নিয়োগ পরীক্ষার আগেই টাকা নিলেন সভাপতি-প্রধান শিক্ষক!
নওগাঁঃ দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শূন্যপদে ৫ জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের পাঁয়তারা করেছিলেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। শেষমেশ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়। একপর্যায়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে ওইসব চাকরিপ্রত্যাশীর চাকরি করার স্বপ্ন। ঘটনাটি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সাগরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।
অভিযোগ উঠেছে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করেছিলেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন। প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের বিরুদ্ধেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিদ্যালয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সাগরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শূন্য পদে একজন করে নিরাপত্তাকর্মী, আয়া, নৈশ্যপ্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের জন্য গত বছর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেই মোতাবেক ৫টি পদের নিয়োগ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। কিন্তু ওই নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার আগেই বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক যোগসাজশ করে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করছিল। এমনকি তারা নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রায় ৭০ লাখ টাকা ও স্কুলের নামে ১০ শতক জমিও লিখে নেয়।
বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সঞ্জয় সরকার, খয়বুল ও মাহবুব মোরশেদ গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অনুলিপি বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। ফলে চাকরিপ্রত্যাশীরা চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।
ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, গোপনে আগে থেকে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ৪র্থ শ্রেণির ৫টি পদে ৭ জন চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এ ছাড়া আয়া পদের জন্য এক চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে স্কুলের নামে ১০ শতক জমি লিখে নিয়েছে, পাশাপাশি নগদ টাকাও নিয়েছে। নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগের জন্য একজনের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক ১২ লাখ টাকা নিয়েছে।
অভিযোগকারীদের দাবি, সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়াসহ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ করবেন।
টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক মোবাইল ফোনে কালবেলাকে বলেন, কে কী নিল, ওই সম্পর্কে বলার কিছু নেই। আপনি ১২ লাখ টাকা নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ রকম কোনো বিষয় নেই। এ ছাড়া কোনো চাকরিপ্রত্যাশী স্কুলের নামে জমি লিখে দিয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলো আপনার জানা লাগবে না, জানতে হলে অফিসে আসেন। তবে তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনগণমাধ্যমকে বলেন, আপনাকে কী বলা লাগবে? আপনার কাছে কেউ অভিযোগ করেছেন?
টাকা নিয়েছেন কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, এত গল্প নেই, আপনার কাছে কেউ অভিযোগ দিয়ে থাকলে তাকে নিয়ে আসেন।
টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বদলগাছী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করা হবে। সেই অনুযায়ী অবশ্যই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৩/০৩/২০২৪