বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ২০২৪ সালে নবম শ্রেণিতে বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) বিভাজন থাকছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভাগ বিভাজন না থাকার বিষয়ে প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অফিস আদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে বলা হয়, মাধ্যমিক পর্যায়ে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে নবম শ্রেণিতে বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) বিভাজন না থাকার বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে পত্র জারির মাধ্যমে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হলো। প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়ার পর সন্ধ্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর পত্র জারির মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিষয়টি অবহিত করে।

অধিদপ্তরের জারি করা পত্রে দেশের শিক্ষা প্রাতষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ অনুযায়ী মাধ্যমিক পর্যায়ে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে নবম শ্রেণিতে বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) বিভাজন থাকছে না। বিষয়টি সকলকে অবহিত করা হলো।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরো বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০২৪ সালে প্রাথমিকের দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি, ২০২৫ সালে প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম এবং মাধ্যমিকের দশম শ্রেণি নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। আর উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণি ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের সমর্থনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দুইটি গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ছাত্রদল। এসময় প্রতিটি গেটে ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ লেখা সম্বলিত একটি করে ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিএনপির ডাকা অবরোধের তৃতীয় দিনে সকাল ৭টার দিকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, জবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেট (ব্যাংকের গেট) ও পোগেজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ গেটে তালা ও ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পোগেজ ল্যাবরেটরির গেটে তালা ও ব্যানার লাগানোর সময় তাদের ধাওয়া করে পুলিশ।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির বিচার, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, দেশের বিচার ব্যবস্থা সংশোধন করা ও এক দফা দাবি আদায়ের এ অবরোধে গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় জবিতে অবরোধ পালিত হবে না এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সেই অবরোধের লক্ষ্যে জবি ছাত্রদল আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গেটে তালা দিয়েছে।’

সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, ‘এক দফা দাবি আদায় এবং বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে পুলিশলীগ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলা ও গণ গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আমরা অবরোধ পালন করছি। অবরোধের তৃতীয় দিনে আমরা জবির বিভিন্ন গেটে তালা ঝুলিয়েছি এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের জনগণের স্বার্থ রক্ষার অবরোধ সফল করার লিখিত ব্যানার লাগিয়ে দিয়েছি। আমি মনে করি এই ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ প্রশাসন জনগণের স্বার্থ রক্ষার অবরোধকে সমর্থন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখবে।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দিলে ব্যবসায়ীরা কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হবেন বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি বলেন, ‘মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

রোববার দুপুরে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে কার্ডধারীদের মধ্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।

টিপু মুনশি বলেন, ‘রমজান মাসকে ঘিরে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা পুরো মাসের পণ্য একবারে কিনে নিম্ন আয়ের মানুষকে দুর্ভোগে ফেলেন। এতে করে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট তৈরি হয় ও দাম বেড়ে যায়। এ বিষয়টি সকলের লক্ষ্য রাখা উচিত।’

এসময় তিনি বলেন, আসন্ন রমজানে স্বল্পমূল্যে এক কোটি পরিবারকে টিসিবির কার্ডের মাধ্যমে তেল, চিনি, ডালসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি করছে সরকার। ৩ কোটি মানুষকে এ সুবিধার আওতায় আনছে সরকার‌।

টিপু মুনশি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে প্রধানমন্ত্রী আমদানি পর্যায়ে শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট কমিয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আজ (রোববার) সেই পণ্য খালাস হচ্ছে। এটি বাজারে আসলে পণ্যের দাম অনন্ত ১০ টাকা কমে যাবে।’

এসময় উপস্থিত ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা তারিন, উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া, বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনছার আলীসহ অন্যরা।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

জলবায়ু পরিবর্তনে কমছে জীববৈচিত্র্য। শিল্পে রাসায়নিকের ব্যবহারে বহুমাত্রিক দূষণ বাড়ছে। দূষিত বাতাস, পানি ও মাটি থেকে উৎপাদিত খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে বিষ। এতে করে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। এ ছাড়া বর্তমান কৃষিব্যবস্থায় সবকিছু একসাথে রোপণ পরিবেশগত মৃত্যু ডেকে আনছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের দেহে ক্যান্সারসহ মারাত্মক ব্যাধির প্রধান কারণ বিষাক্ত খাদ্য। তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনে জীববৈচিত্র্য কমার সাথে দিন দিন শিল্পে রাসায়নিকের বাড়তি ব্যবহার, শিল্পকারখানা, খনি, কৃষিকাজের দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মাটিকে বিষিয়ে তুলছে। দূষণের কারণে খাদ্য ও পানি অনিরাপদ হওয়ার পাশাপাশি মাটি ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হারাচ্ছে। পরিস্থিতি এখনি নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রাসায়নিকের ব্যবহার দ্বিগুণ বেড়ে তা ভয়াবহ বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখতে পেয়েছে, অপরিশোধিত পোলট্রি বর্জ্য সরাসরি জমিতে ও জলাধারে ব্যবহারের কারণে শাকসবজিতে ঢুকে পড়ছে রোগজীবাণু। অন্য দিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) তথ্যমতে, সারা দেশের মাটিতেই প্রয়োজনের তুলনায় নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, দস্তা ও বোরন এবং অঞ্চলভেদে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজের ঘাটতি রয়েছে।

সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে দেশে পরিচালিত সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশের পুকুর ও জলাশয়ের পানিতে বিষাক্ত কীটনাশক ডাইএল্ড্রিনের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। অন্য দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী দেশে ভোগ্যপণ্যের প্রায় ৪৮ শতাংশই ভেজাল। ১০ বছর আগেও এ দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা ছিল ৮০ লাখ, বর্তমানে সেটি দুই কোটিরও বেশি, যার অর্ধেকই শিশু। আর দেশে প্রতি বছর ৮৪ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।

খাদ্যে দূষণের বহুমাত্রিক তথ্য তুলে ধরে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) বলছে, শুধু চাষাবাদের মাধ্যমেই নয়, অন্যভাবে খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়েও তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের দূষণ। প্রতিদিন দেশে কমছে কৃষিজমি এবং প্রাকৃতিক পানির উৎসস্থল। বেশি খাদ্য ফলানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। এতে মাটি দূষণের সাথে দূষিত হচ্ছে সামগ্রিক পরিবেশ। জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে জলাশয়ে যাচ্ছে। তাতে করে দূষণ ছড়াচ্ছে পানিতে। এভাবে করে মাটি-পানি থেকে উৎপাদিত খাদ্য মানুষের শরীরে গিয়ে তাদের অজান্তেই মারাত্মক সব রোগের ঝুঁকিতে ফেলছে। সে সাথে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।

