কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সরানোর দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের
ফেনীঃ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক ও সমমান (এসএসসি) পরীক্ষা। যা শেষ হবে মার্চ মাসের ১২ তারিখ। ফেনী কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ হলেও মাধ্যমিক পর্যায়ের এসএসসি পরীক্ষায় এ কলেজে অনুষ্ঠিত হওয়ায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে।
পাশাপাশি অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষাসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা ও সরকারি ছুটির কারণে বছরের অর্ধেক সময় বন্ধ রাখতে হয় শ্রেণি কার্যক্রম। এতে ব্যাহত হয় কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ডিগ্রীর প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থীর শ্রেণি কার্যক্রম।
কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছে বছরের বেশিরভাগ সময় কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, এসএসসি, এইচএসসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষাসহ সরকারি বিভিন্ন ছুটির কারণে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এরমধ্যে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পড়লে আরও ১ মাস বাড়তি সময় ক্লাস হয়না। এ কারণে কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র অন্যত্র সরানোর দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে শিক্ষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলো নেয়া সম্ভব হলেও পাবলিক পরীক্ষা হলে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ফলে ক্লাস নেয়ার সুযোগ থাকেনা।
ফেনী কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় কেন্দ্র সরানোর দাবি জানিয়ে কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী শফিকুল আলম বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ হলেও স্কুল পর্যায়ের এসএসসি পরীক্ষা এ কলেজে অনুষ্ঠিত হওয়ায় বছরের শুরুর দিকে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে আমরা ভোগান্তিতে পড়ি। সারাবছর কোন না কোন উপলক্ষে ক্লাস হয় না এরমধ্যে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ১ মাস বন্ধ। এটি দেশের কোথাও নেই, শুধুমাত্র আমাদের কলেজেই আছে।
জিয়া উদ্দিন নামে অনার্স চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার জন্য কলেজ বন্ধ রাখা কোন ভাবেই মানানসই না। এখানে পাইলট হাই স্কুল কেন্দ্র কিন্তু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় কলেজে। এমনিতেই কলেজে ঠিকভাবে ক্লাস হয়না এরমধ্যে এসব পরীক্ষা। এরপর রোজা ও ঈদের বন্ধ সবকিছু মিলিয়ে পরীক্ষার আগে আর ক্লাস হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
হাফসা বিনতে ইকবাল নামে আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, কলেজ জানুয়ারি মাসের পর থেকে সারাবছর বন্ধ লেগেই থাকে। এত বন্ধ থাকাতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে খোলা থাকার সময়ে অনেকে ক্লাসে যায় না।
অন্যদিকে শিক্ষকরাও এ সমস্যার পরিত্রাণ চান। তারা বলছেন শিক্ষকরা আগ্রহী হলেও পাবলিক পরীক্ষা থাকলে কিছু করার থাকে না। ফলে যথাসময়ে সিলেবাস শেষ করা যায় না।
কলেজের শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। পাবলিক পরীক্ষা হলে সকাল ৯ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত সময় লাগে। পাশাপাশি অত্র এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। ফলে পরিবেশগত কারণে ক্লাস নেয়া সম্ভব হয় না। তবে যেদিন পরীক্ষা থাকে না সেদিন ক্লাস নেয়ার চেষ্টা করা হয় পাশাপাশি কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা গুলো বিকেলে নেয়া হয়।
তিনি বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করছে ফেনী কলেজকে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র তালিকায় না রাখার জন্য। তবে প্রশাসন ও কুমিল্লা বোর্ড যদি এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয় তবে কলেজের শিক্ষার্থীরাই উপকৃত হবে। তারা শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হবে না।
কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: জহির উদ্দিন বলেন, সরকারি ছুটি ৭৬ দিন সাথে শুক্র-শনি বন্ধের ফলে ৫২ দিন বন্ধ। এরমধ্যে এসএসসি পরীক্ষার বাড়তি ১ মাস বন্ধ পাশাপাশি এইচএসসি পরীক্ষা আছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা আছে সবকিছু মিলিয়ে বছরের অর্ধেক সময় বন্ধের মধ্যেই কেটে যায়।
তিনি বলেন, সারাদেশে একই সিলেবাস হলেও ফেনী কলেজের শিক্ষার্থীদের যথাসময়ে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয় না। এতে শিক্ষকদের আন্তরিকতা থাকলেও কিছু করার থাকে না। ভোগান্তিতে পড়ে কলেজ শিক্ষার্থীরা। আমরাও চাই এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র অন্যত্র সরানো হোক।
এমন অবস্থার পরিত্রাণ চান কলেজের বিভিন্ন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। মোহাম্মদ ফারুক নামে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, মেয়ের ক্লাস সারাবছর বন্ধ থাকে। ২য় বর্ষে ওঠার পর আর ক্লাস হয়না। এতে সে সিলেবাস শেষ করতে পারেনা৷ সরকার প্রাইভেট ও কোচিং ভিত্তিক পড়া বাদ দিতে চাইলেও শ্রেণি কার্যক্রম ঠিকভাবে না হওয়াতে প্রাইভেট ও কোচিং ভিত্তিক পড়াশোনাতেই মনোযোগী হতে হয়।
ফেনী সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইন বলেন, এ বিষয় নিয়ে আমরা শিক্ষকরাও উদ্বিগ্ন। এসএসসি পরীক্ষা হলে ২৫ থেকে ৩০ দিন শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। যা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। বিকল্প কোন জায়গা না থাকাতে এবার কোন সুযোগ নাই। আগামী থেকে চেষ্টা করবে বলে তারা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এসএসসির পর পর রোজা, উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষা। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের শ্রেণি কার্যক্রম ব্যহত হয়।কলেজ প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি। আগামীতে ফেনী কলেজ থেকে এসএসসির কেন্দ্র অন্যত্র সরানোর আহবান জানান তিনি।
এ বিষয়ে ফেনী জেলাপ্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ইতোমধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে গেছে। এ মূহূর্তে কেন্দ্র সরানোর সুযোগ নেই। কেন্দ্র তালিকা, পরীক্ষার রুটিন সবকিছু চলে আসছে। আগামীতে উপজেলা পর্যায়ে ও নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে সবার সাথে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত নিয়ে আশেপাশে অন্য কোন কেন্দ্রের প্রস্তাবনা দিয়ে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, অবশ্যই কলেজের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে আমরা আন্তরিক। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে শিক্ষা কার্যক্রম সুন্দরভাবে চালানোর জন্য আগামীতে ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৮/০১/২০২৪