এক জেলার অর্ধেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক!
যশোরঃ জেলায় অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্ধেকেই প্রধান শিক্ষক নেই। সেসব বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষকরা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সহকারী শিক্ষকরা সঠিকভাবে পাঠদান করতে পারছেন না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস মতে, যশোরের আটটি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের মোট পদ রয়েছে এক হাজার ২৮৯টি। এরমধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক রয়েছেন ৬৮৬ জন। চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক ৩৩২ জন। এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ২৭১ জন। অভয়নগরে প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১১৭টি। কর্মরত রয়েছেন ৫৭ জন। চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক রয়েছেন ২৯ জন। আর ৩১ জন ভারপ্রাপ্ত। কেশবপুরে প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৫৮টি। কর্মরত রয়েছেন ৯৯ জন। চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ৪২ জন। আর ১৭ জন রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত। চৌগাছায় প্রধান শিক্ষকের পদ ১৩৯টি। কর্মরত রয়েছেন ৭৩ জন। চলতি দায়িত্বে ৩২ জন। আর ৩৪ জন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। ঝিকরগাছায় প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৩১ টি। কর্মরত রয়েছেন ৬৯ জন। ৩১ জন চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন ৩১ জন। বাঘারপাড়ায় প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১০২ টি। কর্মরত রয়েছেন ৫০ জন। চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক ৩২ জন। ২০ জন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। মণিরামপুরে প্রধান শিক্ষকের মোট পদসংখ্যা ২৬৭। কর্মরত রয়েছেন ১২৯ জন। চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক ৭৭ জন। ৬১ জন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। শার্শায় প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১২৫টি। ৫৮ জন কর্মরত রয়েছেন। চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক রয়েছেন ৩৫ জন। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করছেন ৩২ জন। এবং সদর উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ২৫০টি। কর্মরত রয়েছেন ১৫১ জন। চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ৫৪ জন। আর ৪৫ জন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন।
যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সদরের দত্তপাড়া সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর জব্বার জানান, যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই সেখানে বাধ্যতামূলক একজন সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এজন্য তিনি বাড়তি শ্রম দেন। তাকে বিভিন্ন কাজে উপজেলা সদরেও যেতে হয়। আবার নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাতে হয়। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে আগের মতো সময় দিতে পারেন না।
এদিকে কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যারা চলতি দায়িত্ব ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন তাদের বেশিরভাগ কাজের প্রতি আন্তরিক না। তাদের একটাই চিন্তা-পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক আসলে তাদেরতো চেয়ার ছেড়ে দিতে হবে। তাহলে খামাখা কেন বেশি কাজ করতে যাবেন! ফলে, সহকারী শিক্ষকরা ইচ্ছেমতো চলাফেরা করেন। আবার সহকারী শিক্ষকদের কোনোকিছু বলতে গেলে অনেকেই তা আমলে নিতে চান না। তাদের মানসিকতা, সবাইতো সহকারী শিক্ষক! তাহলে কেন চলতি দায়িত্ব কিংবা ভারপ্রাপ্তের কথায় তারা চলতে যাবেন।
আবার অনেক ক্ষেত্রে চলতি দায়িত্ব কিংবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়েই অনেকেই সহকারী শিক্ষকদের ওপর ইচ্ছেমতো ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করেন। আর তখনই বাধে বিপত্তি। অনেক সহকারী শিক্ষক এই ছড়ি ঘোরানো পছন্দ করেন না।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, একজন প্রধান শিক্ষক যেভাবে স্কুল চালাতেন ভারপ্রাপ্তরা সেভাবে চালাতে পারেন না। প্রধান শিক্ষক না থাকায় পাঠদানে কিছুটা বিঘ্ন হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ ভারপ্রাপ্তদের অতিরিক্ত করতে হচ্ছে। ফলে, তারা অনেক কাজই ঠিকমতো করতে পারছেন না। স্কুলের জন্য প্রধান শিক্ষক খুবই জরুরি।
যশোর জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হান্নান বলেন, প্রতি বছরই অনেক প্রধান শিক্ষক অবসরে যান। কিন্তু প্রতি বছর তো প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয় না। এজন্য পদ শূন্য থেকেই যায়। তবে শূন্য পদ পূরণে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৮/০৩/২০২৪