দিয়ে কুরবানি করা যাবে
—————–
নির্দিষ্ট পশু দিয়েই কুরবানি করা আবশ্যক।
ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ, উট দ্বারা কুরবানি করতে হবে । এগুলো ছাড়া অন্য কোনো পশু দ্বারা কুরবানি জায়িয নয়। (হিদায়া, ৪র্থ খণ্ড)
ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কুরবানির জন্য এক বছরের হওয়া জরুরী। যদি ছয় মাসের দুম্বা বা ভেড়া এরূপ মোটা তাজা হয় যে, দেখতে এক বছরের মতো মনে হয় তাহলে এ ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানি করা জায়িয। ছাগল যত মোটা তাজাই হোক না কেন এর জন্য এক বছর পূর্ণ হওয়া জরুরী। এক বছর থেকে একদিন কম বয়সী হলেও এর দ্বারা কুরবানি করা জায়িয হবে না। ( ফাতুয়ায়ে শামী, ৫ম খণ্ড)
গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর হওয়া আবশ্যক। এর চেয়ে একদিন কম বয়সী হলেও কুরবানি সহীহ হবে না। ( ফাতুয়ায়ে শামী, ৫ম খণ্ড)
কুরবানি আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। তাই কুরবানিদাতার উচিত দোষমুক্ত ও মোটাতাজা পশু কুরবানি করা।
একই পশু দ্বারা একাধিক ব্যক্তির কুরবানি করার বিধান।
————————-———-———-———--
গরু, মহিষ বা উট এই তিন প্রকার পশুর প্রত্যেকটিতে সাত ব্যক্তি পর্যন্ত শরীক হয়ে কুরবানি করতে পারবে। তবে এ অবস্থায় কুরবানি জায়িয হওয়ার জন্য শর্ত হলো, কারো অংশ যেন এক সপ্তমাংশ হতে কম না হয়। আর প্রত্যেক শরীককে কুরবানি দ্বারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত রাখতে হবে। যদি তাদের একজনও কেবলমাত্র গোশত খাওয়ার নিয়ত থাকে তবে কারো কুরবানিই হবে না। অনুরূপভাবে যদি কোনো শরীকের অংশ এক সপ্তমাংশ হতে কম হয় তবে সকলের কুরবানিই নষ্ট হয়ে যাবে। ( ফাতুয়ায়ে আলমগীরী, ৫ম খণ্ড)
ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা যত বড়ই হোক না কেন এগুলোতে একাধিক ব্যক্তি শরীক হতে পারবে না। এক একটিকে একজন ব্যক্তির পক্ষ হতে কুরবানি করতে হবে।
কুরবানির পশুর গোশত, হাড্ডি, চামড়ার বিধান।
———-———-———-———-
কুরবানির গোশত আত্মীয় স্বজনকে দিবে, নিজে খাবে এবং ফকীর মিসকীনকে দান করবে। উত্তম হল গোশতকে তিন ভাগ করে একভাগ মিসকীনকে দেওয়া, একভাগ আত্মীয় স্বজনকে দেওয়া আর একভাগ নিজ পরিবারের জন্য রাখা। তবে সম্পূর্ণ গোশত নিজেদের খাওয়াও জায়িয। (শামী ৫ম খণ্ড)
একাধিক ব্যক্তি একটি পশু কুরবানি করলে তার গোশত অনুমান করে ভাগ করা জায়িয নয় বরং ওযন করে ভাগ করে নিতে হবে। তবে গোশতের সাথে মাথা, পায়া, চামড়া ও হাড্ডি মিলিয়ে তা অনুমান করে ভাগ করে নিলে জায়িয হবে। ওযন না করলেও চলবে।
কুরবানির গোশত, হাড্ডি বা মাথা ইত্যাদি কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে কাউকে দেওয়া জায়িয নয়। অনুরূপভাবে কুরবানির পশুর চামড়াও কাউকে কোনো কাজের পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়িয নয়।
কুরবানির চামড়ার প্রাপক হলো গরীব মিসকীন। সুতরাং কোনো মাদরাসা মক্তবের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মুয়াযযিন বা অন্য কোনো কর্মচারীকে বেতন হিসাবে তা দেওয়া জায়িয হবে না। কুরবানির চামড়ার টাকা দিয়ে মসিজদ, মাদরাসা নির্মাণ করা বা মেরামত করা অথবা জনহিতকর কোনো কাজ করা যেমন রাস্তা-ঘাট, পুল ইত্যাদি নির্মাণ বা মেরামত করা জায়িয নেই। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৩য় খণ্ড)
