আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের উপর অসন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়ি পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে আসার সময় বাইরে একদল মানুষ তাকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করে। সুমন ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তার পরিবারের দাবি, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য তাকে তুলে নিয়ে গেছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত যখন সেখানে যান, তখন বাইরে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ‘মায়ের কান্না’ নামের আরেকটি সংগঠন। তিনি যখন ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা তাকে ঘিরে একটি স্মারকলিপি দেবার চেষ্টা করেন।
গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ‘মায়ের কান্না’ নামের সংগঠনটি কুমিল্লার টাউন হল মাঠে একটি সমাবেশ করে। সেখানে উপস্থিতি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক ও কুমিল্লার স্থানীয় সংসদ সদস্য আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন। এই সংগঠনের সাথে সম্পৃক্তরা বলছেন, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিমানবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তাদের পরিবারের সদস্যদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল। সংগঠিনটির কর্মীদের আপত্তিকর আচরণের পর বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বুধবারই জরুরি বৈঠক করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
জরুরি বৈঠকে কী আলাপ হলো? বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার শাহীনবাগের ওই ঘটনার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করেছেন। বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন যে, তিনি তার নিরাপত্তারক্ষীদের পরামর্শে দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করেন। নতুবা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন তার গাড়ি ব্লক করে দেবে বলে আশঙ্কা ছিল।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এতে তিনি ‘খুবই অসন্তুষ্ট’ হয়েছেন। ‘আমি ওনাকে বললাম, আপনার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব আমাদের,’ বলেন ড, মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনার কিংবা আপনার লোকের ওপর কেউ আক্রমণ করেছে? উনি বললেন যে, না। তবে ওনার গাড়িতে হয়তো দাগ লেগেছে।’
‘অসন্তুষ্ট’ আওয়ামী লীগ নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়িতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতি মোটেও ভালোভাবে নেয়নি সরকার। মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেন বিএনপি নেতার বাসায় গেলেন- এ প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আমি সবিনয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিমাসে কতজন গুম হয়, এ চিত্রটা কিন্তু আমরা সিএনএন-এ আমরা শুনেছি। কতজন ধর্ষিত হয় নারী সেটাও আমরা দেখেছি। কতজন খুন হয় সে চিত্রও আমরা দেখেছি। ’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি পিটার হাস সাহেব আপনি বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বর স্মরণ করছেন। যদি দেখতাম আপনি বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গেছেন সেই চিত্রটা বেশি ভালো লাগতো। তার আগেই উনি চলে গেছেন সুমনের বাড়িতে।’