চবি: বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড বাতিলের দাবি
চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বাংলা ও আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড বাতিলের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) উপাচার্য বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক এ দাবি জানান।
এর আগে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ও বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির আপত্তি সত্ত্বেও আজ রবিবার আইন বিভাগ ও আগামীকাল সোমবার বাংলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বোর্ড বাতিলের দাবিতে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাগবে কি লাগবে না, সেটি বিভাগের শিক্ষকেরা বুঝবেন। কারণ, বিভাগের শিক্ষকেরাই ক্লাস নেন, প্রয়োজন–অপ্রয়োজন বোঝেন। উপাচার্যের বোঝার কথা নয়। যদি উপাচার্য বিশেষভাবে নিয়োগ দিতে তৎপর হন, তাহলে বুঝতে হবে, তার বিশেষ কোনো স্বার্থ সেখানে থাকতে পারে। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকে তোয়াক্কা করছেন না, তিনি নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী সবকিছু করছেন। এ ঘটনাও আরেকটি প্রমাণ। তাই বোর্ড বাতিলের দাবিতে আমরা চিঠি দিয়েছি।
উপাচার্য বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন অনিয়ম এবং আইনের শাসন পরিপন্থী কার্যক্রমের প্রতিবাদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এ সকল সমস্যা নিরসনকল্পে শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন দাবি পূরণের ব্যাপারে আপনার (উপাচার্য) নেতৃত্বাধীন প্রশাসন বিভিন্ন সময় আশ্বাস প্রদান করে আসলেও অদ্যাবধি তেমন কোন দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
এর মধ্যে প্লানিং কমিটি কর্তৃক প্রয়োজন নেই মর্মে প্রদত্ত সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে বাংলা, আইন এবং কম্পিউটার সায়েন্সসহ বিভিন্ন বিভাগ-ইনস্টিটিউটে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রদান এবং উক্ত বিজ্ঞপ্তির আলোকে প্রাপ্ত আবেদনপত্রসমূহ প্লানিং কমিটি বাছাই করতে অপারগতা প্রকাশের পরও সম্পূর্ণ নজিরবিহীন ও বেআইনিভাবে রেজিস্ট্রার দপ্তরের কর্মচারীদের দ্বারা বাছাই করে আইন এবং বাংলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নির্বাচনী বোর্ড সভা ডেকেছেন। যা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষক সমাজকে চরম বিস্মিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘন করে শিক্ষক প্রতিনিধিত্ববিহীন সিন্ডিকেট সভায় যেনতেনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনি এবং উপ-উপাচার্য মহোদয় কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চালানো বিতর্কিত নিয়োগদানের এই মহোৎসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থাকে চিরতরে পঙ্গু করে ফেলছে বলে শিক্ষক সমিতি মনে করে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, অসংগতি, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ইত্যাদির খবর প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে যা কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভামমূর্তি ক্ষুন্ন করছেনা বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে দেশের ঈর্ষণীয় উন্নয়ন অভিযাত্রা ও সরকারের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অব্যবহিত পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত এ সকল অনিয়ম ও অগ্রহণযোগ্য কার্যক্রমের ব্যাপারে ব্যাপক ভিত্তিতে প্রকাশিত সংবাদসমূহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের ভোটের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে শিক্ষক সমাজ মনে করে। তাই বাংলা ও আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বাতিল করার জন্য শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আপনার নিকট জোরালো দাবি জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাংলা ও আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকের প্রয়োজন না থাকা ও বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির আপত্তি সত্ত্বেও দুই বিভাগে ৯ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এবার নির্বাচনী বোর্ড আহ্বান করা হয়েছে। বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের লঙ্ঘন বলছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৭/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়