তিলে তিলে শেষ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মুরাদপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়

ঐতিহ্যবাহী মুরাদপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়

একটু গরম পড়লে ক্লাসরুমে বসার কোনো উপায় থাকে না। মাথার ওপরে টিন, আর চারদিকে টিনের বেড়া। বৃষ্টি হলেও ক্লাসরুমে বসার সুযোগ থাকে না। অথচ রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়টি এক সময় ওই এলাকার ঐতিহ্যবাহী স্কুল ছিল। আশপাশের অনেক এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা ওই স্কুলে পড়তে আসতে ভালোমানের লেখাপড়ার জন্য। গত চার বছরে স্কুলভবন নির্মাণের নামে তালবাহানার কারণে শিক্ষার মান একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে। স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যা তিনভাগের একভাগে নেমে এসেছে। এখনো যেসব শিক্ষার্থী রয়েছে তারাও যাইযাই করছে।

মুরাদপুর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পুরান ঢাকা, শ্যামপুর-কদমতলীর এক সময়ের শিক্ষানুরাগী মরহুম হুমায়উন কবির শিকদার। ১৯৭৪ সালে এই স্কুলটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন ওই এলাকায় তেমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। আশপাশের ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর ও কদমতলীসহ অনেক এলাকার শিক্ষার্থীরাই সেখানে লেখাপড়ার জন্য ভর্তি হতো। সর্বশেষ স্কুল ভবনটি ছিল ৫ তলা বিশিষ্ট। স্কুলটি পুনরায় নির্মাণের জন্য স্থানীয় কিছু লোক চেষ্টা করেন। সেই অনুযায়ী টেন্ডারও হয়। কিন্তু সবকিছু পাকাপোক্ত হওয়ার আগেই ভেঙে ফেলা হয় আগের ৫ তলা ভবনটি। ২০২০ সালে ৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হয় নতুন ভবন নির্মাণের জন্য। কিন্তু পাইলিং করার পরই ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি পালিয়ে যায় কাজ ফেলে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেছেন, নির্মাণ খরচ বেড়েছে এই অজুহাতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কাজ করেনি। এরপর স্কুলের শিক্ষক-অভিভাবক এবং স্থানীয় শিক্ষানুরাগী মানুষরা বিভিন্ন দফতরে ঘুরেছেন। এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ৪ বছর। সম্প্রতি নানা আবেদন নিবেদনের পর স্কুল ভবনটি নির্মাণের জন্য পুনঃবরাদ্দ হয়। কিন্তু সেটিও অজ্ঞাত কারণে বাতিল হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করে জানা গেছে, বর্তমানে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। এই বরাদ্দকে অতিরিক্ত উল্লেখ করে প্রধান প্রকৌশলী বরাদ্দটি বাতিল করে দেন। এই ঘটনার পর হতাশ হয়ে পড়েছেন স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকরা।

মাহবুব মোরশেদ নামের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেছেন, এই স্কুলটি এক সময় গর্বের ছিল, আজ ধ্বংসের পথে স্কুলটি। তিনি স্কুলটিকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছেন।

প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন সরদার বলেছেন, তারা সব জায়গায় গিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের টিনের ঘরে বসে পাঠদান নিতে হচ্ছে। পরিবেশ না থাকায় আস্তে আস্তে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। যা একজন শিক্ষক হিসেবে হতাশার।

স্থানীয় সূত্র জানায়, স্কুলের আগের ভবনটি বিক্রির বিষয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। আর এখন যে স্কুল ভবনটি নির্মাণ নিয়ে তালবাহানা চলছে তার পেছনেও রয়েছে অশুভ ইশারা।

স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম হুমায়উন কবির শিকদারের ছেলে আমেরিকা প্রবাসী আসুদুজ্জামান শিকদার বলেছেন, তার পিতা অনেক কষ্ট করে ওই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এমনও সময় গেছে অনেক কষ্টে তাদের দিন কেটেছে। বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে তার পিতা ওই স্কুলের পেছনে অর্থ ব্যয় করেছেন। অথচ আজ স্কুলটি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটা খুবই কষ্টের।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৮/০৩/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়