শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২২ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয় এবং ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে নিহত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্যের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া-মোনাজাত করা হয়। এরপর গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন অতিথিবৃন্দ। তারা এই গবেষণা ইনস্টিটিউটকে আধুনিকীকরণ ও বিশ^মানের করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। বিকেলে গোপালগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির শেখ ফজলুল হক মনি স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন ও স্ব-রচিত কবিতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা কেবল একটি ব্যক্তি বা পরিবারকে হত্যা নয়, তারা চেয়েছিল বাংলাদেশ ও স্বাধীনতাকে হত্যা করতে। কিন্তু তারা জানতো না বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করা যায় না। এটি মুদ্রার এপিট আর ওপিঠ। বঙ্গবন্ধু ২৩ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছেন। তিনি ধাপে ধাপে জাতিকে প্রস্তুত করেছেন। জেলা খানায় থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি নির্দেশ দিয়েছেন ছাত্র ধর্মঘটের। এভাবে প্রতিটি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে বিজয়ী হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তারপরেও তাকে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুর হুকুম ছাড়া একটি পাখিও আকাশে উড়েনি। তার নির্দেশে সবকিছু হয়েছে। ১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে কারামুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডন যান তখন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট এর প্রধানমন্ত্রী তার গাড়ির দরজা খুলে দিয়েছিলেন। এ নিয়ে ব্রিটিশ সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়। তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- শেখ মুজিব এমন একজন নেতা যিনি স্বপ্ন দেখেছেন, দেখিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়ন করেছেন, যেটি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। একারণেই আমি তাঁর গাড়ির দরজা খুলে দিয়েছি। এমন নেতাই হলেন বঙ্গবন্ধু।’

আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সারা বিশে^র কথা বলতেন। তিনি পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর ছিলেন। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল তুলনাবিহীন। মাত্র সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে হাত দেননি বঙ্গবন্ধু। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ অনেক কাজ বাকি ছিল। রাস্তা নাই, কাজ নাই, অবকাঠামো নাই। প্রত্যেকটি সেক্টরকে সাজানোর কাজে হাত দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সকল ক্ষেত্রে তিনি সফল হয়েছিলেন। পাকিস্তান আজকে একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্র। আর বাংলাদেশ বিশে^ উন্নয়নের রোল মডেল।’

২১ আগস্টের নির্মম ঘটনা তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, ‘২১ আগস্টের মাস্টার মাইন্ড ছিলেন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান। এটি আমার কথা নয়, আদালতের দ্বারা প্রমাণিত। যাদের কাছে এতিমের টাকা নিরাপদ নয়, তাদের কাছে রাষ্ট্রের সম্পদ, জনগণের সম্পদ কীভাবে নিরাপদ হবে? আমি আপনি যদি সজাগ না হই তাহলে কিন্তু তারা সফল হবে। আর আমরা যদি সচেতন থাকি, ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। আজ আমাদের প্রতিজ্ঞা হউক-আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নেবো। দারিদ্রমুক্ত শোষণমুক্ত সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করবো।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি বলেন, ‘আমরা যেই বিষয়েই পড়ি না কেন, পিতার যে আদর্শ সেটিকে ধারণ করতে হবে। নারী পুরুষের সমতার বিষয়ে তরুণ মুজিবের কী অবস্থান ছিল, বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণে তরুণ মুজিবের কী ভূমিকা ছিল- সেটিকে যদি আমরা বাস্তব জীবনে ধারণ করতে না পারি তাহলে কিন্তু আমরা পিছিয়ে যাবো। মূল স্রোত থেকে ছিটকে পড়বো। এক সময় বঙ্গবন্ধু যে শিক্ষা দর্শন দিয়েছিলেন সেটি থেকে আমরা সরে গিয়েছিলাম। তাঁর দর্শনকে আত্মস্থ করে যদি আমরা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারি তাহলে তাঁর আত্মা শান্তি পাবে। শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ

থাকবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কর্মজগতে প্রবেশের প্রয়োগিক শিক্ষার বিষয়ে তাদের আগ্রহ তৈরি করতে হবে। কর্মপ্রস্তুতির জন্য একজন শিক্ষার্থীকে তৈরি করতে হবে। তাদের মধ্যে মনোজগতিক পরিবর্তন আনতে হবে। প্রশিক্ষণ দিতে। মানবিক পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। তাদের দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে শিক্ষার্থীরা সহজেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারবে।’

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে বুকে বুলেট বিদ্ধ করা হয়েছিল তার দৈর্ঘ্য ছিল ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল। রক্তাক্ত হয়েছিল লাল সবুজের বাংলাদেশ। খুনিরা জানতো না পিতাকে হত্যার পরেও অনেক বেশি শক্তি নিয়ে ফিরে আসবেন তিনি। বঙ্গবন্ধু সারা বিশ্বে সর্বজনীন হয়ে ফিরে আসে। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলকে সেদিন বিদীর্ণ করা হয়েছিল। সেই থেকে বেদনা আমাদের সাথী। একই সাথে শক্তি জোগায়। কারণ পিতা আর্দশ রেখে গেছেন। সংবিধানে চার মূল বুনিয়াদ রেখে গেছেন- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ।’

তরুণদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘পিতা মুজিবকে যদি ধারণ করা না যায়, তাহলে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে উন্নত হয়েও কোন লাভ হবে না। আমরা পিছিয়ে থাকবো। তোমাদেরকে ইতিহাস চেতনা এতো প্রগাঢ়ভাবে জানতে হবে যাতে বঙ্গবন্ধুকে, মুক্তিযুদ্ধকে ও বাংলাদেশকে কেউ কখনো কুলষিত করতে না পারে। আসুন জ্ঞানচর্চার মধ্য দিয়ে আমরা পিতা হত্যার প্রতিশোধ নেই। শোক থেকে শক্তিতে বারংবার ফিরে যাই। সেটিই আমাদের মূল উপজীব্য হোক। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া পবিত্র আমানত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। তাঁদেরকে আলিঙ্গনে রাখা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। মুকুটহীন রাজা হয়ে বঙ্গবন্ধু সবসময় আমাদের মাঝে বেঁচে রইবেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যারা বাংলাদেশ হয়ে আমাদের মাঝে মিশে থাকুক।’

সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, ‘এই টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছেন। সময়ের বিবর্তনে যার নাম, চিহ্ন মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছিল। তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আজকে সেই পিতা মুজিব প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে ফিরে এসেছেন প্রবলভাবে। পিতা মুজিব জীবিতের চেয়েও অনেক বেশি জীবিত। যেই ঘাতকরা পিতাকে হত্যা করেছিল সেই ঘাতকরা আজকে আবার আস্ফালন করছে। তারা আরেকটি ’৭৫ ঘটাতে চায়। কারণ বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে থাকার কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা যা চেয়েছিল ৭৫ এ তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তাদের ভয় ছিল বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার বেঁচে থাকলে এদেশে আবার বঙ্গবন্ধু ফিরে আসবেন। হয়েছেও তাই আমাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এতো কিছু সত্ত্বেও খুনিরা ২১ বারের বেশি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা চালিয়েছে। আগস্টের এই সময়ে খুনিদের ঘৃণা জানাই। আমরা পিতার আদর্শকে অনুসরণ করবো। একটি শোষণহীন, বৈষম্যহীন, আদর্শ জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে তৈরি করবো- এ হোক আামাদের অঙ্গীকার।’

আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য স্থপতি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কিউ এম মাহবুব, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান, জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, জেলা পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল হোসেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ গোপালগঞ্জের ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

সারা দেশে আদালত পরিচালনার নতুন সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিচারালয়ে নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করেছে ফুলকোর্ট সভা।বৃহস্পতিবার থেকে নতুন সময়সূচি কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা সভায় অংশ নেন।

নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, হাইকোর্ট বিভাগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিচারকাজ চলবে। মাঝে থাকবে এক ঘণ্টার বিরতি।

আর দেশের নিম্ন আদালতে সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে বিচারকাজ চলবে বিকাল পৌনে ৩টা পর্যন্ত। মাঝে এক ঘণ্টার বিরতি থাকবে।

উল্লেখ্য, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সারা দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিসের সময়সূচিতে পরিবর্তন এনে ২২ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার আগামী ২৪ আগস্ট থেকে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত অফিস চলবে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।

এতে বলা হয়, জরুরি পরিষেবাগুলো নতুন অফিস সময়সূচির আওতাবহির্ভূত থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সময়সূচি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নির্ধারণ করবে। আর ব্যাংক, বিমা, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) অধীন বিএসসি ইন বেসিক নার্সিং, বিএসসি ইন পোস্ট বেসিক নার্সিং ও পাবলিক হেলথ নার্সিং কোর্সের নীতিমালা সংশোধনসহ নয় দফা দাবিনামা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি ও প্রাইভেট নার্সিং কলেজের প্রতিনিধিরা। সম্প্রতি নয় দফা সংবলিত এ দাবি রামেবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর দাখিল করা হয়েছে। এতে রামেবির অধীন নার্সিং ও পাবলিক হেলথ কোর্সের বিরাজমান ভয়াবহ সেশনজটসহ বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের দাবি জানানো হয়েছে।

আবেদনে বলা হয়েছে, রামেবির অধীন অন্যান্য কোর্সের সঙ্গে নার্সিং কোর্সগুলোর বৈষম্য দূর করা, সেশনজট নিরসন করে দ্রুত সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ করা দরকার। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একই কোর্সগুলোর শিক্ষার্থীরা চার বছরের কোর্স শেষ করে কাউন্সিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেখানে রামেবির অধীন একই বর্ষের শিক্ষার্থীরা এখনো তৃতীয় বর্ষ উত্তীর্ণ হতে পারেননি। রামেবির অধীন এমবিবিএস শিক্ষার্থীরা তৃতীয় বর্ষে উঠে গেলেও নার্সিং কোর্সের একই বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথমবর্ষই শেষ করতে পারেনি।

এদিকে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও রামেবিতে নার্সিং কোর্স সংক্রান্ত কোনো অধ্যাদেশ এখনো প্রণীত হয়নি। নার্সিং প্রতিনিধিত্বের সমন্বয়ে একটি সময়োপযোগী অধ্যাদেশ প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে দাবিনামায়। রামেবিতে একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নার্সিং অনুষদ গঠনের পাশাপাশি সব পরীক্ষার জন্য স্বতন্ত্র পরীক্ষা কমিটিও গঠন করার দাবি করা হয়েছে।

আগামী ১৫ দিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত গ্রামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা।সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

সেচ সুবিধার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সভা শেষে সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি অফিস-আদালতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসে কাজ করতে হবে, পর্দার ব্যবহার বন্ধ থাকবে। সেচ সুবিধার জন্য আগামী ১৫ দিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত গ্রামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সব অফিস সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা এবং ব্যাংক সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। একই সঙ্গে স্কুল বন্ধ থাকবে সপ্তাহে ২ দিন। আগামী বুধবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

এছাড়া, সরকার স্কুল ও কলেজের সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কবে থেকে ছুটি কার্যকর হবে সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজগুলোর বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনায় একটি নার্সিং কলেজের সাবেক অধ্যক্ষসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

র‍্যাব জানায়, এ চক্রের সদস্যরা গত পাঁচ বছর ধরে নার্সিং পরীক্ষাসহ একাধিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন। চক্রের মূলহোতা কোহিনুর বেগম ২০০৮ সাল থেকে ঢাকার একটি সরকারি নার্সিং কলেজে নার্সিং প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীসময়ে ২০১৬ সালে অবসরে যাওয়ার পর একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। গ্রেফতাররা বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটি, মডারেটর ও ডিন থেকে নির্বাচিত প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ে নিযুক্ত গোপন টিমের সদস্য ছিলেন। প্রশ্নফাঁস করে এ চক্রের সদস্যরা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

সোমবার (২২ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেফতার বাকিরা হলেন- ফরিদা খাতুন (৫১), মোছা. মনোয়ারা খাতুন (৫২), মোসা. নার্গিস পারভীন (৪৭), মোছা. মো. ইসমাইল হোসেন (৩৮) ও মো. আরিফুল ইসলাম (৩৭)। অভিযানে ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের কপি ও নয়টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নার্সিং কলেজের প্রথম বর্ষ ফাইনাল বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আদান-প্রদান করার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল পরীক্ষা শুরুর আগে একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের মোবাইলে প্রশ্নপত্রের ছবি ও সাদা কাগজে হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ছবি উদ্ধার করে। র‌্যাব প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।’

তিনি বলেন, ‘এরই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মহাখালী, ধানমন্ডি ও আজিমপুর এলাকা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে।’

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সর্বমোট ৯৮টি নার্সিং কলেজের মধ্যে বর্তমানে ৩৮টি কলেজে পরীক্ষা চলমান। প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা বজায় রাখতে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন প্রশ্ন প্রণয়নকারী নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা দুই সেট আলাদা প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেন। পরবর্তীসময়ে এই প্রশ্নপত্রগুলোকে যাচাই-বাচাই করার জন্য একটি মডারেটর টিম নিয়োগ করা হয়। যাদের কাজ হচ্ছে প্রশ্নপত্রগুলো থেকে পরীক্ষার জন্য এক সেট পরিপূর্ণ প্রশ্নপত্র তৈরি করে সেগুলো সিলগালার মাধ্যমে চিকিৎসা অনুষদের ডিনের কাছে জমা দেওয়া।চিকিৎসা অনুষদের ডিন বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রশ্নপত্র সরবরাহের জন্য চার সদস্যদের একটি গোপনীয় টিম নিয়োগ করেন। যারা নির্বাচিত প্রশ্নপত্রটি প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ে নিযুক্ত থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী প্রশ্নপত্রগুলো প্রিন্ট করে আলাদা আলাদা প্যাকিং করে তার ওপরে কেন্দ্রের নাম লিখে সিলগালা করে দেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই প্রশ্নপত্রগুলো বিভিন্ন কেন্দ্রে বিতরণ করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চক্রের মূলহোতা গ্রেফতার ফরিদা খাতুন। তিনি রাজধানী মহাখালীর একটি নার্সিং কলেজের প্রশিক্ষক। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ের দায়িত্বে থাকেন। চক্রের অন্য সদস্য গ্রেফতার নার্গিস ও মনোয়ারা বেগম তার অন্যতম সহযোগী। তারা পরস্পর যোগসাজশে বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষকতার আড়ালে ওই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছেন। গ্রেফতার ফরিদা খাতুন গত ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য বিএসসি ইন নার্সিং (পোস্ট বেসিক) প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় চিকিৎসা অনুষদের ডিন থেকে নির্বাচিত চার সদস্যদের গোপনীয় টিমের একজন সদস্য ছিলেন।’

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গত ১৩ আগস্ট ফরিদা খাতুনের কাছে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র চান নার্গিস ও মনোয়ারা বেগম। এ সময় ফরিদা খাতুন প্রিন্টিং ও প্যাকিংয়ের সময় সংগ্রহ করে রাখা প্রশ্নপত্র দেন। পরে তাদের এই চক্রের আরেক সদস্য প্রশ্নপত্রটি গ্রেফতার ইসমাইলের মাধ্যমে কোহিনূর বেগমের কাছে প্রদান করে। ইসমাঈল কিছু কপি নিজের কাছে রেখে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে সরবরাহ করে। কোহিনূর বেগম ও আরিফ প্রশ্নপত্রটি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেন।’

