সাম্য ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয় রোজা
সুলতান মাহমুদঃ পৃথিবীর সব মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এবং সবার রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবাইকে তিনি রিজিক দান করেন। এর মাধ্যমে মানুষকে পরীক্ষা করছেন তিনি। ধনী-গরিবের সম্পর্ক, সহমর্মিতা, সাহায্য-সহযোগিতা ও মন-মানসিকতা কেমন হয় তা পরীক্ষা করছেন তিনি। রমজানে ক্ষুধার যন্ত্রণা দিয়ে তিনি পরীক্ষা করছেন। ধনীরা কীভাবে সময়টা অতিবাহিত করে তা দেখছেন। গরিবদের ক্ষুধা কতটুকু অনুভব করছে সেটাও পরখ করছেন। রোজায় বিশ্বের মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতির এক অনন্য উপমা স্থাপিত হয়। রোজার মাধ্যমে পরমতসহিষ্ণুতা ও হতদরিদ্রের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা, পারস্পরিক সৌহার্দ ও সহমর্মিতার শিক্ষা লাভ হয়।
আল্লাহর রাসুল (সা.) এক হাদিসে রমজান মাসকে সহমর্মিতা ও সৌহার্দের মাস বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রমজান পারস্পরিক সহানুভূতি প্রকাশের মাস’ (বায়হাকি)। ধনী বা সম্পদশালী মুসলিমরা রমজানে সারা দিন রোজা রেখে ক্ষুধার কষ্ট ও উপবাস থাকার জ্বালা উপলব্ধি করতে পারেন। ফলে অসহায় ও গরিব মানুষের কষ্টও তারা সহজে অনুধাবন করতে পারেন। এতে বিত্তহীন ও গরিব-দুঃখীর প্রতি তাদের মনে সহমর্মিতা ও সৌহার্দবোধ তৈরি হয়। তাদের দায়িত্ববোধ জেগে উঠে। আল্লাহপাক ধনী বা সম্পদশালী লোকদের প্রতি কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তাদের (ধনীদের) সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের অধিকার।’ (সুরা জারিয়াত : আয়াত ১৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে এবং রোজাদারের সওয়াবও কমানো হবে না’ (তিরমিজি : ৮০৭)। করোনার কারণে বহু মানুষ বেকার হয়েছে। থেমে থেমে চলছে অর্থনীতির চাকা। ফলে লাখ লাখ মানুষ অভাবের তাড়নায় নিদারুণ কষ্ট করছে। আবার এমন অনেক মানুষ আছে, যারা বিভিন্ন জরুরি সেবা দিতে গিয়ে রাস্তাতেই ইফতার করতে হয়। অনেকের ইফতার করার ভালো কোনো ব্যবস্থাও থাকে না। মুমিনের উচিত সাধ্যানুযায়ী সেই মানুষদের ইফতারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা। এ ছাড়া অসচ্ছল প্রতিবেশীর খোঁজ রাখাও মুমিনের কর্তব্য। এর বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত সওয়াব।
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিঃস্বার্থভাবে ক্ষুধার্ত মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করে, মহান আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা পান করবে এমন পানপাত্র থেকে, যার মিশ্রণ হবে কর্পূর। এমন এক ঝরনা, যা থেকে আল্লাহর বান্দারা পান করবে, তারা এটিকে যথা ইচ্ছা প্রবাহিত করবে। তারা মানত পূর্ণ করে এবং সে দিনকে ভয় করে, যার অকল্যাণ হবে সুবিস্তৃত। তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, এতিম ও বন্দিকে খাদ্য দান করে। তারা বলে, আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কোনো শোকরও না। আমরা আমাদের রবের পক্ষ থেকে এক ভয়ংকর ভীতিপ্রদ দিবসের ভয় করি। সুতরাং সেই দিবসের অকল্যাণ থেকে আল্লাহ তাদের রক্ষা করলেন এবং তাদের প্রদান করলেন উজ্জ্বলতা ও উৎফুল্লতা।’ (সুরা দাহর, আয়াত : ৫-১১)
রমজান মাস মানুষকে দুঃখীজনের পাশে দাঁড়াতে শিক্ষা দেয়। সৃষ্টি জগতের প্রতি উদার, সহমর্মিতা ও দয়াশীল হতে শিক্ষা দেয়। সিয়াম সাধনার দ্বারা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া-মমতা, আন্তরিকতা, দানশীলতা, বদান্যতা, উদারতা, ক্ষমা, পরোপকারিতা, সহানুভূতি, সমবেদনা প্রভৃতি সৃষ্টি হয়। মাহে রমজানের যে মহান শিক্ষা তা গ্রহণ করে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবন হয়ে উঠে ঈমানের আলোয় আলোকিত।