১টি স্কুল বিলীন হলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে গ্রামটি
আবুল হোসেন বাবলু।।
আর মাত্র ৪টি পরিবারের বসতি ও একটি স্কুল বিলীন হলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ১টি গ্রাম। রংপুর জেলার পীরগাছা থানাধীন এক সময়ের ঘনবসতিপূর্ণ ও কোলাহল মুখর এই গ্রামটি আজ বিলীনের পথে। নদী ভাঙ্গন অব্যাহত মাত্র ৪টি পরিবারের বসত বাড়ি এই তিস্তার গর্ভে বিলীন হলেই হারিয়ে যাবে চর দক্ষিণ গাবুরা গ্রামটি। এছাড়াও ভাঙনের মুখে পড়ে আছে এই গ্রামের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চর দক্ষিণ গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
পীরগাছা প্রতিনিধি হাফিজার রহমানকে সাথে নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন, রংপুর প্রতিনিধি আবুল হোসেন বাবলু। রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নে অবস্থিত চর দক্ষিণ গাবুরা গ্রাম। এখানে ১৯৯০ সালে নির্মিত হয়েছে চর দক্ষিণ গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আকরাম হোসেন আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আগ্রাসী তিস্তা নদী একেবারেই বিদ্যালয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে ৷
মাত্র কয়েক দিনে আমার বিদ্যালয়ের তিন দিক গ্রাস করে ফেলেছে,বিদ্যালয়টি রক্ষা করার জন্য দিন-রাত কাজ করা হচ্ছে ৷ তিনি বলেন আরও ৫-৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেললে হয়তো স্কুলটি রক্ষা করা যেতে পারে ৷ স্থানীয় ছাওলা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ বাদশা আলম বলেন, আমার ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড চর দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে পতিত হতে যাচ্ছে। পাউবি কর্তৃপক্ষ যথা সময়ে নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ না করায় ইতিপূর্বে এখান থেকে প্রায় ২ কিঃ দক্ষিণে আরও একটি বিদ্যালয় (শীবদেব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৷
দুই দিন আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যান সহ উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা বিদ্যালয়টি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। দক্ষিণ গাবুড়ার চর ৫নং ওয়ার্ডের ইউ,পি সদস্য আব্দুর রশিদ বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এলাকাবাসী মিলে কয়েক দিন ধরে স্কুলটি রক্ষার কাজে আমরা সহযোগিতা করছি। দিনে-রাতে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ওই গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ি। ভাঙনের ফলে এসব বাড়ির লোকজন এখন আশ্রয়হীন। তবে আরো বেশি পরিমান জিও ব্যাগ ফেলার দাবি করছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ভাঙ্গন কবলিত স্থানীয়রা। নদী থেকে আর মাত্র ১৫ মিটার দূরত্বে এ স্কুলটি রক্ষায় শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন, স্কুলের শিক্ষক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মীরা। সরেজমিনে দেখা যায়,উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের চর দক্ষিণ গাবুড়া গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। গ্রামটিতে ঘনবসতিপুর্ণ বাড়িঘর ছিল। এসব বাড়ির শিশুদের মেধা বিকাশে এখানে ১৯৯০ সালে নির্মিত হয়েছে চর দক্ষিণ গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। স্কুলটি ২০১৪ সালে একবার ভাঙনের কবলে পড়ে।
তখন বর্তমান স্থানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পিইডিপি-৩ প্রকল্পের অর্থায়নে একটি সুসজ্জিত আধুনিক ভবন গড়ে তোলা হয়। কোলাহলে মুখর থাকতো গ্রাম ও স্কুলটি। কিন্তু পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা গিলে খেয়েছে গ্রামটির বেশির ভাগ বসতি। চলতি বছরেই ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এই গ্রামের ৫০টি বাড়ি ঘর। আর মাত্র ৪টি বসত বাড়ি ও একমাত্র স্কুলটি ভেঙে গেলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে গ্রামটি।
নদী ভাঙনে বিলীন হওয়া গ্রামবাসীরা জানান, সময় মতো উদ্যোগ নিলে বিদ্যালয়ের আশে-পাশের বাড়িঘর গুলো রক্ষা পেত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের উদাসীনতার কারণে আজ আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছি। গত ৫ বছরে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি, প্রায় ৫ হাজার পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত মানুষজন বললেন, সংশ্লিষ্টরা অপরিকল্পিতভাবে দুইটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলেও বাঁধের পূর্বের গ্রামগুলো রক্ষা পাচ্ছে না।
ফলে প্রতি বছর নদী ভাঙনের কবলে উপজেলার ছাওলা ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে। আমরা ছাওলার বোল্ডারের মাথা থেকে আরও ৩ কিলোমিটার বোল্ডার দিয়ে শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ করে নদী শাসন করার দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফীন বলেন, চর দক্ষিণ গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রক্ষায় জোর চেষ্টা চলছে। জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে আরো জিওব্যাগের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যেতিপ্রকাশ ঘোষ বলেন, ভাঙন কবলিত ওই এলাকায় জিওব্যাগের মাধ্যামে মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। স্থানীয়ভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বিষয়গুলো আন্তরিকভাবে দেখছেন এবং ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।