নিউজ ডেস্ক ।।
করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশের সব শিক্ষার্থী ক্ষতির সম্মুখীন হলেও সবচেয়ে বেশি অনিশ্চতায় পড়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা। গত ১ এপ্রিলে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর এই ছাত্র-ছাত্রীরা জানে না কবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সংক্রমণ বন্ধ না হওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকেও পরীক্ষা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। সন্তানদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরাও। দিনাজপুর সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী শামসুন নাহার কলি। গত ১ এপ্রিল তার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর সে তার শিক্ষাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। কারণ, এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের এক মাস পর থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। দীর্ঘ একটি সময় ধরে চলে এই পরীক্ষা। এর জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয় শিক্ষার্থীদের। ভর্তি পরীক্ষা শেষে নভেম্বরের মধ্যে এই ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মান প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু এবার জুলাই মাসেও করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষাই নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ সময়ে খুব শিগগির এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করারও আভাস মিলছে না। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, করোনা স্বাভাবিক হওয়ার আগে পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে এ পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত পড়াশোনা করতে বলেন তিনি। করোনা মহামারীর এ সময়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থীদের বাসায় বসে প্রিপারেশন নিতে হবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা দেবে তারা।
এ পরিস্থিতিতে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কারণ এই পরীক্ষার্থীরাই দেশের আগামীর ভবিষ্যৎ। তাই তাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া যাবে না। সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হলে তাদের পরীক্ষার আয়োজন করা যেতে পারে। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ কবে শেষ হবে তার ওপর নির্ভর করছে এইচএসসি পরীক্ষা। কারণ, সব প্রস্তুতি নেওয়া থাকলেও করোনার কারণেই শুরু করা যাচ্ছে না এ পরীক্ষা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর দুই সপ্তাহের নোটিস দিয়ে এ পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।
স্বল্প সময়ে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও স্বল্প সময়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করার কথা জানিয়েছেন তিনি। এইচএসসি পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে এ ব্যাপারে কোনো খবর না থাকলেও কোচিং ব্যবসায়ীদের কোচিং বাণিজ্য থেমে নেই। ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চমাধ্যমিকে পরীক্ষায় বসার অনেক আগেই তাদের নিয়ে ব্যবসায় মেতে উঠেছে তারা। ভর্তির জন্য প্রস্তুতি কোচিং নামে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
জুম অ্যাপসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইনেই এসব কোচিং চলছে বলে জানা গেছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, কোচিংবাণিজ্য অনলাইনে হচ্ছে, এটি খুবই দুঃখজনক। কোচিংবাণিজ্যকে নিষিদ্ধ করে শিক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কোচিং কার্যক্রম চালু রেখেছে ইউসিসি, উদ্ভাস-উন্মেষ, মেডিকো, ফোকাস, রেটিনাসহ বেশ কিছু কোচিং সেন্টার। ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করা এ কোচিং সেন্টারগুলো করোনাকালীন সময়ে চালু রেখেছে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়াও।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা না দিয়েই যদি ছাত্র-ছাত্রীরা কোচিং শুরু করে তবে এটি হবে দুঃজনক। এসব কোচিং ব্যবসা নিষিদ্ধ করে শিক্ষা আইন করতে হবে।সুত্র বাংলাদেশ প্রতিদিন
Leave a Reply