বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা
সারা পৃথিবীজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। পরিবেশের মতো কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক সংবাদ এসেছে, কিন্তু সামগ্রিক ক্ষেত্রে করোনার প্রভাবটা নেতিবাচক। উন্নত, উন্নয়নশীল ও দরিদ্র সব দেশেই এর প্রভাব একই। শিক্ষাব্যবস্থা নাজুক।
ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে শিক্ষাব্যবস্থা। বৈশ্বিক পরিসরে ও বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা নিয়ে শিক্ষাবার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল, খুলনা এর প্রধান শিক্ষক সাবিনা খন্দকার। আর সাক্ষাৎকার টি গ্রহন করেছেন শিক্ষাবার্তা ডট কম পত্রিকার সাব এডিটর মুহাম্মদ জয়নুল আবেদিন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম : এস এস সি পরীক্ষা কোন মাসে হবে বলে আপনি মনে করেন?
সাবিনা খন্দকার : আসলে দেশে করোনা পরিস্থিতির যে অবস্থা বিরাজমান সেই পেক্ষাপটে এস এস সি পরীক্ষা কোন মাসে হবে বলাটা কঠিন তবে আমি আশাবাদী এপ্রিল- মে মাসে হতে পারে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম :নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারবে কি?
সাবিনা খন্দকার :এই মুহূর্তে সারা দেশে এসাইনমেন্ট মূল্যায়ন (অতি উত্তম,উত্তম,ভাল,অগ্রগতি প্রয়োজন) চলছে ।বছরের শুরুতে ভর্তি ও নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া যেতে পারে।কিন্তু শিক্ষার্থীদের আসা না আসা মুলতঃ নির্ভর করবে করনা প্রতিস্থিতির উপর।
শিক্ষাবার্তা ডট কম : বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে কি?
সাবিনা খন্দকার : আমাদের দেশে মাধ্যমিকের প্রায় শতকরা ৯৮ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় শিক্ষার্থীদের বেতন দ্বারা। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। অভিভাবকরা যথাযথ ভাবে বেতন দিতে অনিহা প্রকাশ করছে। যেহেতু প্রতিষ্ঠান তার প্রাপ্য বেতন আদায় করতে পারছে না সুতরাং বলায় যায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম : শিক্ষামন্ত্রী বেতন দেয়ার কথা বললেও অভিভাবকদের অনিহা কেন বা এ বিষয়ে আপনার মতামত দিন।
সাবিনা খন্দকার : অভিভাবকদের অনীহা কারণ শিক্ষকদের বেতন কম দেওয়া দেশীয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার চারটিতে কোন কারণে কেউ ছাড় দেওয়া বা পাওয়ার কথা ভাবে না কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে ভাবে। যেমনঃ আমার তিনটি বাচ্চা আপনার কাছে পড়ে সুতরাং ফ্রী বা হাফ ফ্রী, টানাটানি যাচ্ছে বেতন মাফ করেন, ফরম ফিলাপের টাকা যোগাড় হয়নি আরও কত কি,,,,। কই চালের দোকানে,মুদি দোকানে, কাপড়ের দোকানে,বাড়িভাড়া বা ডাক্তারের কাছে গিয়ে তো বলার বা কম দিতে চাওয়ার সুযোগ নেই। সর্বোপরি শিক্ষকগণ মানবিক তাই সকলে সুযোগ নেয়। আমার বিশ্বাস যতকাল জাতি শিক্ষায় সুযোগ নেওয়ার এই সংস্কৃতি থেকে বের না হতে পারবে ততদিন এ জাতির উন্নতি হবে না।
শিক্ষাবার্তা ডট কম :এসাইনমেন্ট কার্যক্রম কতটুকু ফলপ্রসূ হবে বলে আপনি মনে করেন?
সাবিনা খন্দকার :সরকার এসাইনমেন্ট পদ্ধতি চালু করেছে এটা ভালো উদ্দোগ কিন্তু আমরা লক্ষ করছি সোসাল মিডিয়ায় এসাইনমেন্ট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কিছু অসাধু শিক্ষক এসাইনমেন্ট সোসাল মিডিয়ায় হুবহু দিয়ে দিছে। এটা সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। এসাইনমেন্ট বিষয়টি শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবক গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করলে ফলপ্রসূ হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম :শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক সারা দেশে এসাইনমেন্ট কার্যক্রম চলছে কিনা?
সাবিনা খন্দকার : জী সারাদেশেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ চলছে কারণ না চলার সুযোগ নেই।
শিক্ষাবার্তা ডট কম : সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কতটুকু ফলপ্রসূ হবে বলে আপনি মনে করেন?
সাবিনা খন্দকার : প্রাথমিক এ ফলপ্রসূ হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম : আপনার বিদ্যালয়ের কত ভাগ শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস দেখে থাকে?
সাবিনা খন্দকার : আমার বিদ্যালয় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্গত। এখানে ৭০% থেকে ৭৫% শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহন করে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম : আপনার স্কুল নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি?
সাবিনা খন্দকার : করোনা পরিস্থিতি থেকে আল্লাহ আমাদের মুক্তি দিন। শিক্ষাঙ্গন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হোক। কেউ যেন এ পরিস্থিতিতে কর্মবিমুখ না হয়ে পড়ে। আবার কর্মচঞ্চল হয়ে উঠুক সবাই। প্রতি বছর যেন অসংখ্য মানবিক শিশু এই প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ব দরবারে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম : আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সাবিনা খন্দকার : আপনাকেও ধন্যবাদ।