মেহেরপুরের গাংনীতে শরিফা ( মেওয়া) ফল চাষি বাহাউদ্দীনের সফলতার গল্প
রফিকুল আলম বকুল,মেহেরপুর ।।
ব্যতিক্রমী কিছু করার চিন্তা থেকেই বিলুপ্ত প্রায় শরিফা ফল চাষের বেশ সফলতা পেয়েছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চেংগাড়া গ্রামের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব দাউদ হোসেনের ছোট ছেলে ব্যাংকার বাহাউদ্দীন। এলাকায় শিক্ষিত ও বনেদী পরিবারের এ সন্তান বর্তমানে কৃষি নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছেন । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিষ্টিতে অনার্স ও মাস্টার্স করার পর একটি প্রাইভেট ব্যাংকে ঢাকায় চাকুরী করেন তিনি ।
তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে চাকুরী ছেড়ে কৃষি উদ্দোক্তা ও চাষী হিসেবে নিজেকে তৈরী করছেন তিনি । আম লিচু ও লেবু এবং শরিফাসহ বর্তমানে তার ৩৫ বিঘা বাগান আছে । ভবিয্যতে ৪৫ থেকে ৫০ বিঘা বাগান করবেন বলে জানালেন তিনি । থােকায় থােকায় শােভা পাচ্ছে শরিফা ফল। বাতাসে দােল খাচ্ছে শরিফা সেই সাথে দােল খাচ্ছে বাগান মালিকর স্বপ্ন । সুস্বাদু ও বেহেস্তি ফল হিসেবে পরিচিত শরিফা চাষে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। ৮ বিঘা জমিতে বাগান করেছেন । প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকা আয় করছেন তিনি। তার এই সফলতা এলাকার তরুণ যুবকদেরকে শরিফা বাগান করার অনুপ্ররণা যােগাচ্ছে ।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ব্যাংকার বাহাউদ্দীন। শখের বশে আর ব্যাতিক্রমি কিছু করার চিন্তা নিয়েই বছর চারেক আগে মাত্র দুই বিঘা জমিতে শরিফা ফলের বাগান করেন। স্থানীয় ভাল বীজ সংগ্রহ করে তা রােপন করেন তিনি। প্রথম বছর খরচ করেন মাত্র ২০ হাজার টাকা। পরের বছর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তার। এ বছর শরিফা ফল স্থানীয় নীয় ফল বিক্রেতাদের কাছ বিক্রি করে পান ৪০ হাজার টাকা। স্বল্প পুজি, বিনিয়াগ কম বেশি লাভবান হওয়ায় আরও ৬ বিঘা জমিতে শরিফা বাগান করেন। এ বছর তিনি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে পয়েছেন তিন লাখ টাকা। অনুকুল আবহাওয়া নিজের অদম্য পরিশ্রম এবং কষি অফিসের পরামর্শে তিনি শরিফা বাগান করে লাভবান হয়েছেন।
বাগান মালিক বাহাউদ্দীন জানান, আগে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পাওয়া যেতা সুস্বাদু ফল শরিফা। এখন কালের বিবর্তনেব হারিয়ে যেতে বসেছে সেই ফল। এখন কেউ আর এ ফলের গাছ রােপন করেন না। বিলুপ্ত প্রায় এ ফলের গাছ ধরে রাখা ও বাণিজ্যিক ভাবে এ বাগান করার প্রয়াস নিয়েই তিনি বাগান করেছেন।
স্বল্প খরচ আর অল্প পরিশ্রম বেশি লাভবান হওয়ায় স্থানীয় চাষি ও তরুণরা শরিফা বাগানর প্রতি আগ্রহী হয় উঠছে । স্থানীয়রা পরামর্শ নিচ্ছেন বাগান করার জন্য। গাংনীর ভিটাপাড়ার কলেজ শিক্ষক রফিকুল আলম জানান, তিনি এ শরিফা চাষ সফলতার গল্প শুনেই পরামর্শ নিচ্ছেন বাগান করার। ইতািমধ্য দুই বিঘা জমি প্রস্তত করেছেন। বীজ সংগ্রহ করেছেন তিনি। রফিকুল আলমর মতাে অনেকেই বাহাউদ্দীন ও কৃষি অফিসে পরামর্শ নিচ্ছেন শরিফা বাগান করার জন্য।
স্থানীয় ফল ব্যবসায়ি আঃ রহমান জানান, মেওয়া বা শরিফা ফল সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে। নিজের হাতে বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজার ও ঢাকাত পাঠানা হয়। অনলাইনও এর বেচাকেনা হয়। বাগান থেকে ২৫০ টাকা দরে কিনে সাড়ে চারশ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এতে লাভ হয় বেশি। একই কথা ফল ব্যবসায়ি লিটন মিয়া।
গাংনী উপজলা কৃষি অফিসার কেএম সাহাবুদ্দীন আহমদ জানান, শরিফা একটি বিলুপ্ত প্রায় সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ ভরপুর ফল। বাহাউদ্দীন এটির বাগান করেছেন। এতে অনুপ্রাণিত হয় অনেকেই বাগান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে পরামর্শ চাচ্ছেন । এ ফল আবাদে খরচ কম। রােগ বালাই একবারই নেই। অথচ লাভ অনেক বশি। কৃষি অফিস সব সময় চাষিদরেকে পরামর্শ দিচ্ছেন । এ ফল আবাদের সম্প্রসারণ ঘটলে পুষ্টির চাহিদা অনেকখানি পুর্ণ হবে।