জাতিসঙ্ঘ তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, অনেক দেশই মাটিদূষণ নিয়ে সচেতন নয়। অথচ শিল্পদূষণ, খনি, কৃষিকাজ ও দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মাটিকে বিষিয়ে তলছে। দূষণকারী পদার্থের মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের ধাতু, সায়ানাইড, ডিডিটি ও নানা ধরনের কীটনাশক এবং পিসিবির মতো দীর্ঘস্থায়ী জৈব রাসায়নিক পদার্থ। দূষণের কারণে খাদ্য ও পানি অনিরাপদ হওয়ার পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে মাটির ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

নেদারল্যান্ডসের ওয়াজেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, জীববৈচিত্র্যের জন্য ফসলের ভিন্নতা খুবই কার্যকর। কিন্তু বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বে জীববৈচিত্র্য যেমন কমছে তেমনি বর্তমান কৃষিব্যবস্থায় সবকিছু একসাথে রোপণ একধরনের পরিবেশগত মৃত্যু ডেকে আনছে।

বিরাজমান পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের (মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, অব্যাহত দূষণে মাটি ও পানি দূষিত হচ্ছে। এই মাটি-পানি থেকে যা উৎপাদন হয় তা খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে গিয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। ফলে মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্যান্সারঝুঁকিতে পড়ছে। তিনি বলেন, এটা এখনি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে একসময় তাতে একসাথে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটবে।

অপর দিকে পরিবেশবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব নয়া দিগন্তকে বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরীর মধ্যে ১০ থেকে ২০ নম্বরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান। এতে করে পরিবেশদূষণ, শব্দদূষণ, পয়ঃনিষ্কাশন থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে ঢাকা একটা বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতিতে পড়েছে। এতে করে ঢাকা ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

তার মতে, এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষায় দূষণ বন্ধ করতে হবে। শিল্পস্থাপনা, ইউনিভার্সিটি, হাসপাতাল, গার্মেন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অফিস স্থাপনাকে পরিকল্পিতভাবে ঢাকার বাইরে ডিভিশন হেডকোয়ার্টার বা উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে এমন এলাকায় স্থানান্তর করতে হবে। এ ছাড়া যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি, সবুজায়ন বৃদ্ধি, নদীখনন, জলাশয়-নদীনালা দখলমুক্ত করে তা রক্ষায় পদেক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাতে নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

প্রতিষ্ঠার ‍পর থেকেই তীব্র আবাসন সংকটে রয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক হল রয়েছে মাত্র তিনটি। এতে ছেলেদের জন্য দুটি এবং মেয়েদের জন্য মাত্র একটি হল রয়েছে। হল তিনটি মিলে শিক্ষার্থীদের জন্য মোট সিট রয়েছে মাত্র ৮৮৮টি।

এই তীব্র আবাসন সংকটের মধ্যেই আট সিটের রুমে একাই থাকেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩০৬ নম্বর কক্ষের দরজার একপাশে সোনালি রঙে পোমেল বড়ুয়ার নামফলক সাঁটানো, লালগালিচায় ঢাকা পুরো কক্ষ, বসানো দামি সোফা, জানালায় রংবেরঙের পর্দা টানিয়ে রেখেছেন। রুমটিতে আটজনের সিট নির্ধারিত থাকলেও একাই থাকছেন তিনি। হল প্রশাসন থেকে দেওয়া ছয়টি বেড ও ছয়টি টেবিলের পরিবর্তে সেখানে মাত্র একটি টেবিল ও একটি বেড রয়েছে।

হল সূত্রে জানা যায়, মাস্টার্স পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ হলে আবাসিক শিক্ষার্থীর সিট বাতিল হয়ে যায়। ওই রুমে তিনজন শিক্ষার্থীর নামে সিট বরাদ্দ থাকলেও তার মধ্যে দুজনের মাস্টার্স শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর আগেই। কিন্তু পোমেল বড়ুয়ার নামে কোনো সিট বরাদ্দ নেই। এ ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, নিজের ইচ্ছামতো রুম বণ্টন করেন তিনি।

নামেমাত্র হল প্রভোস্ট।
হল সূত্র আরো জানায়, কোনো শিক্ষার্থী নিজ উদ্যোগে হলের কক্ষে ডেকোরেশন করতে পারেন না। কিন্তু বর্তমান কমিটি গঠনের পর থেকেই তিনি এভাবে থাকছেন।

এ বিষয়ে পোমেল বড়ুয়া বলেন, ‘নৈতিকভাবে বলতে গেলে পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরেও হলে থাকা ঠিক না। তবে ছাত্ররাজনীতির কিছু দায়িত্বের জায়গা থেকে আছি।

রুম ডেকোরেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সাতজন রুমমেট মিলে রুমটা ডেকোরেশন করেছি। আমরা পাঁচজন বর্তমান এই রুমে থাকি। রাজনীতি করি, বিভিন্ন সময় নেতাকর্মীরা রুমে আসেন, তাই একটু রুমটা পরিপাটি করে রেখেছি।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল প্রভোস্ট ড. বিজন মোহন চাকী বলেন, ‘আমাদের আবাসন সংকট রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী হলে থাকতে পারে না। তারা বাইরে মেসে থাকে। পড়াশোনা শেষ হলেই হল ছাড়তে হবে। এমন নিজের ইচ্ছেমতো রুম ডেকোরেশন করা ঠিক না। এই সংকট কাটিয়ে তোলার জন্য কাজ চলছে। আশা করি দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।’দৈনিক কালের কণ্ঠ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাষা শিক্ষায় একটু পিছিয়ে আছে। বাংলা ভাষার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাষার দিকে জোর দিতে হবে। এছাড়া দক্ষতা ও মূল্যবোধের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে, তাহলেই সফলতা অর্জন সম্ভব হবে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশানাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (ইইউবি)-এর প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্বে করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

উপমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘শিক্ষায় ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, অধিকতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিও অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার উচ্চশিক্ষার পরিধিকে সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও সৃজনশীলতাকে দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়তে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবনে সমাবর্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমাবর্তনের মাধ্যমে একদিকে শিক্ষার্থীদের অর্জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব কার্যক্রমের সামগ্রিক মূল্যায়নের সুযোগ পায়। তাই প্রতিটি সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। আনন্দঘন এ অনুষ্ঠানে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন গ্র্যাজুয়েটদের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি ধন্যবাদ জানাই অভিভাবক, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।’

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্কুল অব ইকনমিক্সের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ। সমাবর্তনে ইইউবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, ইইউবি ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. মকবুল আহমেদ খান, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ উপাচার্য ইঞ্জিনিয়ার মো. আলিম দাদ বক্তব্য দেন।

ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রথম সমাবর্তনে ২০১২ থেকে ফল সেমিস্টার ২০২০ সময়কাল পর্যন্ত ৭৫৫৯ জন শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি দেওয়া হয়। ভালো ফলাফলের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড ও আটজন শিক্ষার্থীকে ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

ইইউবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মহিউদ্দিন খান আলমগির বলেন, ‘ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশরাজধানী ঢাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে গাবতলীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। শিক্ষার মান এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম কাতারের। বেতন ফি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অনেক কম।’

ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ উপাচার্য ইঞ্জিনিয়ার মো. আলিম দাদ বলেন, ইইউবি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলেও মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রদানে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে শুরু থেকে ফল সেমিস্টার ২০২০’র মধ্যে ৭ হাজার ৫৫৯ শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেছে। তারমধ্যে ৬ হাজার ৯৪৮ জন স্নাতক ও ৬১১ জন স্নাতকোত্তর।

ইইউবি ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মকবুল আহমেদ খান বলেন, ‘ইইউবি গরীব ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ কম খরচে এখানে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সাফল্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।’

তিনি আরও বলেন, প্রথমত, ২০১২ সালে শুরু করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেশের শিক্ষার্থীদের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ৩টি ফ্যাকাল্টি এবং ১২টি ডিপার্টমেন্টের কার্যজক্রম শুরু করতে সক্ষম হয়েছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ল্যাবরেটরি স্থাপন করে প্রকৌশল শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিন চতুর্থাংশ প্রকৌশল বিভাগ সমূহের অন্তর্ভুক্ত।

দ্বিতীয়ত, অনুমোদন প্রাপ্তির ৪ বছরের মধ্যে সাড়ে পাঁচ লাখ বর্গফুটের সুবিশাল ১২ তলা ভবন স্থাপন করেছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মিরপুরের গাবতলীতে। তৃতীয়ত, মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা প্রদানের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ মেধাসম্পন্ন ১৩০ জন শিক্ষক এবং শতাধিক কারিগরি কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যুগের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনেকগুলো নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে, বাড়ান হয়েছে আসন সংখ্যা।

আশা প্রকাশ করে মকবুল আহমেদ খান বলেন, সময়ের চাহিদা অনুযায়ী জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা প্রদানে এ বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ বলেন, ২০১২ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করলেও ২০১৬ সালে স্থায়ী জায়গায় ভবন তৈরি করেছে। বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী এখানে পড়াশুনা করছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাও যেমন মানসম্মত তেমনি মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। দক্ষ ও মানসম্মত শিক্ষায় আমাদের আরও জোর দিতে হবে।

ইউজিসি’র সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ১ম সমাবর্তনে উপস্থিত হতে পেরে আমি ধন্যাবাদ জ্ঞাপন করছি। ইইউবি কম খরচে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া। আশা করছি এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়

পলাশ সরদার।।

 শিক্ষায় সবার সমান অধিকার। এই অধিকারও সবার। একটি জাতির শিক্ষা হলো তার এগিয়ে যাওয়ার মূল নির্দেশিকা। জীবন আলোকিত করার দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য পূরণে শিক্ষাই হচ্ছে প্রধান অবলম্বন। মেধা ও মননে আধুনিক ও চিন্তা-চেতনায় অগ্রসর একটি সুশিক্ষিত জাতিই পারে একটি দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আর তারই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রণীত ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সরকারের একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সব বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে। আর প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে শিক্ষার প্রথম সোপান। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষার দর্শন ও বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষা একই সুতোয় গাঁথা। তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ভাবনা শুরু করেছিলেন, যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষাই শিক্ষার মূল ভিত্তি। তাই এই শিক্ষা নিয়ে ভাবনা শুরু করেন।

১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখ একটি প্রেসনোটের মাধ্যমে জানানো হয় যে, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বই পাবে। বঙ্গবন্ধু ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন এবং তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। বর্তমানে ১ম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আপাদমস্তক একজন শিক্ষানুরাগী। তিনি জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনা ছিল তার রাজনৈতিক দর্শনের অন্যতম ভিত্তিমূল। Pause Unmute Close PlayerUnibots.in বঙ্গবন্ধুর ভাবনা ও দর্শনকে ধারণ করে যে কোনো জাতি একটি আধুনিক কর্মমুখী এবং বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। বাংলাদেশ উত্তরোত্তর যে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যার মাধ্যমে আদর্শ নাগরিক গড়ে তোলা যাবে এবং সোনার বাংলা বিনির্মাণ সহজতর হবে। দক্ষ মানবসম্পদ বা সোনার বাংলা গড়তে আমাদের শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। আর এই শিক্ষার ভিতই হলো প্রাথমিক শিক্ষা। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন অনুসরণ করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আবশ্যক।

জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ১৭টি অভীষ্টকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৫ সালে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে (SDG) প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। ১৭টি অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও ৩৩২টি পরিমাপক রয়েছে। যার মধ্যে ৪ নম্বর অভীষ্ট হলো মানসম্মত শিক্ষা (অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমাজতান্ত্রিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, সবার জন্য আজীবন শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা।) টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, রূপকল্প-২০২১ এবং ২০৪১ বাস্তবায়নে দক্ষ জনসম্পদ উন্নয়নের বিকল্প নেই। তাই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। গুণগত শিক্ষার অনেক অপরিহার্য পূর্বশর্তের মধ্যে একটি হচ্ছে অধিক বিনিয়োগ।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দ অপর্যাপ্ত। এ কথাও অনস্বীকার্য, বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ অনেক ক্ষেত্রেই সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে খরচ করা হয় না, যা অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত। দেশে শিক্ষা খাতে প্রকৃত বিনিয়োগ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সার্কভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে সামগ্রিক শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মাত্র ০.৯২ শতাংশ এবং উচ্চশিক্ষা উপখাতে বরাদ্দ মাত্র ০.১২ শতাংশ, যা সার্কভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম।

উল্লেখ্য, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ভারত ও নেপালে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মোট জিডিপির তুলনায় যথাক্রমে ৪.৫ ও ৩.৫ শতাংশ। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বর্তমান জাতীয় বরাদ্দ ০.৯২ থেকে ক্রমান্বয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে ২ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ শতাংশে উন্নীত করা আবশ্যক। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের বর্তমান বরাদ্দ ৮ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাও জরুরি। ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৭ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।

শিক্ষা মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রধানতম উপায় হলেও দেশে শিক্ষায় অর্থায়ন এখনো হতাশাব্যঞ্জক। ইউনেস্কো গঠিত ‘একবিংশ শতাব্দীর জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষা কমিশন’ তথা ইউনেস্কো গঠিত দেলরস কমিশন প্রতিবেদনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রাপ্ত বৈদেশিক সহায়তার ২৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে (১৯৯৭) এ সম্পর্কে হতাশা ব্যক্ত করে বলা হয়েছে, জাতীয় উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে মানবসম্পদের সার্বিক উন্নয়ন। জাতীয় উন্নয়ন অর্জন করতে হলে উৎপাদন শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রধান উপাদান। বর্তমানে যে পরিমাণ অর্থ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা হয়, তা অপ্রতুল। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু বার্ষিক বিনিয়োগের পরিমাণ বাংলাদেশে ৫ ডলার, শ্রীলংকায় ১০ ডলার, ভারতে ১৪ ডলার, মালয়েশিয়ায় ১৫০ ডলার ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৬০ ডলার। গুণগত শিক্ষা কোনো একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে অর্জনের আশা করা যায় না।

