যেভাবে ৮০ শিশুর বাবা-মা এখন বিলকিছ-রবিউল!
কুড়িগ্রামঃ অনাথ, এতিম ও পথশিশুদের জীবনে আলো ফুটিয়ে তুলছেন কুড়িগ্রামের বিলকিছ বানু ও রবিউল ইসলাম দম্পতি। নাগেশ্বরী উপজেলার ডিগ্রি কলেজের পাশে মাদার তেরেসাকে আদর্শ মেনে নিজেদের এক একর জমির ওপর গড়ে তুলেছেন গোলাপ খাঁ শিশু সদন। সেখানে বর্তমানে লেখাপড়াসহ জীবন গড়ছেন বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৮০ শিশু। এসব শিশুদের মা-বাবা হয়ে প্রতি মাসে ব্যয় করছেন বিপুল অঙ্কের অর্থ। ভবিষ্যতে ট্রাস্টের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে এসব অসহায় শিশুদের নিয়ে এসে বড় পরিসরে শিশু সদনটি পরিচালনার ইচ্ছা তাদের।
সরেজমিনে গোলাপ খাঁ শিশু সদনের গেট পেরিয়ে ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, ছিমছাম পরিবেশে এক একর জমির চারিদিকে নির্মিত টিনশেড বাড়ি। এর মাঝে একই পোশাকে সুশৃঙ্খলভাবে পিটি করছেন সেখানকার বিভিন্ন বয়সের শিশুরা। এদের কারো মা নেই, কারো বাবা নেই, নেই কারো বাবা-মা দুজনেই। পাশে দাঁড়িয়ে দেখছেন এসব শিশুর মা-বাবা বিলকিছ বানু ও রবিউল ইসলাম। পথ থেকে তুলে এনে প্রথমে নিজ বাড়িতে তাদের যত্ন শুরু করেন এ দম্পতি। পরে শিশুর সংখ্যা বাড়তে থাকলে ১৪ বছর আগে নিজ খরচে এ শিশু সদন শুধু করেন। এরপর এসব শিশুর ভালোবাসা আর মায়ার জালে জড়িয়ে হয়ে যান তাদের বাবা-মা।
নিজ হাতে শিশুদের যত্ন, খাবার খাওয়ানোর কাজ করে থাকেন বিলকিছ বানু। এই দম্পতির এক ছেলে এক মেয়ে থাকলেও এখন সব শিশুরাই সন্তান তাদের। শিশুদের শিক্ষার জন্য সদনেই গড়া বিদ্যালয় পরিচালনা ও প্রতিদিনের খাবারের ব্যয় বহন করতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তবুও আগামীতে ট্রাস্টের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে এতিম অনাথ ও পথশিশুদের এনে শিক্ষিত করে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছা এই দম্পতির।
গোলাপ খাঁ শিশু সদনে বসবাসকারী শিশুদের মা বিলকিছ বানু জানান, নিজের এক ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও এতিম ও অনাথ শিশুদের অবহেলিত থাকতে দেখে ভালোবাসা জাগে তার মনে। কেন না, স্বপ্নে দেখা মাদার তেরেসাকে আদর্শ মানেন তিনি। ১৩ বছর আগে প্রীতিলতা নামে দেড় বছরের এক কন্যা শিশুকে বাজারে দোকানের বারান্দায় কুকুরের সঙ্গে বসবাস করতে দেখে তাকে নিয়ে আসেন বাড়িতে। তারপর একে একে পেয়ে জান আরও কয়েকজন শিশু। তাদের প্রথমে নিজ বাড়িতে রেখে লালন পালন শুরু করলেও শিশুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় গড়ে তোলেন এ শিশু সদন।
তিনি জানান, ভবিষ্যতে ট্রাস্টের মাধ্যমে শিশু সদনটি পরিচালিত হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এতিম, অনাথ ও পথশিশুদের নিয়ে এসে লালন পালন করার ইচ্ছে আছে তার। যাতে করে দেশ থেকে এতিম শব্দটি উঠে যায়।
বিলকিছ বানুর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রবিউল ইসলাম জানান, বিশেষ করে প্রীতিলতাকে পাওয়ার পর থেকে তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসে। তারপর নিজের বাবার জমিতে তার নামে শিশু সদনটি গড়ে তোলেন। এটি পরিচালনার জন্য শহরের নিজস্ব জমিতে গড়ে তোলেন প্রীতিলতা নামে মার্কেট। সেই মার্কেটের ভাড়া ও অন্যের কাছে পাওয়া সামান্য সহায়তায় পরিচালিত হয়ে আসছে শিশু সদনটি। কিন্তু বর্তমানে শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
শিশু সদনে বসবাসকারী শিশুরা জানান, এখানে আসা শিশুরা তাদের অতীত ভুলে এই দম্পতিকে বাবা-মা মেনে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ পড়ছেন অনার্সে আবার কেউ কেউ ঢুকে পড়েছেন কর্মে। ভালো কিছু করতে পারলে এই বাবা-মায়ের আদর্শ মেনে চলার ইচ্ছে তাদের।
শিশু সদনে বসবাসকারী প্রীতিলতা জানান, বাবা-মায়ের পরিচয় বলতে বিলকিছ বানু ও রবিউল ইসলামকে জানা তার। এখান থেকেই লেখাপড়ার খরচ চলছে এবং বর্তমানে অনার্সে পড়ার কথা জানায় সে।
রাস্তার পাশে মার্কেটের বারান্দায় পড়ে থাকা দেড় বছরের শিশু প্রীতিলতার প্রতি মায়া থেকেই ২০০৯ সালে রবিউল ইসলামের বাবার নামে গোলাপ খাঁ শিশু সদনটি প্রতিষ্ঠা করেন ওই দম্পতি। পরে প্রীতিলতার নামে গড়া মার্কেটের আয় ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের দেয়া কিছু অর্থে পরিচালিত হচ্ছে শিশু সদনটি। সময় সংবাদ
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৭/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়