এক স্কুলে পড়ছে ১০ জোড়া যমজ ভাই-বোন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঠাকুরগাঁওঃ জেলায় এক স্কুলে দশ জোড়া যমজ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। চেহারার মিল থাকায় শিক্ষকদের কিছুটা বিড়ম্বনা হলেও তাদের নিয়ে হাস্যরসে সময় কাটে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-সহপাঠীদের।

দেখতে হুবহু একই চেহারা। উচ্চতায় দু-একজনের অমিল থাকলেও অধিকাংশরই মিল বেশি।

এমনকি পছন্দ-অপছন্দের তফাতও খুবই কাছাকাছি। তাই বলে যে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয় না তা-নয়, হয় কিন্তু সেটা ক্ষণিকের জন্য। এদের কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ বিজ্ঞানী, কেউবা সেনাবাহিনীর অফিসার। তবে সকলেরই উদ্দেশ্য এক-দেশ সেবা ও জনসেবা করা।

এমন দশ জোড়া যমজ শিক্ষার্থীর দেখা মিলবে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মথুরাপুর পাবলিক হাইস্কুলে।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করছে ১০ জোড়া জমজ ভাই-বোন। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে দুই জোড়া, সপ্তম শ্রেণিতে তিন জোড়া, অষ্টম শ্রেণিতে এক জোড়া, নবম শ্রেণিতে দুই জোড়া এবং দশমে দুই জোড়া ভাই-বোন রয়েছে।

তারা হলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির তাহসিন-তাসনিম ও সান-মুন, সপ্তম শ্রেণির কার্তিক-গণেশ, হাবিব-হাফিজ ও সুমাইয়া-সাদিয়া, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শুভ-সৌরভ, নবম শ্রেণির হাসি-খুশি ও তাহবি-তাসবি এবং দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করেছে আবিদ-অমিত ও রাহুল রাহা- চঞ্চল রাহা।

সপ্তম শ্রেণির কার্তিক-গণেশের মধ্যে কার্তিক বড় হয়ে সেনাবাহিনীর অফিসার হয়ে দেশ সেবা করবেন আর গণেশের শখ-সে হবেন চিকিৎসক। একই ক্লাসের সুমাইয়া-সাদিয়া তারা দুজন দুই শাখায় হলেও সুমাইয়ার ক্লাস রোল-৬৮, সাদিয়ার ৭৯। তারা দুজনই ডাক্তার হয়ে অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে চান। ষষ্ঠ শ্রেণির সান ও মুন এবছর বিদ্যালয়টিতে ভর্তি হয়েছে। তারা দুজনই বিজ্ঞানী হতে চায়। মহাকাশ ও মাটি নিয়ে গবেষণায় আগ্রহ তাদের।

চেহারায় মিল থাকায় শিক্ষক ও সহপাঠীরা বিভ্রান্ত হলেও মেধার দিক দিয়ে কোন অংশে কমতি নেই বলে জানালেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাই পুরো ক্লাসে মিল-অমিলের হিসেব কষাকষির বিষয়টিও হাস্যরসে পরিণত করে সবাইকে। খেলাধুলা, পড়াশুনা করা নিজেদের ভালোলাগার পাশাপাশি মুগ্ধতা ছাড়ায় আশেপাশেও।

ওই বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক রোজিনা পারভীন জানান, পাঁচ বছর আগে প্রথম দুই জোড়া যমজ ভাই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তারা এখন দশম শ্রেণিতে পড়ে। এর পরের বছর আরও দুই জোড়া ভাই-বোন ভর্তি হয়। এভাবে প্রতিবছরই ভর্তি হয়েছে যমজ শিক্ষার্থী। এটা একটা চাঞ্চাল্য ব্যাপার যে প্রতিবছরই ভর্তি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যমজ শিক্ষার্থী থাকছে।

বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, যমজ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস করার আনন্দটাও আলাদা। তবে তাদের সনাক্ত করতে কিছু বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তারা সব সময় এক সঙ্গে বসে, তবে কোন কিছু নিয়ে বিবাদ হলে তারা আলাদা বসে। এতে আমরা বুঝতে পারি দুজনের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর বলেন, তারা যমজ হলেও মেধার দিক দিয়ে কেউ কোন অংশে কম নয়। এই শিশুদের সঠিক দিক নির্দেশনার মধ্যে রাখতে পারলে তারাও দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।

গেল বছর এই বিদ্যালয়ে ছিল আট জোড়া যমজ ভাই-বোন। এবছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে আরও এক জোড়া ভাই-বোন ভর্তি হওয়ায় এই সংখ্যা দাঁড়ায় দশ জোড়ায়।

১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত মথুরাপুর পাবলিক হাইস্কুলে বর্তমানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ২৫০ জন।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৩/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়