পাঠদান করান না শিক্ষকরা, দুই সরকারি প্রাথমিকে ঝুলছে তালা!
সুনামগঞ্জঃ জেলার জামালগঞ্জে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান করান না প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকরা। ক্লাস না নিয়েই প্রতিমাসে বেতন তুলে নিচ্ছেন শিক্ষকরা। বুধবার সকালে উপজেলার একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত ক্লাস করার নির্দেশনা থাকলেও আইনের কোনো তোয়াক্কা করছেন না নাজিমনগর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় ও হটামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের নাজিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেলা ১২ টায় বাজলেও স্কুল আঙ্গিনা শুনশান নীরবতা। বিদ্যালয়ের প্রতিটি রুমে ঝুলছে তালা। উত্তোলন করা হয়নি জাতীয় পতাকা।
স্কুলের পাশের বাড়িতে থাকা মো. নজরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবককে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, বছরের পর এভাবে তালা ঝুলে থাকে। সপ্তাহ কিংবা পনেরো দিনেও একবারের জন্যও আসেন না কোন শিক্ষক।
আরেক অভিভাবক শফিকুল ইসলাম জানান, বেলা ১২ টা বাজে এখনো কোনো শিক্ষক আসেনি। এভাবে বছরের পর বছর বন্ধ থাকে। হঠাৎ মাঝেমধ্যে তাদের ইচ্ছে হলে আসেন।
তফুরা বেগম নামে এক শিক্ষার্থীর মা ক্ষোভের সুরে জানান, ক্লাস ফাইভের একটা ছাত্র নিজের নাম বানান করতে পারে না, ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত গণনা করতে পারে না। আমরা এই স্কুলের শিক্ষকদের পরিবর্তন চাই। প্রধান শিক্ষক শংকর স্যার মাঝেমধ্যে আসেন। কিন্তু সহকারী শিক্ষক দোলন ম্যাডাম সারা বছরই অনুপস্থিত থাকেন।
হটামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১১ টায় গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকদের জন্য অপেক্ষা করছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক কখন আসবেন সেটাও তারা জানে না। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন না ওই স্কুলের দপ্তরী জয়কুল ইসলাম। স্কুলের তালা কে খুলে দিয়েছে জিজ্ঞেস করলে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা জানান, হটামারা গ্রামের মিজান নামে একটি ১০ বছর বয়সি ছেলে প্রতিদিন তালা খুলে দেয়। পরে আবার দুপুরে এসে ছুটি দিয়ে তালা লাগিয়ে চলে যায়।
ওই গ্রামেরই যুবক সিলেট সরকারী কলেজের ছাত্র আনিসুর রহমান জানান, নামে মাত্র স্কুল চলছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নাই। মাসের পর মাস চলে যায় কোনো শিক্ষক স্কুলে আসেন না। একজন প্রধান শিক্ষক ও তোফায়েল নামে একজন সহকারী শিক্ষকসহ একজন দপ্তরি আছেন। ৩ জনই অনিয়মিত স্কুলে আসেন। তাদের অনিয়মিত স্কুলের আসার কারনেই ওয়ান থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী "অ, আ", ভালো ভাবে পড়তে পারে না। এভাবে চললে আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে স্কুলই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে নাজিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর পুরকায়স্থকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি ছুটি নিয়েছি। তাই স্কুলে উপস্থিত হতে পারিনি। তবে আমি নিয়মিত স্কুলে যাই।
হটামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রঞ্জু পুরকায়স্থ জানান, আমি স্কুলে নিয়মিত যাই। তবে ওইদিন মোটরসাইকেল নষ্ট হয়ে যাওয়াতে যেতে পারিনি।
জামালগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম রাব্বি জাহান বলেন, নাজিমনগর ও হটামারা স্কুল আজ বন্ধ ছিলো আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। কেউ কোনো ছুটি নেয়নি। এব্যাপারে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহন লাল দাস বলেন, সরকারের নির্দেশিত ছুটির বাহিরে কোন ছুটি বিদ্যালয় দিতে পারে না, অবশ্যই ছুটির আগে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি জানাতে হয়, তবে যেহেতু জানতে পারলাম জামালগঞ্জের দুইটি বিদ্যালয় এভাবে বন্ধ রেখে শিক্ষকরা চলে যান, তাই আমরা বিষয়টি তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করব।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/০৩/২০২৪