বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মের খোঁজে ইউজিসি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম খুঁজে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এর অংশ হিসাবে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
নির্দিষ্ট সময় দিয়ে তথ্য পাঠাতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নিয়ম না মানা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি খুঁজতে মাঠে কাজ করছে ইউজিসির একাধিক টিমও। বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৭টি। এর মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৯৮টি।
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের এই আইন না মানার প্রবণতা রয়েছে। আইন না মানলেও কোনো ব্যবস্থা হয় না—এমন ধারণায় আইনের প্রতি উদাসীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ফলে আইন না মানার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা না করেই সনদ পেয়ে যাচ্ছেন। ইউজিসির কাছে শিক্ষার্থীর ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য না থাকায় এসব সনদের সত্যতা যাচাই করা যাচ্ছে না বা সনদের যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সম্প্রতি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২৮ জন কর্মকর্তার সনদ যাচাইয়ের জন্য গলদগর্ম হতে হচ্ছে ইউজিসিকে।
এ কারণে এবার নতুন ভর্তিকৃতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর তথ্য ইউজিসিতে পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থী ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের কি না, এবং যথা নিয়মে কোর্স সম্পন্ন করছেন কি না, তার প্রমাণ ইউজিসির কাছে থাকে। এতে যে কোনো সনদ যাচাইয়ের জন্য অন্য কারো ওপর নির্ভর করতে হবে না বলে ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন।
কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসিতে একটি কোর্সের অনুমোদনের আবেদন জমা দিয়ে তা অনুমোদন হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। কিন্তু পরিদর্শন শেষে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সংশ্লিষ্ট কোর্সটি অনুমোদন যোগ্য নয়। ফলে অনুমোদন দেওয়া হয় না। এতে ঐ কোর্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা প্রতারিত হন। এছাড়া কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কোনো আবেদন জমা না দিয়েই ভুল তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। কিন্তু চার বছর কোর্স শেষে শিক্ষার্থীরা যখন জানতে পারেন কোর্সটি অনুমোদিত নয় তখন শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে ভোগেন, হন হয়রানির শিকার। এসব অনিয়ম বন্ধে তাই কঠোর হচ্ছে ইউজিসি।
এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি অনুমোদিত কোর্স/প্রোগ্রাম, অনুমোদিত আসন সংখ্যা এবং প্রতিটি প্রোগ্রামে বিদ্যমান শিক্ষার্থীর সংখ্যাসহ মোট শিক্ষার্থীর হালনাগাদ তথ্য চেয়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। ইউজিসির পরিচালক ওমর ফারুখ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইউজিসির কাছে যে সব তথ্য আগে থেকেই ছিল তার সঙ্গে সেগুলো মেলানো হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধভাবে কোর্স পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সনদ যাচাইয়ের সুবিধার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুনভর্তিসহ সব শিক্ষার্থীর বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী কোনোভাবেই অননুমোদিত ভবন বা শাখা ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। কিন্তু বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তথ্য অনুযায়ী অননুমোদিত ক্যাম্পাস/ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
এছাড়া অনুমোদন ছাড়া কোর্স পরিচালনা করছে জেড এইচ সিকদার ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউজিসির অনুমোদিত বিবিএ-এর নির্দিষ্ট কোর্স প্রোগ্রামের অন্তরালে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অবৈধভাবে বিবিএ-এর একাধিক প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে বলে ইউজিসি জানিয়েছে।সূত্রঃইত্তেফাক