অ্যাসাইনমেন্ট – ১ ষষ্ঠ শ্রেণি | বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
পড়ালেখা ডেস্ক :
ষষ্ঠ শ্রেণি । মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কর্তৃক প্রদত্ত ষষ্ঠ শ্রেণির ৩০ কর্মদিবসের পাঠ্যসূচির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট লেখার আগে কয়েকটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। একই মাপের ভালো কাগজে লিখতে হবে। এ ক্ষেত্রে অ৪ সাইজের অফসেট পেপার হলে বেশি ভালো হয়। চারপাশে যথাযথ মার্জিন রেখে লেখা শুরু করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্দেশিত নিয়মে কাভার পৃষ্ঠা তৈরি করে বিষয়ের নাম, শিরোনাম, অ্যাসাইনমেন্ট নম্বর, বিষয় শিক্ষকের নাম, নিজ নাম, শ্রেণি, শাখা, রোল ইত্যাদি স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। লেখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রঙের কলম ব্যবহার করা যাবে। তবে লাল, গোলাপি, কমলা অর্থাৎ লালচে রং ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিটি পৃষ্ঠার নিচে পৃষ্ঠা নম্বর লিখবে। অ্যাসাইনমেন্ট নিজ হাতে সুন্দর হস্তাক্ষরের মাধ্যমে উপস্থাপন করবে। অ্যাসাইনমেন্ট লেখার ক্ষেত্রে পাঠ্য বই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তোমাদের জন্য নমুনা অ্যাসাইনমেন্ট-১ তৈরি করেছেন ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের সহকারী শিক্ষক আফরোজা বেগম
বাংলাদেশের ইতিহাস
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আমাদের আজকের বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের অংশ। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয় ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের মধ্য দিয়ে। পাকিস্তান আমলের পুরো সময়টিতে এ দেশের মানুষ নানাভাবে বঞ্চনা আর নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাই অনেক আন্দোলন ও সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে। তারই ফসল আমাদের এই বাংলাদেশ। বহু মানুষের আত্মত্যাগ ও বীরত্বের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। জাতি অর্জন করেছে বিজয়। ইতিহাসে আমরা পরিচিত হয়েছি বীর বাঙালি ও বিজয়ী জাতি হিসেবে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করেছি। মার্চ থেকে ডিসেম্বর এই ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা এ দেশে লুটতরাজ, হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। বাঙালি ঐক্যবদ্ধভাবে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের কারণ
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি সাধারণ মানুষের ওপর শুরু করে বৈষম্য, শোষণ ও বঞ্চনা। তারা প্রথমেই আক্রমণ করেছিল আমাদের মাতৃভাষার ওপর। এরপর একে একে বৈষম্য চালাতে শুরু করে আমাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও সামাজিক অধিকারের ওপর। ঠিক এই সময়ে আবির্ভাব ঘটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো এক সাহসী, ত্যাগী ও দূরদর্শী নেতার।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন সাহসী, দূরদর্শী নেতার আবির্ভাব। তাঁর নেতৃত্বে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয় এবং স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। উজ্জীবিত জাতি ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে বিজয়ী করে। পাকিস্তানি সামরিক সরকার এ পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ আপসহীন অবস্থান নিয়েছিল তখন।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ ঘুমন্ত বাঙালির ওপর গণহত্যা চালায়। ২৫শে মার্চ মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে একটি বার্তা সারা দেশে পাঠিয়ে দেন। এর পরপরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। স্বাধীনতা ঘোষণার পরই সারা দেশে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের অন্য একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে মুজিবনগর সরকার গঠন। ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। এই সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এই সরকারের রাষ্ট্রপতি। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। মুজিবনগর সরকার গঠনের ফলে মুক্তিযুদ্ধের গতি বৃদ্ধি পায়। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় এবং বিশ্বব্যাপী জনসমর্থন আদায়ে এই সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাহায্য ও সহযোগিতা। ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ সেই দুঃসময়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। আমাদের এক কোটিরও বেশি মানুষ ভিটামাটি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। ভারত আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল।
সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এই বিজয় ছিনিয়ে আনতে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষক, শ্রমিক, রাজনীতিবিদ, ধনী, দরিদ্র, হিন্দু, মুসলিম সব পেশার, সব শ্রেণির বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করেছিল স্বাধীনতার জন্য। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জন করেছিল অনেক ত্যাগ আর অনেক রক্তের বিনিময়ে।
বাংলাদেশের মানব বসতি ও রাজনৈতিক ইতিহাস
প্রাচীন কাল থেকে বাংলাদেশে মানব বসতি ছিল। বর্তমান কালের কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারে তা প্রমাণিত হয়েছে। সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা জেলার কোন কোন অঞ্চল বাংলাদেশের প্রাচীনতম ভূমি। চট্টগ্রামের রাঙামাটি, সীতাকুণ্ড, কুমিল্লার লালমাই, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বর প্রাগৈতিহাসিক যুগের হাতিয়ার যেমন : পাথর ও কাঠের হাতকুঠার, বাটালি, তীরের ফলক প্রভৃতি আবিষ্কার হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগকেই অনেকে প্রস্তর যুগ বলে। প্রস্তর যুগের পরে নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরে তাম্র প্রস্তর যুগের গর্ত বসতির চিহ্ন আবিষ্কার হয়েছে।
ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা এবং রাজবংশের তালিকা
ভারত উপমহাদেশের প্রথম নগর সভ্যতা হচ্ছে সিন্ধু সভ্যতা। তরে এর কোনো চিহ্ন বাংলাদেশে পাওয়া যায়নি। এই সভ্যতা খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০ অব্দে ভারত উপমহাদেশের সিন্ধু, সরস্বতী, হাকরা ইত্যাদি নদ-নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠে। এ সভ্যতার বড় দুটি নগরের একটি হরপ্পা আর অন্যটি মহেঞ্জোদারো।
সিন্ধু সভ্যতা হরপ্পা সভ্যতা নামেও পরিচিত। এটি ভারত উপমহাদেশের প্রথম নগর সভ্যতা। উন্নত নগর পরিকল্পনা দেখা যায় এখানে। নগরের রাস্তা, রাস্তার পাশে ডাস্টবিন, সড়ক বাতি, পানি নেমে যাওয়ার জন্য ড্রেন সব কিছুই ছিল একেবারে সাজানো। শস্য জমা রাখার জন্য বিশাল শস্যাগারও পাওয়া গেছে এখানে।
মহেঞ্জোদারো নগরে আবিষ্কৃত হয়েছে এক বিশাল গোসলখানা। অনেকটা এখনকার সুইমিং পুলের মতো। বিস্তৃত এই সভ্যতায় অসংখ্য সিল পাওয়া গেছে। সিলের গায়ে লিপির মতো চিহ্নগুলোর পাঠোদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এই সভ্যতার পাথরের বাটখারা ও পুঁতিগুলো খুবই আকর্ষণীয়। সিন্ধু সভ্যতায় ছিল আন্তর্বাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্য ব্যবস্থা।
ভারত উপমহাদেশের দ্বিতীয় নগর সভ্যতার নিদর্শন বগুড়ার বরেন্দ্রভূমি মহাস্থানগড়ে এবং নরসিংদীর মধুপুর ভূমি উয়ারী-বটেশ্বরে আবিষ্কৃত হয়েছে। মহাস্থানগড়ে অবস্থিত প্রাচীন নগরটির নাম ছিল পুণ্ড্রনগর। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে পুণ্ড্রনগর গড়ে উঠেছিল। উয়ারী-বটেশ্বরে অবস্থিত আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরটির নাম এখনো জানা যায়নি।
ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন রাজবংশ
সমসাময়িক কালে ভারত উপমহাদেশের ১৬টি বিখ্যাত জনপদের নাম জানা যায়। এই জনপদগুলো ছিল এক একটি পৃথক রাষ্ট্র। ভারত উপমহাদেশের অন্য জনপদগুলোর মৌর্য যুগপূর্ব রাজনৈতিক ইতিহাস অল্পবিস্তর জানা যায়। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশ অংশের ইতিহাস মৌর্য যুগের সম্রাট অশোকের সময় থেকে জানা যায়।
শুঙ্গ ও কুষাণ রাজবংশ
মৌর্য যুগের পর ভারত উপমহাদেশের অনেক অঞ্চলে শুঙ্গ ও কুষাণ রাজাদের শাসন ছিল। বাংলাদেশ অঞ্চলে শুঙ্গ ও কুষাণ যুগের কিছু পোড়ামাটির ফলক আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু শাসন বিস্তারের কোনো নিদর্শন পাওয়া যায়নি।
গুপ্ত রাজবংশ
গুপ্তরা মূলত ভারত উপমহাদেশের উত্তর অঞ্চলের শাসক ছিলেন। বাংলাদেশের উত্তরাংশে পুণ্ড্রবর্ধন ভুক্তি নামে একটি প্রদেশ গুপ্তদের শাসনাভুক্ত ছিল।
শিক্ষাবার্তা/এ/আই