শিক্ষায় গ্রাম-শহরের বৈষম্য
মোহাম্মদ ইউসুফঃ গ্রাম-শহরের শিক্ষায় ব্যাপক বৈষম্য বিদ্যমান। গ্রামে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার সুযোগ থাকলেও নামিদামি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান শহরাঞ্চলে। যার কারণে দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের সেখানে পড়াশোনা কষ্টকর। গ্রামের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই অবকাঠামোগত দিক দিয়ে সমৃদ্ধ নয়। গ্রামের স্কুল-কলেজের একটা অংশ জরাজীর্ণ হয়ে বছরের পর বছর কোনো রকম টিকে থাকে। এগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে কারও নজর পড়ে না।
আমাদের শিক্ষার আরেকটি বড় সমস্যা কারিগরি শিক্ষার অভাব। গৎ বাঁধা মুখস্থ বিদ্যার প্রাধান্য স্পষ্ট। সাধারণ শিক্ষায় হাতেকলমে জ্ঞানার্জন হয় না। কারিগরি শিক্ষার অভাবে শিক্ষার সঙ্গে বাস্তবতার সামঞ্জস্য দেখা যায় না। তা ছাড়া শহরের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বর্ধিত সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করতে পারে না।
এখানকার বড় সমস্যা সেশনজট। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও তার অধিভুক্ত কলেজে সেশনজট প্রকট। এ কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনের মূল্যবান সময় হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন এবং তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। শিক্ষায় অব্যবস্থার ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। শিক্ষাব্যবস্থায় আরেকটি প্রধান সমস্যা প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব। সংসদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের দেওয়া তথ্যমতে, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় মোট ৩৭ হাজার ৯২৬টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদেই রয়েছে ২৯ হাজার ৮৫৫টি।
‘এনটিআরসিএ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। তা ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ করা হয় ১ লাখ ৪ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৯ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। সে হিসাবে বাজেট কমেছে ১ শতাংশ।
শিক্ষায় বহুমাত্রিক সংকট ও অব্যবস্থাপনা নিরসনে সরকারের উচিত জাতীয় বাজেটের একটি বড় অংশ এ খাতে বরাদ্দ করে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে আরও বেশি স্কুল নির্মাণ, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, আর্থিক সহায়তা প্রদান, উন্নত অবকাঠামো ও সম্পদের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়নে এই বর্ধিত বিনিয়োগ পরিচালিত হওয়া উচিত। পুথিগত বিদ্যার পরিবর্তে এখন কর্মমুখী তথা প্রযুক্তিনির্ভর কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৩/২০২৪