কয়রায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট তীব্র
খুলনা; বিদ্যালয়ে নেই বিশুদ্ধ পানি, ঝুঁকিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে গভীর নলকূপ থাকলেও সেটি নষ্ট হয়ে আছে। নলকূপগুলো সংস্কারেরও উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। এতে করে বছরের পর বছর ধরে বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা পানির জন্য নিদারুণ কষ্ট করছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী বাসাবাড়িতে গিয়ে তৃষ্ণা মেটায়। অনেকে অনিরাপদ উৎস (খাল, বিল, পুকুর) থেকে পানি পান করে। এতে পানিবাহিত নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে উপকূলীয় কিশোর-কিশোরী ও শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, কয়রা উপজেলায় মোট ১৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪১টিতেই গভীর নলকূপ নেই। বাকি নলকূপগুলোর মধ্যে ১৫টি নলকূপ দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে আছে। ৪০টি নলকূপে আর্সেনিক ও লবণাক্ততার পরিমাণ এতোটাই বেশি যে সেগুলোর পানি পান করা ঝুঁকিপূর্ণ। উপজেলার ৩৫টি বিদ্যালয়ে স্বল্প ধারণক্ষমতার ট্যাংক রয়েছে। সেগুলোতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হলেও চাহিদা পূরণের জন্য তা অতি নগণ্য।
সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন স্কুলে নলকূপের প্লাটফর্ম আছে, নলকূপ নেই। কোনো কোনো স্কুলে নলকূপ আছে, কিন্তু পানি উঠে না। অনেকগুলো নলকূপ একেবারেই অচল অবস্থায় পড়ে আছে। কয়রা মদিনাবাদ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদ সরোয়ার বলেন, তার বিদ্যালয়ে একটি নলকূপ ছিল। কিন্তু সেই নলকূপ থেকে লোনাপানি উঠতো। এখন সেটি একেবারেই অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি এখন দূরের একটি নলকূপ থেকে কলসি ও জার ভরে পানি সংগ্রহ করছেন।
কয়রার দক্ষিণ চান্নির চক শিশু মেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোছিমোন্নেছা বলেন, বিদ্যালয় চলাকালে প্রতিদিন প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের পুকুর থেকে দুই কলস পানি আনা হয়। সেই পানিতে ফিটকিরি দিয়ে পানের উপযুক্ত করা হয়। তিনি আরো বলেন, মাত্র দুই কলস পানি একটি বিদ্যালয়ের জন্য অতি নগণ্য। হড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিরাপদ বর্মণ জানান, পাঁচ বছর আগে তাদের স্কুলের গভীর নলকূপটি নষ্ট হয়ে গেছে। আশপাশে কোথাও গভীর নলকূপও নেই। পানির জন্য অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ঘড়িলাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমেনা খাতুন বলেন, তৃষ্ণা পেলে পাশের বাড়িতে যাই পানি খেতে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে যোগাযোগ করেছি, আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কয়রার উপসহকারী প্রকৌশলী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, কয়রার ১৫টি বিদ্যালয়ের ছাদে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। অন্য দিকে ৩টি ইউনিয়নের কোথাও গভীর নলকূপ বসালেও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় না। এ ছাড়া যেসব বিদ্যালয়ে বহুতল ভবন আছে, সেগুলোতে ওয়াশ ব্লকের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করা সম্ভব। বরাদ্দ পেলে পর্যায়ক্রমে সব বিদ্যালয়ে নলকূপ, পানির ট্যাংক স্থাপন করে পানির সঙ্কট দূর করা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়