আগুনে পুড়ে স্কুলশিক্ষিকা মা ও এক ছেলের মৃত্যু, আরেক ছেলে হাসপাতালে
রাজশাহীঃ জেলার বাগমারায় আগুনে পুড়ে স্কুল শিক্ষিকা মা ফরিদা ইয়াসমিন (৪৫) ও ছোট ছেলে রাফিউল বাশারের (১৮) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ফরিদার বড় ছেলে ডা. রাশিদুল বাশারের (২৫) শরীরের ২২ শতাংশ পুড়ে গেছে। তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। নিহত ওই স্কুলশিক্ষিকা রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার শিবপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং বাগমারার হাসনিপুর গ্রামের এজাজুল বাশার ওরফে স্বপনের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার ভোরে বাগমারা উপজেলার মাদারিগঞ্জ বাজারের একটি বাড়ির তৃতীয় তলায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ফরিদা ইয়াসমিন দুর্গাপুর উপজেলার শিবপুর বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তার স্বামী এজাজুল বাশার স্বপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিন অপারেটর।
ছেলে রাশিদুল ইসলাম বারিন্দ মেডিকেল কলেজ থেকে এ বছর এমবিবিএস সম্পন্ন করেছেন। ছোট ছেলে রাফিউল এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
হাসপাতালে রাশিদুলের সঙ্গে আছেন তার বন্ধু ডা. মাহমুদ শুভ। তিনি জানান, রাশিদুলের দুই হাত, দুই পা, মুখের কিছু অংশ, ঘাড়, বুক ও কান পুড়ে গেছে। তার শরীরের ২২ শতাংশ পুড়ে গেছে। মা ও ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর তিনি জানেন না। বারবার মা ও ভাইয়ের খোঁজ করছেন।
আহত ডা. রাশিদুল বাশার মুঠোফোনে বলেন, ‘এখন অনেকটা ভালো আছি। দোয়া করবেন।’
স্থানীয়রা জানান, বাগমারার আশা সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দা এজাজুল বাশার তা কিনে নেন। সিনেমা হলের তিনতলায় তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। কয়েকজন ভাড়াটেও ওই বাসায় থাকতেন। সিনেমা হলটির নিচতলা ও দুইতলায় বেশকিছু কক্ষে বিভিন্ন পণ্যের গুদাম ছিল।
নিহতের স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খেয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে তিনতলার বাসায় ঘুমিয়ে পড়েন ফরিদা ইয়াসমিন। ভোরে বাসার দুইতলায় আগুন লাগে। এ সময় আগুন পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। পরে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এ সময় দুই ভাই রাশিদুল বাশার ও রাফিউল বাশার আগুন থেকে বাঁচতে তিনতলা থেকে লাফ দেন। তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
এদিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে ফরিদা ইয়াসমিন আগুনে পুড়ে মারা যান।
নিহতদের স্বজন ও প্রতিবেশী জাকিরুল ইসলাম জানান, আগুন থেকে বাঁচতে তিনতলা থেকে রাশিদুল ও রাফিউল দগ্ধ অবস্থায় লাফ দিয়ে নিচে পড়েন। তাদের দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বাড়ির তিনতলার একটি কক্ষে ফরিদার পোড়া লাশ দেখা যায়।
তিনি আরও জানান, আগুনে পুড়ে গুরুতর আহত রাশিদুল ও রাফিউলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাফিউল মারা যান। তার শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
বাগমারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন, ভবনটির দোতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখানে রান্নার চুলা থেকেই আগুন ধরে যায়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে।
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ফরিদা ইয়াসমিন ও রাফিউল বাশারের মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তাদের লাশ দাফন করা হয়েছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়