কী আছে জায়েদ-নিপুণের ভাগ্যে?
নিউজ ডেস্ক।।
এ যেন শেষ হইয়াও হইল না শেষ। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে জল ঘোলা কম হয়নি। পরস্পরের বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে নেমেছেন জায়েদ খান ও নিপুণ। আপিল বোর্ড, মন্ত্রণালয়, উকিল নোটিশসহ আইনের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দুজন। কী আছে তাদের ভাগ্যে এখনই বোঝা যাচ্ছে না। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে তাদের।
নির্বাচনের পর জায়েদ খানের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন নিপুণ। এরপর শিল্পী সমিতির নির্বাচনী গঠনতন্ত্র-বহির্ভূত ভোট কেনাবেচার অভিযোগ এনে জায়েদ খান ও চুন্নুর প্রার্থিতার ফল বাতিল চেয়ে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
নিপুণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের একটি আবেদন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় হয়ে পুনরায় আপিল বিভাগের কাছে দিক-নির্দেশনার জন্য আসে।
চিঠিতে বিজয়ী সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান ও কার্যকরী পরিষদের সদস্যপদে চুন্নুর প্রার্থিতার ফল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে আপিল বিভাগের চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এখন কী জায়েদ ও চুন্নুর প্রার্থিতার ফল বাতিল হয়ে যাবে?
এ বিষয়ে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদের সিদ্ধান্ত পেতে অপেক্ষা করতে হবে শনিবার বিকেল পর্যন্ত। বাদী ও বিবাদী উভয়কে নিয়ে বিকেলে বিএফডিসিতে বসবেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান।
জায়েদ খান ও আপিল বোর্ডের অন্য সদস্য মোহাম্মদ হোসেন জেমির দাবি আপিল বোর্ডের মেয়াদ শেষ ২৯ জানুয়ারি। এখন তাদের সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ নয়।
জায়েদ খান আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহানকে আইনি নোটিশও দিয়েছেন। একই নোটিশ পাঠিয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আপিল বোর্ডের সদস্য মোহাম্মদ হোসেনকেও।
গত বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ব্যারিস্টার মুজিবুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এ আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
জায়েদ খান বলেন, নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি বিকেল ৫টার পর থেকে আপিল বোর্ড মেয়াদ উত্তীর্ণ। একটি মেয়াদোত্তীর্ণ সংস্থা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে, যার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।
নোটিশে জায়েদ খান আরও উল্লেখ করেন, শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) নাকি একটি বৈঠক ডেকেছে, সেখানে আমাকেও উপস্থিত থাকতে হবে- এই মর্মে আমার পিয়নের কাছে চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে। আপিল বোর্ড ২৯ তারিখ বিকেল ৫টার পর আপত্তি নিষ্পত্তি করেছে এবং নিপুণ পরাজয় মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করে চলে গেছেন। এখানেই আপিল বোর্ডের কাজ শেষ।
এদিকে নোটিশ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। তিনি বলেন, আমার কাছে একটি আইনি নোটিশ এসেছে। এটা নির্বাচনকে নিয়েই। এখন আমাকে দেখে বুঝতে হবে সেখানে আসলে কী বলা হয়েছে।
অন্যদিকে এক বিবৃতিতে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনে আপিল বোর্ডের আরেক সদস্য মোহাম্মদ হোসেন জেমী। শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন।
বিবৃতিতে জেমী জানান, গত ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পরের দিন অর্থাৎ ২৯ জানুয়ারি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী পুনরায় ভোট গণনার জন্য একটি আপিল করেছিলেন এবং আপিল বোর্ড কর্তৃক তার সুষ্ঠু সমাধান দেওয়া হয়েছিল। এরপরে আর কোনো প্রার্থীর আপিল ছিল না। আপিল বোর্ডের এই কার্যক্রমের ছয় ঘণ্টা পরে আমি আমেরিকার উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেছি।
আপিল বোর্ডের এই সদস্য আরও বলেন, আমেরিকায় বসে আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি আপিল বোর্ডের কাছে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে দিক নির্দেশনা চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। আমি এই বিষয়ে কথা বলার জন্য আপিল বিভাগের চেয়ারম্যানকে একাধিক বার ফোন করেছি। কিন্তু তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
মোহাম্মদ হোসেন জেমী বলেন, আমি বিশ্বাস করি বিশ্বায়নের যুগে কারো সাথে যোগাযোগ করা কঠিন কাজ নয়। তাই আপিল বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছি যদি শিল্পী সমিতির কল্যাণের স্বার্থে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাহলে যেন আপিল বিভাগের তিন জন সদস্যকেই সম্পৃক্ত রাখা হয়। যদিও নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী আপিল বিভাগের কার্যক্রম বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়েছে। তাই আপিল বিভাগের কোনো সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ বলে মনে করি না।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আবার নতুন করে আপিল বিভাগকে সম্পৃক্ত করে নির্বাচনকে যেন প্রশ্নবিদ্ধ না করা হয় সে জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন নির্বাচনে আপিল বোর্ডের সদস্য মোহাম্মদ হোসেন জেমী।
উল্লেখ্য, জায়েদ খানের কাছে ১৩ ভোটে হেরে আপিল বোর্ডের কাছে আপিল করেছিলেন নিপুণ।