এর জন্য প্রয়োজন অনেক উপাদানের সমন্বিত এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও কর্মকাণ্ড। গুণগত শিক্ষার জন্য যেসব উপাদানের যথাযথ সমন্বয় সাধন করতে হয় সেগুলো হচ্ছে- আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম, পর্যাপ্তসংখ্যক যোগ্য ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, প্রয়োজনীয় শিক্ষাদান সামগ্রী ও ভৌত অবকাঠামো, যথার্থ শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি, উপযুক্ত মূল্যায়ন পদ্ধতি, ধারাবাহিক পরিবীক্ষণ ইত্যাদি। শিক্ষার সব স্তরে গুণগত মান অর্জনের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত সুপারিশগুলোর আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণ করা যেতে পারে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সব স্তরে দক্ষতার মান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নেই। এর বিপরীতে অপচয়ের হার কমিয়ে দক্ষতার মান বাড়াতে আমাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ দক্ষতা ও অপচয়কে রোধ করতে হবে, যাতে মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষৎ প্রজš§কে সত্যিকারের মানবসম্পদে রূপান্তর করা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে অভিভাবক ও শিক্ষকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মধ্যকার সঠিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করা আবশ্যক। মূল্যায়ন ও পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার সাধন করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের সব দিক অর্থাৎ স্বাস্থ্য, আচার-আচরণ, প্রকাশভঙ্গি, মূল্যবোধ, সৃজনশীলতা ইত্যাদি বিবেচিত হয় এবং তথ্য সংগ্রহকরণ কৌশল ও বিশেষায়িত ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্ভব হয়। আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের বিষয় নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে অভিভাবক, বিদ্যালয় বা শিক্ষকদের ইচ্ছা ও পছন্দ মোতাবেক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত।

কোন শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে কী হতে চায়, কিংবা কোন বিষয় নিয়ে পড়তে চায়, এ বিষয়ে শিক্ষার্থীর পছন্দ বা মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া আবশ্যক। এতে তার পঠিতব্য বিষয় সম্পর্কে শ্রদ্ধা জাগবে; ফলে সে পাঠে মনোযোগী হবে, শিক্ষাগ্রহণ করে পরিতৃপ্ত হবে এবং আশানুরূপ ফলাফল করবে। প্রাথমিক শিক্ষার অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার নতুন ভবন নির্মাণ করছে। ফলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ পরিবেশে পাঠ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সামাজিক দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমাবেশ আয়োজন করে শিক্ষার সঙ্গে সমাজকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- বছরের শুরুতে প্রতিটি স্কুলে ক্যাচমেন্ট এলাকাভিত্তিক শিশু জরিপপূর্বক ভর্তি নিশ্চিত করা। নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ, মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক, হোম ভিজিট কার্যক্রম, এসএসসি ও পিটিএ সভা, বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই বিতরণ, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম গ্রহণ, উপবৃত্তি প্রদানসহ মাসিক কার্যক্রমে মাঠ প্রশাসন আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীল আচরণের ফলে প্রাথমিক শিক্ষার উৎকর্ষ সাধিত হবে।

টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে রূপকল্প ২০২১, ২০৪১ ও ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষার আধুনিকায়ন অত্যাবশ্যক। আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত উৎপাদনমুখী অভিযোজনে সক্ষম, সুখী ও বৈশ্বিক নাগরিক গড়ে তোলাই আমাদের প্রত্যাশা।

পলাশ সরদার : প্রাবন্ধিক ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, গোপালগঞ্জ

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়

নিউজ ডেস্ক।।

সর্বজনীন পেনশন তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে অর্থ বিভাগের জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল ২২ অক্টোবর অর্থ বিনিয়োগের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে অবহিত করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

রোববার দুপুরে অর্থ বিভাগের সভাকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার সভাপতিত্ব করবেন। অনুষ্ঠানে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান অর্থমন্ত্রীর কাছে সর্বজনীন পেনশন তহবিলের অর্থে ক্রয় করা ট্রেজারি বন্ড হস্তান্তর করবেন বলে জানা গেছে।

দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। তার আগে তিনি বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তবে জীবদ্দশায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারেননি তিনি।

সে সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি শেষে যখন পেনশন তুলতে গিয়েছিলাম তখন নানা ধরনের আইনি জটিলার মুখে পড়েছিলাম। অবশ্য পেনশন তোলা নিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তির কথা আগে থেকেই জানতাম। তা প্রত্যক্ষ করলাম নিজের পেনশন তুলতে গিয়ে সেই সময় থেকে আমার পরিকল্পনা ছিল কোন দিন সুযোগ পেলে পেনশন ব্যবস্থা ভোগান্তিহীন করবো।’

তিনি বলেছিলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বিষয়টি নিয়ে কাজ করার অনুমোতি দিয়েছেন। আশা করছি, আগামী বাজেটে এ বিষয়ে কিছু একটা বলতে পারবো। তবে প্রক্রিয়াটি অনেক দীর্ঘ। এটা বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগবে। আমার সময়কালে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেবো। ইতোমধ্যে একটি খসড়া তৈরির কাজ চলছে।’

তারই ধারাবাহিকতায় আবুল মাল আবুল মুহিত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘ভবিষ্যতে প্রবীণদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীন হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে সে জন্য পেনশন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ, যাদের প্রায় সবাই সরকারি চাকুরে, এখন পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্রাচ্যুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের জন্য সে সুবিধাও নেই।’

আবুল মাল আবদুল মুহিতের সেই ঘোষনার পর থেকে নানা পর্যায় অতিক্রম করার পর চলতি বছর ১৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল প্রত্যাশিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক যাত্রার উদ্বোধন করেন। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে যাত্রা শুরু করে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের হাত ধরে তা বাস্তবায়ন হয়েছে।

জাতীয় সংসদের বিগত অধিবেশনে সর্বজনীন পেনশন স্কিম আইনটি পাস হওয়ার পর গত ৩১ জানুয়ারি আইনটিতে সম্মতি দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে গত ১৩ আগস্ট আইনটির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা ২০২৩ জারি করেছে সরকার। এই স্কিমের বিধিমালা অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক তাদের জন্য প্রযোজ্য পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। প্রবাসী বাংলাদেশি যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা পাসপোর্টের ভিত্তিতে পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

যেসব নাগরিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় রয়েছেন তারা এই পেনশনের আওতায় আসতে পারবে না। তবে তারা যদি এই সুবিধা ত্যাগ করেন তবে পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। উল্লেখ্য, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বেশ কয়েকটি কর্মসূচি চালু রয়েছে। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রভৃতি।

এ কর্মসূচিতে যুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন গ্রাহক। চাঁদা পরিশোধের পর তিনি মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন ১৫ বছর। পঞ্চাশ বছরের ঊর্ধ্বের নাগরিকরাও পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন, তবে সে ক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, স্কিমের আওতায় চাঁদাদাতা স্কিমের স্বত্ব অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে না। তবে স্কিম চলাকালীন কেউ মারা গেলে মনোনীত নমিনির নামে হস্তান্তর করা যাবে। এছাড়া চাঁদাদাতা তার মোট জমানো অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন। এটি পরবর্তী ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।

