বিদ্যালয় সংস্কারের নামে কোটি টাকা লোপাট
নীলফামারীঃ জেলার কিশোরগঞ্জে নিতাই ডাঙ্গাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা একাডেমিক ভবনটি চকচক করছে। অথচ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দেখানো হয়েছে। বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে দেড় লাখ টাকা। শুধুমাত্র নিচ তলার ৩টি রুমে দায়সারা রং করেছে। এভাবে বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে যেনতেন কাজ করে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা অফিস বরাদ্দের টাকা ভাগবাটেয়ারা করে নিয়েছে। এছাড়া উপজেলার ১৪২টি বিদ্যালয় সংস্কারের নামে প্রায় কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে পিইডিপি-৪ এর আওতায় ১২টি বিদ্যালয় ২ লাখ করে এবং ১১টি বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার করে টাকা বরাদ্দ হয়। এছাড়া রুটিন মেইনটেনেন্স কাজের জন্য ১০৯ টি বিদ্যালয়ে ৪০ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেয়। ওয়াশব্লোক সংস্কারের জন্য ২০ হাজার করে ১০টি বিদ্যালয় বরাদ্দ পায়। এছাড়া শ্লিপ প্রকল্পের টাকা থেকেও প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের কাজ করা হয়।
সরেজমিনে নিতাই ডাঙ্গাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে প্রধান শিক্ষক মঞ্জের আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমার স্কুল জরাজীর্ণ ও ঝঁকিপূর্ণ না। দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। নিচতলার রুম ৩টি রং করা হয়েছে। সংস্কারের প্রয়োজন নেই। তাই কোনো কিছু মেরামত করা হয়নি। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকাভুক্তির বিষয়ে তিনি জানেন না।
বদি মাঝাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী মাঠে ফুটবল খেলছে। প্রধান শিক্ষক নিপেন্দ্রনাথ শিক্ষা অফিসে ও একজন শিক্ষক বাড়িতে গেছেন।
উপস্থিত একমাত্র শিক্ষিকা আয়েশা সিদ্দিকা জানান, সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত ২ লাখ টাকা দিয়ে ওই ভবন মেরামত ও রং করা হয়েছে।
কিন্তু ভাঙ্গা জানালা দিয়ে দেখা যায়, ভিতরে রং বিহীন রুমটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে তেতুলতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত ২ লাখ টাকার কোনো কাজ হয়নি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। ভবনটিতে সংস্কার কাজের কোন চিহ্ন চোখে পড়েনি। ভবনের পূর্ব পাশের নিচে রং বিনষ্ট হওয়ায় পলাস্তারা বের হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাকলিমা বেগম জানান, বরাদ্দের টাকা দিয়ে তিনি ভবনের বাইরে কোনো কাজ করেননি, বিদ্যুতের লাইন মেরামতসহ অভ্যন্তরীণ কাজ করেছেন।
এছাড়া দক্ষিণ দুরাকুটি ঘোপাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার কোনো উপকরণ (ডেকি, দোলনা, পপার) চোখে পড়েনি। অথচ বরাদ্দ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছামছুল আলম জানান, অনেকদিন
আগে চেকে স্বাক্ষর দিয়েছি। প্রধান শিক্ষক শুধু একটা ফুটবল কিনেছে। অন্যান্য উপকরণ নাকি কিনতে দিয়েছে। আর তেমন কিছু জানিনা। এছাড়া সয়রাগন্ধা দোলাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান একটি শ্রেণীকক্ষে শুধু নিচের অংশে রং করেছেন। বিদ্যালয়ের অগ্রভাগে মাটি ভরাটের বরাদ্দের টাকা পকেটজাত করেছেন। তিনি জানান পরে কাজ করা হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মাদ এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ দেখভাল করে আমি প্রত্যয়ন দেই না। যেনতেনভাবে সংস্কার কাজ করে বরাদ্দের সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলন ও ভালো ভবন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা ভাগবাটোয়ারার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার কথা শুনতে পারছিনা, অফিসে আসেন সাক্ষাতে কথা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৪/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়