যারা যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত একমাত্র তারাই চামড়ার টাকা পাবে। চামড়া বিক্রি করার পর যে টাকা হাতে আসে তা অবিকল দান করবে। তার মধ্যে পরিবর্তন না করাই শ্রেয়।
(শামী, ৫ম খণ্ড)
কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি না করে ইচ্ছে করলে নিজেও ব্যবহার করতে পারে। যেমন মুসল্লা বানানো, চামড়ার পাত্র ইত্যাদি তৈরী করা। এই চামড়া অপরকে হাদিয়া হিসাবেও দিতে পারে। তবে যদি টাকা পয়সার বিনিময়ে বিক্রি করা হয় তাহলে এর একমাত্র হকদার হবে গরীব মিসকীন। তাদেরকে সাদকা করে দিতে হবে।
কুরবানি করা যেমন সওয়াবের কাজ তেমনি কুরবানি না করার পরিণামও অত্যন্ত ভয়াবহ। সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানী করে না তাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করেছেন। সুতরাং খালিস নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রত্যাশায় আমাদের কুরবানি করা উচিত।
কুরবানির শিক্ষা
————-
কুরবানির নানাবিধ শিক্ষা ও তাৎপর্য রয়েছে, সংক্ষিপ্ত ভাবে এর উপর আলোকপাতের চেষ্টা করবো।
১) আল্লাহর প্রেমে নিজেকে উৎসর্গ করা শিক্ষা দেশ। যেমন করেছিলেন হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর প্রিয় সন্তান হযরত ইসমাইল (আ.)। আল্লাহর প্রেমে উদ্বেলিত হয়ে পিতা যেমনি নিজের প্রাণাধিক পুত্রকে কুরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন পুত্রও তেমনি আল্লাহর নির্দেশ পালনে নির্দ্বিধায় পিতার ছুরির নিচে নিজের গর্দান পেতে দিতে সামান্যতম কুণ্ঠিত হননি। একেই বলে ‘বাপ কা বেটা’
২) পশু কুরবানির সাথে সাথে নিজের ভিতরের পশুত্বকে ও কুরবানি করতে শিক্ষা দেয়।আমরা পশু কুরবানি করলাম কিন্তু নিজের ভিতরের পশুকে কুরবানি করতে পারলামনা এ দেখানো কুরবানি দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা কখনো সম্ভব নয়।
৩) কুরবানি আমাদের ত্যাগ ও উৎসর্গ শিক্ষা দেয়। আমাদের উপর ইসলামের যে বিধানই আবশ্যক হোক না কেনো তা আমাদের যথাযথ ভাবে পালন করতে হবে।আর তা হতে হবে একমাত্র আল্লাহর রাজি-খুশির জন্য
হযরত ইসমাইল (আ.) হযরত ইবরাহীম (আ.) এর অত্যন্ত প্রিয় সন্তান ছিলেন। ইবরাহীম (আ.) প্রথমে সন্তান হচ্ছিল না, ইবরাহীম (আ.) দোয়া করে যাচ্ছিলেন। দোয়ার কবুলের ফসল নেক সন্তান ইসমাইল (আ.)। পিতার মিশন সফলের জন্য উত্তম উত্তরাধিকারী। তবুও, যখন আল্লাহ বললেন তোমার প্রিয় সন্তানকে জবেহ করো। ইবরাহিম (আ.) আদেশ পালনে কোনো অলসতা করলেননা।আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
সুতরাং আমাদেরও, ইসলামের বিধান মানতে যত কষ্টই হোক, সহ্য করতে হবে। ইসলামের জন্য ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যথাসম্ভব ত্যাগ স্বীকারের চেষ্টা করতে হবে।
৪) কুরবানি আমাদেরকে সহীহ নিয়ত তাকওয়া শিক্ষা দেয়।নিয়তের গুণেই কাজ ভালো বা খারাপ হয়। আপনি অনেক টাকা দান করলেন, মাদরাসা বানালেন বা শহীদ হলেন, যদি আপনার এর দ্বারা দুনিয়াবি উদ্দেশ্য থাকে তাহলে এগুলো ভালো কাজ হিসেবে গণ্য হবেনা।
অন্যদিকে যদি আপাতদৃষ্টিতে একটা খারাপ কাজেও ভালো নিয়ত থাকে, তাহলে সেটাই ভালো কাজ হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ কুরবানির বিষয়ে বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের পশুর রক্ত গ্রহণ করবেননা। গোশত গ্রহণ করবেননা। গ্রহণ করবেন তাকওয়া।(সূরা হজ, আয়াত: ৩৭)
