'নীতিমালার গ্যাঁড়াকলে' এমপিওবঞ্চিত কারিগরির শতাধিক শিক্ষক
আল আমিন হোসেন মৃধা, ঢাকাঃ শিক্ষকদের মাঝে বৈষম্য দূর করতে সর্বশেষ এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধন করে সামঞ্জস্যতা আনতে একাধিকবার এমপিও সভা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কখনও স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে কখনও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবার কখনও মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে একাধিকবার এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামঞ্জস্যতা এসেছে নীতিমালায় থাকা একাধিক অসামঞ্জস্য বিষয়। তবে এখনও নীতিমালার গ্যাঁড়াকলে পড়ে এমপিওভুক্ত হতে পারেননি কারিগরির বিএম শাখার শতাধিক শিক্ষক। নীতিমালায় সংশোধনী এনে এদের বেতন-ভাতার আওতায় আনার তেমন উদ্যোগও লক্ষ করা যায়নি।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (বিএম) শাখায় আব্যশিক বিষয় হিসেবে পাঠদান কারানো হিসাববিজ্ঞান নীতি ও প্রয়োগ এবং কম্পিউটার অফিস এপ্লিকেশনের শিক্ষকদের এই দুর্দশা। কেউ দশ বছর কেউ বা তার বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন তবে আজ পর্যন্ত পাননি বেতন-ভাতা।
জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (বিএম) শাখায় মোটা আটটি আবশ্যিক বিষয় রয়েছে যা সকল শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক পড়তে হয়। এর মধ্যে হিসাববিজ্ঞান নীতি ও প্রয়োগ এবং কম্পিউটার অফিস এপ্লিকেশন দুইটি। অন্যদিকে আরও পাঁচটি বিষয় রয়েছে যেগুলোর মধ্যে থেকে একটি ট্রেড এবং একটি ঐচ্ছিক (৪র্থ বিষয়) নিয়ে আবশ্যকিসহ মোট দশটি বিষয়ে পড়তে হয়। এর মধ্যে কমপিউটারাইজড একাউন্টিং সিস্টেম এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি যেটা পাঁচ টি (ট্রেড) ঐচ্ছিক বিষয়ের মধ্যে দুইটি।
কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো ২০১৮ (সংশোধনী-২০২০) অনুযায়ী হিসাব রংক্ষণ ও কম্পিউটার অপারেশনের একজন করে প্রভাষকের কথা উল্লেখ রয়েছে। হিসাব রংক্ষণ বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কম্পিউটারাইজড একাউন্টিং সিস্টেম এবং কম্পিউটার অপারেশনের প্রভাষক হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তির ঐচ্ছিক বিষয়ের শিক্ষকদের বিষয়ে বলা আছে। কিন্তু আবশ্যিক বিষয় হিসেবে পাঠদান করানো হিসাববিজ্ঞান নীতি ও প্রয়োগ এবং কম্পিউটার অফিস এপ্লিকেশনের বিষয়ের শিক্ষকদের এমপিও নীতিমালায় কোন পদ উল্লেখ না থাকায় তারা জনবল কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত হতে না পেরে এমপিওভুক্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অর্থ্যাৎ এই দুই বিষয়ের ট্রেডের (ঐচ্ছিক) শিক্ষকরা বেতন পেলেও আবশ্যিক বিষয়ের শিক্ষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন বেতন-ভাতা থেকে। এমতাবস্থায় আবশ্যিক বিষয়ে পাঠাদান করানো শিক্ষকদের এই পদ এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোয় অন্তভূর্ক্ত করে এমপিওভুক্তির দাবিতে বঞ্চিত শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগে দৌড়ঝাঁপ করেও কোন সমাধান পাননি। নিয়োগের পর থেকেই বেতন না পেয়ে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
নীতিমালায় সামঞ্জস্য এনে এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়ে নন এমপিও এই শিক্ষকরা বলেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সম্পূর্ণ নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করে আমরা নিয়োগ পাই। ২০১৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলেও নীতিমালায় অসামঞ্জস্যতার কারণে আমরা এমপিওভুক্ত হতে পারিনি। আবশ্যিক বিষয়ে পাঠদান করেও আমরা নন এমপিও শিক্ষক। অথচ ঐচ্ছিক বিষয়ে পাঠদান করেও তারা বেতন পাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা একাধিকবার কারিগরি অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ে গিয়েছি। শুধু কর্মকর্তারা বিষয়টি দেখছেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু কোন সমাধান আসেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যখন শিক্ষকদের মাঝে বৈষম্য দূর করতে সর্বশেষ এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধন করে সামঞ্জস্যতা আনার উদ্যোগ নিলেন তখন আমরা খুব আশাবাদী ছিলাম কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের বিষয়ে কোন অগ্রগতি দেখিনি। আমরা আমাদের বিষয়টি মানবিকভাবে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আন্তরিক। অধিদপ্তরের আওতাধীন কোন শিক্ষক বেতন-বিহীণ থাকুক সেটা আমাদের কারও কাম্য নয়। ভুক্তোভুগি শিক্ষকরা আমাদের কাছে একাধিকবার এসেছে। খুব দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) এ, ওয়াই, এম, জিয়াউদ্দীন আল-মামুন (যুগ্ম সচিব) শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এটা সমাধানে আমরা আন্তরিক। আশাকরি সমাধান হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৯/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়