নোবেল প্রাইজ টিচার সামিট মঞ্চে বাংলাদেশী শিক্ষক
ঢাকাঃ ‘নোবল প্রাইজ টিচার সামিট-২৩’ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমাদৃত একটি শিক্ষক মিলন মেলার মঞ্চ। আর সেই মঞ্চে এ বছর বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন মোহাম্মদ মোফাজ্জল সারওয়ার, যিনি বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে তিনি এ সামিটে অংশগ্রহণের জন্য সুইডেন সরকারের বৃত্তি পান। নোবেল প্রাইজ টিচার সামিট ১ম আয়োজিত হয় ২০১৭ সালে সুইডেনের স্টকহোমে।
এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের ২৫-২৯ সেপ্টেম্বর ৭মবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সামিটটি। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সক্রিয় অংশগ্রহণই জ্ঞান অর্জনের মূলমন্ত্র’। অনুষ্ঠানটির আয়োজক সংস্থা ছিল বরাবরের মতোই নোবেল প্রাইজ মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ। এ বছরের ওই অনুষ্ঠানে ইথিয়পিয়া, বলিভিয়া, ইউএসএ, ইতালি ও বাংলাদেশসহ প্রায় ২৫টির বেশি দেশ থেকে শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষকদের এই অংশগ্রহণকে তাৎপর্যবহ ও সমাদৃত করতে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেনÑ খ্যাতিমান নোবেল বিজয়ীগণ, বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীবর্গ, শান্তিদূত এবং শিল্পীবৃন্দ। পুরো সামিটজুড়েই ছিল গুণীজনদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, লেকচার, সাক্ষাৎকার এবং গঠনমূলক চিন্তাভাবনা ও মতামতের আদান-প্রদান।
নোবেল প্রাইজ টিচার সামিটে মোফাজ্জল সারওয়ারের স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক পরিসীমায় শিক্ষার প্রতি তার সদয় ও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। এ সময় তিনি দেশের শিক্ষার অগ্রসরতার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা নিয়েও আলোচনা করেন। এই সামিটে জ্ঞানগর্ভ আলোচনার পাশাপাশি শিক্ষকগণ সুইডেনের নোবেল প্রাইজ মিউজিয়ামে ‘ঋঁহমর’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। সুইডেনভিত্তিক এই সামিটটি শুধুমাত্র জ্ঞানচিন্তার আদান-প্রদানই নয় ভিন্ন ভিন্ন দেশের মধ্যকার সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানেরও সুযোগ তৈরি করেছে।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী এই শিক্ষক বলেন, নোবেল প্রাইজ টিচার সামিট-২০২৩ এ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করছি। দেশ-বিদেশের জ্ঞানী, গুণী এবং নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানীদের সান্নিধ্যে পেয়েছি খুব কাছ থেকে। শিক্ষা খাতে তাদের নিরন্তর অবদান, ত্যাগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জেনেছি। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পেয়েছি। যেগুলো শিক্ষক হিসেবে আমাকে আমার কাজের প্রতি, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি, সর্বোপরি সমাজ ও দেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণে উদ্বুদ্ধ করবে।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকাতে সুইডিশ অ্যাম্বাসি কর্তৃক আয়োজিত হয়েছে ‘নোবেল প্রাইজ এক্সিবিশন অ্যান্ড অ্যালামনাই ইভেন্ট’। ওই প্রোগ্রামে, নোবেল প্রাইজ টিচার সামিটে অংশগ্রহণকারী হিসেবে মোফাজ্জল সারওয়ারের বিস্তারিত অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করার সুযোগ পান। তাই তিনি সেখানে তার অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্যে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে তিনি সুইডিশ ইনস্টিটিউটের আওতাধীন ঝওঝএচ (Swedish Institute Scholarship for Global Leaders) স্কলারশিপ নিয়ে সুইডেনের মালমো বিশ্ববিদ্যালয় হতে ‘লিডারশিপ ফর সাসটেইনেবিলিটি’ বিষয়ে ২য় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। নোবেল প্রাইজ টিচার সামিট হলো- আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষকদের এই প্লাটফর্মে একত্রিত করে তাদের চিন্তা-ভাবনার প্রসার, সমাজ সংস্কারের প্রতি আগ্রহী ও প্রতিনিধিত্বশীল মনোভাব সৃষ্টিতে প্রতি বছরই এই সামিট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শিক্ষকরা হলেন- একটি দেশের কর্ণধার। তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশের সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা পালন করেন।
তাই শিক্ষকদের প্রতি সুপরামর্শ ও ভিন্ন ভিন্ন দেশের শিক্ষকদের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক একটি দেশের মূলধারার শিক্ষা কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, টেকসই উন্নয়নের ৪র্থ উদ্দেশ্য ‘কোয়ালিটি এডুকেশন’ নিশ্চিতে এই নোবেল প্রাইজ সামিট এক অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে। এবং বাংলাদেশী শিক্ষকের এই সামিটে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি মাইলফলক।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/০১/২০২৪