চার ক্যাটাগরির মাধ্যমে পেনশন স্কিমটি বাস্তবায়ন করা হবে। মাসিক চাঁদা ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কর্মসূচি পরিবর্তন এবং চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ থাকছে। পেনশন ব্যবস্থায় নগদ টাকায় কোনো লেনদেন হবে না। সব কর্মকাণ্ড হবে অনলাইনে।

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করেও চাঁদা দেওয়া যাবে। চার ক্যাটাগরির পেনশন স্কিমের মধ্যে রয়েছে- প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাস স্কিম’, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীদের জন্য ‘গ্রগতি স্কিম’, অনানুষ্ঠানিক খাতে বা স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের (কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, রিকশাচালক ইত্যাদি পেশার) জন্য ‘সুরক্ষা স্কিম’ ও স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিক ‘সমতা স্কিম’।

সমতা স্কিমের বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত আয়সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তি যাদের বর্তমান বার্ষিক আয়সীমা অনূর্ধ্ব ৬০ হাজার টাকা, তারা এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

সমতা স্কিমে চাঁদাদাতার অনুকূলে সরকারি অর্থ জমা প্রদানের বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, সমতা স্কিমে সরকারি অংশ প্রদানের জন্য যথেষ্ট অর্থ রয়েছে কি না বা যথেষ্ট অর্থ না থাকলে এ বাবদ কী পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন হবে, পেনশন কর্তৃপক্ষ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে নির্ধারণ-পূর্বক প্রয়োজনীয় অর্থের চাহিদাপত্র অর্থ বিভাগে প্রেরণ করবে এবং অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করবে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, ধারাবাহিক তিনটি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে পেনশন হিসাব স্থগিত হবে। পরবর্তী সময়ে পুরো বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল হবে না। নির্দিষ্ট তারিখে চাঁদা পরিশোধে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানাবিহীন পরিশোধ করা যাবে।

এরপর প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা দেওয়া সাপেক্ষে হিসাবটি সচল করা যাবে। এছাড়া, একজন চাঁদাদাতা আগাম কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন। অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে ১২ মাস পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে না।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো চাঁদাদাতা ৭৫ বছরের আগে নিখোঁজ হলে এবং নিখোঁজ হওয়ার পর ৭ বছর অতিবাহিত হলে তার হিসাব স্থগিত করে নমিনিকে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এছাড়া, কেউ চাঁদা প্রদানকালে শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যরে কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে অর্থ উপার্জন করতে না পারলে তাকে অসচ্ছল চাঁদাদাতা ঘোষণা করতে কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেবে।

‘সর্বজনীন পেনশন তহবিল’ শিরোনামের ব্যাংক হিসাবে পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারী সবার জমাকরা অর্থ জমা থাকবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের ট্রেজারি বন্ডকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, কেননা এটি সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ।

বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্য লভ্যাংশের ভিত্তিতে পেনশনারদের মাসিক এন্যুয়িটি হিসাব করে একজন পেনমনারের মাসিক পেনমন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তি কত টাকা, কত সময় জমা দেন, কী পরিমাণ পেনশন প্রাপ্য হবেন, তার একটি সম্ভাব্য হিসাব দেখানো হয়েছে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে এখানেhttps://upension.gov.bd/  ।

নিউজ ডেস্ক।।

সিরাজগঞ্জের যমুনার চর অধ্যুষিত বেলকুচি উপজেলার মেহেরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি যমুনার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাই খোলা মাঠে মাথার ওপরে কোনোরকমে একটি টিনের ছাপরা তুলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। বৃষ্টি হলে সেই ঘরেও পাঠদান করতে ব্যাপক সমস্যা হয়। বাধ্য হয়েই সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের ভবনটি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর ২০০ মিটার অদূরে একটি খোলা মাঠে টিন দিয়ে একটি ছাপরা তুলে নামমাত্র পাঠদান চলছে। বিদ্যালয় যমুনাগর্ভে বিলীন হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটছে। এখানে পড়াশোনার কোনো পরিবেশ নেই।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, এভাবে ক্লাস করতে ভালো লাগে না। একদিকে মাথার ওপরে ছাউনি থাকলেও চারদিকে খোলা হওয়ায় এমনিতে যেমন ক্লাস করতে কষ্ট হয় তেমনই বৃষ্টি আসলে আর ক্লাস করার কোনো অবস্থাই থাকে না। বাতাসের সঙ্গে আসা পানিতে বইখাতা ভিজে যায়। এবং স্কুলের এই অবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে আসতে চায় না।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা বলেন, প্রধান শিক্ষক টিনের ছাউনি তুলে দুই-চারজন ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসে থাকেন। এখানে পাঠদানের কোনো পরিবেশ নেই। ভবন না থাকায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে তো ছেলে-মেয়ারা স্কুলেই আসতে চায় না। এভাবে চললে এলাকার শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।

মেহেরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের পর থেকে খোলা মাঠে ছাউনি তুলে আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছি। তবে শিক্ষার জন্য যে পরিবেশ থাকা দরকার, তা এখানে নেই। ভবন পাব কি-না, বা কবে পাব এমন কোনো তথ্য নেই। দিনদিন শিক্ষার্থীও কমে যাচ্ছে।

বড়ধুল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জিন্নাহ মোল্লা বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি ভেঙে যাওয়ার পর বিষয়টি এমপি ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তারা যদি কোমলমতি শিশুদের কথা চিন্তা করে দ্রুত ব্যবস্থা না নেন, তাহলে এ অঞ্চলের শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে।

বেলকুচি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান  বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে বেলকুচি উপজেলার বড়ধূল ইউনিয়নের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেঙে নদীগর্ভে চলে গেছে। শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পড়ে, সেজন্য আমরা অস্থায়ীভাবে ছাউনি তুলে শিক্ষকদের শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে বলেছি। পাশাপাশি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে স্কুল দুটি সম্পর্কে জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় মেহেরনগর বিদ্যালয়টির এখন আর কোনো নিজস্ব জায়গা নাই। তবে সেখানে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক আছেন। বিদ্যালয়টির জন্য একটি ফান্ডের আশা করছি। আশা করছি খুব দ্রুতই ৩ লাখ টাকার একটা ফান্ড পাব। ফান্ডটি পেলে খুব দ্রুত আমরা ওই স্কুলটিতে আপাতত টিনশেড ক্লাসরুম করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারব।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের জরুরিভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য ‘এডুকেশন ইন ইমারজেন্সি’ নামে একটা প্রোগ্রাম আছে। যেখান থেকে জরুরি প্রয়োজনের জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। আমরা বিদ্যালয়টির জন্য আপাতত সেই সেই প্রোগ্রামের টাকাটার জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি খুব দ্রুতই সেটা পেয়ে যাব।