গরু বা ছাগল যত বড়ই হোক, সেইটা গ্রহণ করবেননা। গ্রহণ করবেন তাকওয়া, সহীহ নিয়ত। সুতরাং আমাদেরও প্রতিটি কাজে নিয়ত সহি করতে হবে।
৫) কুরবানি আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, শুধু নিজে আল্লাহর বিধান পালন করলে চলবেনা, নিজের অধীনস্তদেরকেও আল্লাহর বিধান পালন করতে বলতে হবে। তাদেরকে মানতে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় ধর-পাকড় থেকে মুক্তি পাওয়া যাবেনা।
হযরত নবীজি (স.) বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই তার অধীনস্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। ইবরাহীম( আ.) তার ছেলেকে জবেহ করতে আদিষ্ট হয়েছিলেন। আদেশটা ছিল তার ছেলে সম্পর্কে। যদি ইসলাম শুধু ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো, তাহলে জবাই করার মত বিষয় নবী হয়ে ইবরাহীম (আ.) আদেশ পালন করতেন না।অথচ তিনি বিনা সংশয়ে আদেশ পালন করেছেন।
এ থেকে বুঝা যায়, ব্যক্তির ক্ষেত্রে তো বটেই, পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ের ইসলামি বিধানও পালন করতে হবে।পরিবার ও সমাজকে আল্লাহর বিধানের দাওয়াত দিতে হবে, চাপ প্রয়োগ করতে হবে।সংশয় ছাড়াই।অন্যথায় দায়িত্বশীলকে পরকালে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
৬)কুরবানি আমাদেরকে সাম্য,সামাজিকতা ও আলাপ-আলোচনা করতে শিক্ষা দেয়। আসলে ইসলাম ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সমাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসলাম সাম্য, সামাজিকতা ও আলাপ-আলোচনার গুরুত্ব দেয়। কেননা এই সুযোগ না দিলে, পরিণামে,ব্যক্তিতন্ত্র কায়েম হয়।
ইবরাহীম (আ.) ইসমাইল (আ.)কে জবেহ করার বিষয়ে দায়িত্বশীল ছিলেন। তিনি নবী, আদেশ প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তবুও, প্রয়োগের আগে তিনি ছেলের অনুমতি নিয়েছেন “বাবা আমি তো স্বপ্নে দেখেছি, আল্লাহ আদেশ করেছেন, যাতে তোমাকে জবাই করি, তুমি কি বল ?” এই তো দায়িত্বশীলদের অধীনস্তদের সাথে সম্পর্ক, অনুমতি ও পরামর্শ।
৭) কুরবানি আমাদেরকে ধৈর্য শিক্ষা দেয়। আমরা যদি ত্যাগ স্বীকার করতে চাই, নিয়ত শুদ্ধ করতে চাই বা আমার অধীনস্তের উপর আল্লাহর বিধান প্রয়োগ করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে অবশ্য ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আমাদের নানা বাঁধা আছে,নাফছানি খাহেশাত, শয়তানে মালউন দোকা , দুষ্ট মানুষ, কঠিন পরিবেশ ও প্রতিবেশি, সবই আমাদের সামনে বাঁধার সৃষ্টি করে। এসব বাঁধার সামনে অঁটল থাকার জন্য আমাদের সবর করতে হবে।৮)কুরবানি পরিশুদ্ধ জীবন গঠনের শিক্ষা দেয় । এর মাধ্যমে মুসলমান তাওহীদী আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে ইখলাস, তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের অপূর্ব নজির স্থাপন করতে পারে।
পরিশেষে পবিত্র কুরআনের সুরা আনআম এর ১৬২ নং আয়াত দিয়ে শেষ করতে চাই,
আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে।
মাওলানা মো. নূরুজ্জামান
সিনিয়র শিক্ষক
খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
গফরগাঁও, ময়মনসিংহ
ইমেইল :[email protected]