‘অব্যাহতি’ নিলেন মনিপুরের এডহক কমিটির নিয়োগ করা প্রধান শিক্ষকও
ঢাকাঃ আবারও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে রাজধানীর মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে। মাউশির নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র শিক্ষক জাকির হোসেনকে অব্যাহতি দিয়ে হঠাৎ আখলাক আহমেদ নামের একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন এডহক কমিটির সভাপতি। তবে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা। এবার তীব্র আন্দোলনের মুখে তিনি এই পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) মনিপুর স্কুলে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে নিজেই একথা জানান আখলাক আহমেদ।
পাশাপাশি তার স্বাক্ষর করা অব্যাহতির লিখিত কপিও পাওয়া গেছে।
স্কুলের প্যাডে দেওয়া অব্যাহতি পত্রে আখলাক আহমেদ লিখেছেন, ‘আমি আখলাক আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি নিলাম।’
আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, অ্যাডহক কমিটি একটি অস্থায়ী কমিটি। এই কমিটি যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে তার আইনগত ভিত্তি নেই। মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে জাকির হোসেনকে দায়িত্ব দিয়েছেন, তিনিই দায়িত্বে থাকবেন।
জানা গেছে, এডহক কমিটির মেয়াদ আগামী রোববার শেষ। তার আগে তাড়াহুড়া করে তার এই শিক্ষককে নিয়োগ দিয়েছেন।
মনিপুরের বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, স্কুলের বিষয়ে আমরা নজর রাখছি। তবে এডহক কমিটি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
জানা গেছে, বর্তমান অস্থায়ী পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আগে থেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসা মো. জাকির হোসেনের দ্বন্দ্ব ছিল। এ কমিটির মেয়াদ একেবারে শেষ পর্যায়ে। এমন সময়ে কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেনের সই করা এক চিঠিতে গতকাল বুধবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে জাকির হোসেনকে অব্যহতি দেওয়ার কথা জানায়। একইসঙ্গে আখলাক আহম্মদ নামে আরেক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ জন্য তারা এখন আখলাক আহম্মদ সরে যাওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
সাবেক ‘অবৈধ অধ্যক্ষ’ মো. ফরহাদ হোসেনকে রক্ষায় নানামুখী চেষ্টাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিষ্ঠানটিতে সমস্যা যাচ্ছিল। এই সংকট এক পর্যায়ে মামলা পাল্টা মামলায় রূপ নেয়।
এ অবস্থায় গত ১২ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের এক ঘোষণায় তখনকার সংকট কেটে গিয়েছিল। তখন তিনি সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছিলেন, উচ্চ আদালত এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়া মো. জাকির হোসেনই এখন থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর থেকে পরিস্থিতি মোটামুটি ভালোই চলছিল। কিন্তু এখন আবারও নতুন করে সংকটের মুখে পড়ল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে বৃহস্পতিবার উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে মনিপুরে আসেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি এডহক কমিটির নিয়োগ দেওয়া শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু তাৎক্ষণিক শিক্ষকরা জাকির হোসেনের পক্ষে কথা বলেন। আখলাক আহম্মদকে মানবেন না বলে ঘোষণা দেন।
পরে স্কুল ত্যাগ করার সময় আখলাক আহম্মদকে প্রতিমন্ত্রী সঙ্গে করে নিয়ে যান বলে জানা গেছে।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে আমাকে নিয়োগ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাই মন্ত্রণালয় আমাকে অব্যাহতি দিতে পারে। এর বাইরে কারও অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ নেই। আমি স্কুলে পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য যা যা করার, তাই করব।
তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের ইন্ধনে কিছু বহিরাগতরা উসকানি দিচ্ছে। পুলিশের সহযোগিতায় আমরা ক্যাম্পাসের পরিবেশ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৮/০৫/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা’য়