শিক্ষকের সাথে এ কেমন আচরণ জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার!

নওগাঁঃ জেলার মান্দায় প্রধান শিক্ষক এম রেজাউল হকের মৃত্যুর খবর জানাজানির পর তড়িঘড়ি করে দেয়া হলো যোগদানপত্র। অনেকটা নিজেদের গা বাঁচাতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মৃত্যুর দিন যোগদানপত্র দেন।

এ ঘটনায় ওই পরিবার ও স্থানীয় শিক্ষক সমাজের মাঝে দেখা দেয় ক্ষোভ, হতাশা ও দীর্ঘশ্বাস।

শিক্ষক রেজাউল হক উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের বিলকরিল্যা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১০ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আলালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবা মরহুম বসরতুল্লা প্রামাণিক ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রেজাউল হকের ওপর শিক্ষা কর্মকর্তার এমন আচরণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

অভিযোগে জানা গেছে, হার্টের অসুখ নিয়ে ছয় মাসের ছুটিতে ছিলেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার আলালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম রেজাউল হক। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর বিল-বেতনের কাগজপত্র নিয়ে দিনের পর দিন ধর্ণা দেন উপজেলা শিক্ষা অফিসে।

কিন্তু দুই মাসেও তার বিল-বেতন ও যোগদানের অনুমোদন মেলেনি। দীর্ঘ আট মাস ধরে বিল-বেতন না থাকায় অর্থসঙ্কটে ছিলেন এই শিক্ষক। ঈদ-উল-ফিতরেও বেতন-বোনাস উত্তোলন করতে ব্যর্থ হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

এ অবস্থায় প্রচণ্ড মানসিক চাপে গত শনিবার তার হার্টঅ্যাটাক হলে রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার বিকেলে মৃত্যু হয় তার।

শিক্ষক রেজাউল হকের মৃত্যুর সংবাদ জানাজানি হলে ওই দিন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দীক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা তার যোগদানপত্রে স্বাক্ষর করেন। একইদিন তা পাঠিয়ে দেয়া হয় উপজেলা শিক্ষা অফিসে। তবে দীর্ঘ দুই মাস ধরে এসব কাগজপত্র কোথায় কার টেবিলে ফাইলবন্দি ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে।

শিক্ষক রেজাউল হকের স্বজনেরা জানান, বিল-বেতনের জন্য দিনের পর দিন কাগজপত্র নিয়ে ধর্ণা দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার সামসুজ্জামানের কাছে। বিভিন্ন কাগজপত্র ও অজুহাত দেখিয়ে তাকে হয়রানী করেন শিক্ষা কর্মকর্তা।

এদিকে যোগদানকালিন নিয়মিত বেতনভাতা ও ঈদ-উল-ফিতরের উৎসবভাতা উত্তোলন করতে না পারায় তিনি মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েন। চরম অর্থসঙ্কটে পড়ে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে ঈদের উৎসব পালন করতে পারেননি তিনি। এ অবস্থায় মানসিক চাপে হার্টঅ্যাটাক করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ওই শিক্ষক।

শিক্ষক রেজাউল হকের স্ত্রী পান্না খাতুন অভিযোগ করে বলেন, বেতন-ভাতার জন্য স্বামী রেজাউল হক উপজেলা শিক্ষা অফিসে দিনের পর দিন ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার সামসুজ্জামান বিভিন্ন অজুহাতে তাকে হয়রানী করেন। এ ঈদেও বেতন-বোনাস উত্তোলন করতে পারেননি।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার সামসুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষক রেজাউল হককে কোনো হয়রানী করা হয়নি। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ও ছুটির আবেদন যথাযথ ছিল না। পরে সঠিকভাবে কাগজপত্র উপস্থাপন করায় তা অনুমোদনের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছিল।

শিক্ষা কর্মকর্তা আরো বলেন, গত রোববার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তার ছুটি মঞ্জুর করে চাকরিতে যোগদানের অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর করেন।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/০৫/২০২৩  

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা