বেরোবি: শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ছাত্রীর নেকাব খুলতে বাধ্য করার অভিযোগ
রংপুরঃ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) জেন্ডার অ্যান্ড ডেভলোপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের একজন নারী শিক্ষার্থীকে নেকাব খুলতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ওই বিভাগের শিক্ষিকা ও সহকারী প্রক্টর কুন্তলা চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) ওই শিক্ষার্থী বিভাগে গিয়ে স্বেচ্ছায় ভর্তি বাতিল করার চেষ্টা করেন। তখন বিভাগ থেকে তাকে বুঝিয়ে তার সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রাখা হয়। এর আগে ১০ ডিসেম্বর ছাত্র উপদেষ্টা বরাবরে এই লিখিত অভিযোগ করা হয়।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা আনোয়ারুল আজিমের কাছে দেয়া লিখিত আবেদনে জেন্ডার অ্যান্ড ডেভলোপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ওই শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, ‘গত ৪ ডিসেম্বর ক্লাসে উপস্থিত হয়ে শিক্ষক কুন্তলা চৌধুরী নেকাব পরিহিতাদের নেকাব খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে নেকাব খুলে ফেললেও আমি ধর্মীয় বিধিবিধান মানার কারণে নেকাব খুলিনি।
তখন শিক্ষক কুন্তলা চৌধুরী আমাকে বলে, আমি কিভাবে বুঝব তুমি আমার শিক্ষার্থী। তোমাদের হয়ে অন্য কেউ ক্লাস করছে কিনা। তখন আমি তাকে বলি, আইডেনটিফাই করার যদি বিষয় থাকে তাহলে ক্লাস শুরুর আগে অথবা আপনার অফিসে আমাদের আইডেনটিফাই করতে পারেন। তখন তিনি আমাকে বলেন, বাইরে কোথায় আইডেনটিফাই করব, তোমার বাসায়? তখন আমি নেকাব খুলিনি। কিন্তু তিখন ম্যাডাম আমাকে বলেন, আমার পরীক্ষা এবং প্রেজেনটেশনে তোমাকে নেকাব খুলতেই হবে এবং ক্লাসের পর ওনার সাথে দেখা করতে বলেন। আমি ওনার অফিস রুমে গেলে তিনি আমাকে নেকাব খুলতে বাধ্য করেন এবং আমার মুখ দেখেন। তখন আমি তাকে অনুরোধ করি ক্লাস ও পরীক্ষায় মুখ না খুললে হয় না। তখন তিনি সরাসরি না বলে দেন।
ছাত্র উপদেষ্টার কাছে দেয়া লিখিত আবেদনে ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘ম্যামের এমন নেতিবাচক আচরণ আমার মনে ভীতি সৃষ্টি করছে। এবং আমি আশঙ্কা করছি ভবিষ্যতে আমাদের ধর্মীয় বিধান পর্দা লঙ্ঘনে বাধ্য করা হবে। এবং আমি স্বাধীনভাবে ধর্মীয় বিধান পালনে অনিরাপদবোধ করছি। ম্যামের এই আচরণ বাংলাদেশের সংবিধানের সুস্পস্ট লঙ্ঘন। স্বাধীনভাবে ধর্মপালনে বাধাপ্রদান ও পোশাকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষে করার শামিল।’
লিখিত আবেদনে ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘আমি চাই আমি যেভাবে ধর্মপালনে বাধা ও হয়রানির শিকার হয়েছি। আর কেউ হয়রানির শিকার না হোক। যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়।’
ছাত্র উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি জানিয়ে ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। এছাড়া স্বেচ্ছায় ভর্তি বাতিল করারও চেষ্টা করেছে ওই নারী শিক্ষার্থী।
এ ব্যপারে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, ‘আমার শ্রদ্ধেয় ম্যাম ক্লাসে যেভাবে নেকাব নিয়ে কথা বলেছেন। নেকান না খুললে ক্লাস পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। যেভাবে ওনার রুমে গিয়ে আমাকে নেকাব খুলে দেখানো হয়েছে এটা আমার ধর্মীয় বিধিবিধান পালনে বাঁধা প্রদান। আমাকে মানসিকভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমি আমার শ্রদ্ধেয় ম্যাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে স্বাধীনভাবে ধর্মপালনের মাধ্যমে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানাচ্ছি। যদি সেটা করা না হয়, তাহলে আমার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা অনিশ্চিত হবে।’
অভিযুক্ত শিক্ষক কুন্তলা চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি তাকে নেকাব পড়তে ও খুলতে নিষেধ করিনি। আমি বলেছি, তোমার চোহার না দেখে আমি কিভাবে বুঝব তুমি আমার শিক্ষার্থী। তুমি যদি খুবই অস্বস্থিবোধ করো, তাহলে আমার রুমে এসে চেহারা দেখিয়ে যেও। কারণ অন্য শিক্ষার্থী এসেও ক্লাস করতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা আনোয়ারুল আজিম সাংবাদিকদের জানান, ‘এ বিষয়ে একটি আমার দফতরে এক নারী শিক্ষার্থী একটি অভিযোগ দিয়েছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের একটু সময় লাগবে। পরবর্তীতে বিষয়টি জানানো হবে।’
উল্লেখ্য, কুন্তলা চৌধুরী ওই বিভাগের শিক্ষক ছাড়াও সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন। একই দিন বাংলা বিভাগেও এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১১/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়