শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম প্রসঙ্গে
মো. শফিকুল ইসলাম নিয়ামত।।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নামিদামি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করানোর জন্য লম্বা সিরিয়াল লেগে যায়। আমরা দেখেছি, স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে সিট সংখ্যার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করে এবং পরীক্ষায় সমান নম্বর পেয়ে প্রথম সারিতে থাকে অনেকেই। সে ক্ষেত্রে উপায়ন্তর না পেয়ে লটারির মাধ্যমে সিলেকশন করা হয়। দেশে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সেরা বলা হয়। অথচ, সেরা প্রতিষ্ঠান হতে হলে যে বৈশিষ্ট্যের প্রয়োজন, তা অনেক প্রতিষ্ঠানেরই নেই।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নামিদামি অনেক মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে দেখা গেছে, তাদের অভ্যন্তরীণ চিত্র প্রায় অন্যান্য সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতোই। অর্থাৎ শিক্ষকমণ্ডলী শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বিষয়ে পূর্ণ আন্তরিক নন। তারা শিক্ষার্থীদের ব্যাক্তিগত (চত্রাধঃব) ক্লাসে টাকার বিনিময়ে পড়ার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করেন। এমনকি, ক্লাসে একটি বিষয়ের ওপর পরিষ্কার ধারণাও দেওয়া হয় না। সরকারি কলেজেগুলোর বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ বেশি থাকলেও বেসরকারি বা প্রাইভেট কলেজগুলোতেও রীতিমতো এই অনিয়ম চলছে। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এই হীন অপকর্ম করা হয়। কোনো শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত ক্লাসে না এলে পরীক্ষায় পাশ কীভাবে করে, এটা দেখে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
দেশের সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এরকম চিত্র সচরাচরই দেখা যায়। তবে, তথাকথিত নামিদামি প্রতিষ্ঠানেও যে এরকম অসাধু কাজকর্ম চলে, এটা অনেকেরই হয়তো অজানা। একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে যখন একটি ছেলে বা মেয়েকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট কলেজে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়, এমনিতেই তার থাকা-খাওয়া ও কলেজ ফি বাবদ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এই খরচের টাকার জোগান দিতেই অভিভাবকদের হিমশিম খেতে হয়। এর মধ্যে অতিরিক্ত তিন থেকে চারটি বিষয় প্রাইভেট পড়লে সঙ্গে আরো ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। এই অতিরিক্ত টাকার জোগান দেওয়া একটি পরিবারের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক ছেলেমেয়ে রাজধানীতে যায় পড়ালেখা করতে, কিন্তু থাকা-খাওয়া এবং কলেজ ফি বাবদ ব্যয় বহন করার পরেও অতিরিক্ত টাকার প্রাইভেট ক্লাস না করতে পারার কারণে অনেকেই ঝরে যায়, ফিরে আসে। তারা স্বপ্ন নিয়েই পারি জমায় ব্যস্ততম নগরীগুলোতে, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অনেকেই টিকতে পারে না। যদি শিক্ষকরা অতিরিক্ত টাকার লোভ না করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্লাসের পড়া ক্লাসেই বুঝিয়ে দিতেন, তাহলে এরকম হাজারো ছেলের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হতো।
দেশের সরকারি-বেসরকারি সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই বেহাল দশা। নামিদামি এবং সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেমন শিক্ষার অব্যবস্হাপনা রয়েছে, সাধারণ প্রতিষ্ঠানেরও একই অবস্হা। এই হতাশাজনক অবস্হায় তথাকথিত সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে সেরা বলা যায়? এরা তো রীতিমতো শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করছে।
সবচেয়ে হতাশজনক কথা হচ্ছে, এই অনিয়ম ও অব্যবস্হাপনা সবার চোখের সামনেই ঘটছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্হা গ্রহণ করছে না। বেশির ভাগ শিক্ষক বিভিন্ন কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত। অনেকেই শত শত শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রাইভেট ক্লাস করে থাকেন। কোচিং বা প্রাইভেট দোষের কিছু নয়, কিন্তু সেটাকে যখন মূল ক্লাসের বিপরীতে দাঁড় করানো হয় বা বাণিজ্যিক আকার দেওয়া হয়, সেটা রীতিমতো অন্যায় এবং অসত্ কাজ। এই সমস্ত প্র্যাকটিস থেকে বের হয়ে এসে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাসকে প্রাণবন্ত করে তুলতে হবে। ক্লাসেই শিক্ষার্থীদের একটি বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রতি হতে হবে আন্তরিক।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়