তিনি আরও বলেন, সেই টাকা পেলে আমরা আপাতত সেখানে অস্থায়ীভাবে শিক্ষাদানের মতো একটা ব্যবস্থা করতে পারব। এ ছাড়াও যেহেতু বিদ্যালয়ের ভবনের পাশাপাশি জমিও নদীগর্ভে চলে গেছে তাই জমি সংগ্রহ এবং ভবনের কাজ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এলাকার কেউ জমি দান করলে আবার সেখানে স্থায়ীভাবে বিদ্যালয়টি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

নিউজ ডেস্ক।।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মচারীদের স্থায়ী জ্যেষ্ঠতার তালিকা নেই। পদোন্নতির সময় হলেই সাময়িক একটি তালিকা করা হয়। ‘সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা’ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও তেমনটি করেছে মাউশি কর্তৃপক্ষ। এ কারণে এবারও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে যোগ দেওয়া জ্যেষ্ঠ অনেক প্রার্থীই পদোন্নতির তালিকায় কনিষ্ঠদের পেছনে পড়ে গেছেন।

এখানেই শেষ নয়, মাউশির পদোন্নতি প্রস্তাবে রয়েছেন সংস্থাটির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস এবং বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সনদ জালিয়াতিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযুক্ত দুজন কর্মচারী। আবার পদোন্নতির তালিকা প্রণয়ন ও যাচাই-বাছাই করার জন্য মাউশি চার সদস্যের যে কমিটি গঠন করে দিয়েছে, সে চারজনই রয়েছেন পদোন্নতির তালিকায়। আবার শিক্ষা ছুটি ছাড়া প্রার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সনদপত্র অর্থ বাণিজ্যের উদাহরণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানিয়েছে, মাউশির আওতাধীন উপজেলা পর্যায়ের সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ৯৯টি শূন্যপদের পদোন্নতির কার্যক্রম চলমান। কিন্তু স্থায়ী জ্যেষ্ঠতার তালিকা না থাকায় পদোন্নতি ঘিরে ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেটের পছন্দের কর্মচারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। যেখানে মাউশির আওতাধীন অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত সম-গ্রেডভুক্ত ৭০ শতাংশ কর্মচারীর নাম নেই।

সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারী (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি) বিধিমালা-২০১১-এর ৯-এর (১) ও (২) ধারা অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠতার খসড়া তালিকা প্রণয়ন করে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে কারও আপত্তি, অভিযোগ, পরামর্শ থাকলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত আকারে জানাতে হবে। আর ৯-এর (৩) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কর্তৃপক্ষ উপবিধি (২)-এর অধীন প্রাপ্ত কোনো আপত্তি, অভিযোগ, পরামর্শ যথাযথ শুনানি ও নিষ্পত্তি করত চূড়ান্তভাবে জ্যেষ্ঠতা তালিকা প্রকাশ করিবে।’

মাউশি জ্যেষ্ঠতার খসড়া তালিকা প্রকাশের পর শতাধিক কর্মচারী বিধিবিধানের আলোকে জ্যেষ্ঠতা তালিকা সংশোধনের জন্য আবেদন করেন। সে আবেদনগুলো মাউশি আমলে না নিয়ে একতরফাভাবে জ্যেষ্ঠতার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মাউশি সূত্র জানিয়েছে, কর্মচারীদের বিএড (ব্যাচেলর অব এডুকেশন) ও মাস্টার্স কোর্সে ভর্তির অনুমতি, পদোন্নতির জন্য জমা দেওয়া সনদপত্র যাচাই, দুদক থেকে না-দাবি প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করার জন্য নরসিংদীর পলাশের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব মো. বেল্লাল হোসেন, পরিষদের অতিরিক্ত মহাসচিব ও মাউশির উচ্চমান সহকারী নজমুল হোসেন, মাউশির হিসাবরক্ষক কাজী মো. মহসিন এবং উচ্চমান সহকারী (অডিটর) মো. আবদুর রহিমের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ আর্থিক বাণিজ্য করেছে। এর মাধ্যমে ৮৬ জন কর্মচারীর পদোন্নতির প্রস্তাব মাউশি থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকায় বিএড ডিগ্রি গ্রহণের অবৈধ অনুমতিপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পাশাপাশি ইউজিসির কালো তালিকাভুক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারী কর্মচারীদেরও নাম রয়েছে।

এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে নোয়াখালীর সেনবাগ সরকারি কলেজের প্রধান সহকারী সৈয়দ লিয়াকত আলী প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। অন্যদিকে, সৈয়দ লিয়াকত আলী এবং মাউশি আওতাধীন কুমিল্লা অঞ্চল উপপরিচালকের কার্যালয়ের সাঁটলিপিকার মো. অহিদুর রহমান বিধি মোতাবেক একটি ত্রুটিমুক্ত স্থায়ী জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরির অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা সচিব সোলেমান খান বরাবর আবেদন করেন। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে মতামত দেওয়ার জন্য সচিব মাউশিতে একটি চিঠি পাঠান। কিন্তু শক্তিশালী সিন্ডিকেট ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে যাচাই-বাছাই না করেই তড়িঘড়ি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠায়।

সৈয়দ লিয়াকত আলী বলেন, একই আদেশে একই পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কনিষ্ঠরা আমার জ্যেষ্ঠ হয়েছে। অনেকের ক্ষেত্রেই এমনটি হয়েছে। এতেই বোঝা যায়, পদোন্নতির চূড়ান্ত তালিকা বিধি মোতাবেক হয়নি। পদোন্নতির এ তালিকা সংশোধন এবং সরকারি চাকরিতে যোগদানের পর বিএড ও মাস্টার্সে ভর্তির অবৈধ অনুমতিপ্রাপ্ত সনদধারীদের বাদ দিয়ে পদোন্নতির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

মো. অহিদুর রহমান বলেন, বিধি অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার খসড়া তালিকা প্রকাশ এবং অভিযোগ নেওয়া হলেও মাউশি কোনো শুনানি করেনি। সেজন্য একটি স্থায়ী জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি।

মাউশির সাবেক মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন বলেন, মাউশিতে অবশ্যই স্থায়ী জ্যেষ্ঠতার তালিকা থাকা উচিত। সমস্যা হলো, কেউ যোগদান করেছে মাউশির কর্মচারী হিসেবে আর কেউ কলেজে। তাই জ্যেষ্ঠতা কীভাবে নির্ধারণ করা হবে, তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। তার পরও একটা নীতিমালা অনুসরণ করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করা উচিত।