খন্দকার বলেন, ‘গ্রেফতার ইসমাঈল হোসেন রাজধানীর একটি নার্সিং কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত ও গ্রেফতার আরিফ ঢাকার একটি নার্সিং কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা গত ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিষয়ে প্রশ্নপত্রটি ফাঁস চক্রের অন্যতম সদস্য কোহিনূর বেগমের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের কাছে অর্থের বিনিময়ে সরবরাহ করে। গ্রেফতার আরিফ ২০১৭ সালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন।’

যারা ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষার্থী ছিল তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘আমরা ফাঁস করা প্রশ্নে ১০ থেকে ১২ জন পরীক্ষার্থীর নাম পেয়েছি। তাদের মধ্যে তিন থেকে চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চলমান।’

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সহকারী অধ্যাপক এসএম মুশফিকুর রহমান ওরফে আশিকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন, হয়রানি, মানসিক নির্যাতন, পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ছাত্রীদের রাতে ডেকে নিয়ে নিজ অফিস কক্ষে বসিয়ে রাখাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।

শিক্ষা বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচের ৩২ শিক্ষার্থী অনুষদের ডিনের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক সপ্তাহ আগে। এসব অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা বলেছেন- কয়েক বছর ধরে তারা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এসএম মুশফিকুর রহমানের যৌন হয়রানি, মানসিক নির্যাতনসহ নানা পক্ষপাতপূর্ণ আচরণের শিকার হয়ে আসছেন। যার সর্বশেষ প্রতিফলন ঘটেছে সম্প্রতি শেষ হওয়া সেমিস্টার পরীক্ষার ফলাফলের ওপর। এতে যেসব শিক্ষার্থী তার কথামতো চলেন না, তার কক্ষে গিয়ে সময় দেন না, তাদের নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর যারা তার সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ বজায় রেখেছেন, তাদের বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে। এতে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হওয়ায় তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

নাম প্রকাশ না করে একজন ছাত্রী অভিযোগ করেন, নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তার অফিস কক্ষে বসিয়ে রাখেন শিক্ষক এসএম মুশফিকুর রহমান। অনলাইন পরীক্ষার ভাইভা বোর্ডে ছাত্রীদের শাড়ি পরা নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেন তিনি।

জানতে চাইলে এসএম মুশফিকুর রহমান বলেন, তিনি অভিযোগগুলো দেখেছেন। একটি অভিযোগেরও সত্যতা নেই। কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে অভিযোগগুলো সাজিয়েছেন।

এ বিষয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য মো. দিদার-উল-আলম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত। অভিযোগ তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত শুক্রবার রাতে ফাঁস হওয়া অডিওতে ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালির ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) দিবাগত রাতে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ক্ষমা চান তিনি।

ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের প্রতিটি কর্মীর সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক। এরা আমার পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কিছু নয়। একান্ত ব্যক্তিগত পরিবেশে হলেও দায়িত্বশীল জায়গা থেকে অসংযত ভাষার প্রয়োগ আমার অপরাধ হয়েছে বলে আমি স্বীকার করছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আমাকে এমন শিক্ষা দেয় না তাই সংগঠনের প্রতি আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’

এর আগে শুক্রবার রাতে ফাঁস হওয়া অডিওতে তামান্নাকে বলতে শুনা যায়, ‘এইটুকু সেন্স থাকা উচিত ছিল, রুমটা যেহেতু ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্ট নিয়ে নিছে, ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্টের ওপরে আর কেউ নাই ৷ উল্টাপাল্টা করবি এক পায়ে পাড়া দেব, আরেক পায়ে টেনে ছিঁড়ে ফেলব। তোরা লিগ্যাল তাতে আমার… গেছে। কোন হেডাম দেখাইতে আসিস তোরা। আমার পলিটিক্যাল রুমে তোরা লিগ্যাল থাকবি কি না, সেটা তোদের বিষয়। কে কে টাকা জমা দিছিস? আমারে দিছিস? আর কে লিগ্যাল?’

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতির অডিও ফাঁসইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতির অডিও ফাঁস

এ সময় পাশ থেকে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘ও তো অসুস্থ, বাসায় গেছে।’ এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘২০২ (রুম নম্বর) এ আর লিগ্যাল কে? তোরা লিগ্যাল তাতে আমার কী… গেছে? বল? আমি কি …… তোদের। চ্যাটাং চ্যাটাং করতাছোস! এক পায়ে পাড়া দিমু, আরেক পা টাইনা ধইরা ছিঁড়া ফেলমু। চার মাস হয়ে গেছে, ফাইজলামি শুরু করছিস!’

এ সময় সুমনা মীর নামে এক মেয়েকে গালমন্দ করতে শোনা যায় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতিকে। তিনি বলেন, ‘বুঝিস না, পলিটিক্যাল রুমে থাকিস? তোদের লিগ্যাল করাইছে তাতে আমার …. কী? আমি যদি একটা সিট না দেই, ২০২ থেকে তোদের কোন বাপ সিট দেবে? ম্যাডামেরা দেবে, ক্ষমতা আছে ম্যাডামদের? ম্যাডামদের ক্ষমতা আছে আমাদের রুম থেকে একটা মেয়েকে বের করার? ইডেন কলেজের প্রিন্সিপালেরও ক্ষমতা নেই এই রুম থেকে একটাকে বের করার। একদম গলায় পাড়া দিয়ে ধরতে ইচ্ছা করতেছে। আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে যেই রুমে বলব সেই রুমে যাবি। আমার সঙ্গে হ্যাডাম দেখাইতে আসে।’

এসময় ইডেন কলেজ প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে কথা বলতে শোনা যায় তামান্না জেসমিনকে। তিনি বলেন, ‘একটা সিঙ্গেল মেয়ে যদি ওই রুমে এসে কন্ট্রোল করতে চাস, সে হোক নেত্রী, ইডেন কলেজের প্রিন্সিপাল ম্যামও কোনো মেয়ে দিতে পারবে না। এইটুকু সেন্স থাকা উচিত ছিল— রুমটা যেহেতু ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্ট নিয়ে নিছে, ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্টের ওপরে আর কেউ নাই।’

১৪৫ টাকা মজুরির আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন চা শ্রমিক নেতারা। শ্রম অধিপ্তর ও সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা জানান তারা। তবে সাধারণ শ্রমিকরা এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন।

শনিবার বিকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে বৈঠকের পর চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করছি। আমাদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে এসে আমাদের সঙ্গে বসবেন বলে জানিয়েছেন। সেখানে আমাদের দাবি-দাওয়া তাকে জানানো হবে। তাই তার আশ্বাসে আমরা আপাতত ধর্মঘট প্রত্যাহার করছি।

রোববার থেকে সব শ্রমিক কাজে যোগ দেবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে নেতাদের এই সিদ্ধান্তের পর শ্রম দপ্তরের সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ শ্রমিকরা। তারা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান তারা।

এ সময় সমিতির নেতাদের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ শ্রমিকরা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে সেন্টার ফর কোয়ালিটি এডুকেশন বাংলাদেশ ও জেলা আইসিটি শিক্ষক ফোরাম ময়মনসিংহ এর আয়োজনে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোঃ মিজানুর রহমান,
শরিয়তপুরের জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ পারভেজ হাসান, চাপাইনবাবগঞ্জ এর জেলা প্রশাসক এ.কে.এম গালিভ খাঁন, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার এ.এইচ.এম আবদুর রকিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নাসরিন সুলতানা ও ময়মনসিংহের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ জেলা আইসিটি শিক্ষক ফোরামের সম্মানিত সভাপতি ও সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক।

উক্ত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ জেলা আইসিটি শিক্ষক ফোরামের সকল সদস্য ও সেন্টার ফর কোয়ালিটি এডুকেশন বাংলাদেশ এর একশত জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তাগন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের নানা দিক তুলে ধরে আগস্ট- শোকের মাসতে শক্তিতে পরিনত করার জন্য আহবান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ
শিক্ষকদের বিশেষ করে আইসিটি বিশেষ জ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষকদের সংগঠন সেন্টার ফর কোয়ালিটি এডুকেশন বাংলাদেশ ও আইসিটি শিক্ষক ফোরাম, ময়মনসিংহ এর কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে অতিথিদের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীগন ও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের শেষে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে শাহাদত বরণকারী জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শান্তি কামনায় দোয়া পরিচালনা করা হয়।

ট্রেজারি-প্রধানদের অপসারণের নির্দেশনার পর এবার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির ‘প্রমাণ পাওয়ায়’ ছয়টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই ছয় ব্যাংকের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ওই ছয় ব্যাংকে বুধবারই তারা নোটিশ পাঠিয়েছেন। ডলারে অতিরিক্ত মুনাফা করার সঙ্গে কোন কোন ব্যক্তি জড়িত- তা প্রাথমিকভাবে ব্যাংকই বের করবে। এজন্য ব্যাংকগুলোর এমডির কাছে এ বিষয়ে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে।

এর আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার মধ্যে গত বছরের শেষ দিক থেকে ডলারের দাম বাড়ছিল। এ বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে খোলা বাজারে ডলারের বিনিময় হার প্রথমবারের মত ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক দফায় দফায় বাজারে ডলার ছাড়ার পাশাপাশি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় সেসময় পরিস্থিতি কিছুটা সামলে উঠতে পারলেও জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আবার এই আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিনিময় হার ১০০ টাকা ছাড়ায়। ১১ আগস্ট তা ১২১ টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

ডলারের দরে এই সংকটের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, এর পেছনে ‘কিছু কারসাজি’ চিহ্নিত করেছে সরকার।

ওই সময়ই মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে অভিযান ‍শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেউ যাতে দাম বাড়ানোর জন্য ডলার মজুদ না করে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত ১৩৫টি মানি চেঞ্জারে অভিযান চালিয়ে ৪২টিতে অনিয়ম পাওয়ায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া পাঁচটি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিতের কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এখন ডলারের কিছুটা কমে এসেছে।

গাজীপুর মহানগরের গাছা মেট্রোপলিটন থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার ভোররাতে জয়বাংলা সড়কের বগারটেক ব্রিজ এলাকা থেকে প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহতরা হলেন— টঙ্গীর শহিদ স্মৃতি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান মামুন ও তার স্ত্রী আমজাদ আলী স্কুলের সহকারী শিক্ষিক জেলি আক্তার।

শিক্ষক দম্পতির ছেলে মো. মিরাজ জানান, টঙ্গীর কামারজুরি এলাকার নিজ বাড়ি থেকে একই গাড়িতে করে শিক্ষক দম্পতি তাদের স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হন। স্কুল শেষে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু এর পর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। স্বজনরা রাতভর সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাচ্ছিলেন না তাদের। ভোররাতের দিকে গাছা থানা এলাকার বগারটেক ব্রিজের কাছ থেকে ওই গাড়ির ভেতর চালকের আসনে প্রধান শিক্ষক ও পাশের সিটে স্ত্রীর লাশ পাওয়া যায়। সেখান থেকে প্রথমে তাদেরকে স্থানীয় তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উত্তরার অন্য একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বলছে প্রাথমিকভাবে তাদের দেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়নি।

গাজীপুর মহানগরীর গাছা মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নন্দলাল চৌধুরী জানান, লাশ উদ্ধার শেষে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। ময়মনতদন্তের জন্য গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, আমাদের কাছে পুরো ঘটনাটিই রহস্যঘেরা মনে হচ্ছে। বিষক্রিয়া থেকে তাদের মৃত্যু কিনা কিংবা পূর্বশত্রুতাবশত হত্যাকাণ্ড কিনা—এসব বিষয় নিয়ে পুলিশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

