উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ও জামাতের না
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপি বহাল রেখেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে সিদ্ধান্ত তা হচ্ছে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না। কারণ তার অধীনে কোনো নির্বাচন কখনো অবাধ সুষ্ঠু হয় না।
সুতরাং তার অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। এই সিদ্ধান্ত আমাদের আগেই নেওয়া আছে। বিএনপি এখনো সেই সিদ্ধান্তেই অটুট রয়েছে।’
সোমবার (১৫ এপ্রিল) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিন এসব কথা বলেন।
প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আজ সোমবার। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই, ২২ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং ২৩ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। প্রথম পর্বের ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘আপনারা আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছেন।
কোথায় আমাদের স্বাধীনতা? একই দিনে ভারতের মুম্বাইয়ে যে সিনেমা রিলিজ পায় সেটা ঢাকাতেও রিলিজ হয়, এটা কি স্বাধীনতার নমুনা? ওবায়দুল কাদের সাহেবরা স্বাধীনতার কথা বলেন। আপনারা ক্ষমতায় আসার পর থেকে মনে হয়েছে যে আমরা বোধ হয় একটা পরাধীন দেশে বাস করছি, আমরা পরনির্ভরশীল একটা দেশে বাস করছি। এই কারণেই আজকে দেশের এই করুণ অবস্থা, জনগণের চরম দুরবস্থা, অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা।’
‘বাঙালি জাতিসত্তাকে যারা অস্বীকার করে, বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধকে তারা অস্বীকার করে’―আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘বাঙালি জাতিসত্তা বলতে আপনি কী বোঝাচ্ছেন? বাঙালি বাংলাদেশ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গে আছে, তারা কি মুক্তিযুদ্ধ করেছে? অন্যান্য দেশে যে বাঙালিরা বসবাস করেন তারা তো মুক্তিযুদ্ধ করেননি, তারা তো ভাষা আন্দোলন, রাজনৈতিক সংগ্রাম করেননি। তাহলে আপনি (ওবায়দুল কাদের) কী বোঝাতে চাচ্ছেন?’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের যে বাংলা সেটার একটা স্বতন্ত্র রূপ পেয়েছে।
আমার জাতিসত্তার মধ্যে যে বাংলা, আমার জাতিসত্তার মধ্যে যে ভাষা, আমাদের কৃষ্টি, আমাদের সংস্কৃতি যেটা একভাবে গড়ে উঠেছে, আমাদের খাদ্যাভ্যাস, আমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, আমাদের পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় একধরনের গড়ে উঠেছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের কিছু অঞ্চলে বাংলা ভাষা আছে; কিন্তু তাদের মধ্যে অনেক বিষয়ে পার্থক্য হয়ে গেছে। আমাদের জাতিসত্তার মধ্যে যে বাংলা ভাষা আমরা সেটাকেই আপহোল্ড করব। আমাদের এই অঞ্চলের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে সাংস্কৃতিক ধারা আমরা সেটাকে লালন করি। আপনি তো বিভ্রান্তি তৈরি করছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। আপনি বাংলাদেশের মানুষের বাংলা ভাষা, কৃষ্টি-কালচারের সাথে গুলিয়ে ফেলছেন। আপনি বিতর্ক তৈরি করার জন্য এই কথাগুলো বলছেন।’
ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনার কথা যদি বিশ্বাস করতে হয় তাহলে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমা থাকে না, বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমারেখাকে অস্বীকার করতে হয়। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি বাংলাদেশে বিশ্বাস করে, বিএনপি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে, পাসপোর্টের মধ্যে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, এটা রাখা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, তলে তলে আমরা আঁতাত করছি, অমুক করছি। এই তলে তলের মধ্যে তাদের (আওয়ামী লীগের) অন্য উদ্দেশ্য আছে। এই বাংলাদেশের অস্তিত্ব বাংলার সীমানা। বাংলাদেশের যে স্বাতন্ত্র্য সেটাকে তারা ম্লান করে দিতে চায়, বিলীন করে দিতে চায়। অন্য কারো সাথে তারা মিলিয়ে দিতে চায়। একটি গভীর দুরভিসন্ধির মধ্যে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা আছেন। তাদের বক্তব্য উদ্দেশ্যমূলক, বিভ্রান্তিকর, ইতিহাসবিরোধী, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী, দেশের গণতন্ত্রবিরোধী।’
বিএনপি যুববিষয়ক সহসম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ঢাকার সাবেক কমিশনার আনোয়ার পারভেজ বাদল, বিএনপি নেতা সাঈদ হোসেন সোহেল আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে প্রেরণের ঘটনার নিন্দা জানান রিজভী বলেন, ‘সরকারের নানাবিধ জুলুম-নিপীড়নের যে নকশা সেই নকশা অনুযায়ী তাদেরকে কারা অন্তরিন করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভুঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সস্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও জামাতের শীর্ষ নেতারা জানান ,জামাত এই নীল-নকশার নির্বাচনে যাবে না।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/জামান/১৬/০৪/২০২৪