অধ্যক্ষ ও প্রভাষকের এমপিও স্থগিত করল মাউশি
পটুয়াখালীঃ অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা, নারী সহকর্মীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কসহ নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার আজিজ আহম্মেদ কলেজের অধ্যক্ষ মো. আহসানুল হক ও প্রভাষক মো. এবাদুল হকের বেতন-ভাতা স্থগিত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য মো. জসিম উদ্দিন হাওলাদার, মো. দেলোয়ার হোসেন ও ভুক্তভোগী নুরুন্নাহার এবং গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য মো. ফরিদ আহম্মদ কর্তৃক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও মাউশি বরাবর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক একাধিকবার তদন্ত টিম গঠন করেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের এমপিওতে কলেজটির সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ছাড় করলেও অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত অধ্যক্ষ আহসানুল হক ও প্রভাষক মো. এবাদুল হকের বেতন-ভাতা বন্ধ রাখে মাউশি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর মো. মোয়াজ্জেম হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মাউশি অধিদপ্তরের স্মারক নং ৭ জি /১৫৪(ক-৩)/২০১০ পত্রে ও বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়, মাউশি’র স্মারক মাউশি/ ববি/২০২২/৭১০ পত্রসহ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজিজ আহম্মেদ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আহসানুল হকের নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, জাল-জালিয়াতি ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর তাদের বেতন-ভাতা স্থগিত করেছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও অধিভুক্ত কলেজসমূহের পরিদর্শক সমন্বয়ে গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত টিম সরজমিন পরিদর্শন করেন। তদন্তকালে অধ্যক্ষ আহসানুল হকের নিয়োগ সংক্রান্ত নথিপত্র, কলেজের গভর্নিংবডির গঠন কার্যক্রমের নথি পর্যালোচনা, অভিযোগকারী অভিভাবক সদস্য, সাময়িক বরখাস্তের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের লিখিত বক্তব্যে অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তদন্ত টিম। একই সঙ্গে ওই প্রতিবেদনে কলেজটির ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. এবাদুল হকের নিয়োগের বৈধতা না থাকায় তার বেতন ভাতা বন্ধেরও সুপারিশ করা হয়।
উল্লেখ্য, অধ্যক্ষ আহসানুল হকের বিরুদ্ধে তার অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ জালিয়াতি, নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাৎ ও নারী সহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কসহ নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনে অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়ে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য মো. জসিম উদ্দিন হাওলাদার গং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও মাউশি বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। এ ছাড়া অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য মো. ফরিদ আহম্মদও অনুরূপ অভিযোগ করেছিলেন। এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটির তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর জানুয়ারি মাস থেকে অভিযুক্তদ্বয়ের বেতন-ভাতা স্থগিত করে দিয়েছে।
অবৈধভাবে নিয়োগ হওয়া অধ্যক্ষ মো. আহসানুল হক ও অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অর্থ আত্মসাৎকারী প্রভাষক মো. এবাদুল হক এর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বেতন স্থগিত হলেও গভর্নিং বডি অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ও প্রভাষকের বিষয়ে কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগকারী মো. জসিম হাওলাদার ও ফরিদ আহম্মদ এবং নুরুন্নাহার সাংবাদিকদের জানান।
এ ছাড়াও উক্ত কলেজের অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক মো. আল আমিনের প্রথম স্ত্রী মোসা. নূরুন্নাহার বেগম কর্তৃক পারিবারিক আদালতে মামলা করায় একাধিকবার সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাভোগ এবং মাউশি শিক্ষা অধিদপ্তরে দায়ের করা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রভাষক মো. আল আমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
গভর্নিং বডির সভাপতি দুমকি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট মো. হারুন অর রশিদ হাওলাদার, প্রভাষক আল আমিনের সাময়িক বরখাস্ত চূড়ান্ত করার পদক্ষেপ না নিয়ে সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহারের পাঁয়তারা করছেন বলে নুরুন্নাহার বেগম জানান।
এ ব্যাপারে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি এডভোকেট হারুন অর রশিদ হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিঠি পেয়েছি এবং মাউশি বরাবরে অধ্যক্ষ আহসানুল হক, প্রভাষক মো. এবাদুল হক এবং আল আমিনের বিরুদ্ধে বিধি-বিধান অনুযায়ী যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার, সে ব্যবস্থা মাউশিকে বলেছি। বেতন-ভাতা তারা দেন, তারাই ব্যবস্থা নিবেন বলে ফোন কেটে দেন। জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মুজিবুর রহমান জানান, মাউশি আজিজ আহমেদ কলেজের অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষকের বেতন-ভাতা বন্ধ করেছে তার চিঠি পেয়েছি। এখন গভর্নিং কমিটি ওনাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন জানি না।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিকবার তদন্ত করার পর মাউশি শিক্ষা অধিদপ্তর আজিজ আহমেদ কলেজের অধ্যক্ষ মো. আহসানুল হক ও প্রভাষক মো. এবাদুল হকের বেতন-ভাতা স্থগিত করা হয়েছে। এখন গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।
প্রকাশ, ২০০২ সালে ২.০৬ একর জমিতে স্থানীয় শিক্ষানুরাগি আজিজ আহমেদ তার নামে কলেজটি করেন। ২০১০ সালের মে মাসে কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। কলেজটিতে বর্তমানে ৩৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী এবং ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৮/০৩/২০২৪