বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির মহেন্দ্রক্ষণ দ্রুত প্রণয়নের অনুরোধ
।। মোঃ সরোয়ার।।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির দাবিটি দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার। তাদের প্রয়োজনের দিক থেকে এই দাবিটি খুবই মানবিক ও যৌক্তিক। এনটিআরসির মাধ্যমে সুপারিশকৃত শিক্ষকদের ১ম, ২য় ও ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ থাকলেও চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে সেই সুযোগ হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক শিক্ষক প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের আশায় ১ম,২য় ও ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৫০০থেকে ১০০০ কিলোমিটার দূরে চাকরি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। শুধু নিয়োগ নিয়েছেন পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে পারবে এই আশায়। ১২৫০০ টাকা বেতনে চাকরি করা যে কতটাই কষ্টের যে করে সেই বোঝে । তাই সরকার প্রধানের কাছে অনুরোধ দ্রুত বদলির ব্যবস্থা চালু করা। ইতিমধ্যে বদলির উদ্যোগ নিলেও প্রথম ও দ্বিতীয় কর্মশালা হওয়ার পর বদলির কাজটি থেমে থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন হাজারোও শিক্ষক প্রতিনিয়ত অনেক শিক্ষক মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। নারী শিক্ষকদের বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে । তাই বদলির প্রজ্ঞাপনটি দ্রুত কার্যকর করে শিক্ষকদের সুস্থ মস্তিষ্কে পাঠদানের ব্যবস্থা করবেন এটাই আশা।
বদলি প্রণয়ন যেমন হতে পারে:-
পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে সমপদ সমস্কেলে বদলি চালু করা যেতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। সমপদ সমস্কেলে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে নিবন্ধনের মেধাক্রম অনুসারে মাদরাসায় থেকে স্কুল/কলেজ এবং কলেজ থেকে মাদরাসায় যাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ বদলির প্রক্রিয়াটি একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে চালু করা যেতে পারে আর এটিকে ভালো হিসেবে সমর্থন করেছেন প্রায় সব বদলি প্রত্যাশী নিবন্ধনধারী এমপিওভুক্ত শিক্ষক।
বদলি ব্যবস্থাটি বিশ্বস্বীকৃত। তবে সেটি একই প্রতিষ্ঠানে/সংস্থায়/ব্যাংকে/এনজিওতে কর্মরত বিভিন্ন দপ্তর ও শাখার কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু প্রত্যেকটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর থেকে নতুন পদ্ধতিতে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে শূন্যপদ সাপেক্ষে সমপদ/সমস্কেলে শিক্ষকদের বদলি করা যেতে পারে।
যথাযথ নীতিমালা প্রবর্তন করে একটি সফটওয়্যার এর মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সমপদে/ সমস্কেলে বদলি বাস্তবায়ন করা সম্ভব । অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘদিনেও হয়নি সে নীতিমালা প্রণয়ন ও কাঙ্ক্ষিত বদলির ব্যবস্থা। তাই তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জন্মের শুরু থেকে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের আবেদন করার সুযোগ পেয়ে আসছিলেন এবং যোগ্য বিবেচিত হলে নিয়োগ পেয়ে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন ও এমপিও স্থানান্তরের সুযোগ পেয়ে আসছিলেন। এমনকি এক অধিদপ্তরের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অন্য অধিদপ্তরের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নিয়োগ নিয়ে, এমপিও ট্রান্সফার নিয়ে যাওয়ার সুযোগ যোগ্যদের ছিলো। শিক্ষকদের বদলি সুবিধা দিতে প্রয়োজনে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সে ব্যবস্থাটিকে আরো মোডিফাই করা যেতে পারতো। কিন্তু চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সেই সুযোগ রহিত করা হয়েছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। কারণ, এনটিআরসি এর মাধ্যমে প্রথম গণবিজ্ঞপ্তি ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা কোনো সুযোগ পাননি তাই তারা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ও কষ্টের দিন যাপন করছেন।
প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার ন্যূনতম সুযোগটুকুও বর্তমানে নেই। এতে আরো বেড়ে গেছে শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট। এমতাবস্থায় শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থেই দূর-দূরান্তে অবস্থিত সব ধরনের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (কারিগরিসহ সাধারণ স্কুল, কলেজ, মাদরাসা) এর এমপিওভুক্ত ‘অভিজ্ঞ’ শিক্ষকদের দুর্বিষহ জীবন থেকে মুক্ত হবার সুযোগ দিয়ে তাদের মধ্যে দ্রুত বদলি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি।
যেহেতু বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়োগ এনটিআরসিএ কর্তৃক চূড়ান্ত করা হয় এবং যেহেতু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি, সরকারি বেতনভাতা প্রদান, এমপিও ট্রান্সফার, টাইমস্কেল প্রদান, পদোন্নতি প্রদান, অবসর সুবিধা প্রদান, কল্যাণ ভাতা প্রদান ইত্যাদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মে হয়ে থাকে এবং যেহেতু এ সব নিয়ম প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি তথা কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারী মানতে বাধ্য থাকেন; সেহেতু এখন শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থাটি কোনো সুষ্ঠু নীতিমালার ভিত্তিতে করা হলে তা সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
১.বদলিকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর পছন্দক্রম অনুসরণ করে স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার এর মাধ্যমে বদলি করা যেতে পারে।
২. একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্বেচ্ছায় বদলি কার্যকর করে পরিবর্তিত শূন্য পদ নির্ধারণ বা পুনর্নির্ধারণ করে নতুন নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা যেতে পারে।
এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য ২০২১ এর ১২.২ নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কাঙ্ক্ষিত বদলি দ্রুত কার্যকর করা আবশ্যক।
লেখক: প্রভাষক (ইংরেজী), বরগুনা।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/১৭/০৩/২০২৪