অন্ধকারকে আলোকিত করেছে ঘারমোড়া এ কে এম ফজলুল হক মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয়
হাসান ভূইঁয়া।।
কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার ঘারমোড়া ইউনিয়নে দীর্ঘদিন কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় অত্র এলাকার শিক্ষার হার পিছিয়ে পড়ে ব্যাপক হারে ! ঘারমোড়া এ কে এম ফজলুল হক মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে অত্র ইউনিয়নের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার জন্য দূরদুরান্তের বিদ্যালয়ে যেতে হতো।
শুধু কি ঘাড়মোড়া ইউনিয়ন? পাশ্ববর্তী আরও কয়েকটি ইউনিয়নে উচ্চ বিদ্যালয় ছিল না। এমনকি ঘারমোড়া ইউনিয়নের পাশ্বের নিলখী ইউনিয়নেও উচ্চ বিদ্যালয় ছিল না। যার ফলশ্রুতিতে অত্র এলাকার শিক্ষার্থীদের উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়া নামেমাত্র ছাত্রদের পক্ষে সম্ভব হলেও ছাত্রীদের জন্য যা ছিল অসম্ভব।
তখন এই এলাকার চারদিকে প্রায় ৫/৭ কিলোমিটারের মধ্যে কোন উচ্চ বিদ্যালয় ছিলো না । তাই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের চরম দূর্রচিন্তায় দিন কাটাতে থাকে। তাছারাও বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তার অবস্হা এমন ছিলো যে সুদিনে (শুকনা সময়ে) ৫/৭ কিলোমিটার হেটে যেতে পারলেও বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া যাওয়া মোটেই সম্ভব ছিল না।
তখনকার সময়ে সকলের নৌকাও ছিল না। বলা চলে হোমনা উপজেলার সবচেয়ে অবহেলিত ও বঞ্চিত ছিলো পূর্বাঞ্চলের এই এলাকা । জৈষ্ঠ্যের খরায় যেমন এক ফোটা পানির জন্য মাটিগুলো ফেটে চৌচির হয়ে যায়। তেমনিভাবে এই এলাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জন্য হাহাকার চলতে থাকে ।
তাদের চোখের পানি কাউকে দেখানোর মত ছিলো না। এমতাস্হায় অভিভাবকের চরম দূর্রচিন্তায় ও হতাশায় দিন চলতে থাকে। আর ঠিক ঐ মূহর্তেই উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করার জন্য এগিয়ে আসেন তৎকালিন ১১নং ঘারমোড়া ইউনিয়নের ছোট ঘারমোড়া গ্রামের কৃতিসন্তান বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজ সেবক এ কে এম ফজলুল হক মোল্লা। তিনি ১৯৯২ ইং সালে ঘারমোড়া এ কে এম ফজলুল হক মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন ।
এলাকার হত-দরিদ্র,নারী-পুরুষ, নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার মহান ব্রত তাঁকে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করে। যার ফলে বিদ্যালয়েটিকে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে দিয়েছে বলেই এলাকাবাসীর দৃঢ় বিশ্বাস। বর্তমানে বিদ্যালয়টি সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে।
বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেই হাল ছাড়েননি এ কে এম ফজলুল হক মোল্লা। অত্র ইউনিয়নের কোন ছেলে -মেয়ে যাতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্য তিনি বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উনার দক্ষতা ও দূরদর্শিতার জন্যই অত্র ইউনিয়নের ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌছে দিয়েছেন।
তাছাড়া তিনি বিভিন্ন মসজিদ,মাদ্রাসা নির্মাণসহ সমাজ কল্যানমূলক কর্মকান্ডে নিয়োজিত রয়েছেন।
প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই " ঘাড়মোড়া এ,কে,এম ফজলুল হক মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের " ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছেন এ,কে,এম ফজলুল হক মোল্লা। অত্র বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক এ কে এম ফজলুল হক মোল্লার সহধর্মিণী মিসেস তাসলিমা হক ছিলেন অত্র বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা, যিনি ৫৩ বছর বয়সে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
মিসেস তাসলিমা হকের মৃত্যুর পর আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসেন মরহুমের স্বামী এ কে এম ফজলুল হক মোল্লা। কাঁধে তুলে নিলেন মিসেস তাসলিমা হকের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরনের গুরুদায়িত্ব। তিনি এলাকার মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো সহজ লভ্য করে তুলতে সচেষ্ট হয়ে উঠেন ।
তারই ধারাবাহিতায় সরকারি ও ব্যাক্তিগত প্রচেষ্টায় বিশাল মাঠটি ভরাট করে সারা বছর ব্যবহার উপযোগী করা হয়। একটি তিনতলা ভবন একটি টিন সেট ভবনসহ একাদিক টিনের ঘর নির্মান প্রভৃতি উন্নয়নমূলক কাজগুলো সম্পন্ন হয়।
তাছারাও ২০০৩ সালে অত্র বিদ্যালয়ের বিশিষ্ট দাতা সদস্য, ঘারমোড়া ইউনিউনের একাদিকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান জনাব আবদুছ সামাদ মোল্লার মৃত্যুর পর বিদ্যালয়টি খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যখন যাচ্ছিল, ঠিক তখনি দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসেন মরহুমের বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ও মেঝো ছেলে একাদিকবার নির্বাচিত সফল বর্তমান চেয়ারম্যান জনাব শাজাহান মোল্লা। তাঁরা নিজ কাঁধে তুলে নিলেন পিতা আবদুছ সামাদ মোল্লার সকল দায়িত্ব ।
বিদ্যালয়টি হোমনা উপজেলা থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ঘারমোড়া গরুর বাজারের আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। বিদ্যালয়টি ঘারমোড়া ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারকও বটে। মূলত বিদ্যালয়টি কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে ঘারমোড়া বাজার। বর্তমানে ঘারমোড়ার গরুর বাজার কুমিল্লা জেলায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। ইতিমধ্যে অত্র বিদ্যালয় ও বাজারে পাশ্বদিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘোষনা করেছে বর্তমান সরকার।
এলাকাবাসীর থেকে জানা যায় বিদ্যালয়টি অল্পসময়ে সাফল্যে অর্জন করেছে শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, পরিচানা পরিষদের যথাযথ পরিচানা সর্বপরি প্রধান শিক্ষকের প্রচেষ্টা। আরও জানা যায় অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ জালাল উদ্দিন বিদ্যালয়টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্রছাত্রীদের থেকে জানা যায় স্যারের পরিশ্রমের নানা গল্প। একটি সফল প্রধান শিক্ষকের যতগুলো গুণ থাকা প্রযোজন তার সবকয়টি গুণের অধিকারী ছিলেন মোঃ জালাল উদ্দিন স্যার ।
তিনি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক মনা ছিলেন বটে। তাঁর অক্লান্ত ও সফল প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টিতে সাল থেকে জে এস সি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিচালিত হয়ে আসছে। আরও জানা যায় প্রধান শিক্ষক জনাব জালাল উদ্দিনের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে।
কিন্তু তিনি বিদ্যালয়ের কাজের সুবিধা ও আন্তরিকতার জন্য গত প্রায় এক যুগ পূর্ব অত্র বিদ্যালয়ের পাশ্বে স্হায়ী ভাবে বসবাস করেছেন।
বিদ্যালয়টির শুরুতে শতাদিক ছাত্রছাত্রী নিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা করছে।