বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট ও সমমান পরীক্ষা (এসএসসি) হবে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী। এই পাবলিক পরীক্ষায় মোট ১০টি বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এতে থাকবে লিখিত পরীক্ষাও। প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের বিরতিসহ ৫ ঘণ্টা পরীক্ষার কেন্দ্রে থাকতে হবে। বর্তমান সময়ের মতো আলাদা পরীক্ষাকেন্দ্রে মূল্যায়নে অংশ নেবে শিক্ষার্থীরা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তৈরি করা ‘২০২৫ এর দশম শ্রেণি শেষে পাবলিক মূল্যায়ন/ পরীক্ষা’ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, পাবলিক পরীক্ষা কীভাবে হবে, এর জন্য একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হবে।

জানা যায়, আগামী বছর দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা মোট ১০টি বিষয় পড়বে। বিষয়গুলো হলো—বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি। এই পাঠ্যসূচির ওপর অনুষ্ঠিত হবে পাবলিক পরীক্ষা।

পরীক্ষায় কীভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে, তা নিয়ে প্রতিবেদনে একটি রূপরেখা দেওয়া আছে। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বিষয়ের চাহিদা ও যোগ্যতা অনুযায়ী প্রকল্পভিত্তিক কাজ, সমস্যা সমাধান, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদির পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। মূল্যায়নে অনুসন্ধান, প্রদর্শন, মডেল তৈরি, উপস্থাপন, পরীক্ষণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয় থাকবে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, লিখিত মূল্যায়নে ৫০ শতাংশ ওয়েটেজ থাকবে। আর বাকি ৫০ শতাংশ ওয়েটেজ থাকবে কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নে। পরীক্ষার মান ও মূল্যায়নে নিরপেক্ষতা যাতে বজায় রাখা যায়, সে জন্য লিখিত মূল্যায়নে বর্তমান পাবলিক পরীক্ষার মতো খাতা ব্যবহার করা হবে। আর পরীক্ষা শেষে একযোগে ফল প্রকাশ করবে শিক্ষা বোর্ডগুলো।

এ বিষয়ে এনসিটিবির এক কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ বলেন, বর্তমান পাবলিক পরীক্ষায় ওএমআর শিটভিত্তিক খাতা ব্যবহার করা হয়। নতুন শিক্ষাক্রমের খাতা মূল্যায়নেও এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে, যাতে মূল্যায়নকারী শিক্ষক খাতাটি কোন শিক্ষার্থীর, তা বুঝতে না পারেন। এতে নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে। তিনি আরও বলেন, মূল্যায়নের জন্য সর্বোচ্চ সময়সীমা হবে বিরতিসহ ৫ ঘণ্টা। এর মধ্যে বিভিন্ন মূল্যায়নের ফাঁকে ফাঁকে ১ ঘণ্টা বিরতি থাকতে পারে।

নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষার নাম এখনকার মতো মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বয় কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নকাঠামো চূড়ান্ত করতে শিক্ষা বোর্ড ও অংশীজনদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে এনসিটিবি। পরিকল্পনা রয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বরে নবম শ্রেণির বার্ষিক মূল্যায়ন/পরীক্ষা পাবলিক পরীক্ষার আদলে আয়োজন করে এ মূল্যায়নকাঠামোর পাইলটিং করা।

নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের সার্বিক আয়োজনের জন্য বিষয়ভিত্তিক ৬০০ শিক্ষকের সমন্বয়ে রিসোর্সপুল গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে এনসিটিবির। রিসোর্সপুলকে প্রথমে বোর্ডের আয়োজনে এনসিটিবির বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে ৭ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের প্রতিটির জন্য প্রতি বিষয়ে ৪ জন করে মোট ৪৪ জন শিক্ষককে চূড়ান্ত করা হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হয়। আর চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম চালু হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে বর্তমানে দুই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হয়। এর একটি বছরজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন মূল্যায়ন, অন্যটি বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন। শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। এ তিন শ্রেণিতে হবে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন। আর চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব বিষয়ে কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে।

নতুন শিক্ষাক্রম: মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আসছে পরিবর্তন, থাকতে পারে ৫০ শতাংশ লিখিত পরীক্ষানতুন শিক্ষাক্রম: মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আসছে পরিবর্তন, থাকতে পারে ৫০ শতাংশ লিখিত পরীক্ষা
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান বলেন, পাবলিক পরীক্ষাকে চাপমুক্ত এবং আনন্দদায়ক করার লক্ষ্য থেকে মূল্যায়নকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এ কাঠামোতে শিক্ষার্থীরা লিখিত ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নে অংশ নেবে। এগুলোর মধ্যে আন্তসম্পর্ক থাকবে।

এদিকে নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন নিয়ে পাঁচ দফা সুপারিশ প্রস্তুত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত ১৪ সদস্যের কমিটি। গত সোমবার কমিটি এ নিয়ে এনসিটিবির সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক সূত্র জানায়, মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষা রাখার সুপারিশ করেছে কমিটি। এতে বলা হয়, মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যোগ্যতা ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত মূল্যায়নও রাখা যেতে পারে। লিখিত মূল্যায়নের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ করা যেতে পারে। স্কুলভিত্তিক ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন এবং পাবলিক মূল্যায়নও একই পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে।

এ ছাড়া মূল্যায়ন অ্যাপ নৈপুণ্য হালনাগাদ করা, চূড়ান্ত মূল্যায়ন সনদ/ট্রান্সক্রিপ্টের ৭ পর্যায়ের স্কেলে যোগ্যতা ও পারদর্শিতার সূচক অভিভাবক ও অংশীজনদের অবহিত করার সুপারিশ করেছে কমিটি।

গত ৫ মার্চ গঠিত এ কমিটির আহ্বায়ক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ খালেদ রহীম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল্যায়ন নিয়ে কিছু সুপারিশ রয়েছে। শিগগির প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিক জমা দেওয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা/জামান/২৫/০৪/২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

সাভারে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে গরমেও চলছে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে সাভার উপজেলা কমপ্লেক্সের সন্নিকটে গেন্ডা, ঘাসমহল, রাজাশন, শাহীবাগসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে তীব্র গরমের মধ্যে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নিতে দেখা গেছে।

রাজমহল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রচন্ড গরমে শিশু শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমরা সরকারের নিয়ন্ত্রনে কিংবা সরকারি টাকায় চলিনা। আমরা নিজস্ব টাকায় চলি। অভিভাবকদের অনুরোধে আমরা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে পাঠদান করছি। আমাদের আশপাশে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান চালু আছে। তাদের বিরুদ্ধেও কিছু লেখেন।’

দক্ষিন রাজাশন এলাকার জাবাল-ই-নূর মডেল মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, চার তলা ভবনটির সামনের কেঁচিগেটে তালা লাগিয়ে পাশের একটি দোকানের এক শার্টার খুলে সেখান দিয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিববকরা যাতায়াত করছে। সেখানে ঢুকতেই দেখা যায়, ছোট দোকানের মধ্যে শতাধিক অভিবাবক সন্তানকে পড়তে দিয়ে বসে এবং দাঁড়িয়ে আছেন। প্রতিটি ক্লাসে গাদাগাদি অবস্থায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে ক্লাস করানোর বিষয়ে জানতে জাবাল-ই-নূর মডেল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মোক্তার হোসেন বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনার আওতায় পড়িনা। অভিবাবকদের অনুরোধে আমরা সকাল ৬ টা থেকে সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি। কিন্তু সকাল ৯ টায় গিয়ে দেখা যায় ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি ফ্লোরে প্রচন্ড রোদের মধ্যে জানালার পাশে বসে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে।

একই অবস্থায় পাশ্ববর্তী বর্ণমালা আদর্শ স্কুল, ইউনিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ, ট্রাস্ট হাজী হাতেম আলী উচ্চ বিদ্যালয়, সাভার পাইলট স্কুল, গেন্ডা মডেল স্কুলসহ অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন।

আজাদ হোসেন নামে এক অভিভাবক বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গরমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বললেও প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বলেন, সাংবাদিক, পুলিশ বা প্রশাসনের লোক আসলে সেটা আমরা বুঝবো। আপনারা নিশ্চিন্তে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পাঠান, নিয়মিত ক্লাস হবে।