দুদকের অনুসন্ধানে দুই অভিযুক্তের নাম পদোন্নতির তালিকায়: মাউশি থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তালিকায় দুদকের অনুসন্ধানে অভিযুক্ত দুজন কর্মচারীও রয়েছেন। তারা হলেন মাউশির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত মো. বেল্লাল হোসেন এবং এনটিআরসিএর সনদ জালিয়াতি কাণ্ডে অভিযুক্ত মাউশির উচ্চমান সহকারী নজমুল হোসেন। গত বছর ডিগ্রি পর্যায়ের ৮৩১ জন ‘তৃতীয়’ শিক্ষককে এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষকপ্রতি ২ লাখ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল নজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, মাউশির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গত বছর মাউশির বেসরকারি কলেজ শাখার উচ্চমান সহকারী বেল্লাল হোসেনকে নরসিংদীতে বদলি করা হয়েছে। কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির জন্য দুদক থেকে না-দাবি প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিতে হয়। নজমুল ও বেল্লাল সেটি কীভাবে সংগ্রহ করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

দুদক থেকে জানা গেছে, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বদলি বাণিজ্য ও এমপিওভুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিবেদন দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত। যে ঘটনায় বেল্লাল হোসেন এবং নজমুল হোসেনের নাম বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তারা বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য, পদোন্নতি, দুর্নীতির মাধ্যমে জাল এমপিওভুক্তির সঙ্গে জড়িত। দুদকে এ দুজনের বিরুদ্ধেই অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগও জমা আছে।

পদোন্নতির তালিকায় থাকা প্রার্থীদের দিয়েই যাচাই কমিটি!: জানা গেছে, পদোন্নতির তালিকা প্রস্তুত করতে মাউশি থেকে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। একটি কর্মকর্তাদের দিয়ে, অন্যটিতে রয়েছেন কর্মচারীরা। কিন্তু নজমুল হোসেন, আবদুর রহিমসহ কর্মচারীদের কমিটির চারজনের নামই আবার পদোন্নতির তালিকায় রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ কমিটি সিন্ডিকেটের কর্মচারীদের দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সে কারণে অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও সেগুলো আমলে নেওয়া হয়নি।

কর্মচারীদের কর্মকালীন উচ্চশিক্ষা ঘিরে নানা প্রশ্ন: সূত্র জানিয়েছে, ‘সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা’ পদে পদোন্নতি পেতে উচ্চতর ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে বিএড ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক। আর ডিগ্রিতে তৃতীয় শ্রেণি থাকলে তার মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে। আগে পদোন্নতির ক্ষেত্রে এমন ডিগ্রি বাধ্যতামূলক না থাকায় অনেকেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু ২০২১ সালের বিধিমালায় ডিগ্রি বাধ্যতামূলক হওয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আগ্রহের হার বেড়ে যায়। তবে অনেকেই দ্রুত সনদ নিতে চাওয়ায় সিন্ডিকেট অর্থ বাণিজ্য করার সুযোগ পায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে ক্লাস না করেই সনদ এনে দিতে কাজ করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এজন্য কর্মচারীপ্রতি সিন্ডিকেটকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা দিতে হয়েছে বলে বেশকিছু অভিযোগ ।

এদিকে শিক্ষা ছুটি (ডেপুটেশন) না নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন কোর্স এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ ডিগ্রি নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

উচ্চশিক্ষার অনুমতি ঘিরেও সংশয়: বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পূর্ণকালীন ডিগ্রি নেওয়াকে মাউশির প্রশিক্ষণ শাখা নিরুৎসাহিত করলেও প্রশাসন শাখা থেকে দেদার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক ও মাউশির প্রশিক্ষণ শাখার সাবেক সহকারী পরিচালক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস শিকদার বলেন, আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম, তখন প্রশিক্ষণ শাখা ছাড়া অন্য কোনো শাখা থেকে উচ্চশিক্ষার অনুমতি দেওয়ার সুযোগ বাদ দিয়েছিলাম। কারণ, নিয়ম হলো প্রশিক্ষণ শাখা থেকে উচ্চশিক্ষার অনুমোদন দেওয়া।

তবে আব্দুল কুদ্দুস শিকদার প্রশিক্ষণ শাখা থেকে উচ্চশিক্ষার অনুমতি বাধ্যতামূলক করলেও তার দায়িত্ব ছাড়ার পর সেটি স্থায়ী হয়নি। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের কিছু নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, মাউশির প্রশিক্ষণ শাখা থেকে কর্মচারীদের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়নি, একই সময়ে প্রশাসন শাখার উপপরিচালকের স্বাক্ষরে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

পদোন্নতি কমিটি গঠনসহ সার্বিক প্রক্রিয়া দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন মাউশির উপপরিচালক (প্রশাসন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস। তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গত দুই সপ্তাহে অন্তত পাঁচবার মাউশিতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

অর্থ বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত তিনজন একবাক্যে তা অস্বীকার করেছেন। যাচাই কমিটিতে নাম থাকার বিষয়টিও এড়িয়ে গেছেন সবাই। আর অভিযুক্ত আব্দুর রহিমের নম্বর বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সূত্র বলছে, নজমুল ও বেল্লাল খান বাহাদুর আহছান উল্লাহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি নিয়েছেন। তবে তারা সেটি প্রকাশ করেননি। বেল্লাল হোসেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ইভিনিং প্রোগ্রামে বিএড করেছেন জানালেও প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে এড়িয়ে গেছেন। নজমুল হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। দুদকে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তবে কোনো মামলা নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে মামলা না হবে, ততক্ষণ না-দাবির প্রয়োজন হবে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের মোবাইল ফোনে কল ও খুদেবার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। সরাসরি মন্ত্রণালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ  বলেন, আমাদের স্থায়ী জ্যেষ্ঠতার তালিকা নেই। তবে পদোন্নতির সময় জ্যেষ্ঠতার তালিকা করা হয় এবং সে অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়া হয়। প্রার্থী বাছাই কমিটিতে পদোন্নতির তালিকায় থাকা কর্মচারী এবং দুদকের অভিযুক্তরা কীভাবে থাকেন—জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এমনটা করার প্রশ্নই ওঠে না। এ তালিকা করা হয় কর্মকর্তাদের দিয়ে। আর অভিযুক্তকে রাখা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানি না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ ও শিক্ষা ছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, অনেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে করে, সেক্ষেত্রে আমরা তো বারণ করতে পারি না।সুত্র কালবেলা

নিউজ ডেস্ক।।

প্রতিষ্ঠানটির মতিঝিল শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. ছালাম খানের বিএড সনদ বৈধতার বিষয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালে তার বেতন-ভাতা স্থগিত করে। তবে তিনি উচ্চ আদালতে রিট করে ২০১৯ সালে বেতন-ভাতা ফিরে পান। স্থগিতকালীন বেতন-ভাতা ফেরত না দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তিনি এ সময়ে পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা তুলেছেন। এ টাকা জমা দেওয়ার সুপারিশ করে তদন্ত দল।

মুগদা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে শরীর চর্চা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি এনটিআরসিএ সনদ ছাড়া ২০১১ সালে সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পান। এরপর ২০২১ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান তিনি। সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক বৈধভাবে নিয়োগ না হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে তার নিয়োগ বৈধ নয়। তাকে ২৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

নিউজ ডেস্ক।।

বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ প্রস্তাব করেছিলেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। দেশ বরেণ্য এই অর্থনীতিবিদ সম্প্রতি এক সেমিনারে বলেছেন, ‘দেশে চাল-ডালের দাম বৃদ্ধি আর বিএমডাব্লিউ’র দাম বৃদ্ধিকে এক করে দেখা যাবে না।

বিএমডাব্লিউয়ের দাম নিয়ে মানুষের মাথাব্যার্থা নেই, চাল-ডালের দাম বৃদ্ধিতে যেটা হয়।’ সত্যিই চাল, ডাল, আটা, ময়দা, তেল, লবণ, সজজিসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের কারণে গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। তাঁদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

রোজগার বৃদ্ধি না পাওয়ায় বাজারের তালিকা থেকে সদাই কাটছাঁট করতে হচ্ছে। মাসের বাজার খরচ আঁটসাঁট করায় সংসারে অশান্তি বাড়ছে। গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে গেছেন। প্রায় দেড় বছর ধরে চাল, ডাল, গম, তেল, ময়দা, লবণসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের পাশাপাশি খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দামও বেড়েছে। যেমন পোশাক, খাতা-কলম, বাসাভাড়া, যাতায়াত ভাড়া।

বিশেষ করে গত নভেম্বর মাসে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পরপরই জীবনযাত্রার খরচ বাড়তে শুরু করে। আবার গত বছরের মাঝামাঝি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারেও ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারকে আরেক দফা উসকে দিলেও এখন সারাবিশ্বে পণ্যমূল্য নেমে এসেছে।

কেবল বাংলাদেশে সব ধরণের পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, ডলার সংকট ইত্যাদি নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও নেতাদের নিত্যনিদের বক্তব্য নিয়ে প্রখ্যাত দার্শনিক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এক টকশোতে বলেছিলেন, ‘পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, ডলার সংকট নিয়ে বর্তমান সরকারের মন্ত্রীদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থ যোগাচ্ছে বাংলাদেশ।’ নিদারুণ কষ্ট্রে পড়ে গেছেন সাধারণ মানুষ। লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে নিত্যপণ্যের যোগান দিতে হাঁপিয়ে উঠছেন ক্রেতারা।

গতকাল রাজধানীর শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে মাছ-গোশত-ডিম-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। সরকারি নির্দেশনার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করেই উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে কাঁচাবাজারের সব পণ্য। বাজারের এই লাগামহীন পরিস্থিতিতে হাঁপিয়ে উঠছেন ক্রেতারা। প্রায় এক মাস হয়ে গেছে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ডিম, পেঁয়াজ, আলুসহ কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবু নিয়ন্ত্রণে আসেনি কাঁচাবাজারের পণ্যের দাম।

এরমধ্যে সরকার ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়, আমদানিও করে। কিন্তু এর প্রভাব পড়েনি বাজারে। দাম কমার পরিবর্তে উলটো বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেল প্রতি ডজন লাল ডিম ১৫০ টাকা ও সাদা ডিম ডজন প্রতি ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার করতে আসা এক ক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, ডিমের দাম তো বলে ১৫০ টাকা ডজন। কিন্তু যদি একটু বড় ডিম নিতে চাই তখন ১৬০ টাকা করে নিতে হয়।

যেভাবে সব কিছুর দাম বাড়ছে সেভাবে তো আমাদের বেতন বাড়ছে না। শুধু খরচের পরিমাণ বেড়ে চলছে। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ১০০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫ টাকা, আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি কেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। আলু কেজিতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫/৩৬ টাকা ও কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৬/২৭ টাকা দাম হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারে গেলে সরকারের নির্দেশনার কিছুই বোঝার উপায় নেই।

ক্রেতাদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, তাদের কিনতে হয় বেশি দামে, ফলে কম দামে বিক্রি অসম্ভব। শরিফ উদ্দিন নামের এক ালু-পেঁয়াজ বিক্রেতা বলেন, আমি গত রাতে দেশি পেঁয়াজ আর ক্রস পেঁয়াজ কিনেছি। আমার কেনা পড়েছে দেশি পেঁয়াজ ৯৩ টাকা আর ক্রস ৯২ টাকা। আর আমি বিক্রি করছি দেশিটা ১০০ থেকে ১০৫ টাকা আর ক্রস ১০০ টাকায়। বেসরকারি চাকুরে আওলাদ হোসেন এসেছিলেন বাজার করতে। পেঁয়াজ কেনার সময় কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেও তো দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা করে কিনলাম, এখন ১১০ টাকা করে বলছে। এভাবে হলে আমরা কোথায় যাবো?

বাজার করতে আসা আরেক ক্রেতা খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, সবকিছুর দাম যেভাবে বাড়ছে তার সাথে তাল মিলিয়ে আর চলতে পারছি না। দিন দিন খরচ বাড়ছে। প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক বাজার করেও কুলানো যাচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী বাজার ঘরে নিতে না পারলে সংসারে অশান্তি হয়ে থাকে। কেবল আলু-পেঁয়াজই না আদা-রসুনের দামও রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী।

ভারতীয় আদা ২৪০ টাকা, চায়না রসুন ১৯০ থেকে ২০০, দেশি রসুন ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির বাজারে এসেও হাঁসফাঁস করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। চড়া দামে কিনতে হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বাজারে লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১২০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১৪০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, করল্লা ১০০ টাকা, উচ্ছে ১২০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, পটল ৮০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, শিম ২০০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ১০০ টাকা, ফুলকপি ৭০ টাকা, বাঁধাকপি ৭০ টাকা ও চাল কুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলছেন, এভাবে দাম বাড়তে থাকলে খেয়েপরে বেঁচে থাকা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠবে। এখনই চলতে পারছি না। সামনে কি হয় বলা দুস্কর। কারণ সরকার রাজনৈতিক ডামাডোলে থাকায় মানুষকে নিয়ে চিন্তা করছে না। ডলারের তীব্য সংকট চলছে।

এ অবস্থায় রাজনৈতিক সংঘাত সংঘর্ষ হলে পণ্যমূল্য আরো বেড়ে যাবে। বাজার ঘুরে দেখা গেল, মাছ গোশতের বাজাও চড়া। রুই মাছ ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, চাষের কই মাছ ৩৫০ টাকা, চাষের পাবদা মাছ ৫০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, বেলে মাছ ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকা, বোয়াল মাছ ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, কক মুরগি ২৯০ থেকে ৩১৫ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর গোশত ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। তবে মোটা মসুরের ডাল দাম বেড়েছে ৫ টাকা।

আগে দাম ছিল ১০৫ টাকা কেজি, এখন তা হয়েছে ১১০ টাকা। এছাড়া ছোট মুসরের ডাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, চিনি ১৩৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতিলিটার ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন , তারা ব্যবসা করলেও নিজেরাও ভোক্তা। পণ্যের দাম নিয়ন্তণে আগে সি-িকেট বন্ধ করতে হবে। অতপর পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে কিছুটা হলেও মাছ ও শাক-সবজির মূল্য কমনে। ##

magnifiermenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram