২০২০ সালের করোনা : শিখেছি

ডক্টর মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন।।
নির্মোহ কথা বলতে নেই। কথা গুলো বহুজন হজম করতে পারবে না। তবে শিখেছি। চিনতে পেরেছি। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়েই আমরা অফিসিয়ালি জেনেছি করোনার থাবা আমাদের উপরও আসতে শুরু করেছে।

কি এক পরিস্থিতি? অনেকেই ভুলতে বসেছেন। রাস্তাঘাটে বের হলে নারীদের মুখে মাস্ক দেখে এখনও সেই পরিস্থিতির কিছুটা জানান দেয়।

এত ক্ষুদ্র অস্তিত্বের এমন ভয়াল থাবা বর্তমান পৃথিবীর কোনো মানুষ (কিছু শতবর্ষী মানুষ ছাড়া) জীবদ্দশায় দেখেননি। যদিও মহামারির এমন ভয়াবহ চিত্র পৃথিবীতে আগেও দেখা গেছে। এইতো গত শতাব্দীর শুরুর দিকে ১৯১৮ সালে লোমহর্ষক ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ মহামারিতে পৃথিবীর প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়েছিল।

পৃথিবীতে মানুষের বিচরণ যেমন বহুকালের, সংক্রামক রোগের মহামারির ইতিহাসও সেরকম অনেক প্রাচীন। সময়ের বিবেচনায় বলতে গেলে প্রথমেই আসে ‘এথেনিয়ান প্লেগ’র ইতিহাস। সেই ৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই বিশ্ব-মহামারি ইথিওপিয়া থেকে উৎপত্তি লাভ করে ছড়িয়ে পড়েছিল মিশর ও গ্রিসে।

দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এ মহামারিতে রোগের উপসর্গ ছিল কিছুটা ইবোলা ভাইরাসের লক্ষণের মতো, তীব্র জ্বর ও রক্তবমিসহ অল্প কয়েকদিনের মধ্যে রোগীর মৃত্যু। উল্লেখ্য যে, ইবোলা ভাইরাস পৃথিবীতে প্রথম চিহ্নিত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে দক্ষিণ সুদানে। ধারণা করা হয় গ্রিসের এক-তৃতীয়াংশ মানুষই এ মহামারির সময় সংক্রমিত হয়। বেশি সংক্রমিত হয় ডাক্তার ও রোগীর সেবা প্রদানকারীরা।

মহামারিগুলোর ইতিহাস থেকে অন্তত এটুকু অনুমান করা যায় যে অতীতের সব মহামারির সঙ্গেই নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে। যেমন, ছড়িয়ে পড়ার গতি, সংক্রমণের ব্যাপকতা ও বৃহৎ ভৌগলিক অঞ্চলে সংক্রমণ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়া। তাই অতীতের ভালো-খারাপ দুই ধরণের দৃষ্টান্তই বর্তমানের জন্য হতে পারে দারুণ শিক্ষা। যা এই বিজ্ঞান-তথ্য-প্রযুক্তির অত্যাধুনিক পৃথিবীতে আমাদের জন্য হতে পারে পাথেয়। অতীতের মহামারিগুলো থেকে আমাদের এখন কী কী শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন?

শিক্ষা আমরা নিয়েছি? নিই নাই। করোনা চলাকালীন সময়ে যাদের পাশে ছিলেন বা থেকেছেন, তাদের অবস্থা কী? কিছুটা হলেও মনে রেখেছে আপনার ত্যাগ, পাশে থাকাকে? রাখেনি। তাদের সেই সময়ও নাই। অবশেষে বলতে চাই, সব মহামারিই একদিন শেষ হয়। কোভিড-১৯-ও একদিন শেষ হবে, শেষের পথেও। অতীতের অন্য মহামারির চেয়ে কোভিড-১৯ একদিক থেকে আলাদা। তা হলো: প্রযুক্তির বিকাশে শুরু থেকেই আমরা এই মহামারির ভাইরাসকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি।

যা অতীতের মহামারির ক্ষেত্রে ছিল অজানা। তাই আধুনিক বিজ্ঞান ও মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে এ মহামারি আগের মহামারিগুলোর চেয়ে দ্রুত থামানো যাবে এই আস্থা ও বিশ্বাস রাখাই যায়, সেই বিশ্বাসের কিছুটা নমুনাও পেয়েছি।

কিন্তু মজার বিষয় হল, কোভিড আমাদের বহুজনকে মানুষ হতে শিখায়নি। পরিবর্তন করেনি। স্বার্থবাদী এই পৃথিবীতে কোভিড কেন এর চেয়ে ভয়াবহ কিছু আসলেও আমাদের পরিবর্তন হবে? হবে না। আমি সম্ভাবনা দেখি না।