প্রচন্ড গরমে বোরকা পরিহিত এক নারী এক বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে ৪ বছরের ছেলের কাঁধে ব্যাগ দিয়ে তাকে হাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। স্কুল খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে আমাদের যতই কষ্ট হোক বাচ্চাদের ক্লাসে নিয়ে আসতে হয়। আমাদের কথার শিক্ষকরা কোন দাম দেননা। অন্য বাচ্চারা যখন ক্লাসে আসে তখন আমার বাচ্চা না আসলে সে পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়বে। তাই বাধ্য হয়েই দুই ছেলেকে নিয়ে হেটে স্কুলে যাচ্ছি।

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর লোক পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে নির্দেশনা অমান্যকারীদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে।

শিক্ষাবার্তা/জামান/২৫/০৪/২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বিশ্বের সব কিছু যেন উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। ৬ ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এখন আর এই ধারা চলমান নেই। গ্রীস্মের উত্তাপ পাওয়া যায় শীতকালেও। তাই বলা চলে কখন শীতকাল আর কখন হেমন্তকাল সেটা ভুলতে বসেছে নতুন প্রজন্ম। বাংলাদেশের ঋণ পরিবর্তনের মত হাওয়া লেগেছে চাঁদের গাঁয়েও। তাই তো চাঁদও রূপ বদলাতে শুরু করেছে।

গতকাল বুধবার বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের আকাশেও গোলাপি চাঁদের দেখা মিলেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা গেছে বিশেষ রঙ্গের এ চাঁদ। তবে যে গরম তাতে মানুষের উৎসাহ ছিলো না বিশেষ এই চাঁদ দেখার।

জানা যায়, বুধবার (২৪ এপ্রিল) দেশের আকাশে দেখা যাওয়া গোলাপি রঙের চাঁদের ছবি অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করছেন। তবে যারা দেখতে পাননি তারা তো বিশ্বাসই করতে চাইচেন না। তবে বলে রাখা ভালো চাঁদের যেহেতু নিজস্ব কোনো আলো নাই তাই সে যে কোনো রং ধারণ করতে পারে অন্যের সাহায্যে।

জানা গেছে, বিশ্বের নানা প্রান্তে কয়েক দিন ধরে দেখা গেলেও দেশের আকাশে আজই তা উজ্জ্বলভাবে দেখা যাচ্ছে। গোলাপি এপ্রিলের পূর্ণিমার এ চাঁদের আরও নাম রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- ‘ফিশ মুন’ (মাছ চাঁদ, ‘গ্রাস মুন’ (ঘাস চাঁদ) ও ‘এগ মুন’ (ডিম চাঁদ)।

সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, শুক্রবার ভোর থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত আকাশ ‘গোলাপি চাঁদে’ উজ্জ্বল থাকবে। তবে শনিবার চাঁদের ঔজ্জ্বল্য সবচেয়ে বেশি থাকবে।

এই বিশেষ পূর্ণিমাটি মার্চ মাসে চন্দ্রগ্রহণের ঠিক এক মাস পরে ঘটে। এটি এমন একটি মহাজাগতিক ঘটনা, যখন চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছাকাছি আসে। যার কারণে এই সময় চাঁদের আকার বড় ও উজ্জ্বল দেখায়।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা অত্যন্ত সূক্ষ্ম ধূলিকণা এবং বিভিন্ন ধরনের গ্যাসের শক্তির কারণে অনেক সময় চাঁদের রঙের দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যায়। এ ছাড়া অন্যান্য ধোঁয়া দূষণও পৃথিবীতে আলো পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে। পৃথিবীতে আসা আলো তাদের নিজ নিজ তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অনুযায়ী অনেক প্রকারে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়, যার মধ্যে নীল রঙকে সবচেয়ে দ্রুত বিক্ষিপ্ত হতে দেখা যায়। লাল রঙও বহু দূরে যায়।

এই কারণে, যখন চাঁদকে পৃথিবী থেকে দেখা হয় তখন বাদামী, নীল, হালকা নীল, রূপালি, সোনালি, হালকা হলুদ রঙের দেখায়। আর বিভ্রমের কারণে একে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বড়ও দেখায়। জ্যোতির্বিদ্যার ভাষায় একে রিলে স্ক্যাটারিং বা আলোর বিচ্ছুরণও বলা হয়। এপ্রিল মাসে যে পূর্ণিমা দেখা যায় তাকে গোলাপি চাঁদ বলা হয়।

শিক্ষাবার্তা/জামান/২৫/০৪/২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

সড়কে চলাচলকারী সব ধরনের মোটরযানের জন্য লাইসেন্সের পাশাপাশি বাধ্যতামূলক হতে যাচ্ছে বিমাও। ২০২০ সালের আগেও এমন আইন অবশ্য ছিল। ওই সময় ফার্স্ট পার্টি পলিসির আওতায় যানবাহন দুর্ঘটনার পর বিমা দাবির টাকা ফেরত পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হতো গ্রহীতাদের। দীর্ঘ অপেক্ষার পর যে অর্থ আদায় হতো তাও ছিল যতসামান্য। এ ছাড়া থার্ড পার্টি পলিসির আওতায় মোটরযান বিমা করা হলেও দাবির এক টাকাও পেতেন না যানবাহনের মালিকরা।

ওই সময় বিমা দাবির এমন হাজার হাজার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মোটরযান বিমা প্রত্যাহার করে বাংলাদেশ বিমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। পাঁচ বছর পর বিমা কোম্পানির স্বার্থে ফের প্রচলিত আইনে যুক্ত হতে যাচ্ছে বিমা বাধ্যবাধকতার ব্যাপারটি। তাই আবারও যানবাহন মালিকদের হয়রানির পথ তৈরি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

তবে এবার প্রথম পক্ষ বা তৃতীয় পক্ষ পলিসি নয়, নতুন নামে নতুন বিমা পলিসির প্রস্তাব সংশোধন করা হচ্ছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিমা করা না থাকলে প্রতিটি যানবাহনের জন্য তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে তার মালিককে। আর আইন না মানলে মামলা করবে পুলিশ।

জানা গেছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে দুই ধরনের গাড়িবিমা ছিল ফার্স্ট পার্টি বা প্রথম পক্ষ বিমা ও থার্ড পার্টি বা তৃতীয় পক্ষ বিমা। প্রথম পক্ষ বিমায় গাড়ি হতে হবে একদম নতুন। এ ক্ষেত্রে বিমা করালে বিমা কোম্পানি সেই গাড়ির শর্ত সাপেক্ষে সুবিধা দিত। সে ক্ষেত্রে গাড়ির মালিককে বছরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রিমিয়াম দিতে হতো বিমা কোম্পানিকে। আর তৃতীয় পক্ষ বিমার ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তকে আর্থিক সুবিধা দিতে এই বিমা পলিসি করা হয়। এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছিল অকার্যকর।

মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩ এর ধারা ১০৯ অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষ বিমা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এ তৃতীয় পক্ষ বিমার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে যানবাহনের বিমা করার বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয় মালিকের ইচ্ছার ওপর। মূলত এরপর থেকেই মালিকেরা পরিবহনের বিমা করা প্রায় বন্ধ করে দেন। বর্তমানে যেসব পরিবহন চলাচল করছে, তার সিংহভাগেরই কোনো বিমা নেই।

বিমা বন্ধ করে দেওয়া অসংখ্য গাড়ির মালিকদের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী হাসান মিয়া। ২০১৭ সালে ২৫৯ টাকা দিয়ে নিজের মোটরসাইকেলের জন্য তৃতীয় পক্ষ বিমা করান। এই বিমার মেয়াদ ছিল এক বছর। এরপর ২০২০ সালে বিমার বাধ্যবাধকতা উঠে গেলে হাসান সেই বিমা নিয়ে আর কোনো খোঁজ নেননি। এ বিষয়ে হাসান বলেন, ট্রাফিক পুলিশের মামলা থেকে রেহাই পেতে তিনি বিমা করেছিলেন।

শরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী ৪ হাজার ৭৮২ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেলের ফার্স্ট পার্টি ইন্স্যুরেন্স করেছিলেন। মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের কাছে একবার দুর্ঘটনার শিকার হন। বিমা কোম্পানিতে দাবি পরিশোধের দাবি জানালে চার মাস পর তিনি ২ হাজার টাকা পান। শরিফুল ইসলামের মতো দেশে নিবন্ধন করা মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী আছেন ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮৩ জন। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই আছেন ১১ লাখ ১৪ হাজার ৮০১ জন।

আর নিবন্ধন করা মোট যানবাহনের সংখ্যা ৫৯ লাখ ৮২ হাজার ৭৬৫। বিআরটিএ সূত্র বলছে, দেশে এখন নিবন্ধন করা ৯০ ভাগ গাড়ির কোনো বিমা নেই। বাকি ১০ ভাগ বাণিজ্যিক গাড়ি বা নতুন গাড়ির বিমা রয়েছে। সেগুলো প্রথম পক্ষ বিমা। সেডান গাড়ির ফার্স্ট পার্টি ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম সর্বনিম্ন ৬৪ হাজার ৭৮৩ টাকা ও সর্বোচ্চ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা।

বেসরকারি চাকরিজীবী রাকিবুল ইসলাম ২০১৬ নিজের প্রাইভেট কার কেনার সময় ৬৪ হাজার ৭৮৩ টাকা দিয়ে ফার্স্ট পার্টি বা প্রথম পক্ষ বিমা করেছিলেন। এক বছরের ব্যবধানে রাজধানীর বিজয় সরণিতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় পড়ে। এরপর বিমা দাবি করেন তিনি। তিনি জানান, বিমা কোম্পানি সাড়ে ৪ মাস বিভিন্ন ধরনের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে ১৮ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। এই অর্থ আদায়ে রীতিমতো বড় ধরনের হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশে বিমা খাত নিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগ। সেই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বিভাগটির ডিন মো. নুরুল কবীর। তিনি বলেন, ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে দুই ধরনের গাড়িবিমা ছিল- ফার্স্ট পার্টি বা প্রথম পক্ষ বিমা ও থার্ড পার্টি বা তৃতীয় পক্ষ বিমা।

প্রথম পক্ষ বিমায় গাড়ি হতে হবে একদম নতুন এটাই ছিল শর্ত। এ ক্ষেত্রে বিমা করালে কোম্পানি সেই গাড়ির শর্ত সাপেক্ষে সুবিধা দিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে এই টাকা পেতে অধিকাংশ মানুষ নানা ধরনের হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন। এবার অবশ্য থার্ড পার্টি বিমা বাধ্যতামূলক হচ্ছে না। আগে থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম ছিল ৩৬০ টাকা, ইন্স্যুরেন্স না থাকলে জরিমানা ১ হাজার ৫০০ টাকা।

এটা ছিল অযৌক্তিক একটা চিন্তা। তবে এবার কেউ গাড়ি চালানোর সময় দুর্ঘটনায় কবলিত হলে সে ক্ষতিপূরণ পাবে এমন পলিসি তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু পূর্বের অভিজ্ঞতা বলছে, এবারও লাভবান হবে শুরু বিমা কোম্পানিগুলো। ক্ষতিপূরণ পেতে দীর্ঘসূত্রতা এবং বিমা না থাকলে পুলিশি হয়রানি বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই দেশের বিমা খাতের ভাবমূর্তি নেতিবাচক।

তারা যথাসময়ে গ্রাহকের দাবি পূরণ করে না। এখানে আস্থার একটা সংকট তো রয়েছেই। মানুষ বাধ্য না হলে বিমা কোম্পানির কাছে যেতে চায় না। এবার সরকারের পক্ষ থেকে বিমা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। লাভবান হবে বিমা কোম্পানি মালিকরা।
সড়ক পরিবহন সংশোধন আইন, ২০২৪-এ বিমা বাধ্যতামূলক করায় যানবাহনের জন্য নতুন বিমা পলিসি নিয়ে কাজ শুরু করেন বিমা খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নতুন আইন অনুযায়ী বিমার ধরন পরিবর্তন হচ্ছে।

সেখানে প্রথম বা তৃতীয় পক্ষ বিমা নামে কিছুই থাকবে না। বরং নতুন একটি ‘প্রোডাক্ট’ আনা হবে, যেখানে প্রথম পক্ষ বিমার মতো অনেক বেশি মাত্রার ক্ষতিপূরণ থাকবে না, আবার তৃতীয় পক্ষ বিমার মতো এটি অকার্যকরও হবে না। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় পক্ষ বিমা বাতিল করতে বলেছেন। এ জন্য নতুন কী প্রোডাক্ট আনা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করবে বাংলাদেশ বিমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তারা যেটা বের করবে, সেটাই হবে।

বিআইএ নতুন গাড়ি বিমা নিয়ে আইডিআরএর সঙ্গে কাজ করবে বলেও জানান শেখ কবির। তিনি বলেন, ‘যেহেতু থার্ড পার্টি থাকবে না, তাই গাড়িতে গাড়িতে ধাক্কা লাগলে, মানুষ মারা গেলে, গাড়ির ক্ষতি হলে সেখানে যেন ক্ষতিপূরণ পায়, সেই ব্যবস্থা থাকবে। ফার্স্ট পার্টিতে যেমন অনেক ক্ষতিপূরণ পায়, সেটাও না, আবার থার্ড পার্টির মতোও না।’
এ বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নাল বারী বলেন, ‘আগে থার্ড পার্টি বিমা বাধ্যতামূলক ছিল। এবার থার্ড পার্টি বিমায় বিমা বাধ্যতামূলক হচ্ছে না। এবার নিজের গাড়ির ক্ষতির (ওন ভেহিকল ড্যামেজ) জন্য এই বিমা করতে হবে। কেউ গাড়ি চালানোর সময় দুর্ঘটনায় কবলিত হলে সে ক্ষতিপূরণ পাবে। এতে গাড়ির মালিকের লাভ। থার্ড পার্টি ছিল অন্য কারও লাভ। সেটি এখন আর নেই। ফার্স্ট পার্টি বা কম্প্রিহেন্সিভ বিমাও এখন অপশনাল। নিজের গাড়ির বিমা হবে বাধ্যতামূলক।

এই বিমা না করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।’ প্রিমিয়াম কেমন হতে পারে, জানতে চাইলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, এবার থেকে গাড়ির দাম অনুযায়ী যা আসবে, সেই মোতাবেক বিমা করতে হবে। গাড়ির মূল্য অনুযায়ী প্রিমিয়াম দেবে। এখানে নতুন-পুরনো কোনো বিষয় নয়।
গাড়িবিমা নিয়ে নতুন উদ্যোগ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাইন উদ্দিন বলেন, বিমা করা সব সময় ভালো। কিন্তু সমস্যা যেটা থেকে যায়, সেটা হচ্ছে এটার বাস্তবায়ন নিয়ে। মাঝখানে একটা বড় বিরতি দিয়ে এটা কার্যকর হচ্ছে। এখন দেখতে হবে, এখানে কোনো দুর্নীতি বা অন্যায়ের আশ্রয় যেন না থাকে।
জানা গেছে, মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ধারা ১০৯ অনুযায়ী তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা বাধ্যতামূলক ছিল এবং এর অধীনে ১৫৫ ধারায় দ-ের বিধানও ছিল। তবে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮তে তৃতীয়পক্ষের বিমা তুলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে যানবাহনের বিমা ছেড়ে দেওয়া হয় মালিকের ইচ্ছার ওপর। অর্থাৎ একজন ইচ্ছা করলে তার যানবাহনের বিমা করতে পারেন, আবার না করলেও কোনো সমস্যা নেই।

এ বিষয়ে ২০২০ সালের অক্টোবরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এরপর ওই বছরের ডিসেম্বরে তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা তুলে দেয় বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এরপর থেকেই মূলত মালিকরা পরিবহনের বিমা করা প্রায় বন্ধ করে দেন। বর্তমানে যেসব পরিবহন চলাচল করছে তার সিংহভাগেরই কোনো বিমা নেই। তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা তুলে দেওয়ার পর যানবাহনের বিমা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান বিমা ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

তবে কম্প্রিহেনসিভ ইন্স্যুরেন্সে বাধ্যতামূলক করার সুযোগ না থাকায় বিকল্প পথ খুঁজতে থাকেন বিমা সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে বিমা মালিকদের অংশগ্রহণে একাধিক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। সেখানে তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমার আদলে নতুন একটি বিমা প্রোডাক্ট চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপর চলতি বছরের মার্চে যথাযথ নিয়ম মেনে বিমা না করলে তিন হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

এরপর যানবাহনের জন্য বিমা বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ প্রণয়নে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ ম-লকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। ওই কমিটি ইতোমধ্যে দুটি বৈঠকও করেছে। যেখানে বর্তমান সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করে এতে একটি উপধারা সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী উপধারাটিতে উল্লেখ থাকবে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ৬০(২) ধারার বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহলে তা হবে একটি অপরাধ এবং এই অপরাধের জন্য তিনি অনধিক তিন হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’ আইনটি সংসদে পাস হওয়ার পর সব ধরনের যানবাহনের জন্য বিমা বাধ্যতামূলক করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, বিমা বাধ্যতামূলক রেখে আইনের খসড়া অনুমোদন হয়েছে। আইনটি পাস হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা/জামান/২৫/০৪/২৪

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যদিও এ ব্যবস্থার উন্নয়নে পাঠ্যবই, সিলেবাস থেকে শুরু করে পরীক্ষা পদ্ধতিতে নানা সংস্কার হয়েছে।

এক সময় কারিগরি শিক্ষাকে অনেকে মূল্যায়ন না করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনমনে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এসেছে। অনেকেই এখন কারিগরি শিক্ষাকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণের মাধ্যম হিসাবে গণ্য করেন।

কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহও বেড়েছে শিক্ষার্থীদের। তবে প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার, প্রচলিত এ কথাটি যেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে ঘিরে সাম্প্রতিক ঘটনায় যথার্থতা পেয়েছে। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট অরক্ষিত থাকার সুযোগ নিয়েছে জালিয়াতচক্র।

সক্রিয় এ চক্রের সদস্যরা অর্থের বিনিময়ে জাল সার্টিফিকেট বাণিজ্য করেছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এ অপকর্মের সঙ্গে বোর্ডেরই কতিপয় কর্মকর্তা জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

এমনকি ওয়েবসাইট পরিচালনায় অর্থাৎ সাইটে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন-বিয়োজনে গোপন পাসওয়ার্ড ব্যবহারের কথা থাকলেও খোদ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছেই নাকি ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড নেই।

এরই মধ্যে সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও জালিয়াতির অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের খোদ চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া জালিয়াতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চেয়ারম্যানের স্ত্রী এবং বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদন-নিবেদনের মূল ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।

মূল ব্যক্তি না হলেও অভিযুক্ত সিস্টেম অ্যানালিস্টের কাছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের গোপন পাসওয়ার্ড ছিল। অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর তৈরি, রেজাল্ট পরিবর্তন-পরিবর্ধন, নাম ও জন্মতারিখ সংযোজন করতেন তিনি।

ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রি করা সার্টিফিকেট কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোডও করতেন। এর ফলে বাংলাদেশসহ যে কোনো দেশে বসে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে গুগলে সার্চ করলে ওয়েবসাইট থেকে তা সঠিক হিসাবেই দেখা যেত।

এ অপকর্মের স্বার্থে বিভিন্ন উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি কারিগরি স্কুল ও কলেজ, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রিন্সিপালদের সঙ্গেও ছিল তার গোপন যোগাযোগ।

কোনো সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ, তার ওপর সেটি যদি হয় শিক্ষা বোর্ডের মতো সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানের, তাহলে প্রতিক্রিয়ার আর কোনো ভাষা থাকে না।

এ সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও জালিয়াতির সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, চূড়ান্ত তদন্ত শেষে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

আমরা আরও মনে করি, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তোলার মূল হাতিয়ার শিক্ষা বোর্ডগুলোকে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি সার্টিফিকেটের মতো মূল্যায়নকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডকে আরও বেশি সতর্কতা ও নজরদারির আওতায় আনা দরকার।

সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র তৈরিতে বিশেষ কাগজ, কালিসহ সংবেদনশীল যেসব উপাদান ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতেও সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

শিক্ষাবার্তা/জামান/২৫/০৪/২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

তাপমাত্রা বাড়ায় চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন ঘনঘন পানি খেতে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও একই অবস্থা। এমন অবস্থায় স্কুলে ছোটদের কে বারবার পানি পানের কথা মনে করাতে চালু করা হয়েছে ‘ওয়াটার বেল’। খবর আনন্দবাজার অনলাইনের।

ভারতের কয়েকটি রাজ্যের বেশ কয়েকটি স্কুলে এই পদ্ধতি চালু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেরও বেশ কয়েকটি স্কুল এই পদ্ধতি চালু করেছে। ওয়াটার বেল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে রাইপুরের চাতরি নিম্ন বুনিয়াদি আবাসিক বিদ্যালয় ও নিতুড়িয়ার বিন্দুইডি প্রাথমিক স্কুলে।

রাইপুরের চাতরি নিম্ন বুনিয়াদি আবাসিক বিদ্যালয় ও নিতুড়িয়ার বিন্দুইডি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তমকুমার মণ্ডল বলেন, ‘শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়। তাই এই ভরা গ্রীষ্মে শিক্ষার্থীদের শরীরে পর্যাপ্ত পানির জোগান দিতে প্রতি ঘণ্টায় ওদের পানি পান করানোর অভ্যাস চালু করা হলো।’

তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম এই পদ্ধ‌তি দেখেন ওড়িশার একটি স্কুলে। তারপরেই নিজের স্কুলের কথা মনে পড়ে। তবে সম্প্রতি কলকাতার বেশ কিছু স্কুল ‘ওয়াটার বেল’ চালু করেছে।

প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘ঘন ঘন পানি পান সু-অভ্যাস। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে তারা সুস্থ থাকবে। আমরা চাই, তারা বাড়িতে ও হস্টেলে এই অভ্যাস পালন করুক। সে জন্য এ দিন স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবক ও হস্টেল সুপারকে ডেকে তাদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

বাঁকুড়া গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মাহাত বলেন, ‘তাপমাত্রা ক্রমবর্ধমান। ছোট শিশুদের মধ্যে পানির অভার যাতে না হয় সেই কারণে এই ওয়াটার বেল। আসলে অভিভাবকরা চিন্তা করেন আদৌ শিশুরা স্কুলে গেলে পানি ঠিক মতো পান পান করবে কি না। সেই কারণে স্কুলে দু’বার বেল বাজানো হচ্ছে। যাতে বাচ্চারা পানি পান করে।’

শিক্ষাবার্তা/জামান/২৫/০৪/২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

লোর তদারকি করার কথা থাকলেও তারাও এ কাজ যথাযথভাবে করছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। ফলে অনেকটা ফ্রি-স্টাইলে অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠগুলোতে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজে অনেকে শিক্ষকই জাল সনদে চাকরি করছেন। এ ছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতি তো আছেই।

শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় আছে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্তত ৩৩টিতে কোনো উপাচার্য নেই। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন উপাচার্য। আর যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আর্থিক বিষয় দেখভাল করবেন সেই ট্রেজারার নেই অন্তত ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। শীর্ষ কর্মকর্তা না থাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক অনিয়ম হচ্ছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম চলছে লাগামহীনভাবে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ কর্তাব্যক্তিরা খেয়াল-খুশি মতো বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছেন।

বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম, ঢাকার ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ড. আবদুর রশীদসহ বেশ কয়েকজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ড. আবদুর রশীদের বিরুদ্ধে নিয়োগের মাধ্যমে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ ১০ দফা অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধেও অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করছে সরকার। শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের আগে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করে দেওয়া, নিয়োগের আগে চেক ও সিন্ডিকেটের দিনে অর্থ গ্রহণসহ বিভিন্ন অভিযোগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসি সূত্র জানায়, এই উপাচার্র্যের বিরুদ্ধে যেসব অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে তা খুবই দুঃখজনক।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শিরীন আখতার মেয়াদের শেষ সময়ে এসে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ দেন অন্তত ৩৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির। শুধু এই তিনজন নয়, দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে উপাচার্যদের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পরও কারও বিরুদ্ধে নেওয়া হয় না দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা। ফলে অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন অভিযুক্ত উপাচার্যরা।

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে প্রতি বছর বিনামূল্যের বই তুলে দেয় সরকার। এ বইয়ের ছাপাকাজেও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্টরা। নিম্নমানের কাগজে বই ছাপিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগ রয়েছে ছাপাখানাগুলোর বিরুদ্ধে। আর এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্মকর্তাদের। তবে নিম্নমানের কাজ করলেও তাদের ছাপাকাজ দেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চাপ থাকে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবি একটি সূত্র।

৫ হাজারের বেশি সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বাণিজ্যের অভিযোগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ টি এম শামসুজ্জামানকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে- সম্প্রতি কারিগরি বোর্ডে এই জালিয়াতির খবর চাউর হলেও সনদ জালিয়াতি চলে আসছে অনেক আগে থেকে।

শুধু কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নয়, সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাল সনদ নিয়ে চাকরি করছেন অনেক শিক্ষক। গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) প্রতিবেদনে বলা হয, দেশের ৬৭৮ জন শিক্ষকের জাল সনদের প্রমাণ মিলেছে। এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছে ডিআইএ।

দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও দুর্নীতি-অনিয়ম চলছে লাগামহীন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত বছর কয়েক শ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে।

দুর্নীতির মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শত শত শিক্ষক-শিক্ষিকা-কর্মচারী। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধভাবে এবং অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের ভুয়া সনদধারী, আবার কারও রয়েছে জাল সনদ। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তেই।সুত্র বাংলাদেশ প্রতিদিন

শিক্ষাবার্তা/জামান/২৫/০৪/২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দেড় বছর বয়সী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন তাহমিনা আক্তার (২৪) নামের এক নারী। আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার কাজীগাঁও এলাকায় চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে মা ও শিশুর লাশ উদ্ধার করেন চাঁদপুর রেলওয়ে থানা-পুলিশ। তখন হাজীগঞ্জ থানা-পুলিশের সদস্যরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিহত তাহমিনা আক্তার হাজীগঞ্জের ধড্ডা গ্রামের দেওয়ানজি বাড়ির মো. রফিকুল ইসলামের মেয়ে। ২০১৯ সালে একই উপজেলার সন্না গ্রামের নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মো. মাসুদুজ্জামান হাওলাদারের সঙ্গে তাহমিনার সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। সম্প্রতি পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তাহমিনার সঙ্গে মারা যাওয়া শিশুসন্তানের নাম আবদুর রহমান। তাহমিনার মুনতাহা নামে পাঁচ বছর বয়সী আরেকটি মেয়ে আছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা আড়াইটার দিকে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার আগে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে একটি পোস্ট করেন তাহমিনা। পোস্টে তিনি তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন ও মেয়েকে দেখে রাখার অনুরোধ করে গেছেন। এর আগে গত ২৮ মার্চ স্বামী ও তাঁর স্বজনদের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন তাহমিনা।

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে উঠিয়ে না নেওয়ায় বাবার বাড়িতে থাকতেন তাহমিনা। পরে বাবার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ধার নিয়ে স্বামী মাসুদুজ্জামানকে কুয়েতে পাঠান। স্বামী প্রবাসে থাকতে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মুঠোফোনে তাহমিনার বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। তখন তাঁর স্বামী তাঁকে বাবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকতে বলেন। স্বামীর কথামতো তিনি হাজীগঞ্জের মকিবাদ চৌধুরীপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। তখন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মুঠোফোনে তাঁকে নানা অপবাদ দিয়ে গালমন্দ করেন এবং স্বামী ভরণপোষণ দিতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে প্রবাসে থাকা অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে তাহমিনার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

সূত্র জানায়, ছাড়াছাড়ির পর গত ২৮ মার্চ হাজীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন তাহমিনা। এর মধ্যে ১৮ এপ্রিল তাহমিনার সাবেক স্বামী মাসুদুজ্জামান হাওলাদার দেশে ফিরে আসেন। তিনি অভিযোগ তুলে নিতে মুঠোফোনে তাহমিনাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং আবার স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে বলেন। অন্যথায় স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

থানায় অভিযোগ থাকায় প্রবাস থেকে ফেরার পথে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন অভিযুক্ত মাসুদুজ্জামান হাওলাদার। অভিযোগের ব্যাপারে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে ফোন করে বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাসুদুজ্জামানের এক ভাই বলেন, পাঁচ বছর ধরে ভাই ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে তাঁদের তেমন কোনো যোগাযোগ নেই। তাঁরা জানতে পেরেছেন, স্ত্রী-সন্তানের জন্য ভাই বিদেশ থেকে অন্তত ৭৬ বার টাকা পাঠিয়েছেন। শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর জন্য ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় বিস্তারিত কিছুই জানেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে অপবাদের অভিযোগ সঠিক নয়।

তাহমিনার অভিযোগটির তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমান বলেন, বিষয়টি সুরাহার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ অভিযুক্ত মাসুদুজ্জামানের পরিবারের সঙ্গে বসার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁরা রাজি হননি। এক সপ্তাহ আগে ওই ব্যক্তি দেশে আসেন। কিন্তু বাড়িতে না থেকে তিনি বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়ান। পরে জানতে পেরেছেন, ওই ব্যক্তি আবার প্রবাসে চলে গেছেন।

শিক্ষাবার্তা/জামান/২৫/০৪/২৪

বর্তমানে দেশে অনুমোদিত পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা ১৬৯। এর মধ্যে শিক্ষার্থী সংখ্যার বিচারে সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিদ্যার্থীর সংখ্যার ভিত্তিতে এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ২ হাজার ২৮৩টি অধিভুক্ত কলেজে পড়েন প্রায় ৩২ লাখ শিক্ষার্থী। সে হিসাবে দেশে উচ্চশিক্ষায় যত শিক্ষার্থী আছেন, তাঁদের প্রায় ৭২ শতাংশই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। যথা অন ক্যাম্পাস কার্যক্রম (এলএলবি, বিবিএ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স) এবং আউটার ক্যাম্পাস কার্যক্রম (বিভিন্ন কলেজে চালু কোর্সসমূহ)।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে মানবিক বিভাগের ৭৪ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েট বেকার থাকলেও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে এ হার ৭১ শতাংশ। এ ছাড়া বিজ্ঞানের ৬৬ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৬৯ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েট বেকার থাকছেন।

সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২ হাজার ২৮৩টি কলেজের মধ্যে ৮৮১টিতে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজের রয়েছে তিনটি ধরন। যথা সরকারি কলেজ, বেসরকারি কলেজে ও প্রাইভেট কলেজ।

একসময় দেশের কলেজগুলো মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) অধীনেই চলত। একপর্যায়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ কমাতে ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে কলেজগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হয়। এখানে স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশোনা হয়। কিছু পেশাগত কোর্সেও ডিগ্রি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় সাফল্য হলো অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত কলেজগুলোকে সংযুক্ত করতে পেরেছে এবং ভর্তি, ফরম পূরণ থেকে শুরু করে পরীক্ষক নিয়োগ পর্যন্ত অনলাইনে করছে।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সিইডিপির আওতায় বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষকের দক্ষতা বৃদ্ধিতে দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে উচ্চশিক্ষার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে নারীদের সামাজিক পরিচয় সংকট দূর করেছে, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করছে।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১:১৯। পক্ষান্তরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১: ২৯ অর্থাৎ প্রতি ২৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক রয়েছেন। অধিভুক্ত বেশির ভাগ কলেজে নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক, অবকাঠামো, গবেষণাগার ও গ্রন্থাগার।

এ ছাড়া শিক্ষাক্রমে সমসাময়িক জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব, ভর্তিবিহীন অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি, ইংরেজি ভাষার দক্ষতার ঘাটতি, এসব কারণে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে তাঁরা চাকরির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।

এ ছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের সদস্য (দৈনিক প্রথম আলো, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই দরিদ্র পরিবারের সদস্য।

এসব শিক্ষার্থীর পরিবারের মাসিক আয় ১০ হাজার টাকার কম। আর ১০ থেকে ৪০ হাজার টাকা মাসিক আয়, এমন পরিবারের শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪৯ শতাংশ। সংগত কারণে তাঁদের অধিকাংশ পড়ালেখার পাশাপাশি নানা নিম্ন আয়ের কাজের সঙ্গে জড়িত।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে প্রতিবছর কমপক্ষে ২০ লাখ জনগোষ্ঠী চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন। তাঁদের মধ্যে ১৩-১৪ লাখের দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থান হয়। বাকিরা দেশের বাইরে পাড়ি জমান। ফলে দুই দশক ধরে দেশে বেকার সংখ্যা ২৪-২৮ লাখের মধ্যে স্থির আছে। তবে যাঁরা দেশের অভ্যন্তরে তীব্র প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে চাকরি পাচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েট।

দেশে বর্তমান বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। দেশে সার্বিকভাবে মোট বেকারের মধ্যে ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। এদের মধ্যে কিছুসংখ্যক নারী বেকারও রয়েছেন।

সর্বশেষ কলেজ গ্র্যাজুয়েট ট্রেসার স্টাডির তথ্য উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক বলছে, কলেজ গ্র্যাজুয়েট পুরুষদের ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছে। নারীদের মধ্যে এ হার আরও বেশি (৭৭ শতাংশ)। শহর-গ্রামভেদেও এ হারে পার্থক্য রয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকার কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৫ শতাংশ হলেও গ্রামাঞ্চলে তা ৭২ শতাংশ।

বিআইডিএসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলো থেকে পাস করার তিন বছর পরও ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার থাকছেন।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পড়ালেখা শেষ করে মাত্র ১ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েট স্বকর্মসংস্থানে যুক্ত হচ্ছেন। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর তিন বছর ধরে চাকরির সন্ধান করতে হচ্ছে ৪৬ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েটকে। তাঁদের মধ্যে বেকারত্বের হারও সবচেয়ে বেশি ৭১ শতাংশ।

এই কলেজগুলোর লেখাপড়ার মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন আছে। সেশনজট কমানোর লক্ষ্যে ঠিকমতো ক্লাস না করে পরীক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার মতো অভিযোগও আছে। বাস্তবতা ও চাহিদার মধ্যে সমন্বয় না করেই দীর্ঘদিন ধরে ঢালাওভাবে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কলেজে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করা হয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ কলেজেই উচ্চশিক্ষায় পড়ানোর মতো পর্যাপ্ত ও দক্ষ শিক্ষকের অভাব, প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ সংকট, অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি, অবকাঠামোগত ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেই। প্রায় সারা বছরই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো না কোনো পরীক্ষা থাকায় কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

এ ছাড়া শিক্ষার্থী ও কলেজের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সব কলেজকে ঠিকমতো তদারকি করা সম্ভব হয় না বলে নানা মহলে আলোচনা আছে। এসব কলেজ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে।

ফলে তাঁরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীর সঙ্গে চাকরির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। বিশ্বব্যাংক বলছে, গ্র্যাজুয়েটদের বড় অংশেরই দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। তাঁদের ওপর জরিপ চালিয়ে সংস্থাটি বলছে, এক-তৃতীয়াংশ চাকরিজীবী গ্র্যাজুয়েট মনে করেন, কলেজে শেখা জ্ঞান ও দক্ষতা তাঁরা কাজে লাগাতে পারছেন। অধিকাংশ কলেজ–গ্র্যাজুয়েটই তাঁদের কলেজে শেখা জ্ঞান কাজে লাগাতে পারেন না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগ হতাশাই ভোগেন। সাধারণত যেসব শিক্ষার্থী কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান না এবং পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন না, তাঁরাই অনেকটা বাধ্য হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্থানীয় কলেজে ভর্তি হন।
এ ছাড়া দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু ব্যয় অনেক কম। ইউজিসির ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপিছু ব্যয় মাত্র ৭০২ টাকা। অর্থাৎ মাসে ৫৮ টাকার সামান্য বেশি। আসলে ভালো পড়াশোনার জন্য বিনিয়োগ একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যয়ের দৈন্য দশার চিত্রই প্রমাণ করে ভালো মানের পড়াশোনার পর্যাপ্ত সুযোগ ও পরিবেশ এখানে অনুপস্থিত।

ইউজিসির তথ্য বলছে, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে বিজ্ঞান, চিকিৎসা, প্রকৌশল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় সব সময়ই বেশি। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীপিছু ব্যয় বেশি, সেগুলোর পড়াশোনা ও গবেষণার মান তুলনামূলকভাবে ভালো।

আর যারা কম ব্যয় করে, তাদের শিক্ষার মানও তুলনামূলক খারাপ। তারপরও দেশের গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় বড় ভরসার জায়গা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

বিআইডিএসের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪২ শতাংশ চাকরি করছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকার অবস্থায় আছেন ৪২ থেকে ৪৮ শতাংশ।

পরিসংখ্যানুসারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা, বাংলা ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এক হিসাব মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন ২৩ শতাংশ। আর গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা থেকে পাস করা অন্তত ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছেন।

বেকার থাকা শিক্ষার্থীদের ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ ইসলামের ইতিহাস ও বাংলায় স্নাতক করেছেন। জানা যায়, ইংরেজিতে স্নাতক করা শিক্ষার্থীরা কম বেকার রয়েছেন। অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান ও হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকার ১ শতাংশের মতো।

এর কারণ হিসেবে জানা যায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগ হতাশাই ভোগেন। সাধারণত যেসব শিক্ষার্থী কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান না এবং পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন না, তাঁরাই অনেকটা বাধ্য হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্থানীয় কলেজে ভর্তি হন। ভর্তির পর বেশির শিক্ষার্থী নিজ বাড়ি থেকে অনিয়মিতভাবে ক্লাসে অংশগ্রহণ করেন।

অনেকে কলেজ হোস্টেলে, আবার অনেকে কলেজের আশপাশের ছাত্রাবাসে অবস্থান করেন। ছাত্রাবাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্যহীন অলস সময় কাটানো দেখে তারাও অলস হয়ে পড়েন। অনেকেই সিনিয়র ভাইদের হতাশা দেখে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। জীবনে কোনো কিছু করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কলেজ পড়ুয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী মূল বই পড়েন না, এমনকি টেক্সট বইয়ের নাম পর্যন্ত জানেন না। তাঁরা সিনিয়র ভাইদের পরামর্শে বাজারের ভুলে ভরা সস্তা নোট পড়ে পরীক্ষায় কৃতকার্য হন, অনেকে অকৃতকার্যও হন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় গত বছরের প্রশ্নগুলো অনুসরণ করে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়। ফলে তাঁদের বিষয়ভিত্তিক প্রকৃত জ্ঞান অর্জিত হয় না। অনেক কলেজে অনার্স বা মাস্টার্স পড়ানোর মতো দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে।

এ ছাড়া গবেষণাগার ও গ্রন্থাগারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও বই দেখা যায় না। ফলে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। ফলে তাঁরা দেশে বিদ্যমান কর্মবাজারে নিজের জায়গা তৈরি করতে পারছেন না, বেকার হয়ে পড়ছেন।

খ ম রেজাউল করিম সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ

শিক্ষাবার্তা/জামান/২৫/০৪/২৪

রমেশ চন্দ্র সরকার, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ রাজারহাটে বাল্যবিয়ে বন্ধ ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে স্থানীয় স্টেক হোল্ডারদের সাথে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

২৪ এপ্রিল (বুধবার) সকাল ১১ ঘটিকায় নাজিমখান ইউনিয়নের দোয়ার ফাঁস নামক স্থানে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের এসএসবিসি প্রকল্পের স্ট্রেনদেনিং সোশ্যাল এন্ড বিহেভিয়ার চেঞ্জ প্রকল্পের আয়োজনে ও ইউনিসেফের অর্থায়নে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

নাজিমখান ইউপির ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- সোনালুর কুটি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এর অবঃ প্রাপ্ত সহঃ সিনিয়র শিক্ষক মহেশ চন্দ্র রায়।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- হাজিপাড়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম মোঃ মাহাবুবার রহমান, ৭, ৮ ও ৯ নং সংরক্ষিত মহিলা আসনের মোছাঃ জাহানারা বেগম সহ আরো অনেকে।

আরো বক্তব্য দেন এসএসবিসি প্রকল্পের প্রজেক্ট অফিসার জেমস উজ্জ্বল শিকদার প্রমূখ, এসএসবিসি প্রজেক্টের কমিউনিটি ফেসিলিটেটর সাইদুল ইসলাম ও আপেল মাহমুদ।
বক্তারা - বাল্যবিবাহ বন্ধে সকল শ্রেণী পেশার মানুষজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

।। প্রফেসর ডক্টর মোঃ মাহমুদুল হাছান।।

স্কুলে শিশুদের প্রথম বছরগুলি, তাদের শেখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা সামনের দিকে পথ চলতে তাদের সারা জীবনের জন্য মজবুত ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

সফল সমস্যা-সমাধানকারী, প্রকৌশলী, উদ্ভাবক, শিল্পী এবং পরিবর্তন-নির্মাতাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা আমাদের শৈশবের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টিগতভাবে পরিলক্ষিত হয়। তারা জন্মলগ্ন থেকে কৌতূহলী, কল্পনাপ্রবণ এবং নিজেদের জন্য কিছু করার ক্ষেত্রে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকে। শৈশবের এ শিক্ষা আমাদের শিশু শিক্ষার্থীদের বিশ্বের বিস্ময় আবিষ্কার করতে উৎসাহিত করে এবং তাদের ইতিবাচক, আত্মবিশ্বাসী এবং যত্নশীল মানুষ হিসেবে অবদান রাখতে সক্ষম করে। শৈশবের শুরুর এ শিক্ষাকে আমরা সাধারণত প্রারম্ভিক বয়সী শিক্ষা (Early Years Education) বা প্রারম্ভিক শৈশব শিক্ষা (Early Childhood Education) বলে থাকি।

আইবি কারিকুলামে এটি একটি বিশেষ পরিভাষা হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও আধুনিক বিশ্বের উন্নত কারিকুলামে এটি এখন বেশ সমাদৃত।

ক্যামব্রিজ কারিকুলামে এটিকে ক্যামব্রিজ আর্লি ইয়ারস প্রোগ্রাম (Cambridge Early Years Programme), যাকে সংক্ষেপে Cambridge EYP বলা হয়। এটি কেমব্রিজ পাথওয়ের প্রথম পর্যায়, যা ৬ থেকে ১৯ বছর বয়সের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত সাফল্যের জন্য একটি পরিষ্কার পথ দেখায়।

পিয়ারসন এডেক্সেল কারিকুলামে এটিকে Edexcel iPrimary Reception/Early Year, যাকে সংক্ষেপে Edexcel iPR বা Edexcel iPEY কারিকুলাম বলা হয়। এটি ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য একটি দুই বছরের প্রোগ্রাম। অন্যদিকে, আইবি (International Baccalaureate) কারিকুলামে অনেক আগে থেকেই এ প্রোগ্রামটি চালু রয়েছে।

আইবি প্রাইমারি ইয়ারস প্রোগ্রাম (PYP) এর অংশ হিসাবে আর্লি ইয়ারস প্রোগ্রামটি (EYP) বিবেচনা করা হয়ে থাকে, যার মাধ্যমে ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা, তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়ার চেষ্টা করে এবং সহপাঠী, শিক্ষক, পরিবার ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের সাথে খেলার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহন করে থাকে।

প্রায় দুই দশক আগেও, আমাদের ছোটদের জন্য প্রাথমিক শৈশব শিক্ষার ধারণাটি যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে সত্যিই কোন গবেষণা করা হয়নি। অতিতে জন্ম থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাথমিক শৈশব শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিলো, প্রাথমিকভাবে বাড়িতে খেলাধুলা করে সময় কাটানো, দাদা-দাদি বা নানা-নানীদের দ্বারা বর্ণিত গল্প শোনা এবং স্থানীয় পার্কে নিয়মিত ঘুরাঘুরি বা খেলাধুলা করা ইত্যাদি।

কিন্তু গত দুই দশক বা তারও বেশি কিছু সময় ধরে প্রাথমিক শৈশব শিক্ষা ও শেখার ধারণার ওপর অনেক গবেষণা করা হচ্ছে এবং তাতে প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় যে, মস্তিষ্কের বিকাশ গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়। আমরা হয়ত: অনেকেই জানি যে, একটি শিশুর মস্তিষ্কে প্রতি সেকেন্ডে ৭০০ থেকে ১০০০ টি নিউরাল সংযোগ তৈরি হয় এবং শিশুটির আড়াই থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যে তার কথা বলার, শেখার, যুক্তি প্রদর্শনের এবং আবেগ প্রকাশের ক্ষমতা ভালভাবে বিকশিত হয়।

সুতরাং শুন্য থেকে পাঁচ বছর সময়কালে শিশুদের বিকাশে বিনিয়োগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা বিশ্বের সাথে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হয়ে ভারসাম্যপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গড়ে উঠতে পারে।

আধুনিক সভ্যতায় কর্মজীবী বা কর্মব্যস্ত বাবা-মায়ের সন্তান লালন-পালনের সুবিধার্থে এবং স্কুলের ক্রমোন্নত শিক্ষা ধারার সাথে খাপ খাওয়াতে, শিক্ষার এ স্তরটি পাঠ্যক্রমের মূলধারায় যুক্ত করা হয়েছে।

আমাদের বাংলাদেশেও জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমে প্রাক-প্রাথমিক (Pre-primary) নামে একটি শিক্ষার স্তর রাখা হয়েছে, যা মূলত আর্লি ইয়ারস প্রোগ্রামের মতই খেলার মাধ্যমে শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সাজানো হয়েছে।

আর্লি ইয়ারস শিক্ষাধারা বর্তমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এ যুগে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত কার্যকর ও মেধাবৃত্তিতে বেশ সহায়ক।

বাবা-মায়ের পারিবারিক ও পেশাগত ব্যস্ততায় শিশুদেরকে সঠিক প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে এ শিক্ষাধারা এখন অনেক জনপ্রিয়। এজন্য ভালো ভালো স্কুলগুলোতে ডে-কেয়ারের নামে আড়াই থেকে ৫/৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিশেষ ঘরোয়া শিক্ষার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ডে-কেয়ারের শিক্ষা শেষে উক্ত শিশু শিক্ষার্থীদেরকে ক্রমান্বয়ে প্রাত্যহিক স্কুলিং এর সমন্বয় করা হয়ে থাকে।

এ আর্লি ইয়ারস শিক্ষা কার্যক্রম তরুণ শিক্ষার্থীদের জীবনের সর্বোত্তম শিক্ষার সূচনা তৈরি করে এবং তাদের প্রাথমিক মাইলফলকগুলি পূরণ করার মাধ্যমে স্কুলের ভিতর এবং বাইরে উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি শিশুদের শিক্ষার পরবর্তী পর্যায়ের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, অনুধাবন এবং দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে। ফলে, তারা ক্যামব্রিজ প্রাইমারি বা আইবি মিডল ইয়ার্স প্রোগ্রাম (MYP) কিংবা এডেক্সেল আই প্রাইমারিসহ অন্যান্য প্রোগ্রামে সহজেই যেতে পারে।

আর্লি ইয়ার্স একটি শিশু-কেন্দ্রিক, খেলা-ভিত্তিক প্রোগ্রাম যা শিশু শিক্ষার্থীদেরকে তাদের নিজস্ব গতিতে বিকাশ করতে সহায়তা করে। এটি তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে, তাদের নিজস্ব পছন্দ নির্ণয় করতে এবং আত্ম-মূল্যায়নের অনুভূতি আবিষ্কার করতে উৎসাহিত করে। মোটকথা, উচ্চ-মানের শিক্ষার জন্য শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য যা যা প্রয়োজন, তা এ আর্লি ইয়ার্স শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আর্লি ইয়ার্স (Early Years) শিক্ষা কার্যক্রমে শিশুর বিকাশে মূলত: চারটি প্রধান লক্ষ্যকে বিবেচনা করা হয়; ১। সামাজিক বিকাশ (Social Development)

২। আবেগীয় ও মানসিক বিকাশ (Emotional and Mental Development)

৩। শারীরিক বিকাশ (Physical Development)

৪। বুদ্ধিভিত্তিক এবং একাডেমিক বিকাশ (Intellectual and Academic Development)

১। সামাজিক বিকাশ (Social Development): শিশু শিক্ষার্থীদের সামাজিক উন্নতিকে ‘সামাজিক সংযুক্তির দোলনা’ (The Cradle of Social Cohesion) হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আর্লি ইয়ার্স শিক্ষা সমাজের অন্যান্য মানুষের সাথে সম্পর্কযুক্ত রেখে শিশুদের নিজেদেরকে বোঝার সক্ষমতা তৈরি করে।

এটি শিশুদের মৌলিক দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি, "ধন্যবাদ", “ক্ষমা করবেন”, “আমি “দু:খিত” “আসসালামু আলাইকুম” এর মতো সম্মানজনক ও অভিবাদনমূলক ভাষা ব্যবহার করা শেখায়। এটি শিশুদেরকে যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্পষ্ট ও শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে শেখায়।

আর্লি ইয়ার্স শিক্ষা সামাজিক রীতিনীতিসহ, অন্যের প্রতি সহানুভূতি দেখানো, সমতা, শান্তি, সহযোগিতার মনোভাব এবং মূল্যবোধগুলিকে শিশুদের মধ্যে এই বিশ্বাস জাগিয়ে তোলে যে, তারা অন্যদের জীবনে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

২। আবেগীয় ও মানসিক বিকাশ (Emotional and Mental Development): আর্লি ইয়ার্স শিক্ষার মাধ্যমে শিশুরা তাদের আত্মবিশ্বাস, আবেগের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ, আত্ম-প্রকাশ, আত্মসম্মান এবং ইতিবাচক আত্মবিশ্বাসের মতো প্রয়োজনীয় মানসিক দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে পারে। সমস্যা সমাধান এবং স্বাস্থ্যকর ঝুঁকি গ্রহণের মতো পরবর্তী ক্রিয়াকলাপের জন্য এই দক্ষতাগুলি অপরিহার্য।

ছোট ক্লাসের আকার এবং শিক্ষকদের মিথস্ক্রিয়ার (Interaction) সময় শিশুদের এই দক্ষতাগুলি এমন একটি পরিবেশে শিখতে সাহায্য করে, যেখানে তারা পারস্পরিক পরিচিতি ও যত্নশীলতাসহ প্রয়োজনীয় আবেগীয় দক্ষতাগুলি অনুশীলন করতে উৎসাহিত হয়। এ শিক্ষা শিশুদের মধ্যে একটি শক্তিশালী মানসিক ভিত্তি স্থাপন করে, যেখানে তারা বন্ধু, শিক্ষার্থী এবং ব্যক্তি হিসাবে তাদের মূল্য বোঝে।

এ শিক্ষায় তারা তাদের ধারণা, আবেগ ও প্রয়োজনগুলি প্রকাশ করার ক্ষমতার প্রতি আস্থা রাখে এবং তাদেরকে ক্রমবর্ধমান জটিল সামাজিক-মানসিক ও একাডেমিক বিষয়ের জন্য প্রস্তুত করতে পারে।

৩। শারীরিক বিকাশ (Physical Development): আর্লি ইয়ার্স শিক্ষার স্তরটি একটি শিশুর স্থূল এবং সূক্ষ্ম মোটর দক্ষতার বিকাশ, শারীরিক সমন্বয় (হাত-চোখের সমন্বয়, বাইক চালানো, দৌড়ানো ইত্যাদি), হাত ধোঁয়া, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাওয়ার মতো স্বাস্থ্যকর দক্ষতার বিকাশ ঘটায়।

এ শিক্ষা কার্যক্রমে অনায়াসে পরিকল্পিত খেলা যেমন;, সংবেদনশীল টেবিল সেটিং, নানা ধরণের পাজল গেম, পেইন্টিং, বিভিন্ন ডিভাইস সাজানো ইত্যাদির মতো আকর্ষক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে শিশুদের শারীরিক দক্ষতার বিকাশ লাভ করে।

এ শিক্ষার স্তরে সূক্ষ্ম মোটর নিয়ন্ত্রণের উন্নতি করা থেকে শুরু করে তাদের ড্রেস পরা, জুতা পরা, ভেলক্রো স্ট্র্যাপ থেকে জরিযুক্ত জুতাতে স্থানান্তরিত করা, প্যাকিং করার মতো ক্রিয়াকলাপে আরও স্বাধীনতা অর্জন করা, তাদের স্কুল ব্যাগ, লাঞ্চ ব্যাগ এবং ব্যাকপ্যাক প্রস্তুত করার দক্ষতা শেখানো হয়।

৪। বুদ্ধিবৃত্তিক এবং একাডেমিক বিকাশ (Intellectual and Academic Development): যদিও প্রাথমিক শৈশব শিক্ষা প্রোগ্রামে সাক্ষরতা এবং সংখ্যা শেখার দক্ষতাগুলি যত্নসহকারে গবেষণা করা হয়, তবে একটি শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও একাডেমিক সাফল্যের ভিত্তি রচিত হয় এ আর্লি ইয়ার্স শিক্ষার স্তরে।

এখানে একটি শিশু নিজেকে একজন দক্ষ শিক্ষার্থী হিসেবে দেখে এবং সে নতুন কোন বিষয়ের সাথে এমনভাবে পরিচিত হয় যে, সে প্রথমে সেটিকে কঠিন বলে মনে করতে পারে, কিন্তু শিক্ষকের সাহায্যে সে যখন সেটিকে প্রাক্টিস করে তখন সেটি তার কাছে অনেক সহজ হয়ে যায় এবং তখন সে এটির মধ্যে আনন্দ খুঁজে পায়।

এভাবে, একটি শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ শ্রেণীকক্ষের বাইরেও প্রসারিত হয়; আর্লি ইয়ার্স শিক্ষা কার্যক্রম দ্বারা সমর্থিত শিক্ষার্থীরা শৈশব থেকেই সমগ্র বিশ্বকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখতে পারে।

সুতরাং, আর্লি ইয়ার্স শিক্ষাক্রম শিশুদের জন্য যেহেতু একটি শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতূহলকে উন্নীত করে এবং তাদের পর্যবেক্ষণ, বিস্ময়, প্রশ্ন এবং আবিষ্কার করার ক্ষমতা বিকশিত করে, সেহেতু শিশুর পিতামাতা, তত্ত্বাবধায়ক বা অভিভাবকদেরকে এ শিক্ষা-কার্যক্রমের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে।

একটি শিশুকে একটি শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ প্রদান করার জন্য, আর্লি ইয়ার্স শিক্ষা কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ শিক্ষা শিশুদের অসংখ্য একাডেমিক, সামাজিক-মানসিক, শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সুবিধা প্রদান করে, যা আগামী কয়েক দশক ধরে শিশুর জীবনে প্রতিধ্বনিত হয়।

অতএব, প্রত্যেক স্কুলে শিশুদের সামগ্রিক বিকাশে এ জাতীয় আর্লি ইয়ার্স শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মসূচি থাকা আবশ্যক, হতে পারে সেটি ক্যামব্রিজ আর্লি ইয়ার্স বা এডেক্সেল আইপিআর/আর্লি ইয়ার্স কিংবা আইবি আর্লি ইয়ার্স প্রোগ্রাম।

আমাদের সন্তান বেড়ে উঠুক খেলাধুলা ভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে, যা তাদের মেধা ও মনন চর্চার ক্ষেত্রে নিজেদেরকে বিকশিত করতে পারে।

লেখক-
প্রিন্সিপাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা ও
প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ স্মার্ট এডুকেশন নেটওয়ার্ক।

শিক্ষাবার্তা/জামান/২৪/০৪/২৪

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি;

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ কর্পাস: পাবলিক লেকচার সিরিজ-২০২৪’ এর অংশ হিসেবে “বাংলাদেশের সংবিধান এবং এর শাসন কাঠামো” শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন অনুষ্ঠান গতকাল ইউআইইউ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের প্রাক্তন নিয়ন্ত্রক এবং নিরীক্ষক জেনারেল এবং বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অর্থ সচিব জনাব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন ইউআইইউ’র স্কুল অব হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের ডিন প্রফেসর ড. হামিদুল হক।

জনাব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর বক্তৃতা বাংলাদেশের সংবিধান এবং এর শাসন কাঠামোর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ বিশ্লেষণ প্রদান করে। তার উপস্থাপনায় সংবিধান এবং সংবিধানের মৌলিক ধারণা, বাংলাদেশের সংবিধানের ঐতিহাসিক পটভূমি, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা সহ বাংলাদেশের সংবিধানে নিহিত মৌলিক নীতিগুলির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি হাইলাইট করেন যে এই নীতিগুলি কীভাবে শাসন কাঠামোকে নির্দেশ করে এবং আইনের শাসন বজায় রাখতে এবং সরকারী জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অবিচ্ছেদ্য।

তাঁর প্রবদ্ধে, কার্যনির্বাহী, আইন প্রণয়ন এবং বিচার বিভাগীয় শাখাগুলির মধ্যে ক্ষমতার পৃথকীকরণের উপর একটি উল্লেখযোগ্য ফোকাস করেছেন। এছাড়াও তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ রোধে এবং নাগরিকদের চাহিদার প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল একটি সুষম শাসন কাঠামো নিশ্চিত করার জন্য এই বিচ্ছিন্নতার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন।

তিনি শাসন ব্যবস্থার সম্মুখীন হওয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংস্কারের প্রধান মাইলফলক এবং সুশাসন সম্পর্কিত উদীয়মান সমস্যাগুলি মোকাবেলার জন্য ক্রমাগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি গণতান্ত্রিক শাসনকে শক্তিশালী করতে এবং সাংবিধানিক ম্যান্ডেট সমুন্নত রাখতে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পক্ষে কথা বলেন।

উক্ত অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 শিবা/জামান/২৪/০৪/২৪

magnifiermenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram