একজন শিক্ষকের চোখে গ্রাম বাংলার রমজান ও ঈদের একাল-সেকাল
।। দিলারা আফরোজ।।
ইসলামের যতগুলো ফরজ ইবাদত আছে তার মধ্যে রমজানের রোজা অন্যতম।এই ইবাদতের প্রস্তুতি,তোড়জোড় সাড়ম্বরে শুরু হয়।একালে হোক আর সেকালে।সেকাল বলতে খুব বেশি দিন আগে নয় এইতো নব্বই দশকের কথাই বলি।
আমরা যখন ছোট,আমাদের রমজান আর ইদ উদযাপন আর বর্তমান প্রজন্মের উদযাপনের অনেক পার্থক্য।সেসময় দেখতাম সারা বছর অপেক্ষার পর রমজান মাস আসলে এক অন্য রকম আমেজ ভেসে বেড়াতো আকাশে বাতাসে।এখনকার মতো রাইস কুকার,প্রেশার কুকার,গ্যাস,ওভেন তখন ছিল না।
মা-চাচিরা রাতে উঠে মাটির চুলায় গরম ভাত-তরকারি রান্না করতো।যৌথ ফ্যামিলির সবাই একসাথে খেতে বসতো।মা-চাচিরা অবশ্য সবাইকে খাইয়ে তারপর নিজেরা খেয়ে নিত।বাচ্চারা রোজা থাকতে পারুক আর না পারুক,মায়েরা ঘুম থেকে তুলে গরম গরম ভাত খাইয়ে দিত।আর দিনের বেলা তিন বেলা খাওয়াতো আর বলতো তোমাদের এক দিনেই তিনটি রোজা হয়।
সারাদিনের রোজা শেষে ইফতারিতে এখনকার মতো হাজার পদের,বাহারী ইফতার তখন ছিল না।তবুও হাতে কাটা সেমাই,লেবু সহযোগে আখের গুড়ের শরবত,বাগানের ফল-ফলাদি,ঘরে তৈরি মুড়ি-চিড়া,বাড়িরপোষা গাভীর দুধ,ঘরে পাতা দই এগুলোই ছিল অমৃত।এখনকার মতো পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ ও ছিল না,আর না ছিল মাইক।
সেচ্ছাসেবী ছেলে ছোকরার দল সেহেরির জন্য ডাকতে ডাকতে যেতো দলবেঁধে।আর চাঁদ রাতে ছিল বাচ্চাদের তুমুল আনন্দের রাত।চাঁদ দেখতে পেয়েই ইদী বা সালামীরজন্য দলবেঁধে বড়োদের পায়ে হাত দিয়ে কদমবুচি।বড়োরাও খুশিমনে সালামী দিত।আর এখনকার মতো টিউব মেহেদীর প্রচলন ছিল না।
গাছের মেহেদী পাতা ছিঁড়ে,পাটায় বেটে,হাত ভরে মেহেদী দেয়া আবার সকালে কার হাতে কতটা রং লেগেছে তাই নিয়ে চলতো কলরব।ভোরে উঠে গোসল সেরে নতুন অথবা পরিষ্কার কাপড় পড়ে, সেজেগুজে,মায়ের রান্না মিষ্টান্ন খেয়ে ঈদগাঁহে যাওয়া।
নামাজ শেষে পাড়ায় পাড়ায় ঘোরাঘুরি,সবাই সবার বাড়ির খাবার খাওয়া।আসলে সেই সময় পারিবারিক সামাজিক সম্পর্কের বন্ধন গুলো ছিল মজবুত।ব্যতিক্রম যে ছিল না তা কিন্তু নয়।তবে,সে সময় সবকিছু যেমন ছিল অকৃত্রিম ,তেমনি সম্পর্ক গুলো ও ছিল অকপট।আর এখন একই বাড়িতে থেকে ও সেই সম্পর্ক,রকমারী খাবার খেয়েও সেই স্বাদ -গন্ধ -মাধুর্য্য হারিয়ে যাচ্ছে।
রমজানের আসল শিক্ষা থেকে আমরা পিছিয়ে কীভাবে বেশি মুনাফা করা যায়,কীভাবে অন্যকে ছোট করে নিজে বড়ো হওয়া যায় সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকি।একাল আর সেকাল নয়,আমাদের সকলের উচিত যথাযথ ভাবে সিয়াম সাধনা করা ও এর শিক্ষা নিজের জীবনে ধারণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা।
লেখক-
সহকারী শিক্ষক
উপন্যাস ও কবিতা লেখক।
২০২৩ সালে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণী শিক্ষক নির্বাচিত।
শিবা/জামান