স্কুল ও কলেজজীবনের স্মৃতিঘেরা জায়গাগুলোয় ঘুরছেন রাষ্ট্রপতি
পাবনাঃ ষাটের দশক থেকে শুরু। স্কুল ও কলেজজীবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আড্ডা দিতেন শহরের লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডার, প্রেসক্লাব, পাবলিক লাইব্রেরি, ডায়াবেটিক সমিতিসহ কিছু প্রতিষ্ঠানে। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় মাততেন। প্রিয় খাবারের তালিকায় ছিল ছানার জিলাপি, চপ-সিঙাড়া ও বুন্দিয়া। পাবনায় তিন দিনের সফরে এসে রাষ্ট্রপতি এবার স্মৃতিবিজড়িত এসব স্থানেই ঘুরছেন। প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। প্রিয় খাবারের স্বাদ নিচ্ছেন।
রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে তিনি পাবনায় পৌঁছেই কিছুক্ষণ বিশ্রাম শেষেই বের হন। সন্ধ্যায় তিনি পাবনা ডায়াবেটিক সমিতিতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় বসেন। এরপর পায়ে হেঁটে প্রিয় শহর ঘুরে বেড়ান। এ সময় তিনি লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডার, প্যারাডাইস সুইটস, পাবনা প্রেসক্লাবে এসে আবার আড্ডায় বসেন। সেখানে তিনি পুরোনো বন্ধু ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করেন।
রাষ্ট্রপতি পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য। তিনি সেখানে বলেন, ‘পাবনার সাংবাদিকতার সঙ্গে আমার আজীবন ও অন্তরের সম্পর্ক। আমি প্রাণ দিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠানকে লালন করি, তার মধ্যে পাবনা প্রেসক্লাব অন্যতম। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে।’
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, ‘আমি আমার সাধ্যমতো নিজ জেলার উন্নয়নে কাজ করব। আমি ইছামতী নদীর সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে দিয়েছি, যাতে একটি দৃষ্টিনন্দন শহর হয়। পাবনা মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যার হাসপাতাল প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহায়তায় পাবনার উন্নয়নে আমি কাজ করেই যাব।’
রাষ্ট্রপতির এ আড্ডায় অংশ নেন পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, রাষ্ট্রপতির বন্ধু প্রসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম, সাবেক সভাপতি শিবজিত নাগ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম, পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম প্রমুখ।
আড্ডা পর্ব শেষে রাষ্ট্রপতি সার্কিট হাউসে রাত যাপন করেন। আজ বুধবার সকালে তিনি পাবনার কেন্দ্রীয় আরিফপুর কবরস্থানে মা–বাবার কবর জিয়ারত করেন। সেখান থেকে শহরের দিলালপুর মহল্লার শ্বশুরবাড়িতে যাবেন। এরপর সেখান থেকে স্মৃতিবিজড়িত আরও কিছু স্থানে ঘুরে বেড়াবেন।
লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক ভোলানাথ ঘোষ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ছোটবেলা থেকেই আমাদের দোকানে আড্ডা দিতেন। দোকানের সকালের লুচি-সবজি নাশতা এবং রাজভোগ ও ছানার জিলাপি তাঁর খুব পছন্দ। পাবনায় এলেই তিনি এসব খাবারের স্বাদ নেন।’
প্যারাডাইস সুইটসের মালিক আবু ইসহাক শামীম বলেন, ‘রাজনৈতিক ও ছাত্রজীবনে তিনি আমাদের দোকানে বসতেন, আড্ডা দিতেন। আমাদের দোকানের ঝুরি চানাচুর ও বুন্দিয়া ছিল তাঁর খুব পছন্দের। এবারও তিনি দোকানে এসে অল্প করে ঝুরি চানাচুর ও বুন্দিয়া খেয়েছেন।’
পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান বলেন, ‘দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি আমাদের পাবনা প্রেসক্লাবের ২২তম সদস্য। তিনি ১৯৭৮ সালে সাংবাদিকতা করতেন। প্রেসক্লাবের ছাদে আড্ডা দিতেন, চিড়া–মুড়ি খেতেন। এবারও তিনি চিড়া–মুড়ি খেয়েছেন। বহু স্মৃতিচারণা করেছেন।’
রাষ্ট্রপতির ছোটবেলার বন্ধু ও প্রবীণ শিক্ষক শিবজিত নাগ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমাদের একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। পড়ালেখা, রাজনীতি, জেলখাটা—সব একসঙ্গেই হয়েছে। এই শহরে প্রতিটি ধূলিকনার সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সম্পর্ক রয়েছে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সাহাবুদ্দিন কারও কথা ভোলেননি। এখনো নিয়মিত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। সবার খোঁজখবর নেন। এবারের সফরেও তিনি সেটাই করছেন।’
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তিন দিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার দুপুরে হেলিকপ্টারে পাবনায় আসেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।