মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থেকে ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র
ঢাকাঃ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। এর আগে ১৯৭৩ সালের ৭ মে ডুমুরিয়ার সাহস নোয়াকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। তবে ২০০৫ সালের ১১ মার্চ চাকরি থেকে অবসর নেন।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
টানা ৩৮ বছরের বৈচিত্র্যময় শিক্ষকতা জীবনের সঙ্গে তার যোগ হয়েছে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা। শুরুতে প্রধান শিক্ষক, পরে সেখান থেকে ইউপি চেয়ারম্যান, এরপর সংসদ সদস্য থেকে প্রতিমন্ত্রী, তারপর পূর্ণমন্ত্রী। শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় নারায়ণ চন্দ্র চন্দ প্রথমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও পরে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দের জন্ম ১৯৪৫ সালের ১২ মার্চ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও এম এ পাস করেন। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টানা ৬ বার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯৬ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী মো. সালাহউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চার দলীয় প্রার্থীর কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। কিছু দিন পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যু হলে তিনি এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২২ আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। গতকাল ১০ জানুয়ারি শপথ নেন নতুন সংসদ সদস্যরা। শপথ নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাদের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করেন।
সংসদ নেতা হওয়ার পর বুধবার বিকেলে সংসদ সদস্যদের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি শেখ হাসিনাকে নতুন সরকার গঠনের আহ্বান জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভা গঠন করেন এবং বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের তালিকা নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী গঠিত মন্ত্রিসভায় সম্মতি জ্ঞাপন করেন। এরপর মন্ত্রিসভার ওই তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বুধবার রাতে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে তালিকায় থাকা ২৫ মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেন। ওই তালিকার একটি কপি তিনি সাংবাদিকদের কাছে হস্তান্তর করেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ৩৬ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়েছেন মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে।
নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে গোলযোগের কারণে একটি আসনের ফল স্থগিত রাখা হয়েছে। বাকি ২৯৮টি আসনের ফলাফল প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ২২২ আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। বাকি ৬৫ আসনের মধ্যে ৬২টিতে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আর জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি করে আসন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/০১/২০২৪