৫৪ বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকাঃ দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ শুক্রবার। স্বাধীনতার সমবয়সী বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুক্তবুদ্ধির চর্চা, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ এবং সাংস্কৃতিক জাগরণে ভূমিকার জন্য পরিচিতি পেয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষা ও আন্তর্জাতিকমানের গবেষণায় বড় সাফল্য পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত বছরেও ৪৫৯টি গবেষণা নিবন্ধ আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
বিশ্বসেরা ২ শতাংশ গবেষকের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন জাবির ৬ শিক্ষক ও ১ শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ র্যাঙ্কিংয়ে প্রথমবারের মতো নামও এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির।
নৈসর্গিক পরিবেশের জন্য পরিচিত ৬৯৭ দশমিক ৫৬ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি। চারটি বিভাগে ১৫০ শিক্ষার্থী নিয়ে চালু হওয়া জাবিতে এখন ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩৪টি বিভাগ এবং চারটি ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ হাজার ৫৩৩।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আজ বিভিন্ন আয়োজন করেছে প্রশাসন। সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে আনন্দ শোভাযাত্রা হবে। এ ছাড়া স্মৃতিচারণ, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্র প্রদর্শনী, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের আয়োজন রয়েছে।
দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও জাবিতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের আবাসনের সমস্যা ছিল। তবে ২০১৮ সালে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দে সেই সংকট এখন অনেকটাই কেটেছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি হলে আসন রয়েছে ১৪ হাজার ৩৬২টি। এ ছাড়া লেকচার থিয়েটার, পরীক্ষার হল, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, নতুন লাইব্রেরি ভবনসহ অনেক স্থাপনা নির্মাণ চলছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য পেলেও আন্তর্জাতিক গবেষণায় বেশ পিছিয়ে ছিল জাবি। আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনডেক্স ওয়েবসাইট স্কোপাসের তথ্যমতে, ১৯৭৫ থেকে ’৭৯ সাল পর্যন্ত জাবি থেকে আন্তর্জাতিক জার্নালে কোনো গবেষণা নিবন্ধই প্রকাশিত হয়নি। ১৯৭৪ এবং ১৯৮০-৯১ সাল পর্যন্ত নিবন্ধের সংখ্যা ছিল ১০টির নিচে। তবে ২০০৮ সালের পর থেকে নিবন্ধের সংখ্যা ১০০-এর ওপর রয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ৭২৬টি এবং ২০২২ সালে ৬৯৮টি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণায় উন্নতির কারণে ২০২৩ সালে ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান করে নেয় জাবি। তবে গবেষণা খাতে এখনও বরাদ্দ অপ্রতুল। এ কারণে গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
পুতুলনাচের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণার জন্য দেশের প্রথম পুতুল নাট্য গবেষণা কেন্দ্র এখানেই খোলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে কীটপতঙ্গের জিনের বারকোডিং করা হচ্ছে, যা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম।
উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত জাবি অনেক এগিয়েছে। আমরা প্রথমবারের মতো বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রবেশ করেছি। বিশ্বের ২ শতাংশ গবেষকের তালিকায়ও আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাম এসেছে। গবেষণাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/০১/২০২৪