তিনি যোগ করেন, নিহত প্রধান শিক্ষক ড্রাইভিং সিটে ছিলেন। তার হাতটিও গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে ছিল। তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনও পাওয়া গেছে। জিয়াউর রহমান মামুন ও তার স্ত্রীর মানিব্যাগ ও ভ্যানিটি ব্যাগও গাড়িতেই ছিল। সবমিলিয়ে রহস্য উদঘাটনে কাজ চলছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ‘একাডেমিক জীবনে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১৭ আগস্ট) ধানমন্ডিতে ইনস্টিটিউট কার্যালয়ে এই একক বক্তৃতানুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এতে বক্তা হিসেবে একক বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। বক্তৃতানুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান।

একক বক্তার বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য আদর্শ রাষ্ট্র রেখে গেছেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতা, বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ করে গেছেন। কিন্তু আমরা সেটিকে তছনছ করে দিয়েছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়েও অনেক ইতিহাস আমরা জানি না বা আংশিক জানি। নির্মোহ ইতিহাস ক’জনে লিখেছে। সবাই বলে ২৫ মার্চ থেকে গণহত্যা শুরু হয়েছে। আমি মনে করি ১ মার্চ থেকে দেশে গণহত্যা শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধরে ধরে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।’ দেশের কিছু কিছু মানুষের বুক থেকে পাকিস্তানের ডাকটিকিট এখনো সরেনি উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সাবেক এই প্রথিতযশা অধ্যাপক বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের নেতারাই প্রতিবাদ করেননি। যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বলছেন। ঘটনা তো তাই হয়েছে। আমরা বলি সেনাবাহিনীর একাংশ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। এটাও তো ঠিক নয়। তৎকালীন সেনাবাহিনীর অনেকেই জানতেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হবে। কেউ প্রতিবাদ করেননি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘পাকিস্তান ছিল রেসিস্ট দেশ। আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। তিনি সারাজীবন বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের জন্য সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছেন, স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। তাঁর স্বপ্ন দেখা থেকেই বাংলাদেশ বাস্তবে রূপ লাভ করেছে।’

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখালেখি কম হয়েছে এটি নিঃসন্দেহে সত্য। কিন্তু যেসব পণ্ডিত ব্যক্তিরা সমৃদ্ধ লেখা লিখেছেন তারা অনেকেই নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। তারপরে তাঁকে আরেকবার হত্যা করা হয়েছে যখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট বন্ধ করা হয়েছে। এটি আমাদের জন্য লজ্জার। যেই বঙ্গবন্ধুর নামে মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ- সেটি নিয়ে যখন একটি ইনস্টিটিউট হয়, রাজনীতির পটপরিবর্তন হতেই পারে, তাই বলে এরকম একটি কাজকে বন্ধ করে দেয়ার দুঃসাহস দেখানো হয়েছে। সেটিকে মেনে নেয়ার মতো সংস্কৃতিও আমাদের সমাজে ছিল। সেটিই বড় প্রমাণ- কেন অ্যাকাডেমিক রিসার্চ হলো না। তারপরেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত কিছু মূল্যবান দলিলপত্র আগলে রেখেছেন, যে কারণে আমরা এটি আবার শুরু করতে পেরেছি। গোপালগঞ্জে এই ইনস্টিটিউট আবার আমরা ফিরে পেয়েছি। সেখানেও পুরোদমে কাজ শুরু করা হবে। খুব শিগগিরই এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’

বিশিষ্ট এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘এই ইনস্টিটিউটকে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে তৈরি করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ-গবেষক ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে এবং তাদের প্রজ্ঞাদীপ্ত মতামতের আলোকে সাজানো হবে। যাতে করে আগামী তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারে। তারা যেন বিশ্বে মাথা উঁচু করে বলতে পারে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত এক অনন্য বাংলাদেশের সুনাগরিক।’
একক বক্তৃতানুষ্ঠান অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার অধ্যাপক আবদুস সালাম হাওলাদার, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও কারিকুলাম উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মো. মনিরুজ্জামান শাহীনসহ বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক, গবেষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ।

magnifiermenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram