বৃহস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪

নিউজ ডেস্ক।।

এ দেশে মেধার অভাব নেই। সম্ভাবনাময় তরুণ মেধাবীরা নানা ক্ষেত্রে দেশের মুখ উজ্জ্বল করছে। বয়ে আনছে গৌরব। কিন্তু সঠিক পরিচর্যার অভাবে পরে তাদের অনেকে আবার হারিয়েও যায়। তরুণ মেধাবীদের ধরে রাখতে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। তা করতে পারলে দেশের উন্নয়নে দক্ষ শক্তি হিসেবে এই মেধাবী প্রজন্মই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। গতকাল শুক্রবার ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে 'আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড চ্যালেঞ্জ-২০২০' বিজয়ীদের নিয়ে আনন্দ আয়োজনে আমন্ত্রিত অতিথিরা এসব কথা বলেন।

জনকূটনীতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করে জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের মতো আয়োজনে আগামীতে সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবেন বলেও জানান আয়োজনের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

অনুষ্ঠানে সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, এ আয়োজনটি সমকাল এবং বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড যৌথভাবে আয়োজন করছে এবং প্রতি বছর বিদেশের মাটি থেকে দেশের তরুণরা সাফল্যও বয়ে আনছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের জন্য এ ধরনের আয়োজন থেকে আরও বড় সাফল্য বয়ে আনা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া জানান, চলতি বছর জাপানের নাগাসাকিতে আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের আয়োজন হওয়ার কথা ছিল। তবে কভিড-১৯ মহামারির কারণে আয়োজনটি হয় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে। সেই আয়োজনে জাতীয় জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত টিম বাংলাদেশ হিসেবে চারজন অংশ নেয়। এর মধ্যে দু'জন ব্রোঞ্জপদক জয় করে। তারা হচ্ছে- দি আগা খান স্কুলের শিক্ষার্থী রাফসান রহমান রায়ান এবং রাজশাহী কলেজের রাদ শারার। চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেওয়া টিম বাংলাদেশের অপর দুই প্রতিযোগী ছিল এসএফএক্স গ্রিন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের তাসনিম বিনতে জুলফিকার এবং সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষার্থী আবরার জামিল। ২০১৬ সালে শুরু হওয়া জাতীয় জীববিজ্ঞান উৎসব থেকে প্রতি বছরই বিজয়ীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিয়ে সাফল্য বয়ে আনছে। ২০১৯ সালেও টিম বাংলাদেশের চারজনের মধ্যে তিনজন ব্রোঞ্জপদক জয় করেছিল। তিনি আরও বলেন, জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজনে ৩০০ নম্বরের ব্যবহারিক পরীক্ষা থাকে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কার্যকর সহায়তা দেওয়া গেলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জনে সক্ষম হবে। এ জন্য তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি বলে মন্তব্য করেন।

এ আনন্দ আয়োজনের আলোচনায় আরও অংশ নেন জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের প্রধান প্রশিক্ষক অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আরাফাত, কারিগরি সহায়তা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ল্যাব বাংলার চেয়ারম্যান রাখাল রাহা, আয়োজনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কথাপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী এবং এ বছর আন্তর্জাতিক পর্বে অংশ নেওয়া টিম বাংলাদেশের চার তরুণ শিক্ষার্থী রাফসান রহমান রায়ান, রাদ শারার, তাসনিম বিনতে জুলফিকার এবং আবরার জামিল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমকালের সহকারী সম্পাদক (সুহৃদ সমাবেশের বিভাগীয় প্রধান) সিরাজুল ইসলাম আবেদ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে তরুণ শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে তারা দেশের গর্বের সম্পদ। তারাই ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি দুই ধরনের কূটনীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। একটি অর্থনৈতিক কূটনীতি এবং অপরটি জনকূটনীতি। অর্থনৈতিক কূটনীতির মাধ্যমে দেশের জন্য আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানো। গত ১২ বছরে অর্থনৈতিক অগ্রগতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে তা তুলে ধরাই হচ্ছে জনকূটনীতি। জাতীয় পর্যায়ে আয়োজন এবং আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ অবশ্যই জনকূটনীতি হিসেবে বিবেচ্য। যারা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারা দেশেরই প্রতিনিধিত্ব করছে। তাদের অর্জন দেশের সম্মান বৃদ্ধি করছে। এ কারণে আগামীতে এ ধরনের আয়োজনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়নে সঠিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এ কারণেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে বলেই কভিড-১৯ মহামারির সময়ে দেশের কোনো কাজই থেমে থাকেনি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ ভার্চুয়াল মাধ্যমে কাজের মাধ্যমে সচল থেকেছে। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগবিষয়ক উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, মহামারির কারণে আজকে সবাইকে দূরে দূরে থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আনন্দ আয়োজনে অংশ নিতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের বক্তব্য সবার মনে এক টেবিলে বসে থাকার সেই অনুভূতিই দিচ্ছে। এই মহামারি বেশিদিন থাকবে না এবং আবারও আমরা বাঙালির সম্মিলনের আবহমান সংস্কৃতিতে ফিরে যাব। আর এই ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে জীববিজ্ঞান। কারণ ভ্যাকসিন আবিস্কারের যে প্রচেষ্টা চলছে, সেখানে সবচেয়ে বড় অবদান জীববিজ্ঞানেরই।

তিনি আরও বলেন, আগের মতো সশরীরে অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের চেয়ে এবার মহামারির মধ্যে ভার্চুয়ালি অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ অনেক বেশি কষ্টের বিষয় ছিল এবং নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। এই নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে এ বছর যে দুটি ব্রোঞ্জ অর্জন তা স্বর্ণের চেয়েও বেশি মনে করি। গত ১১ ও ১২ আগস্ট বুয়েটে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া তরুণ শিক্ষার্থীদের চোখে যে স্বপ্ন দেখেছি, লড়াই করার যে স্বপ্ন দেখেছি, সেই লড়াই করার স্বপ্নই বাংলাদেশ। সমকাল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই স্বপ্নময় তরুণদের সঙ্গে আছে, বিজ্ঞানের নানামুখী আয়োজনের সঙ্গে আছে। কারণ সমকাল চায় একটি বিজ্ঞানমনস্ক আগামী প্রজন্ম, যারা বাংলাদেশকে নতুন উদ্ভাবনের আলোয় উদ্ভাসিত করবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষতা পেলে এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে দেশের জন্য অনেক বড় কিছু অর্জন সম্ভব মন্তব্য করে কার্যকর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের প্রধান প্রশিক্ষক অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার বলেন, বিভিন্ন দেশে জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন অলিম্পিয়াডকে সম্পৃক্ত করে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে পারে না। কারণ বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের দেশে বিজ্ঞান শিক্ষা ত্বরান্বিত করা এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে বড় অবদান রয়েছে। এ কারণে জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজনে প্রত্যক্ষ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকা উচিত। তিনি বলেন, অলিম্পিয়াডের মতো অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকে অর্থবহ করতে বড় অবদান রাখছে। সেই দিকটি বিবেচনায় রেখে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।

এনআইবির মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ বলেন, কভিড-১৯ মহামারি প্রমাণ করে দিয়েছে, সংকটে মানবসভ্যতাকে রক্ষার জন্য বিজ্ঞানকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে যেতে হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এর জিনোম সিকোয়েন্স করা, ভ্যাকসিন ও ওষুধ আবিস্কারের প্রচেষ্টা জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান একসঙ্গেই করছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের আয়োজনে ব্যবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষার সহায়তা দিচ্ছে এনআইবি। সে সময় এনআইবি ক্যাম্পাস তরুণদের পদভারে প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে। এবার মহামারির কারণে সেটা না হলেও আগামীতে আবার সেই প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাবে বলে প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, কভিড-১৯ মহামারি বুঝিয়ে দিয়েছে মানুষের জন্য, মানবসভ্যতার জন্য জীববিজ্ঞানের গুরুত্ব কতটা। জীববিজ্ঞান শুধু চিকিৎসাবিদ্যা নয়। বরং অণুজীববিজ্ঞান, জৈব প্রকৌশলবিদ্যাও জীববিজ্ঞানের অবিচ্ছেদ্য অংশ- এগুলোই আজ মহামারির দিনে মানুষকে রক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে। তিনি আরও বৃহত্তর পরিসরে জাতীয় জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজনের ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন।

ড. তারিক আরাফাত বলেন, ২০১৬ সাল থেকেই তিনি জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজনের সঙ্গে আছেন। তখন অনেকের মধ্যে প্রশ্ন ছিল, জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে বুয়েট কেন। এখন মহামারির সময় দেখা যাচ্ছে ভ্যাকসিন তৈরি, ওষুধ আবিস্কারে বায়োটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গুরুত্ব কত বেশি। তিনি আরও বলেন, জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড বাংলাদেশে সার্বিকভাবে বিজ্ঞান শিক্ষাকেই জনপ্রিয় করতে ভূমিকা রাখছে।

কথাপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, মহামারির মধ্যেও এ ধরনের একটি সফল ও সম্মানজনক আয়োজনের সঙ্গে থাকতে পেরে কথাপ্রকাশ গর্বিত এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজনের সঙ্গে কথাপ্রকাশ থাকবে।

ল্যাববাংলার চেয়ারম্যান রাখাল রাহা বলেন, তার প্রতিষ্ঠান এ আয়োজনে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ সহায়তা অব্যাহত রাখতে দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা জানান তিনি।

স্বাগত বক্তব্যে জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী অতিথি, অংশগ্রহণকারী, অভিভাবক সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

এ বছর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের মূল পর্বে অংশ নেওয়া চার শিক্ষার্থী একই সুরে জানায়, তারা মনে মনে জাপানের নাগাসাকিতে যাওয়ার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছিল। মহামারির কারণে যেতে না পারায় তাদের ভেতরে কষ্টবোধ হয়েছে। কিন্তু তার পরও তারা এত বড় আয়োজনে অংশ নিতে পেরে গর্বিত। এ আয়োজনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা স্মৃতিতে অমলিন থাকবে সবসময়। তারা জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজনের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় এবং এ ধরনের আয়োজন আরও বেশি ও বিস্তৃত করার আহ্বান জানায়। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানান তাদের জন্য এ আনন্দ আয়োজনের ব্যবস্থা করায়।সুত্র সমকাল

নিউজ ডেস্ক।।গোলাপি বা সাদা নয়, এমনকি আমাদের সাহিত্য ও মিথে স্থায়ী জায়গা করে নেওয়া নীলও নয়; হলুদ রঙের এক পদ্মের সন্ধান মিলেছে বাংলাদেশে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে এটি বিশ্বে পদ্মফুলের সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রজাতি বলে অনুমিত। গবেষণাগারের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে উদ্ভিদবিজ্ঞানে হলুদ পদ্ম হবে অনন্য সংযোজন। এই পদ্মের নামকরণও হবে আমাদের দেওয়া নামে।
ফোনের ওপার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার যখন প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো পদ্মফুলের নতুন প্রজাতি নিয়ে বলছিলেন, ফোনের এপার থেকে তার কণ্ঠের আবেগ, উষ্ণতা বেশ উপলব্ধি করা যাচ্ছিল।
কয়েকদিনের মধ্যে তাদের গবেষক দল যাচ্ছে হলুদ পদ্মের আবাস কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণগ্রাম বিলে। তিনি আমাকেও আমন্ত্রণ জানালেন হলুদ পদ্ম পর্যবেক্ষণের জন্য।
পদ্মফুল পৃথিবীজুড়েই কমবেশি জন্মে। বৈশিষ্ট্য অনুসারে পদ্মকে দুটি প্রজাতিতে ভাগ করা হয়ে থাকে, যেমন- এশিয়ান বা ইন্ডিয়ান পদ্ম। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nelumbo nucifera। অন্যটি আমেরিকান বা ইয়োলো লোটাস। ইয়োলো লোটাসের বৈজ্ঞানিক নাম Nelumbo Lutea.
এশিয়ান পদ্ম আবার দুই রঙে দেখা যায়- মসৃণ সাদা ও হালকা গোলাপি। আমাদের দেশে ঝিল-বিল ও জলাশয়ে যেসব পদ্মফুল দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো এশিয়ান বা ইন্ডিয়ান লোটাস। শুধু বাংলাদেশ নয়, কাস্পিয়ান সাগর থেকে উত্তর অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে এই প্রজাতির পদ্ম জন্মে। বহুবর্ষজীবী এ জলজ উদ্ভিদের গাছের কা লতানো। গোলাকার পাতা গড়ে প্রায় ৪৫ সেন্টিমিটার চওড়া। সরু কাঁটাযুক্ত লম্বা ডাঁটায় ফুল ফোটে। ফুলে রয়েছে মিষ্টি গন্ধ। পানির ওপরে পাতা ও ফুল ভেসে থাকে। চার-পাঁচ ফুট পানি পদ্মের জন্য আদর্শ। পানির নিচে কাদায় বিস্তৃত হয় এর শিকড়।
রাখহরি সরকার বললেন, আমাদের বিলে-ঝিলে ফুটে থাকা এশিয়ান পদ্ম থেকে নতুন এই পদ্ম আলাদা। তাহলে কি আমেরিকান লোটাস কোনোভাবে দক্ষিণ গ্রামের এই বিলে এসে বংশবিস্তার করেছে? তার ভাষ্য- সেটিও না। আমেরিকান লোটাসের রঙ ও বৈশিষ্ট্য থেকে দক্ষিণ গ্রাম বিলের পদ্মের বৈশিষ্ট্য আলাদা। এর বর্ণ হালকা আবার পাপড়ির সংখ্যাও অনেক বেশি। সে যাই হোক, গেলেই তো বোঝা যাবে মোহনীয় পদ্ম দক্ষিণ গ্রাম বিলে এসে কতটা ঈর্ষণীয় হয়ে ফুটছে, কতটাই-বা আলাদা জাতভাইদের চেয়ে।
গবেষক দলের দুই সদস্য পদ্ম গবেষক শিকদার একে শামসুদ্দিন ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক শাওন মিত্র একদিন আগেই রওনা হয়ে যান। আমি যাই পরের দিন ২ সেপ্টেম্বর। বাসে ঢাকা থেকে কুমিল্লা গিয়ে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের পাশ থেকে উঠতে হলো বুড়িচং যাওয়ার স্কুটারে। আধা ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে- দক্ষিণ গ্রাম বাজারে। ঘড়িতে তখন সকাল ১১টা। পদ্ম গবেষক শিকদার এ কে শামসুদ্দিন এবং সহযোগী শাওন মিত্র এরই মধ্যে একবার বিল ঘুরে এসেছেন। বললেন, বিকেলে আবার যাব, তখন আপনিও যাবেন।
রাখহরি সরকার বলেছিলেন, গত বছর সেপ্টেম্বরে তারা এই হলুদ পদ্মের কথা জানতে পারেন। খবরটা পেয়েই বেঙ্গল প্লান্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক, পদ্ম গবেষক শিকদার এ কে শামসুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেন। সিদ্ধান্ত নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ ও বেঙ্গল প্লান্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট যৌথভাবে হলুদ পদ্মের অনুসন্ধানে নামবে। সেই থেকে কাজ শুরু। গত বছরই ছবিসহ কিছু তথ্য-উপাত্ত যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির নামকরণ বিভাগ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় হারবেরিয়ান জাদুঘর ইংল্যান্ডের কিউ গার্ডেনে পাঠিয়েছেন। তারাও বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী। তাই এ বছর হলুদ পদ্মের হারবেরিয়ান শিট করাসহ গবেষণার প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে ফেলতে চান। এলাকাবাসীসহ স্থানীয় প্রশাসন সর্বতোভাবে সহযোগিতা করছেন তাদের এই গবেষণায়। একটু পরেই সেটি বোঝা গেল। আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে 'দক্ষিণ গ্রাম সমাজ কল্যাণ সংগঠন'-এর নাসির উদ্দিনের বাড়িতে। তিনি বাড়ির দুটি ঘরই শুধু ছেড়ে দেননি, একটু পরপর এসে খোঁজ নিচ্ছিলেন কিছু লাগবে কিনা। আর চা-নাশতা তো ছিলই। বিকেল ৪টার দিকে আমরা বিলের দিকে যাই।
ঠিক হলুদ নয়, হলুদাভ। অফহোয়াইটও বলা যেতে পারে। তবে, সাদা কখনোই নয়। অপূর্ব সুন্দর। যেন অসংখ্য পাপড়ির একটি তোড়া সবুজ পাতা ভেদ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। পূর্ণ ফোটা হলুদ পদ্মের পাশে গোলাপি পদ্মটি দেখতে কিছুটা রুগ্‌ণই মনে হচ্ছিল। যদিও পাপড়ির দৈর্ঘ্য গোলাপি পদ্মেরই বড়।
নৌকায় করে সকালে রেকি করার সময় পরদিন ফুটবে এমন কিছু কলিতে ট্যাগ লাগানো হলো। দূর থেকে বোঝার জন্য পুঁতে দেওয়া হলো লাল পতাকা লাগানো বাঁশ। এসব করতে করতেই শিকদার শামসুদ্দিন দেখাচ্ছিলেন, অন্য পদ্ম থেকে হলুদ পদ্মের পার্থক্য।
এশিয়ান বা আমেরিকান পদ্মে একটি ফুলে পাপড়ি থাকে ১২ থেকে ১৮টি, সেখানে বুড়িচংয়ের এই হলুদ পদ্মে পাপড়ি সংখ্যা ৬০টিরও বেশি। ভেতরের পাপড়ি পুংকেশরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই ফুলে পুংকেশরের সংখ্যাও অনেক বেশি, প্রায় তিনশ'। গবেষকরা জানালেন, এশিয়ান পদ্মে তা দুইশ'র মধ্যেই থাকে। পাপড়ি ছোট এবং বেশি হওয়ায় হলুদ পদ্মের কলি একটু বেঁটে, পেট মোটা হয়।
কথায় কথায় সন্ধ্যা নামে। আমরাও পাড়ে ফিরে আসি। পরদিন ভোর ৫টায় আবার বিলে নেমে পড়ি। পৌঁছে যাই ট্যাগ লাগানো কলিগুলোর কাছে। আস্তে আস্তে আঁধার কাটছে আর ফুলগুলোও যেন একটু করে হেসে উঠছে। আমরা ঘুরে ঘুরে পদ্মের কলি থেকে ফুল হওয়া দেখি। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই চারদিক আলো ঝলমল করে উঠল। সেইসঙ্গে বিলের সব হলুদাভ পদ্ম গ্রীবা তুলে নিজেদের মেলে ধরে।
পদ্মের আয়ু চার দিন। গবেষকরা এই চার দিন ফুলগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন। হলুদ পদ্মের পাতা, ডাঁটা, ফুল, ফল, শিকড় প্রভৃতি সংগ্রহ করবেন। তৈরি করবেন হারবেরিয়ান শিট। নমুনা থেকে করবেন ডিএনএ টেস্ট। 'যদি স্বাতন্ত্র্য প্রমাণিত হয় এই পদ্ম আমাদের হবে'- আনন্দে শিকদার শামসুদ্দিনের মুখ ঝলমল করে ওঠে। খালি চোখেই যা অন্যদের থেকে ভিন্ন-অনন্য, গবেষণাতেও তা ফুটে উঠুক আপন বৈশিষ্ট্যে। এই বিশ্বাস নিয়ে হলুদ পদ্মের বিল থেকে ফিরে আসি।

নিউজ ডেস্ক।।

দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে আনসার সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একজন প্লাটুন কমান্ডারের নেতৃত্বে ৪ জন আনসার সদস্য কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করবেন।

বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তারা দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট জেলা কমান্ড্যান্ট অস্ত্র-গুলির নিরাপত্তা পূর্বক যথা নিয়মে সমন্বয় করবেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের দায়িত্ব পালন স্থায়ী বা অস্থায়ী হবে কিনা তা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে পারেননি। ইতিমধ্যে যশোর জেলাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে তারা দায়িত্ব পালন করা শুরু করেছেন। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিষয়টি জানতে চাইলে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-পরিচালক (কেপিআই) ফাতেমা তুজ জোহরা জানান, দেশের ইউএন অফিসগুলোতে ইতিমধ্যে ৪ জন করে আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করা শুরু করেছেন।

গত বুধবার রাতে সরকারি বাসভবনের ভেনটিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ইউএনওর মাথায় গুরুতর আঘাত এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়। পরে জানা গেছে, ওই হামলার সঙ্গে জড়িত যুবলীগের তিনজন নেতা। এ কারণে দেশের সব ইউএনওদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

নিউজ ডেস্ক।।

প্রযুক্তি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এই করোনাকালেও প্রযুক্তির কারণেই অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজ সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণেই বেশির ভাগ স্কুলে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। কিছু কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও অনলাইন ক্লাস চলছে। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যেটা একেবারেই থেমে গিয়েছিল তা আবার চালু হয়েছে। পড়াশোনার মধ্যে থাকায় শিক্ষার্থীদের ঘরে বন্দি থাকার বিরক্তিটা কমেছে। তবে একই সঙ্গে স্কুলের শিক্ষার্থীদের একঘেয়ে, একাকী, দীর্ঘসময় ধরে অনলাইন ক্লাসের বাধ্যবাধকতায় পড়তে হচ্ছে। এতের তাদের ওপর মানসিক চাপ বাড়ছে।

দেখা যাচ্ছে, সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে টানা বেলা দেড়টা, ২টা পর্যন্ত চলছে ক্লাস। এর মাঝে ১০ মিনিটের বিরতি পায় তারা। এরপর পুরো সময়টাই মোবাইলের স্ক্রিনে, নয়তো কম্পিউটারের সামনে। এখানেই শেষ নয়। ক্লাস শেষে স্কুল থেকে দেওয়া হোম ওয়ার্কও করতে হচ্ছে। অনলাইনে পরীক্ষাও নেওয়া হচ্ছে। ফলে একটা শিশু সপ্তাহের টানা পাঁচ দিন সাত থেকে আট ঘণ্টা কম্পিউটার বা ফোনের সামনে একা সময় কাটাচ্ছে। স্কুলে থাকলে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প, খেলাধুলার মধ্যে সময়ে কাটে। কিন্তু এখানে একা, নিঃসঙ্গ, ফলে অনলাইনে পড়ার চাপে দিশেহারা অবস্থা শিশুদের। এ পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস চার দিন করার কথা বলছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, রবি সোম ক্লাস করার পর মঙ্গলবার ছুটি রেখে বুধ ও বৃহস্পতিবার এই চার দিন ক্লাস করানো হোক। সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবারে সব হোম ওয়ার্ক দেওয়া হোক। তাহলে শিশুরা কিছুটা স্বস্তি পাবে।

এদিকে অনলাইন ক্লাসের প্রভাবে আবার অনেক শিশু গ্যাজেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারপরেও সময়ের বাস্তবতায় তা মেনে নিতে হচ্ছে। সম্প্রতি শিশুদের জন্য কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ এ বিষয়ে একটি সতর্কতা জারি করেছে। ইউনিসেফ বলেছে, বাচ্চারা যখনই গ্যাজেট ব্যবহার করে, তখন মা-বাবার একজনের উচিত তাদের সঙ্গে থাকা। দেখা গেছে, অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকরা একটানা ক্লাস করানোর পরে হোম ওয়ার্ক দেন। সেসব হোম ওয়ার্ক মা-বাবাদের প্রিন্ট করিয়ে এনে শিশুদের দিয়ে করিয়ে তা আবার স্ক্যান করে শিক্ষকের মেইলে পাঠাতে হয়। লকডাউনের সময় অভিভাবকদের এসব করা সম্ভব হলেও এখন অফিস-আদালত খুলে যাওয়ায় তারা অফিসে চলে যান। ফলে পুরো চাপটাই পড়ছে শিশুদের ওপরে।

শুধু তাই নয়, অনলাইন ক্লাসে একটি শিশু পড়া বুঝলো কি বুঝলো না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। ফলে শিক্ষক যা বোঝালেন সেটা শিক্ষার্থী কতটুকু বুঝলো সে বিষয়টিও বোঝার কোনো উপায় নেই। তাই বেশি ক্লাসের চাপ না দিয়ে ভালোভাবে বুঝিয়ে পড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, বেশি পড়ার চাপ, হোমওয়ার্ক না দিয়ে শিশুদের অল্প পড়ানো হোক কিন্তু সেই পড়া যেন আনন্দময় হয়—সেটাই বেশি জরুরি। শুধু শুধু নামমাত্র কোর্স কমপ্লিট করে কোনো লাভ নেই, যদি আমার শিশুটি পড়া না-ই বোঝে।

ঢাকায় ধানমন্ডির নামী এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে তৌসিফ আর গোধূলী। তাদের মা ইভানা নাসরীন জানান, আমার এক ছেলে ক্লাস সিক্স আর মেয়ে ক্লাস ফোরে পড়ে। দুজনের অনলাইনে ক্লাস চলে। তারা সকাল আটটায় উঠে ক্লাস শুরু করে। স্কুল শেষে খাওয়-দাওয়া শেষে হোম ওয়ার্ক করে। সেসব হোম ওয়ার্ক আবার রাত আটটার মধ্যে শিক্ষকের মেইলে পাঠাতে হয়। না পাঠানো গেলে তারা সেই হোমওয়ার্ক গ্রহণ করেন না। পরীক্ষাও হচ্ছে। এখন অফিস খুলেছে। এরমধ্যে পরীক্ষার প্রশ্ন দেয়। আমার ক্লাস ফোরে পড়ুয়া মেয়ে স্ক্রিন শট দিয়ে সেভ করতে পারে না। আমরা অফিসে থাকায় তাকে কোনো সহযোগিতাও করতে পারি না। দেখা যাচ্ছে আমার মেয়েটার সেই পরীক্ষা পরে আর নেওয়া হচ্ছে না।

গুলশানের অপর এক নামি স্কুলের অভিভাবক তামান্না তাসনীম বললেন, বাচ্চাদের একটানা ক্লাস তাদের ওপর মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে। ক্লাস ভেদে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা একলা ক্লাস করতে হয়। এরপর হোমওয়ার্ক। বন্ধুদের সঙ্গেও দেখা নেই। শুধু বাসায় ভিডিও গেম খেলে বা মুভি দেখে দেখে ওরাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক শিক্ষিকা জানান, শিশুদের ওপর পড়াশোনার চাপ বেড়েছে ঠিক। কিন্তু তাদের কোর্সও শেষ করার একটা চাপ থাকে। সব অভিভাবক এক চিন্তার হন না। অনেক অভিভাবক মনে করেন, শিক্ষার্থীদের ওপর পড়াশোনার চাপ থাকা ভালো। আমাদেরও স্কুল পরিচালনা করতে গিয়ে সবার ইচ্ছার সমন্বয় ঘটাতে হচ্ছে। কারণ এখন সময়টাই বৈরী।

এদিকে দেখা যাচ্ছে, করোনাকালে বাচ্চাদের মধ্যে ডিজিটাল গ্যাজেটের ব্যবহার বেড়েছে। এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের চোখ ও মস্তিষ্ক। এটি শিশুদের কথা বলার প্রক্রিয়াগুলোর বিকাশকে বাধা দিতে পারে। এক সমীক্ষায় জানা গেছে, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, আইপ্যাড এবং ল্যাপটপের কারণে শিশুদের মানসিক বিকাশ প্রভাবিত হচ্ছে। তাই গ্যাজেটের স্ক্রিনটি চোখের খুব সামনে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। এর ফলে বাচ্চার চোখের দৃষ্টি দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানী মোহিত কামাল বলেন, শিশুরা যত এই ডিজিটাল দুনিয়ায় বেশি সময় ব্যয় করবে, তাদের সৃজনশীলতা ততই হ্রাস পাবে। এটি তাদের মানসিক বিকাশের পক্ষে ভালো নয়। এমন পরিস্থিতিতে যদি একটি শিশু প্রতিদিন একটি অনলাইন ক্লাস করে, তার সঙ্গে কিছুটা সময় গ্যাজেটবিহীন সৃজনশীল খেলা খেলে বা ঘরের কাজ করে তাহলে তার মস্তিষ্কের অনুশীলনও হয়। পাশাপাশি বাচ্চাদের ডিজিটাল ডিভাইসের খারাপ প্রভাবগুলো বুঝিয়ে বলতে হবে। তাদের বকা বা মারা থেকে বিরত থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে ডিজিট্যাল স্ক্রিনের সামনে বসে থাকলে শিশুকে পর্যাপ্ত ঘুমাতে দিতে হবে। তবে অনলাইনে শিশু-কিশোরদের অবাধ পদচারণায় তারা সাইবার ক্রাইমের শিকার হয় কি না বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা ঘটে কি না এমন ভয়ে থাকেন অনেক অভিভাবক। এছাড়া ইন্টারনেট আসক্তিও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য বাচ্চাদের কম্পিউটার বা ডিভাইসটি ঘরের এমন জায়গায় রাখতে হবে, যাতে সহজেই দেখা যায় আপনার সন্তান কম্পিউটারে কী করছে।

ইসরাত জাহান।।

সাধারণ ফ্লু, সর্দি–জ্বর, বায়ুদূষণ, অ্যালার্জি, অ্যাজমার কারণে অনেক সময় আমাদের গলা খুসখুস করে, কাশি হয়। আবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সেরে ওঠার পরও দুই–তিন সপ্তাহ পর্যন্ত কাশি রয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে শুষ্ক আবহাওয়া ও ধূমপানের কারণেও কাশি হয়। কিছু খাদ্যাভ্যাস এ ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে।

মধু: কাশি উপশমে ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে মধুর জুড়ি নেই। তবে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের মধু খাওয়ানো একেবারেই উচিত নয়। এবার জেনে নেওয়া যাক মধু খাবেন কীভাবে:
এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ২ টেবিল চামচ মধু, অর্ধেকটা লেবুর রস আর সামান্য আদার রসের মিশ্রণ প্রতিদিন এক–দুবার খেতে হবে। এ মিশ্রণ কফ ও গলাব্যথা উপশমে সহায়তা করে।
রাতে ঘুমানোর আগে নিয়মিত গরম দুধে ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।
দিনে তিনবার করে ১ টেবিল চামচ করে মধু খেলেও কাশি কমবে।
এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চা–চামচ গোলমরিচের গুঁড়া ও ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে দিনে দুবার করে খেতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

বাসক পাতা: বাসক পাতা পানিতে সেদ্ধ করে, সেই পানি ছেঁকে নিয়ে কুসুম গরম অবস্থায় খেলে কাশি উপশম হয়। প্রতিদিন সকালে এ পানি খেতে হবে। এ ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসক পাতার রস খেলেও উপকার পাওয়া যাবে।

তুলসী পাতা: তুলসী পাতা থেঁতো করে এতে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে প্রতিদিন দু–তিনবার খেলে কাশি ভালো হয়।

বিজ্ঞাপন

আদা: আদা ছোট টুকরা করে তার সঙ্গে লবণ মিশিয়ে কিছুক্ষণ পরপর খেতে পারেন। এ পদ্ধতি কাশি দূর করতে বেশ কার্যকরী। তা ছাড়া আদা–চাও কাশি উপশমে বেশ সহায়ক।

গরম দুধে হলুদের মিশ্রণ: গরম দুধে অল্প পরিমাণে হলুদ মিশিয়ে খেলে তা কাশি উপশমে বেশ কাজে আসে।

লবঙ্গ: লবঙ্গের রস গলায় আরাম দেয়, জীবাণু দূর করে।

মেন্থল ক্যান্ডি: মেন্থল দিয়ে তৈরি ক্যান্ডি বা চকলেট কাশির জন্য উপকারী।

এ ছাড়া গার্গল করলেও কাশি ও গলাব্যথা দুই-ই কমে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা–চামচ লবণ মিশিয়ে ১০–১৫ মিনিট ধরে গার্গল করুন। কাশি হলে ঠান্ডা পানির পরিবর্তে গরম পানি পান করার চেষ্টা করুন। গোসলও গরম পানিতে করুন। গরম পানির ভাপওনিতে পারেন।

লেখক: পুষ্টিবিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ আছে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল স্বল্প সময়ে এ সংকট কেটে যাবে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাই বলে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকতে পারে না। এ কারণে প্রথমেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে। পরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এগিয়ে আসে, যদিও এখনো অর্ধেকসংখ্যক শিক্ষার্থী এ কার্যক্রমের বাইরে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা শিক্ষার্থীদের অনেকেরই স্মার্টফোন নেই। ফলে তাঁরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারছেন না।

আরও অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থীকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়ে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি ইন্টারনেট প্যাকেজ দেওয়ার সুপারিশ করে। এর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতিও সরকারের কাছে অনুরূপ দাবি জানায়। সেটি জুন মাসের কথা। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে তখনো কোনো উচ্চবাচ্য ছিল না। গত ৬ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ইউজিসির প্রস্তাবের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বলেছিলেন, করোনার কারণে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু আর্থিক কারণে অনেক শিক্ষার্থীর জন্য সেই কার্যক্রমের ব্যয়ভার বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কঠিনকে সহজ করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে যতটা উদ্‌গ্রীব, পাঠদান নিয়ে ততটাই উদাসীন।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষামন্ত্রী ফ্রি ইন্টারনেট প্যাকেজ অথবা কম খরচে ইন্টারনেট সুবিধা নিয়ে আলোচনা চলার কথা বলেছিলেন জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে। আর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এল সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখে। মাঝখানে প্রায় দুই মাস চলে গেছে। গত বুধবার সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটক স্বল্প খরচে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইউজিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টেলিটক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ দেবে টেলিটক। ইউজিসি পরিচালিত বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডিরেন) প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা এ সেবা নিতে পারবেন। বর্তমানে ৪২টি পাবলিক ও ৬৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিডিরেন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে থাকে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে ১০০ টাকা দিতে হবে।

টেলিটকের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে এ–ও মনে করি যে শিক্ষার্থীদের সহায়তায় সব মোবাইল অপারেটরের এগিয়ে আসা উচিত। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। একটি মাত্র মোবাইল অপারেটরের পক্ষে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে অনলাইন সুবিধা দেওয়া সম্ভব না–ও হতে পারে। টেলিটকের সেবার মান খুব উন্নত, তা–ও বলা যাবে না।

অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দাবি, কেবল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের স্বল্প খরচে কিংবা বিনা মূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা দিতে হবে। তাঁদের এ দাবি অযৌক্তিক নয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। তাদের ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে রেখে সরকারের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম সফল করা যাবে না।

সবার আগে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ দেখতে হবে। প্রয়োজনে ইউজিসির চেয়ারম্যানের সুপারিশ অনুযায়ী আগ্রহী শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা খাতে যেকোনো ব্যয় দেশ ও জাতির বড় বিনিয়োগ।

নিউজ ডেস্ক।।

দেশের অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দ্বিতীয় ধাপে ঢাকা মহানগর ও বিভাগীয় শহরের ৯২টি দৈনিক পত্রিকার অনলাইন পোর্টালসমূহকে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব নাসরিন পারভীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়। এর আগে গত ৩০ জুলাই ৩৪টি নিউজ পোর্টালকে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচিত করে তথ্য মন্ত্রণালয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

আগামী মাসেই নতুন আইফোন বাজারে আসতে পারে। প্রযুক্তি বিশ্বে এ নিয়ে শুরু হয়েছে হইচই। তবে নতুন আইফোন বাজারে আসার আগেই পুরোনো মডেলের একটি আইফোন বাজার মাতিয়ে রেখেছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান অমডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে অ্যাপলের আইফোন ১১ মডেলটি।

অমডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত যে পরিমাণ আইফোন ১১ বিক্রি হয়েছে, অন্য কোনো মডেলের ফোন তার ধারেকাছেও আসতে পারেনি। আইফোন ১১–এর পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ১০ ফোনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে অ্যাপলের আরও চারটি মডেলের আইফোন। এগুলো হচ্ছে আইফোন এসই (২০২০), আইফোন এক্সআর, আইফোন ১১ প্রো ম্যাক্স, ও আইফোন ১১ প্রো। এর মধ্যে তালিকার ৫ থেকে ৭ নম্বরে রয়েছে এসই, এক্সআর ও ১১ প্রো ম্যাক্স মডেলটি। তালিকার ১০ নম্বরে রয়েছে আইফোন ১১ প্রো।

স্মার্টফোন বিক্রির দিক থেকে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে চীনা প্রযুক্তি ব্র্যান্ড শাওমি। এ বছরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া শীর্ষ ১০ ফোনের মধ্যে চারটি মডেল রয়েছে শাওমির। এর মধ্যে তালিকার ৩ ও ৪ নম্বরে রয়েছে রেডমি নোট ৮ ও নোট ৮ প্রো। তালিকার ৮ ও ৯ নম্বরে রয়েছে রেডমি ৮এ ও রেডমি ৮।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ফোন এরেনার তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথমার্ধে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ইউনিট আইফোন ১১ মডেল বিক্রি হয়েছে। গত বছরের প্রথমার্ধেও অবশ্যই আইফোনের আরেকটি মডেল বিক্রির দিক থেকে শীর্ষে ছিল। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাসে আইফোন এক্সআর মডেলটি বিক্রি হয়েছে ২ কোটি ৬৯ লাখ ইউনিট। অর্থাৎ, এ বছর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও আইফোনের ১১ মডেলটি বেশি বিক্রি হয়েছে। আইফোন এক্সআরের তুলনায় আইফোন ১১ মডেলে অ্যাপলের সফলতা বেশি। এর অর্থ, কিছুটা সাশ্রয়ী দামে প্রিমিয়াম ফোন অ্যাপলের জন্য জাদুর কাঠি হিসেবে কাজ করেছে।

আইফোন ১১ যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছে, তালিকায় থাকা অন্য তিনটি সবচেয়ে বেশি বিক্রির ফোন মিলিয়েও তত হয়নি। আইফোন ১১–এর পরে স্মার্টফোন বিক্রির দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এ৫১ মডেলটি। গত ছয় মাসে ১ কোটি ১৪ লাখ ইউনিট এ৫১ মডেলের ফোনটি বিক্রি করেছে স্যামসাং।

এ বছর বাজার মাতিয়েছে শাওমির রেডমি ফোনগুলো। বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, শাওমির রেডমি নোট ৮ ফোনটি শীর্ষ বিক্রীত ১০ মোবাইল ফোনের তালিকার তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এটি ১ কোটি ১০ লাখ ইউনিটের বেশি বিক্রি হয়েছে। এরপরেই রয়েছে নোট ৮ প্রো। এটি ১ কোটি ২ লাখ ইউনিট বিক্রি হয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাজারে এসেছিল আইফোন ১১। এতে দামি আইফোন ১১ প্রো সিরিজের মতোই একই প্রসেসর আছে, তবে এর দাম তুলনামূলকভাবে কম।
চলতি বছরে আইফোন ১১ মডেলের মতো দুটি সাশ্রয়ী মডেলের আইফোন বাজারে আনতে পারে অ্যাপল। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার কিছুটা দেরিতে আসবে নতুন আইফোন। গত প্রান্তিকের ফল ঘোষণার সময় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে অ্যাপল।

এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছেই না। করোনা জীবনকে বিপন্ন করেছে। সীমান্তহীন এ আগ্রাসনের শিকার গোটা বিশ্ব। তবে এ মুহূর্তে একমাত্র শিক্ষা ছাড়া অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে আবার স্বাভাবিকতা ফিরতে শুরু করেছে।

তবে সংক্রমণের তীব্রতা কমছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। বৈরী প্রকৃতিকে মানিয়ে নেয়া মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। পৃথিবীর সর্বত্রই তাই আত্মরক্ষায় নিত্যনতুন কৌশলের উদ্ভব ঘটেছে। একদিকে প্রতিষেধক তৈরির প্রাণপণ প্রচেষ্টা; অন্যদিকে অসুখের এ সর্বনাশা বিস্তারকে থামিয়ে দিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি।

মাঝে মধ্যে বাদ সেধেছে মানুষেরই খামখেয়ালিপনা, ঔদাসীন্য বা কখনও স্বার্থপরতা। ঘরোয়া কিংবা বিশ্বপরিসর- সর্বত্রই তা দৃশ্যমান।

নীতিগতভাবে সাংঘর্ষিক মনে হলেও একথা হয়তো ঠিক যে, মহামারীকে সামাল দিতে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলো বেশি সুবিধা ভোগ করেছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বহুমত ও ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিসরকে লালন করে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও এ সরকারগুলোকে সতর্ক থাকতে হয়েছে। অনেক সময় বেকায়দায়ও পড়তে হয়েছে। উন্নত, সভ্য ও শৃঙ্খলাবদ্ধ সমাজেও এ অস্থিরতা দেখা গেছে। তবে সংকটের তীব্রতা আমাদের মতো দেশে বেশি দেখা গেছে। কারণ এখানে নাগরিক সচেতনতা, শৃঙ্খলাবোধ বা সামাজিক দায়বদ্ধতা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন চালু ছিল, তখন বন্ধ করার দাবি উঠেছিল জোরেশোরে। বন্ধ হলে বিপরীত চিত্র ভেসে উঠেছে অবলীলায়। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বলপ্রয়োগ হলে সমালোচনা, পক্ষান্তরে মানুষের ভাবলেশহীন চলাফেরাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের অন্ত নেই। এমন বৈপরীত্যে ভরা সমাজ বাস্তবতায় শুধু স্বাস্থ্যবিধি কেন, পরীক্ষা নিয়ে যে সিদ্ধান্তই হবে, তাকে ঘিরে সমালোচনা হবে- এটা ধরে নিয়েই সংকট থেকে উত্তরণের পথে এগিয়ে যেতে হবে।

এইচএসসি পরীক্ষা আমাদের শিক্ষাকাঠামোয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চশিক্ষার প্রবেশদ্বার। যদিও এটা স্বীকার্য যে, বিশেষায়িত বা সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ পরীক্ষার ফলাফলকে ভর্তির ক্ষেত্রে সেভাবে আমলে নেয় না। তবু এর একটা মনস্তাত্ত্বিক গুরুত্ব আছে। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য আছে। একাডেমিক অর্জনের মানদণ্ডেও এর নির্ণায়ক তাৎপর্য আছে। এও ঠিক যে, মানবসভ্যতা এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অনেক অস্বাভাবিক বাস্তবতাকে ‘অতি স্বাভাবিক’ হিসেবে মেনে নিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এমন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিল দেশ। বর্তমান অবস্থা যদিও সেসময় থেকে নানা বিবেচনায় আলাদা।

দেশের শিল্প-কারখানা, হাট-বাজার, অফিস-আদালত, যানবাহন, চাষবাস- প্রায় সবকিছুই ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। একমাত্র ব্যতিক্রম শিক্ষা। অনানুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম চললেও প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াগুলো এখনও বন্ধ। অনেক দেশে এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। চালুর চেষ্টাও হচ্ছে। বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় আবার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয়েছে। কারণ সহজেই বোধগম্য। গুরুত্বপূর্ণ এ সেবার উপভোক্তা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ফলে বিষয়টি স্পর্শকাতর। কোভিড-১৯-এর সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক অভিঘাত হল- শিশুমৃত্যুর হার নগণ্য। কিন্তু বাস্তবতা হল- সঙ্গত কারণে মানুষ এ ন্যূনতম ঝুঁকিটুকুও নিতে চায় না। প্রতিষ্ঠান চালু রাখার ব্যাপারে সেবাদানকারী ও গ্রহীতা- উভয়েরই স্বাধীনতা আছে।

নিজেকে প্রয়োজন হলে নিরাপদে সরিয়ে রাখারও সুযোগ আছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করে, দরকার পড়লে সেকশন খুলে প্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগ নেয়া যায়। কিন্তু কোনো পরীক্ষা, বিশেষ করে পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক বা শিক্ষার্থী- সবার স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে যায়। অর্থাৎ নিয়ম ও নির্ঘণ্ট মেনে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর যথাসময়ে পরীক্ষা হলে উপস্থিত হওয়ার কোনো বিকল্পই থাকে না। এখানেই প্রতিষ্ঠান খোলা ও পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য।

এবার প্রায় ১৩ লাখ পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। এরা যে সবাই সমগোত্রীয় বা একই সামাজিক শ্রেণিভুক্ত, তা নয়। গ্রাম-শহর, পাহাড়-সমতল, হাওর-বনাঞ্চল, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবার জীবযাত্রা বা জীবনমান একরকম নয়। পরীক্ষা কেন্দ্রে কেউ আসে নিজের গাড়িতে, কেউ গণপরিবহনে, কেউ নৌকায় বা কেউ হেঁটে। কেউ পরীক্ষাকালে হোস্টেলে বা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। সঙ্গে থাকে অভিভাবকদের বিশাল বহর। পরীক্ষায় অংশ নেয়ার পথে প্রাথমিক অন্তরায় গন্তব্যে পৌঁছানোর উপায়; যা করোনাকালে অনেক ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ অথবা দুঃসাধ্য হয়ে উঠতে পারে।

বৈশ্বিক এ মহামারী পরীক্ষার ব্যবস্থাপনাকেও বেশ শক্ত পরীক্ষার মুখে ঠেলে দিয়েছে। পরীক্ষায় নকল বন্ধ করতে জাতিকে অনেক খড়কুটো পোড়াতে হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে অনেক পদক্ষেপ নিয়ে পদ্ধতিগুলোর কার্যকারিতা যাচাই করতে হয়েছে। কখনও পরিদর্শক বিনিময়, কখনও পরীক্ষার্থী। এরপর সমন্বিত উদ্যোগ। মন্ত্রণালয়, বোর্ড, জেলা প্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ- সবাই একযোগে মাঠে নেমেছে। তবে পরীক্ষার্থী বিনিময়েই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সে অবস্থাকে ধরে রাখাই যখন সময়ের অগ্রাধিকার, তখনই জুড়ে এসে বসেছিল আরেক উপদ্রব। সমাজের দুর্বৃত্তায়িত অংশের আরেক অনাসৃষ্টি- প্রশ্নফাঁস। দেখা গেল এ নেক্সাসে জড়িত প্রায় সব উপকারভোগীর একটা বড় অংশ।

একসময় গণটোকাটুকি, পরে বাইরে থেকে লিখে আনা উত্তরপত্র ভেতরে সংযোজন এবং সবশেষে প্রশ্নফাঁসের প্রতিযোগিতা। এ অশুভ চক্রটির দৌরাত্ম্য এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, এরা রাষ্ট্রকেই রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে বসেছিল। ঘোষণা দিয়ে প্রশ্নফাঁস। প্রযুক্তির সাহায্যে এ অসুখ সর্বনাশা চেহারা পেয়েছিল। সুখের কথা, গেল দু’বছর সে প্রবণতাকে রুখে দেয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সেজন্য দরকার পড়েছে বোর্ড, প্রশাসনের কিছু বাড়তি প্রস্তুতি ও কার্যক্রম। পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টা আগে সব পরীক্ষার্থীর হলে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। এরপর বিশেষভাবে প্রস্তুত প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা। প্রশ্নপত্র হলে যাবে পরীক্ষা শুরুর ঠিক ১০ মিনিট আগে।

তাহলে ভেন্যুর সংখ্যা যদি বাড়ানো হয়- প্যাকেট খুলে প্রত্যেক ভেন্যুর জন্য প্রশ্ন আলাদা করে নিরাপদ গন্তব্যে তা সঠিক সময়ে পৌঁছানো সহজসাধ্য হতে পারে না। কেন্দ্র বা ভেন্যুর সংখ্যা বাড়ালে প্রশাসনিক জনবলের ওপরও একটা বাড়তি চাপ পড়ে। আর অনেক হাতবদলের ফাঁক গলে সমাজমনে অবদমিত অসুখ আবার যদি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পায়, তা শুধু করোনাকালের জন্য নয়, অনাগত ভবিষ্যতের জন্যও ভুল বার্তা বয়ে নিয়ে যাবে।

পরিবর্তিত বাস্তবতায় অভ্যন্তরীণ হল ব্যবস্থাপনায়ও নতুন নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। পরীক্ষার্থীদের সবাই কমবয়সী। এরা যখন হলের বাইরে অথবা পথিমধ্যে, তখন স্বাভাবিক প্রবৃত্তির তাড়নায় তারা দলবদ্ধই থাকবে। সামাজিক মনস্তত্ত্ব বলে, এরা হলের বাইরে মাস্ক পরবে না। আর হলের ভেতর যে মাস্ক তারা ব্যবহার করবে তা স্বাস্থ্যসম্মত বা অব্যবহৃত নাও হতে পারে। কোনো শিক্ষার্থীর শরীরে সংক্রমণ আছে কিনা তা শনাক্ত করাও কঠিন।

কারণ, এরা অধিকাংশই উপসর্গহীন হতে পারে। আবার জ্বর হলেই যে তা করোনা- এমন সিদ্ধান্ত কে দেবে? বড় কথা, পাবলিক পরীক্ষায় তাকে বসানো বা না বসানো দুটোই আইনগত বা নৈতিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। আর কোনো শিক্ষার্থী বা পরিদর্শকের দেহে যদি উপসর্গ সত্যিই প্রমাণিত হয়, তাহলে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সংস্পর্শে আসা সবাইকে আইসোলেশনে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য পরীক্ষার্থী বা পরিদর্শকের ক্ষেত্রে কী করণীয় হবে, তা গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা দরকার।

পাবলিক পরীক্ষা আইনে স্বাভাবিকভাবেই সংক্রামক ব্যক্তির ক্ষেত্রে বলা আছে- অসুস্থ ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পৃথক কক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নিতে হবে। পরীক্ষা শেষে তার ব্যবহৃত উত্তরপত্রকে উপযুক্ত ল্যাবে জীবাণুমুক্ত করে প্যাকেট করতে হবে। মহামারীকালে পরিস্থিতির গুরুত্ব ও আশঙ্কার জায়গাটা সংবেদনশীলতার সঙ্গে ভাবনার দাবি রাখে।

পরীক্ষার হলে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কেতাবি ছকে সম্ভব; কিন্তু বাস্তবে পরিদর্শকদের সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের সে দূরত্ব মেনে চলা কঠিন। প্রশ্নপত্র-উত্তরপত্র দেয়া-নেয়া, প্রবেশপত্র-নিবন্ধনের সঙ্গে মিলিয়ে স্বাক্ষর করা, অতিরিক্ত উত্তরপত্র দেয়া ও রেকর্ড রাখা, এমসিকিউ প্রশ্ন বা উত্তরপত্র দেয়া-নেয়া, এমনকি খাতা সেলাইয়ের মতো কাজটাও পরিদর্শকদেরই করতে হয়। এরপর উত্তরপত্র হতে ওএমআর অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ছিঁড়ে বান্ডিল করার কাজটিও তারাই করে থাকেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল- একটি কক্ষে চার ঘণ্টার বেশি সময় অনেককে একসঙ্গে থাকতে হবে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট সহায়ক। দেশের সব কেন্দ্রের অবকাঠামোগত সুবিধা একরকম নয়। প্রশস্ত, খোলামেলা বা স্বাস্থ্যসম্মত কক্ষসম্পন্ন পরিবেশ সব ক্ষেত্রে নাও পাওয়া যেতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে অসুখ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আরও বেশি।

শিক্ষার্থী যদি পরীক্ষার হল থেকে ভাইরাস বহন করে বাড়ি যায় এবং তা যদি তার বাড়িতে অবস্থানরত বয়স্ক সদস্যদের সংক্রমিত করে- সেটাও খুব দুর্ভাগ্যজনক হবে। আমরা যেসব দেশে স্কুল-কলেজ চালু হতে দেখেছি, সেখানে সবাই এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে; শুধু তাই নয়, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে নিখুঁত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার আয়োজনও সম্পন্ন আছে। থার্মাল স্ক্যানারে যদি কারও তাপমাত্রায় উপসর্গ ধরা পড়ে, তাহলে জরুরিভিত্তিতে তাকে হাসপাতালে আইসোলেট করা হচ্ছে, যা আমাদের বাস্তবতায় অলীক কল্পনা।

অনেকে বলছেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, পত্র বা পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে। পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ের বিভিন্ন পত্রে পৃথকভাবে বিভিন্নরকম ফল করে। গড় নম্বরের ভিত্তিতে তার গ্রেড নির্ধারিত হয়। একদিকে পত্রের সংখ্যা কমলে পড়াশোনার চাপ কমে না, অন্যদিকে এক পত্রে খারাপ হলে অন্য পত্রে পুষিয়ে নেয়ার সুযোগও সীমিত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ ভাবছেন রচনামূলক অংশ সংক্ষিপ্ত করে এমসিকিউর পরিসর বৃদ্ধি করার কথা। সেখানেও কৌশলগত ঝুঁকি আছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রমার্জন বা মানবিক সমর্থনের জায়গাটাও সেখানে ছোট হয়ে আসে। আসলে খণ্ডিত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হলে পরীক্ষার্থীরা বৈষম্যের মুখে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে চলে যায়।

উত্তরপত্র মূল্যায়নের বিষয়টাকেও হালকাভাবে দেখা উচিত নয়। শিক্ষকরা যেভাবে বোর্ডে জড়ো হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে বস্তায় ভরে উত্তরপত্র নিয়ে আসেন বা সমন্বয় সভায় যোগ দেন, তা স্বাস্থ্যবিধির অনুকূল নয়। এরপর যদি সেই উত্তরপত্রগুলো তাড়াহুড়ার মধ্যে সঠিকভাবে মূল্যায়ন না হয়, তাহলেও এ পরীক্ষার আনুষ্ঠানিক মূল্যই থাকবে, পরীক্ষা বলতে আমরা যা বোঝাতে চাই তার কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।

সংক্রমণ যে এখন দেশের আনাচে-কানাচে পৌঁছে গেছে, তা আমরা সবাই টের পাচ্ছি। স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কম। চিকিৎসা একদিকে ব্যয়বহুল, অন্যদিকে অপ্রতুল। টেস্ট এড়িয়ে আমরা একটা আরোপিত স্বস্তির জায়গা তৈরি করে চলেছি। বাস্তব অবস্থা যে খুব খারাপ তাও নয়। অন্তত নিুবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের ইমিউনিটি, জলবায়ু, বয়স কিংবা ভাইরাসের চরিত্র বদল- যে কারণেই হোক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক দেশের তুলনায় আমাদের কম। তবে কেউই বলতে পারে না ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত এ অবস্থা কতদিন থাকবে। অথচ আমরা স্বাস্থ্যবিধিকে মোটেই পাত্তা দেই না। এক ধরনের নিয়তিনির্ভরতা বা পরিণামহীনতা আমাদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলছে। আর এ অবস্থায়ও লোভ ও সুবিধাবাদী প্রবৃত্তি পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে ফেলছে। দায়িত্বশীলতা ও সংবেদনশীলতার অভাব সমাজের ছত্রে ছত্রে দৃশ্যমান। এমন পরিবেশে এইচএসসি পরীক্ষার মতো দেশের অন্যতম বৃহত্তম একটা রাষ্ট্রীয় আয়োজনে সামান্য কোনো বিচ্যুতি জনমনে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিতে পারে।

অমিত রায় চৌধুরী : সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ

[email protected]

সূত্রঃযুগান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমার দিন। বলতে পারেন সাপ্তাহিক ঈদের দিন। সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। ইসলামে এ দিনটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। পবিত্র কোরআনের নির্দেশ, জুমার আজান হলেই বেচাকেনা বন্ধ করে দাও, আল্লাহর স্মরণে চলো। নবী (সা.) এ দিনের বিপুল ফজিলত বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন আমলেরও নির্দেশ দিয়েছেন।যেভাবে এলো জুমাবার- প্রথম হিজরি সন। নবী (সা.) মক্কা ছেড়ে মদিনা গেলেন। নবী (সা.) এর মদিনায় পৌঁছার দিনটি ছিল ইয়াওমুল আরুবা (শুক্রবার)। সেদিন তিনি বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় গেলে জোহর নামাজের সময় হয়। সেখানে তিনি জোহর নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।

তবে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় আরও পরে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মদিনায় যাওয়ার পর এবং জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে একবার মদিনার আনসার সাহাবিরা আলোচনায় বসেন। তারা বললেন, ইহুদিদের জন্য সপ্তাহে একটি দিন নির্দিষ্ট রয়েছে, যে দিনে তারা সবাই একত্র হয়। নাসারারাও সপ্তাহে একদিন একত্র হয়। সুতরাং আমাদের জন্য সপ্তাহে একটি দিন নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন, যে দিনে আমরা সবাই সমবেত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব, নামাজ আদায় করব।

অতঃপর তারা আলোচনায় বললেন, শনিবার ইহুদিদের আর রোববার নাসারাদের জন্য নির্ধারিত। অবশেষে তারা ইয়াওমুল আরুবা শুক্রবারকে গ্রহণ করলেন এবং তারাই এদিনকে ‘জুমার দিন নামকরণ করলেন। (সীরাতুল মুস্তাফা ও দারসে তিরমিজি)

কোরআনে জুমার দিন- জুমার দিন ও জুমার নামাজের গুরুত্ব স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনও কোরআনে তুলে ধরেছেন। জুমার নামাজ আদায়ের ব্যাপারে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত চলো এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝো। অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ খোঁজ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা জুমআ: আয়াত ৯-১০)

হাদিসে জুমার দিন- হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করল, অতঃপর জুমা পড়তে এলো এবং মনোযোগ সহকারে নীরব থেকে খুতবাহ শুনলো, সে ব্যক্তির এই জুমা ও (আগামী) জুমআর মধ্যেকার এবং অতিরিক্ত আরও তিন দিনের (ছোট) পাপসমূহ মাফ করে দেয়া হলো। আর যে ব্যক্তি (খুৎবাহ্ চলাকালীন সময়ে) কাঁকর স্পর্শ করল, সে অনর্থক কাজ করল। (অর্থাৎ সে জুমার সওয়াব ধ্বংস করে দিল।) (মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ এর নামাজ অধ্যায়)

জুমার নামাজের বিধান- শুক্রবার জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। হজরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি এই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য (ফরজ)। (আবু দাউদ: ১০৬৭, মুসতাদরেকে হাকেম: ১০৬২, আস্-সুনানুল কাবীর: ৫৫৮৭)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তনও করা যাবে না। (তাফসিরে মাজহারি, খ-: ৯, পৃষ্ঠা: ২৮৩)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (স.) যে সমস্ত লোক জুমার নামাজ থেকে দূরে থাকে (পড়ে না) তাদের সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয়ই আমার ইচ্ছা হয় যে আমি কাউকে নামাজ পড়ানোর আদেশ করি, সে মানুষকে নামাজ পড়াক। অতঃপর যে সমস্ত লোক জুমার নামাজ পড়ে না, আমি তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিই। (মুসলিম: ৬৫২, মুসনাদে আহমাদ: ৩৮১৬, মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা: ৫৫৩৯, আসু-সুনানুল কুবরা: ৪৯৩৫)

নিষিদ্ধ কাজ- জুমার দিনে মূলত আজানের পর থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়টিতে কিছু ফরজ বিধান রয়েছে। এ সময়টিতে কিছু বিধান মেনে চলতে হবে। শরীয়ত বর্হিভুত কোনো কাজ করা যাবে না। যেমন আজান হয়ে যাওয়ার পরও ব্যবসা বা অনর্থক কাজে ব্যস্ত থাকা। উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। তাই খুতবা চলাকালে নিরর্থক কাজে লিপ্ত থাকা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিন খুতবা প্রদানের সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে বলো, চুপ করো তখন তুমি অনর্থক কথাই বললে। (সহিহ বোখারি: ১/১২৮)

বর্ণিত হাদিসের মাধ্যমে সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণ হয়, খুতবার সময় নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব এবং কথাবার্তা বলা হারাম। অনুরূপ খুতবার সময় সুন্নত-নফল নামাজ পড়াও বৈধ নয়। অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হবেন, তখন নামাজ পড়বে না, কথাও বলবে না। (মেশকাত: ৩/৪৩২)

ফিকাহ শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ফাতাওয়ায়ে শামীতে একটি মূলনীতি উল্লেখ হয়েছে, যেসব কর্ম নামাজের মধ্যে হারাম, তা খুতবা চলাকালীন সময়ও হারাম। যেমন: কথাবার্তা বলা, পানাহার করা ইত্যাদি। (ফাতাওয়ায়ে শামি: ৩/৩৫)

বিশেষ আমল- জুমার দিনের সীমাহীন ফজিলত রয়েছে। নবী (সা.) বিভিন্ন হাদিসে এসব ফজিলতের কথা তুলে ধরেছেন। বোখারি শরিফের হাদিসে রয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো পুরুষ যখন জুমার দিন গোসল করে, সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে বা ঘরে যে সুগন্ধি আছে তা ব্যবহার করে, তারপর (জুমার জন্য) বের হয় এবং (বসার জন্য) দুই জনকে আলাদা করে না, এরপর সাধ্যমত নামাজ পড়ে এবং ইমাম যখন কথা বলে তখন চুপ থাকে, তাহলে অন্য জুমা পর্যন্ত তার (গুনাহ) মাফ করা হয়।

হাদিসের ভিত্তিতে ফেকাহবিদরা এসব আমলকে নির্দিষ্ট করেছেন। যেমন, ১. জুমার দিন গোসল করা। যাদের ওপর জুমা ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সা) ওয়াজিব করেছেন। তবে আহনাফদের মাযহাব অনুযায়ী সুন্নত। ২. পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে সেদিন নখ ও চুলকাটা একটি ভালো কাজ। ৩. জুমার সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারি) ৪. মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহ) ৫. গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারি) ৬. উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমা আদায় করা। (ইবনে মাজাহ) ৭. মুসল্লিদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযি) ৮. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া। (আবু দাউদ) ৯. জুম্মার দিনও জুম্মার রাতে বেশি বেশি দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদ: ১০৪৭) ১০. এ দিন বেশি বেশি দোয়া করা। (বুখারি) ১১. মুসুল্লীদের ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারি) ১২. জুমার দিনসূরা কাহাফ পড়া। পাঠকারীর জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন।

দোয়া কবুলের সময়- জুমাবারের ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাকে তা দান করবেন। (সহীহ মুসলিম: ৮৫২, মুসনাদে আহমাদ: ৭১৫১, আস্-সুনানুল কুবরা: ১০২৩৪) জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কোনটা? এ সম্পর্কে ৪৫টা মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দোয়া কবুলের সময়। হজরত আনাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনের কাঙ্ক্ষিত সময়টা হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা: ৫৪৬০, তিরমিজি: ৪৮৯)

বিশেষ দরুদ শরিফের আমল- আনাস রা. থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করো। কারণ জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এইমাত্র আল্লাহতায়ালার বাণী নিয়ে উপস্থিত হলেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, পৃথিবীতে যখন কোনো মুসলমান আপনার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে আমি তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করি এবং আমার সব ফেরেশতা তার জন্য দশবার ইস্তেগফার করে। তারগিব: ৩/২৯৯

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার ওপর দরুদ পাঠ করা পুলসিরাত পার হওয়ার সময় আলো হবে। যে ব্যক্তি জুমার দিন ৮০ বার দরুদ পড়ে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।

অন্য রেওয়াতে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর নিজ স্থান থেকে ওঠার আগে ৮০ বার এই দরুদ শরিফ পাঠ করে, আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিইয়্যিল উম্মিইয়ি ওয়া আলা আলিহি ওয়া আস হাবিহি ওয়াসাল্লিমু তাসলিমা। তার ৮০ বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে যায় এবং ৮০ বছরের ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়। (আফজালুস সালাওয়াত: ২৬)। -আবু বিল্লাল

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

মহামারী করোনার কারণে দীর্ঘদিন দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এতে করে পিইসি-ইইসি-জেএসসি-জেডিসিসহ কয়েকটি পরীক্ষা বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ক্ষতি থেকে পুষিয়ে নিতে এবার বিকল্প পন্থা হিসেবে বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন নীতি নির্ধারকরা।জানা গেছে, এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নিজ নিজ বিদ্যালয়েই করা হবে। আর সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নির্ধারণ করবেন মূল্যায়ন পদ্ধতি। বিদ্যালয় কবে খুলবে তার ওপরই নির্ভর করবে বার্ষিক পরীক্ষা নেবেন কি-না, কিংবা নিলে কতটুকু সিলেবাসে নেবেন।

এর ভিত্তিতেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে শিক্ষার্থীরা। পিইসি ও ইইসি পরীক্ষা না থাকায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন তাদের বিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে ডিপিই'র মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা চলতি বছর নেয়া হবে না। তবে শিক্ষার্থীদের যতটুকু পড়ানো হয়েছে, তার ওপর মূল্যায়ন করতে প্রধান শিক্ষক উদ্যোগ নেবেন। পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করতে প্রয়োজনে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, এর মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেণি পাসের সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে শিক্ষার্থীদের। করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডিসেম্বরের আগে খোলা না গেলে প্রাথমিকে সব শিশুকে অটো পাস দিয়ে সার্টিফিকেট দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।

তিনি আরো বলেন, প্রাথমিকের নিজস্ব কোনো বোর্ড নেই। তাই সবকিছু শিক্ষা অধিদপ্তরকে করতে হয়। এ বছর অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। তাই বোর্ডগুলো কীভাবে মূল্যায়ন করবে, সে বিষয়ে আমরা পরামর্শ নেব। আগামী সপ্তাহে অধিদপ্তরে সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, গত ২৫ আগস্ট প্রাথমিক সমাপনী-ইবতেদায়ি পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাই না।

তিনি বলেন, সমাপনী-ইবতেদায়ি পরীক্ষা না হলেও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উন্নীত করা হবে। স্কুল খোলা সম্ভব হলে পঞ্চম শ্রেণি ছাড়াও অন্য ক্লাসের পরীক্ষাগুলোও নেয়া হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, পরীক্ষা বাতিল হলেও কোন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

বিদায়ী সপ্তাহে (৩১ আগস্ট-৩ সেপ্টেম্বর) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ০.৯২ শতাংশ বেড়েছে।

শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৩.০৬ পয়েন্ট। সপ্তাহ শেষে সেটি বেড়ে ১৩.১৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর পিই রেশিও ০.১২ পয়েন্ট বা ০.৯২ শতাংশ বেড়েছে।

magnifiermenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram